কর্মক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এবং বহুল আলোচিত একটি বাক্য হলো—‘টক্সিক ওয়ার্ক এনভায়রনমেন্ট’ বা ‘বিষাক্ত কর্মপরিবেশ’। কর্মক্ষেত্রে যদি বিষাক্ত পরিবেশ তৈরি হয়, তা অনেকের জন্য অসহনীয় হয়ে উঠতে পারে।

মূলত পাঁচটি কারণে একটি কর্মক্ষেত্র বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে। সেগুলো হলো বিষাক্ত নীতি ও পদ্ধতি, বিষাক্ত সংস্কৃতি, বিষাক্ত বস/ম‍্যানেজার, বিষাক্ত সহকর্মী ও বিষাক্ত উন্নয়ন সহযোগী/ক্লায়েন্ট।

উল্লিখিত পাঁচটি কারণের মধ্যে ‘বিষাক্ত সহকর্মী’ হলেন তাঁরা, যাঁরা প্রতিনিয়ত বিষবাষ্প ছড়ানোর মাধ্যমে পরিস্থিতি ঘোলাটে করে রাখেন; যাঁরা নানান ছুতোয় আগুনে ঘি ঢেলে বসদের মাথা গরম করে নিজেরা ফায়দা লুটতে ও ফাঁকিবাজি করতে মরিয়া হয়ে পড়েন, যার প্রভাব পড়ে পুরো অফিসে ও অন্য কর্মীদের ওপর।

‘বিষাক্ত সহকর্মী’রা এটা চিন্তা করেন না, একটি অফিসে বিভিন্ন ব‍্যাকগ্রাউন্ডের ও ব্যক্তিত্বের মানুষ একসঙ্গে কাজ করেন, যাঁদের চিন্তাভাবনা, রুচিবোধ ও সহনশীলতা ভিন্ন ভিন্ন।

কর্মক্ষেত্রে সবাই সাধারণত একটি অভিন্ন লক্ষ্যে দিন শুরু করেন। কেউ কেউ আবার জীবিকার তাগিদে পাহাড়সম সমস্যা মাথায় নিয়েও অফিসে আসেন। এর মধ্যেও দেখা যায়—গুটিকয়েক সহকর্মীর অপ্রয়োজনীয় ও অপেশাদার আচরণ একটি ভালো কর্মপরিবেশ মুহূর্তেই বিষাক্ত করে তোলে।

এই আচরণ অনেকেই মেনে নিতে পারেন না। ফলে অনেক দক্ষ ও সম্ভাবনাময় কর্মী এমন পরিবেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হন। যার বিরূপ প্রভাব পড়ে প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক অর্জন ও সুনামের ওপর। একসময় সেই প্রতিষ্ঠান ‘সেরা নিয়োগদাতা’ বা ‘এমপ্লয়ার অব চয়েস’ হিসেবে গড়ে ওঠার পথ থেকেও ছিটকে যেতে পারেন।

প্রশ্ন জাগে, একটি অফিসে ‘বিষাক্ত কর্মপরিবেশ’ কেন তৈরি হয়? এর জন্য দায়ী কে?
এই প্রশ্নের খুব নির্দিষ্ট উত্তর দেওয়া কঠিন। তবে অভিজ্ঞতা বলে—এটি সাধারণত গুটিকয় কর্মীর চিরায়ত অসভ্যতা, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা কিংবা দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে ঘটে। অনেক সময় ভুক্তভোগীরাও যথাযথ কর্তৃপক্ষকে কিছু জানান না, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।

সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে, সেটি দীর্ঘ মেয়াদে ক্যারিয়ার ও জীবনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সচেতন থাকুন, নিজের অবস্থান মজবুত রাখুন। প্রয়োজনে নিজের ও প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি রক্ষায় নির্ভয়ে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নিন।

তবু এমন একটি চ্যালেঞ্জিং পরিবেশে অনেক কর্মী টিকে থাকার চেষ্টা করেন। বিশেষ করে, প্রতিষ্ঠান ও কাজের প্রতি দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে তারা ধৈর্যের সঙ্গে সর্বোচ্চটা নিংড়ে দেন। এর ফলে প্রতিষ্ঠান তাঁদের অনেক সময় নিবেদিতপ্রাণ কর্মী হিসেবে শনাক্ত করতে পারে।

তবে এটা সত্য—বিষাক্ত কর্মপরিবেশে কাজ করে টিকে থাকা যেমন কঠিন, তার চেয়ে কঠিন হলো মানসিক সুস্থতা বজায় রাখা ও উৎপাদনশীলতা ধরে রাখা। দিন শেষে প্রতিষ্ঠান যে জবাবদিহি চায়, তা আসে মূলত অর্জিত ফলাফল থেকেই। তাই টিকে থাকার বাস্তবমুখী কিছু কৌশল নিচে তুলে ধরা হলো:

টিকে থাকার ৭টি কার্যকর কৌশল

১.

