জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি করছে বা করতে চায় এমন কোনো দলকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে আমরা নই। আওয়ামী লীগ সরকার যখন জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছে, আমরা তার প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু যদি গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়, তাহলে প্রশ্ন আসে একাত্তর সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ব্যাপক গণহত্যার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ দায়ী সংগঠনগুলোর বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে? কারণ, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি গণহত্যা হয়েছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়।’

শনিবার দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এর বনানীস্থ কার্যালয় মিলনায়তনে জাতীয় ছাত্র সমাজ কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

জি এম কাদের বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জাতীয় পার্টি সক্রিয়ভাবে রাজপথে ছিল। রংপুরে জাতীয় পার্টির ২ জন নেতা শহীদ হয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের মামলায় আমাদের অন্তত ৪ জন জেল খেটেছেন। মিথ্যা মামলায় আমাদের শতশত নেতা-কর্মী পালিয়ে বেড়িয়েছে। সংসদে ও সংসদের বাইরে আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে কথা বলেছি। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আন্দোলনে আমাদের অবদান শুধু অস্বীকার করাই হচ্ছে না, ছাত্র হত্যার মামলায় অন্যায়ভাবে আমাদের আসামিও করা হচ্ছে। যারা বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলেছে তারাই বৈষম্য সৃষ্টি করছে- এমন অভিযোগ জনগণের মাঝে ব্যাপকভাবে আলোচিত।’

তিনি বলেন, ‘আমরা নাকি নির্বাচনে গিয়ে আওয়ামী লীগকে বৈধতা দিয়েছি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আমার নেতৃত্বে প্রায় ২৭০ জন জাতীয় পার্টির প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছিলাম। আমি তখন মন্ত্রী ছিলাম, বিভিন্নভাবে আমাকে নির্বাচনে থাকতে বলা হয়েছিল। পরবর্তীতে আমাকে মন্ত্রী করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, আমি রাজি হইনি। বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচনে না গেলেও ওই বছর স্থানীয় সরকারের সকল নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। আবার, ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দল নির্বাচনে গিয়েছিল। তাহলে ২০১৪ সালের স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপিসহ অন্যান্য দলগুলো কি আওয়ামী লীগ সরকারকে বৈধতা দেয়নি? ২০২৪ সালের নির্বাচনে আমাদের দলকে ভাঙনের মুখে ফেলে, বিশেষ চাপ সৃষ্টি করে আমাদের নির্বাচনে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। আলোচিত বিষয়টি সম্পর্কে অনেকেই অবগত আছেন। তবে, সে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে আমরা কোনো বেআইনি কাজ করেছি, মনে হয় না। যদি আমাদের নির্বাচনে যাওয়াকে জনগণের প্রত্যাশার বিপক্ষে মনে করে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়, তবে পরবর্তীতে নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণের রায় গ্রহণ, শ্রেষ্ঠ বিচার বলে গণ্য হতে পারে, বলে বিশ্বাস করি।’

জাতীয় ছাত্র সমাজ কেন্দ্রীয় কমিটির মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের, মহাসচিব মো.

মুজিবুল হক চুন্নু। জাতীয় ছাত্র সমাজ এর আহ্বায়ক মারুফ ইসলাম প্রিন্স এর সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব মো. আরিফ আলীর পরিচালনায় উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাড. মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, লিয়াকত হোসেন খোকা, আলমগীর সিকদার লোটন, মনিরুল ইসলাম মিলন, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মো. খলিলুর রহমান খলিল, ইঞ্জিনিয়ার মাইনুর রাব্বী চৌধুরী রুম্মন, একেএম নুরুজ্জামান জামান, ভাইস চেয়ারম্যান মো. হেলাল উদ্দিন, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মাহমুদ আলম, এমএ রাজ্জাক খান, ইব্রাহীম খান জুয়েল, ইঞ্জিনিয়ার এলাহান উদ্দিন, যুগ্ম সম্পাদক সেরনিয়াবাত সেকেন্দার আলী, মো. ইউসুফ, জাতীয় ছাত্র সমাজ এর নেতৃবৃন্দের বক্তব্য রাখেন মো. নাজমুল হাসান রেজা, আরিফুল ইসলাম আরিফ, কাইসারুজ্জামান হিমেল, মো. তারিকুল ইসলাম হাওলাদার, খন্দকার রাসেল মাহমুদ, এমএম রেজাউল করিম, মো. জাহাঙ্গীর আলম রাজিব, মো. সেলিম রানা সিয়াম, হাওলাদার মো. জাহিদ, সাহিদুল ইসলাম সাকিল, রেজাউল করিম সুমন, রিয়াজ সিকদার, মো. মাসুম রানা প্রমুখ।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ এম ক দ র ন ষ দ ধ কর ল ইসল ম আম দ র হয় ছ ল সরক র আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না, জাতির সামনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে: গোলাম পরওয়ার

