ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা নুরুল করিম আকরাম বলেন, সম্প্রতি কিছু সংগঠন যৌনকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি তুলেছে, যা ইসলাম, সংবিধান ও বাঙালি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।

ইসলামী শরীয়তে যৌনপেশা সম্পূর্ণ হারাম এবং সমাজের নৈতিক ভিত্তিকে ধ্বংস করে দেয়। এই চক্রান্ত কোনোভাবেই সফল হতে দেয়া হবে না। আমরা চাই দেশ চজ (অনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে নির্বাচন করুক। প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া জাতীয় নির্বাচন হতে পারে না।

ফতুল্লায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কুতুবপুর সাংগঠনিক ইউনিয়নের সম্মেলনে প্রধান বক্তার বক্তবে তিনি এসব কথা বলেন। শুক্রবার (৯ মে) বিকেল ৩টায় ফতুল্লার রামারবাগে পুতুল ঘর কনভেনশন হলে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। 

এ সময় জেলা সভাপতি মাওলানা দ্বীন ইসলাম বলেন, যেভাবে ২৪শে গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারী সরকার হটানো হয়েছে, নতুন কোনো ফ্যাসিবাদী শক্তি এলেও জনগণ আন্দোলনে নামবে।

বিশেষ অতিথি ফতুল্লা থানা সভাপতি মুহাম্মাদ শফিকুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় নির্বাচন আগে অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত, যাতে জনগণের আস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়।

সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ফতুল্লা থানা শাখার সহ-সভাপতি আলহাজ মুহাম্মাদ আমান উল্লাহ, সেক্রেটারি মুহাম্মাদ জুবায়ের হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী মুহাম্মাদ রুবেল হোসাইনসহ সহযোগী সংগঠন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

সম্মেলনের শেষে প্রধান অতিথি মাওলানা গাজী আতাউর রহমান পুরাতন কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি ঘোষণা করেন এবং শপথ বাক্য পাঠ করান।

নতুন কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন মুহাম্মাদ মাসুদুর রহমান। সহ-সভাপতি মুহাম্মাদ মোশারফ হোসেন ও মুহাম্মাদ ইউনুছ গাজী। সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পান মুহাম্মাদ আবুল বাশার আল আজাদ। 
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

সমাবেশে লোক ভাড়া করে বেশি মাথা দেখানো কী ফল দেয়

গত কয়েক সপ্তাহে রাজধানীতে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সভা হয়ে গেল। এখনো হচ্ছে। বড় বড় রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে জুলাই আন্দোলনের ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন ‘সদ্যোজাত’ দল—সবাই, এই আন্দোলন মাসে সভা করেছে।

সরকারও পিছিয়ে নেই, তারাও জুলাই সনদ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সভা করেছে সংসদ ভবনের সামনে। এই মাসটাতে প্রতিটি সভাই জাতির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ—বিভিন্ন অঙ্গীকার ও তথ্যে ভরপুর।

যাঁরা সভাগুলোয় যোগ দিয়েছেন বা যাঁরা অন্যভাবে সভাগুলোর প্রতি নজর রেখেছেন, তাঁদের জন্য এতসব গুরুগম্ভীর তথ্য সম্ভবত মনে রাখা খুব সহজ নয়। তবে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা, সবার জন্য সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং জুলাই সনদ নিয়ে নেতারা যা যা বলেছেন, সেগুলো মোটাদাগে সবাই স্মরণ করবেন।

তবে একটা জিনিস সবাই মনে রাখবেন। সেটা হলো ‘হেড কাউন্ট’। কোন দলের সভায় কত লোক হলো, কাদের সভায় রাস্তা কতটুকু উপচে উঠেছিল এবং যানবাহন কতক্ষণ বন্ধ ছিল—এই জিনিসগুলো আলোচনায় এসেছে।