আবেগের সীমানা নির্ধারণ করুন:
বিষাক্ত সহকর্মীর আচরণ কখনোই ব্যক্তিগতভাবে নেবেন না। নিজেকে বারবার মনে করিয়ে দিন—তাঁদের এসব আচরণ তাঁদেরই ব্যর্থতা, এর দায় আপনার নয়। গসিপ কিংবা দোষারোপের খেলায়ও জড়াবেন না। তাঁদের থেকে অহেতুক বিতর্ক এড়িয়ে চলুন।

২. অপেশাদার আচরণ নথিভুক্ত করুন:
বিষাক্ত সহকর্মীরা প্রায়শই অফিসের আচরণবিধি লঙ্ঘন করে থাকেন। সময়–সুযোগমতো তাঁদের আচরণ ও বক্তব্য লিখে রাখুন। কোনো প্রকার কারসাজি, মানসিক নির্যাতন বা তাচ্ছিল্যজনক ভাষা ব‍্যবহার করে থাকলে তার জন্য কাউকে শেয়ার করে সাক্ষী রাখুন ও যথাযথ রেকর্ড সংরক্ষণ করুন।

৩. অফিশিয়াল যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করুন:
অপেশাদার ব্যক্তিদের সঙ্গে একান্ত আলোচনায় না গিয়ে ই-মেইল, অফিস চ্যাট বা গ্রুপ মেসেজিং বেছে নিন। প্রমাণ রাখার জন্য তারিখ, সময় ও বিষয়ের উল্লেখ করুন।

৪. অন্ততপক্ষে একজন সহায়তাকারী সহকর্মী খুঁজুন:
অফিসে বিশ্বাসযোগ্য সহকর্মী বেছে নিন, যার সঙ্গে পেশাগত সমস্যাগুলো ভাগ করে নিতে পারেন। তবে ব্যক্তিগত দুর্বলতা প্রকাশ না করাই শ্রেয়। প্রয়োজনে এইচআর বিভাগের একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তিকেও ঘটনাগুলো মৌখিকভাবে জানিয়ে রাখতে পারেন।

৫. নিজের কাজের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখুন:
নেতিবাচক পরিবেশ উপেক্ষা করে নিজের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করুন। সময়মতো কাজ সম্পন্ন করুন, অর্জিত ফলাফলগুলো রিপোর্ট করুন, যাতে আপনার অবদান দৃশ্যমান থাকে।

৬. নিজের যত্ন নিন ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন:
বিষাক্ত সহকর্মীদের চিন্তা অফিসের পর মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন। কখনো অফিসের চাপ বাসায় টেনে আনবেন না। শারীরিক ব্যায়াম করুন, পরিবার ও বন্ধুদের বেশি করে সময় দিন, শখের কাজ করুন, গান শুনুন কিংবা বই পড়ুন। প্রয়োজনে কিছুদিনের ছুটি নিন।

৭. এক্সপোজার সীমিত ও নতুন সুযোগ অনুসন্ধান করুন:
বিষাক্ত সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ সীমিত করুন। যদি কাজের ব্যাঘাত না ঘটে, তবে তাঁদের এড়িয়ে চলুন। ফেসিয়াল এক্সপ্রেশনে পেশাদার সৌজন্য বজায় রাখুন।

পাশাপাশি নিজের প্রফেশনাল সিভি আপডেট করুন, পেশাগত নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করুন এবং ভালো সুযোগ পেলে নতুন পথে এগিয়ে যান। বিষাক্ত পরিবেশের চাকরি ছাড়ার আগে এক্সিট ইন্টারভিউতে কর্তৃপক্ষকে সবকিছু লিখিতভাবে জানিয়ে দিন।
সবশেষে মনে রাখতে হবে—একটি বিষাক্ত কর্মপরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা প্রশংসনীয়। কিন্তু সেটা নিজের আত্মমর্যাদা বিসর্জন দিয়ে ও মানসিক শান্তির বিনিময়ে নয়।

সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে, সেটি দীর্ঘ মেয়াদে ক্যারিয়ার ও জীবনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সচেতন থাকুন, নিজের অবস্থান মজবুত রাখুন। প্রয়োজনে নিজের ও প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি রক্ষায় নির্ভয়ে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নিন।