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, সরকার নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা করলেও সেই নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে কি না, তা নিয়ে জাতির সামনে বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে লুকিয়ে থাকা কিছু ব্যক্তির কুপরামর্শে একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে, যা নতুন সংকট তৈরি করতে পারে।’

আজ রোববার বিকেলে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে আয়োজিত আট–দলীয় জোটের সমাবেশে মিয়া গোলাম পরওয়ার এ কথা বলেন। আট দলের বিভাগীয় সমাবেশগুলোর মধ্যে এটি প্রথম সমাবেশ।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে ও মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি ইমাজ উদ্দিন মন্ডলের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল হক আজাদ, খেলাফত মজলিসের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল বাসিত আজাদ, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির সভাপতি আনোয়ারুল হক, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহসভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন আহম্মেদ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ হক্কানী, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার প্রমুখ বক্তব্য দেন।

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘দেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং পরিবর্তনের বার্তায় বাংলাদেশের সব মানুষকে শামিল হওয়ার আহ্বান জানাই। আমরা এবং অন্যান্য দল সরকারের নির্বাচনী ঘোষণাকে মেনে নিয়েছি। কিন্তু নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা করলেই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, এমন নিশ্চয়তা নেই।’ তিনি জুলাই সনদের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘সংস্কারের বিষয়গুলো জনগণের সামনে স্পষ্ট না করেই গণভোট আয়োজন করা হলে জনগণ বিভ্রান্ত হবে। সাংবিধানিক, বিচার বিভাগীয় ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোগত অনেক সংস্কার হয়েছে। কিন্তু এগুলো সম্পর্কে জনগণকে আগে জানাতে হবে। জনগণ না জেনে কোথায় “হ্যাঁ” বলবে আর কোথায় “না” বলবে?’

প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল। তিনি বলেন, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখনো তৈরি হয়নি। একটি বিশেষ দলের গোপন ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে ইচ্ছেমতো ডিসি, এসপি ও ওসি নিয়োগ দিয়ে প্রশাসনকে নষ্ট করা হচ্ছে। প্রশাসন যদি রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশে হামলা বন্ধ করতে না পারে, তবে তাদের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।’

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে দিনের বেলায় আদালতে হাজিরা দিয়ে যাওয়ার পর খুলনার আদালতের চত্বরে দুজনকে গুলি করে, কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। যে দেশে প্রকাশ্যে এইভাবে কোর্টের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়, সেই প্রশাসনের দায়িত্বে নির্বাচনের দিন ভোট ডাকাতি হবে না, ভোটকেন্দ্রে হত্যা হবে না, আমাদের জানমালকে তারা খুন করে ভোটাধিকার লুট চাইবে না, তার কোনো গ্যারান্টি নাই।’

দেশের সরকার ও পথের পরিবর্তন হলেও জনগণের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে মন্তব্য করেন ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল হক আজাদ। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে ১৯৭১, ১৯৯০ এবং ২০২৪ সালে ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে, প্রতিপক্ষ ঘায়েল হয়েছে। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে আন্দোলন হয়েছিল, সেই ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হয়নি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খলাপাড়ার গণহত্যা দিবস: স্বাধীনতার প্রান্তে শহীদ হন ১০৬ জন
  • গণহত্যায় সূচিত হলো মুক্তির সংগ্রাম
  • নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না, জাতির সামনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে: গোলাম পরওয়ার
  • বারবার মানুষ জীবন দেয় কিন্তু ক্ষমতায় যায় বুর্জোয়ারা: অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
  • ইসরায়েল ‘সংগঠিত ও ব্যাপক নির্যাতনকে  রাষ্ট্রীয় নীতি’ হিসেবে ব্যবহার করছে
  • লন্ডন থেকে প্রেসক্রিপশন দিয়ে কেউ দেশ চালাতে পারবে না: সাদিক কায়েম
  • যাঁরা লুট করেছেন, তাঁদের ধরেন, কারখানাগুলো চালু থাকুক: ফখরুল
  • ১২ বছর পর জিম্বাবুয়ে সফরে অস্ট্রেলিয়া
  • জামায়াতের আমিরের দৃষ্টিতে ফ্যাসিবাদীদের ৫ লক্ষণ, সব লক্ষণ এখনো বিদ্যমান
  • ২০১৪ সালের নির্বাচনে কংগ্রেসের পরাজয়ের পেছনে ছিল সিআইএ ও মোসাদ: দাবি দলীয় নেতার