আমাদের রাজনীতিবিদদের দরকার হেড কাউন্ট বা মাথার হিসাব। কারা সভায় কত মাথা আনতে পারলেন, তা দিয়ে জনপ্রিয়তা মাপা হয়ে থাকে। সমাবেশে যত বেশি হেড কাউন্ট, টিভি সংবাদ ও পত্রিকায় জনসভার ছবিও তত ভালো দেখাবে।

তবে জনসভার হেড কাউন্ট দল বিচারে বা জনপ্রিয়তার দৌড়ে যে খুব প্রভাব ফেলে, তা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। বিগত সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের প্রতিটি জনসভায় উপচে পড়া ‘মাথা’ থাকত। কিন্তু জনতার স্বতঃস্ফূর্ত হেড কাউন্টের কাছে তারা শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারেনি।

জনসভায় হেড কাউন্ট জিনিসটা আমাদের রাজনীতিতে অনেক দিন ধরে চলে আসছে। একাত্তরের আগে দেখেছি, রাজনৈতিক দলগুলো বাস পাঠিয়ে ডেমরা, তেজগাঁও থেকে শ্রমিকদের নিয়ে আসত। প্রয়োজন হলে কাঁটাবন বস্তি থেকেও লোক আসত। তাতেই ভরে যেত পল্টন ময়দান। ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শেখ মুজিবের সভা ভরাতে বাস-ট্রেনের প্রয়োজন হয়নি, মানুষ নিজেদের উদ্যোগে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসেছিল।

এখন সময় পাল্টে গেছে। সবকিছু এখন ফাইভ স্টারভিত্তিক। দলের কাজকর্ম সব এখন ফাইভ স্টার ভবনে। রাজনৈতিক দলের ইফতার হবে ফাইভ স্টার হোটেলে। নেতাদের গাড়িবহর হবে ১০০টি গাড়িতে। দলের জনসভায় লোক আনানো হবে রেলগাড়িতে।

মাওলানা ভাসানী যখন পল্টনে সভা করতেন, তখন অন্য দলের লোকজনও ওখানে যেত। কারণ, তাঁর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা সব সময়ে তুঙ্গে ছিল। তাঁর সভায় ডান দিকে টুপি মাথায় তাঁর ভক্ত ও মুরিদেরা থাকতেন, বাম দিকে লাল ঝান্ডা হাতে বা লাল পট্টি কপালে বেঁধে তাঁর রাজনৈতিক অনুসারীরা বসতেন। দক্ষিণপন্থী-বামপন্থী কোনো হাঙ্গামা হতো না। সবাই মন দিয়ে তাঁর সাম্যের বাণী শুনতেন। মাওলানা ভাসানী হেড কাউন্ট নিয়ে কখনো খুব মাথা ঘামাতেন না, যা ভাবতেন তাই বলতেন, আর যা বলতেন তা-ই করতেন।

এখন সময় পাল্টে গেছে। সবকিছু এখন ফাইভ স্টারভিত্তিক। দলের কাজকর্ম সব এখন ফাইভ স্টার ভবনে। রাজনৈতিক দলের ইফতার হবে ফাইভ স্টার হোটেলে। নেতাদের গাড়িবহর হবে ১০০টি গাড়িতে। দলের জনসভায় লোক আনানো হবে রেলগাড়িতে।

জনসভার জন্যও কোনো সীমারেখা নেই। মাঠ-ময়দান, রাস্তাঘাট, হাসপাতাল চত্বর সবই বৈধ। রাজনৈতিক দলগুলোর অঢেল টাকা। তার কিছুটা সভা-সমিতিতে হেড কাউন্ট বাড়াতে খরচ হবে, সেটাই স্বাভাবিক।

১৯ জুলাই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মহাসমাবেশ উপলক্ষে বাইরে থেকে সমর্থকদের ঢাকায় আনার জন্য চার জোড়া বিশেষ ট্রেন ভাড়া করা হয়েছিল। ইসলামী আন্দোলনও গাড়ি ও লঞ্চ ভাড়া করে বাইরে থেকে লোক এনে ইদানীং ঢাকায় সভা করেছে। আমির আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘সারা দেশ থেকে কয়েক হাজার গাড়ি রিজার্ভ করা হয়েছে।’