এম এম মাহবুব হাসান, ব‍্যাংকার ও উন্নয়ন গবেষক
[email protected]

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র আচরণ কর ম র র জন য পর ব শ র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

ক্ষমা পেয়ে কাজে যোগ দিলেন চিকিৎসক ধনদেব চন্দ্র বর্মণ

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শনে আসা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আবু জাফরের সঙ্গে তর্কে জড়ানো চিকিৎসক ধনদেব চন্দ্র বর্মণকে ক্ষমা করা হয়েছে। শোকজের জবাব সন্তোষজনক হওয়ায় তাঁকে ক্ষমা করে আগের পদ আবাসিক সার্জন (ক্যাজুয়ালটি) পদে বহাল করা হয়েছে। ইতিমধ্যে তিনি কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন।

এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে মুঠোফোনে ধনদেব চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ আমার জবাবে সন্তুষ্ট হয়ে পূর্বের পদে বহাল করেছেন। আমি কাজে যোগ দিয়েছি।’

গতকাল বুধবার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম ফেরদৌস স্বাক্ষরিত একটি পত্র জারি করা হয়। এতে বলা হয়েছে, ‘৬ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শনকালে হাসপাতালের আবাসিক সার্জন (ক্যাজুয়ালটি) ও সহকারী অধ্যাপক (সার্জারি) ইনসিটু, ধনদেব চন্দ্র বর্মণকে মহাপরিচালকের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও অসৌজন্যমূলক আচরণের জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয় এবং সেই সঙ্গে ক্যাজুয়ালটি ওটি ইনচার্জের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। তিনি তাঁর অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের কারণে ক্ষমা চেয়ে এবং ভবিষ্যতে এরূপ অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ করবেন না বলে অঙ্গীকার করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে লিখিত জবাব দাখিল করেন। পরবর্তী সময়ে তাঁর দাখিলকৃত জবাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হয়।’

চিঠিতে আরও বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহোদয় বরাবর প্রেরিত প্রতিবেদন সন্তোষজনক হওয়ায় মহাপরিচালকের উদারতা ও মহানুভবতায় ধনদেব চন্দ্র বর্মণকে ক্ষমা প্রদর্শন করেন এবং তাঁকে পূর্বের কর্মস্থল ক্যাজুয়ালটি ওটি ইনচার্জ পদে পুনর্বহাল রাখার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। সে মোতাবেক তাঁকে ক্যাজুয়ালটি ওটি ইনচার্জের দায়িত্বে পুনর্বহাল করা হলো। এই আদেশ পত্র জারির তারিখ থেকে কার্যকর হবে।’

আরও পড়ুনস্বাস্থ্যের ডিজির সঙ্গে তর্কে জড়ালেন চিকিৎসক, বললেন ‘আমাকে সাসপেন্ড করেন, নো প্রবলেম’০৬ ডিসেম্বর ২০২৫

৬ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আবু জাফর। এ সময় হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি অপারেশন থিয়েটার পরিদর্শনে গিয়ে ডিজি কক্ষের ভেতরে টেবিল থাকার কারণ জানতে চান চিকিৎসকদের কাছে। এ সময় জরুরি বিভাগের ক্যাজুয়ালটি ইনচার্জ ধনদেব চন্দ্র বর্মণ তাঁর সঙ্গে তর্কে জড়ান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক হেনস্তার নিন্দা ও তিন দাবি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের
  • ‘কলেজ জীবনে ভাবতাম, আমি সুন্দর নই আমার শরীর ঠিকঠাক নেই’
  • এ সপ্তাহের রাশিফল (১৩-১৯ ডিসেম্বর)
  • নির্বাচনের তফসিলকে স্বাগত জানালেও সতর্ক থাকার আহ্বান গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটের
  • ‘যারা বলে বেড়াচ্ছিল নির্বাচন হবে না, তাদের মুখে চুনকালি পড়ল’
  • নির্বাচন আচরণবিধি অনুসারে মাসুদুজ্জামানের ব্যানার-পোস্টার অপসারণ
  • ডিজির সঙ্গে তর্ক, ক্ষমা চেয়ে দায়িত্বে ফিরলেন সেই চিকিৎসক
  • ক্ষমা পেয়ে কাজে যোগ দিলেন চিকিৎসক ধনদেব চন্দ্র বর্মণ
  • সকালের অ্যালার্ম, না ফোনভীতি? জেন–জিরা কর্মজীবনের চ্যালেঞ্জ জয় করবেন যেভাবে