কিছু সুপারিশ এখনই বাস্তবায়ন করা সম্ভব
Published: 11th, May 2025 GMT
স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশন স্বাস্থ্য খাতে জাতীয় বাজেটের ১৫ শতাংশ এবং জাতীয় আয়ের ৫ শতাংশ বরাদ্দের যে সুপারিশ করেছে, তা বাংলাদেশের বাস্তবতায় বেশি মনে হলেও অযৌক্তিক নয়। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশ স্বাস্থ্য খাতে জাতীয় আয়ের ৫ শতাংশের বেশি ব্যয় করে থাকে। বাংলাদেশ করে ১ শতাংশের কম। গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে যে সামান্য বরাদ্দ হয়, সেটাও পুরোপুরি ব্যয় করা হয় না।
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশন যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, তা নিয়ে ইতিমধ্যে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। কেউ এই প্রতিবেদনকে যুগান্তকারী ঘটনা বলে অভিহিত করেছেন, আবার কেউ বলেছেন, এটা বাস্তবায়নযোগ্য নয়। জাতীয় অধ্যাপক ডা.
কমিশনের সুপারিশ নিয়ে বিতর্ক ওঠা অস্বাভাবিক নয়। অন্যান্য সংস্কার কমিশন নিয়ে আরও বেশি বিতর্ক হয়েছে। এই তর্ক–বিতর্ক ও আলোচনার মধ্য দিয়েই উত্তম কিছু বেছে নিতে হয়। কমিশন তাদের প্রতিবেদনে সংবিধান সংশোধন করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে অন্যতম মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বিনা মূল্যে দেওয়ার সুপারিশ করেছে।
এটা দুর্ভাগ্যজনক যে স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও সব নাগরিকের বেঁচে থাকার মৌলিক উপকরণগুলো জোগাতে রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমান সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদে অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব হিসেবে অভিহিত করলেও বাধ্যতামূলক নয়। এটা বাধ্যতামূলক হওয়া প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অগ্রাহ্য করা যাবে না।
স্বাস্থ্যসেবা সবার জন্য সাশ্রয়ী, মানসম্মত ও সহজলভ্য করতে সরকারি ও বেসরকারি খাতের সমন্বয় ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কথাও বলেছে কমিশন। একসময় সরকারি স্বাস্থ্যসেবাই প্রধান ছিল। সাম্প্রতিক কালে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার প্রসার ঘটেছে। দুই খাতের মধ্যে সমন্বয় থাকা জরুরি।
কমিশন অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ প্রাথমিক পর্যায়ে বিনা মূল্যে ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ভর্তুকি মূল্যে সরবরাহের যে প্রস্তাব করেছে, সেটাও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। তারা জাতীয় ফার্মেসি নেটওয়ার্কের আওতায় ২৪ ঘণ্টা ফার্মেসি চালু করার যে সুপারিশ করেছে, তা বাস্তবায়ন করবে বলে জানিয়েছে সরকার। এতে রোগীদের বিড়ম্বনা ও ওষুধ কেনার খরচ কমবে আশা করা যায়। ক্যানসার, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও তালিকাভুক্ত অ্যান্টিবায়োটিকের শূন্য ভ্যাট করার প্রস্তাবটি বাস্তবায়ন করলে সীমিত আয়ের মানুষ উপকৃত হবে।
ইতিমধ্যে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করেন, এমন সংগঠনগুলো কমিশনের সুপারিশ নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। নাগরিক সংগঠন সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশ কমিশনের কিছু প্রস্তাবকে অবাস্তব মনে করে। বিশেষ করে একজন রোগী একটা রোগের জন্য একজন চিকিৎসককে দেখাবেন বলে কমিশন যে সুপারিশ করেছে, সেটি অবাস্তব বলে মনে করেন চিকিৎসাসেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সরকার বা কমিশন বলে দিতে পারে না কে কোন রোগের জন্য কোন চিকিৎসককে দেখাবেন।
কমিশন বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস’ নামে একটি স্বতন্ত্র কাঠামো গঠনের প্রস্তাব করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়ে থাকেন। একাধিকবার বিশেষ পরীক্ষা নিয়েও চিকিৎসকদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস হলে সেটা লাগবে না। কিন্তু সমস্যা হলো, প্রতিটি বিশেষায়িত খাতের জন্য আলাদা প্রতিষ্ঠান হলে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও ব্যয় বাড়বে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরাও মনে করি, যেসব সুপারিশ এখনই বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলোর বিষয়ে সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিক। যেসব সুপারিশ নিয়ে বিতর্ক উঠেছে, সেসব বিষয়ে আরও বিচার–বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স প র শ কর ছ প রস ত ব র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ফিলিপাইনে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৯
ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার সংখ্যা বেড়ে ৬৯ জন হয়েছে। দেশটির দুর্যোগ-সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা আজ বুধবার এ খবর জানান। বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা ও পানি-বিদ্যুতের সংযোগ আবার চালু করার চেষ্টা করছে ফিলিপাইন সরকার।
দেশটির সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তা রাফি আলেজান্দ্রো সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার আগে সেবু প্রদেশের উত্তরে বোগো শহরের কাছে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি হয়। স্থানীয় হাসপাতালগুলো আহত মানুষের ভিড়ে রীতিমতো উপচে পড়ছে।
আঞ্চলিক সিভিল ডিফেন্স দপ্তরের তথ্য কর্মকর্তা জেন আবাপো বলেন, সেবুর প্রাদেশিক দুর্যোগ দপ্তরের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৬৯ জন। অন্য একজন কর্মকর্তা জানান, আহত হয়েছেন ১৫০ জনের বেশি।
দেশটির প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের দ্রুত সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জানান, মন্ত্রিপরিষদ সচিবেরা ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। প্রিয়জন হারানো ব্যক্তিদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।
সেবু ফিলিপাইনের জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যগুলোর একটি। সেখানে প্রায় ৩৪ লাখ মানুষের বসবাস। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ম্যাকতান-সেবু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম চালু রয়েছে। এটা ফিলিপাইনের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর।
ভূমিকম্পে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সান রেমিগিও শহরটিও। উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য এ শহরে ‘দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা’ ঘোষণা করা হয়েছে। শহরের ভাইস মেয়র আলফি রেইনেস বলেন, উদ্ধারকর্মীদের জন্য খাবার ও পানি, সেই সঙ্গে ভারী সরঞ্জাম প্রয়োজন।
স্থানীয় ডিজেডএমএম রেডিওকে আলফি রেইনেস বলেন, ‘ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। বিদ্যুৎ নেই। আমাদের সত্যিই সহায়তা দরকার। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে পানির তীব্র সংকট রয়েছে। ভূমিকম্পে সেখানে সরবরাহ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
আরও পড়ুনফিলিপাইনে শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত অন্তত ২৬, চলছে উদ্ধারকাজ৫ ঘণ্টা আগে