আগে ছাত্ররা সভা করত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায়। বটতলায় সমাবেশ করাটাই ছিল তাদের গর্ব। একুশে যেত শহীদ মিনারে। এখন ছাত্রদের দলগুলো রাজনৈতিক দলগুলোকে পাল্লা দিচ্ছে। বাস-ট্রেন ভাড়া করে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ‘ছাত্র’ আনছে তাদের ‘ছাত্রসভায়’ যোগ দিতে।

জনসমর্থন দেখাতে রাজধানীতে ৩ জুলাই ছাত্রদল ও এনসিপির পৃথক সমাবেশ হয়েছে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে, জনসভায় হেড কাউন্ট বাড়াতে ছাত্রদল চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত ২০ বগির বিশেষ ট্রেন ভাড়া করেছে।

আরও পড়ুনসমাবেশটি আগের মতো ছুটির দিনেও হতে পারতো২৮ মে ২০২৫

প্রথম আলোর খবরে প্রকাশ, ঐতিহাসিক জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ অনুষ্ঠানে সারা দেশ থেকে ছাত্র-জনতা আনতে আট জোড়া ট্রেন ভাড়া করেছে সরকার। এসব ট্রেনে করে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ছাত্র-জনতাকে ৫ আগস্ট ঢাকায় নিয়ে আসার কর্মসূচি নেওয়া হয়। আট জোড়া ট্রেনের জন্য প্রায় ৩০ লাখ ৪৬ হাজার টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও দেশের সব টিভি চ্যানেলে এই অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে, তবু বাইরের থেকে লোক আনতে হয়েছে। কারণ, সরকারের প্রয়োজন হেড কাউন্ট।

রাজনীতির আরেকটা হেড কাউন্টের বর্ণনা আশা করি এখানে অপ্রাসঙ্গিক হবে না। কিছু রাজনৈতিক দলের সভায় এই হেড কাউন্ট সবার চোখে পড়বে—স্টেজের ব্যানারে একটা ফ্যামিলি ট্রি-এর ছবি। বিএনপির ব্যানারে হেড কাউন্ট থাকে তিন—জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান। আওয়ামী লীগের ব্যানারে হেড কাউন্ট দুই—শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনা; তৃতীয়জন তারা এখনো ঠিক করে উঠতে পারেনি।

এক শ বছর পরে, এই দল দুটির ব্যানারে ফ্যামিলি ট্রি আরও বড় হবে, হেড কাউন্টও স্বভাবত আরও অনেক বাড়বে!

আজকাল আমাদের রাজনীতি ও রাজনৈতিক নেতারা প্রায় সবাই পুরোমাত্রায় ঢাকাকেন্দ্রিক হয়ে গেছেন। নেতাদের আগের দিনের মতো ঢাকার বাইরে এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে সভা-সমিতি করতে দেখা যায় না। সেটাও একটা কারণ হতে পারে ঢাকার সভার হেড কাউন্ট বাড়ানোর। নেতারা যাবেন কেন জনগণের কাছে, জনগণকেই আসতে হবে তাঁদের কাছে! জনগণ হলো রাজনৈতিক দলের হেড কাউন্ট।

যুক্তরাষ্ট্রে খোদ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও তাঁর রিপাবলিকান পার্টির প্রতিষ্ঠাতা কে, তা বলতে পারবেন কি না, সন্দেহ আছে। কারণ, ওদের ব্যানারে কোনো ফ্যামিলি ট্রি নেই।

