মস্কোর পর এবার স্পেনের চলচ্চিত্র উৎসবে ঢাকার ‘মাস্তুল’
Published: 3rd, May 2025 GMT
৪৭তম মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘স্পেশাল মেনশন’ পেয়েছিল বাংলাদেশের সিনেমা ‘মাস্তুল’। এবার সেপ্টেম্বরে স্পেনে অনুষ্ঠিতব্য ইমাজিনইন্ডিয়া আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘সেরা মানবিক ছবি’র জন্য মনোনয়ন পেল সিনেমাটি!
১ সেপ্টেম্বর থেকে স্পেনের মাদরিদ শহরে বসছে এই চলচ্চিত্র উৎসবের ২৪তম আসর। আর সেখানেই ‘সেরা মানবিক চলচ্চিত্র’-এর জন্য ‘লাইফ অ্যাওয়ার্ড’ বিভাগে মনোনীত হয়েছে নূরুজ্জামানের এই সিনেমাটি। ইমাজিনইন্ডিয়ার ওয়েব সাইট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ উৎসবে যোগ দিতে আমন্ত্রণও পেয়েছেন নির্মাতা মোহাম্মদ নুরুজ্জামান। সব ঠিক থাকলে সেপ্টেম্বরে স্পেনের উদ্দেশে যাত্রা করবেন বলেও জানান তিনি।
নুরুজ্জামান বলেন, ‘মস্কোতে ‘মাস্তুল’র প্রিমিয়ারের পর বহু জায়গা থেকেই সিনেমাটি নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তারই ধারাবাহিকতায় ইমাজিনইন্ডিয়া আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে যাচ্ছে মাস্তুল। দেশের কেন সিনেমা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘সেরা মানবিক ছবি’র জন্য মনোনীত হওয়া বাংলা সিনেমার জন্য সুসংবাদ। আশা করছি, ওই উৎসবে সিনেমাটি দেখে দর্শকের ভালো লাগবে।’
সিনেমাটি দেশে মুক্তির প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “গত ২৪ মার্চ সিনেমাটি সেন্সর ছাড়পত্র পেয়েছে। কোন বয়সী দর্শকরা এটি দেখতে পারবেন। স্পেনের ইমাজিনইন্ডিয়া উৎসবে যোগ দেয়ার আগেই দেশের দর্শকদের ‘মাস্তল’ দেখাতে চাই। সেভাবেই পরিকল্পনা চলছে। বাকিটা দেখা যাক।”
জলে ভাসমান জাহাজীদের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘মাস্তুল’। সিনেমাটি নির্মাণ প্রসঙ্গে নির্মাতার ভাষ্য ‘আমার বেড়ে ওঠা নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকায়। ছোট থেকেই জাহাজীদের জীবনের নানা কর্মকাণ্ড দেখে আসছি। খুব ইচ্ছে ছিল তাদের জীবনচিত্র ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দি করার। ‘মাস্তুল’-এর মাধ্যমে সেই সুযোগ পেয়ে তা আর হাত ছাড়া করিনি।
সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন ফজলুর রহমান বাবু, দীপক সুমন, আমিনুর রহমান মুকুল, আরিফ হাসান, সিকদার মুকিত, সিফাত বন্যা প্রমুখ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চলচ চ ত র উৎসব র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
শুভেচ্ছার মোড়কে ছাপা রাজনীতি
ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়েছে, বেশি দিন হয়নি। নির্বাচন সামনে রেখে এই ঈদে যেমন দেখা গেল শুভেচ্ছার রাজনীতি, তেমনটি এর আগেও আমরা দেখেছি। এলাকায় একই ব্যক্তির ব্যানার-ফেস্টুন-বিলবোর্ডজুড়ে মুখচ্ছবি আর নাম-পরিচয়! একদিকে ঈদের অনাবিল আনন্দ, অন্যদিকে রাস্তায় হঠাৎ দেখা যায়, ‘অমুক সাহেবের পক্ষ থেকে ঈদ মোবারক’ কিংবা ‘জনপ্রতিনিধি পদপ্রার্থী তমুক ভাইয়ের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা’। অবশ্য শুধু ঈদে নয়, এর বাইরেও এ ধরনের শুভেচ্ছা দেখা যায়। তবে ঈদ মুসলমানদের প্রধান দুটি ধর্মীয় উৎসব, সেহেতু এ সময়ে প্রবণতা বেশি থাকে।
এত বড়মাপের আয়োজন, ছাপানো, টাঙানো সবই ব্যয়সাধ্য। সাধারণ একজন রাজনৈতিক কর্মী কীভাবে এত খরচ করেন? নাকি এটি ভবিষ্যতের বিনিয়োগ? রাজনৈতিক পুঁজি সঞ্চয়ের একটি চতুর পদ্ধতি? যারা ভোট চান, তারা জানেন ঈদ হলো মানুষের অনুভূতির সময়। এ সময়কে কাজে লাগিয়ে মানুষের মাঝে নিজের উপস্থিতি জানান দেওয়া যায় নীরবে, আত্মীয়ের মতো করে। তাই ‘ঈদ মোবারক’ লেখার চেয়েও বড় করে লেখা থাকে প্রার্থীর নাম, তার ছবি, দলের প্রতীক কিংবা নেতার ছবির পাশে নিজের ঠাঁই। এক অর্থে, এটি নিজের চেহারা ও অবস্থানকে জনগণের মনে গেঁথে দেওয়ার কৌশল; ঈদের মোড়কে!