একক হেড কাউন্টের বিষয়টাও এখন বলা যেতে পারে। শেখ হাসিনার সময় টিভি স্ক্রিনের ওপরের বাঁ দিকের কোনায় শেখ মুজিবের একটা মাথার ছবি প্রায়ই দেখা যেত বছরের প্রায় দশটা মাস। স্বাধীনতা দিবস, ৭ মার্চ, মৃত্যুদিবস, জন্মদিবস, বিজয় দিবস, পাকিস্তান থেকে প্রত্যাগমন দিবস ইত্যাদি সব দিবসে মাসব্যাপী অনুষ্ঠান থাকত। এই একক হেড কাউন্টটা শেখ মুজিবের মর্যাদা বাড়াতে কোনো সাহায্য করেনি।

এখন ইন্টারনেট-যুগে আমাদের শহরে গ্রামে প্রায় প্রতিটি জায়গায় ইন্টারনেট সংযোগ আছে। আমাদের জাতীয় দলের একজন বড় নেতা লন্ডনে বসে প্রায় প্রতিদিন বাংলাদেশে তাঁর সমর্থক ও দলীয় নেতাদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি কথা বলছেন। ঢাকার জনসভায়ও তিনি ভার্চ্যুয়ালি যোগ দিয়েছেন।

আরও পড়ুনছাত্রদের নতুন দল কি নতুন রাজনীতি হাজির করতে পারবে২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সুতরাং সশরীর হাজির হয়ে দলের হেড কাউন্ট বাড়াতে হবে, এই যুগে এ ধারণাটা অচল। হেড কাউন্ট বাড়াতে সভাস্থল থেকে দেশের প্রতিটি অঞ্চলে ভার্চ্যুয়াল যোগাযোগ স্থাপন করা যেতে পারে। যার যত সংযোগ এবং প্রতি সংযোগের স্ক্রিনে যত লোক দেখছেন, তার তত হেড কাউন্ট।

রাজনৈতিক দলগুলো ভাড়া করা গাড়িতে বাইরের থেকে লোকজন নিয়ে এসে আরও বড় প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারেন। যদি কোনো অর্বাচীন প্রশ্ন করে বসেন—বাইরের থাকে আনা লোকগুলোও কি ভাড়াটে? আড়াই কোটি লোকের শহরে হেড কাউন্ট দেখাতে, তাদের শহরের বাইরের থেকে লোক আনতে হবে কেন?

আজকাল আমাদের রাজনীতি ও রাজনৈতিক নেতারা প্রায় সবাই পুরোমাত্রায় ঢাকাকেন্দ্রিক হয়ে গেছেন। নেতাদের আগের দিনের মতো ঢাকার বাইরে এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে সভা-সমিতি করতে দেখা যায় না। সেটাও একটা কারণ হতে পারে ঢাকার সভার হেড কাউন্ট বাড়ানোর। নেতারা যাবেন কেন জনগণের কাছে, জনগণকেই আসতে হবে তাঁদের কাছে! জনগণ হলো রাজনৈতিক দলের হেড কাউন্ট।

সালেহ উদ্দিন আহমদ লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

ই-মেইল: [email protected]

*মতামত লেখকের নিজস্ব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১৬ বছরে যারা মজলুম ছিল, আজকে অনেকেই জালেম হয়ে উঠছে: নুরুল হক নুর
  • অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই: বাম গণতান্ত্রিক জোট
  • রাবিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ইউট্যাবের বিজয় র‍্যালি
  • ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনে জামায়াতের আপত্তি নেই: তাহের
  • নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের অধিকারের প্রথম পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হবে: তারেক রহমান
  • ‘অধিকাংশ মানুষ বিএনপিকে ভোট দেবে’
  • সমাবেশে লোক ভাড়া করে বেশি মাথা দেখানো কী ফল দেয়
  • ‘কৃত্রিম’ বন্যা রোধ: বক্তব্যের ফাঁপা প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবতার নির্মম চিত্র
  • ‘১৪ সালে বিএনপির কারণে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জোট হয়নি’
  • দেশবাসীর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন আনিসুল ইসলাম ও মুজিবুল হক