এত ব্যানার-ফেস্টুনের মাঝে ঈদের মূল বার্তাটি কোথায়? রাস্তার পাশে পড়ে থাকা ছেঁড়া ব্যানার, বাতাসে উড়তে থাকা ছিন্ন ফেস্টুন কি ঈদের শোভা বাড়ায়, নাকি নগরজীবনে দৃষ্টিকটু মাত্রা যোগ করে? প্রশাসন অনেক সময় এগুলো অপসারণে উদ্যোগী হলেও প্রভাবশালী মহলের নাম লেখা থাকলে সে ব্যানার ছোঁয়া যেন সাহসের ব্যাপার। ফলে শহরের সৌন্দর্য বা সজ্জা হয়ে দাঁড়ায় রাজনীতির বিজ্ঞাপনস্থল।
এই প্রবণতা শুধু শহরে নয়, গ্রাম-গঞ্জেও ছড়িয়ে পড়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য কিংবা সম্ভাব্য চেয়ারম্যানও ঈদের আগে ছবি পাঠিয়ে দেন ছাপাখানায়। বাজারের মোড়ে তাদের ফেস্টুন ঝুলে যায়। সঙ্গে যুক্ত থাকে দলের প্রতীক, স্থানীয় নেতার নাম এবং অবশ্যই ঈদের শুভেচ্ছা। মানুষের অনুভূতিকে ব্যবহার করে নিজেকে পরিচিত ও প্রভাবশালী করে তোলার এক নীরব প্রচারকৌশল এটি। তবে সবাই কি এসব ব্যানার-ফেস্টুনে বিরক্ত হন? অনেক সাধারণ মানুষও এটিকে স্বাভাবিকভাবে নেন। তারা বলেন, ‘যাক, অন্তত মনে তো করেছে!’ এই মানসিকতা রাজনৈতিক কর্মীদের উৎসাহিত করে। কিন্তু আশঙ্কা থেকে যায়, এই ছদ্ম-শুভেচ্ছার মাঝে যদি সত্যিকারের দায়বদ্ধতা না থাকে, তবে জনগণ কবে বুঝবে, তারা প্রতারিত হচ্ছে?
এটা ঠিক, যে কেউ ঈদে শুভেচ্ছা জানাতে পারেন। সামাজিক মাধ্যম থেকে শুরু করে ব্যক্তি পর্যায়ে কার্ড পাঠানো হৃদয় ছোঁয়া বার্তার অভাব নেই। কিন্তু যান্ত্রিকভাবে, দখলদারির মতো করে শহর কিংবা গ্রামজুড়ে মুখের ছবি ঝুলিয়ে দেওয়া কতটা শোভন? এসব ব্যানার-ফেস্টুনের মাধ্যমে কে কোথায় কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারছেন, তার একটি ম্যাপ তৈরি হয়। কার ব্যানার সবচেয়ে বড়, কার ছবি কেন্দ্রীয় স্থানে, এসব বিশ্লেষণ করেই স্থানীয় রাজনীতিতে কে কতটা শক্তিশালী, তা বোঝা যায়। ফলে ঈদ এক সময় হয়ে পড়ে রাজনৈতিক পরিমাপের বারোমাসি দিনপঞ্জির একটি কৌশলগত দিন। এখন সময় এসেছে এই প্রবণতা নিয়ে ভাববার।
ঈদ আমাদের আত্মশুদ্ধি, ত্যাগ ও ভালোবাসার উৎসব। এটি হোক মানুষের হৃদয়ে পৌঁছানোর এক আন্তরিক উপলক্ষ। নিছক ব্যানার-ফেস্টুনে আটকে না থাকুক এই পবিত্র বার্তা। শুভেচ্ছা জানানো হোক নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দিয়ে; চোখে পড়ার জন্য নয়; হৃদয়ে গেঁথে যাওয়ার জন্য। সত্যিকারের নেতৃত্ব তো জন্ম নেয় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে; কৃত্রিম ব্যানারে নয়। রাজনীতি যদি মানুষের সেবার মাধ্যম হয়, তবে ঈদের সময় সেই সেবা প্রতিফলিত হোক কাজে; শুধু মুখে কিংবা ব্যানারে নয়। তাহলেই ঈদ, রাজনীতি দুটোই পাবে প্রকৃত সম্মান।
জুয়েল হাসান: প্রকৌশলী