স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশন স্বাস্থ্য খাতে জাতীয় বাজেটের ১৫ শতাংশ এবং জাতীয় আয়ের ৫ শতাংশ বরাদ্দের যে সুপারিশ করেছে, তা বাংলাদেশের বাস্তবতায় বেশি মনে হলেও অযৌক্তিক নয়। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশ স্বাস্থ্য খাতে জাতীয় আয়ের ৫ শতাংশের বেশি ব্যয় করে থাকে। বাংলাদেশ করে ১ শতাংশের কম। গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে যে সামান্য বরাদ্দ হয়, সেটাও পুরোপুরি ব্যয় করা হয় না।

সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশন যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, তা নিয়ে ইতিমধ্যে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। কেউ এই প্রতিবেদনকে যুগান্তকারী ঘটনা বলে অভিহিত করেছেন, আবার কেউ বলেছেন, এটা বাস্তবায়নযোগ্য নয়। জাতীয় অধ্যাপক ডা.

এ কে আজাদ খানের নেতৃত্বে গত ১৮ নভেম্বর ১২ সদস্যের স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার।

কমিশনের সুপারিশ নিয়ে বিতর্ক ওঠা অস্বাভাবিক নয়। অন্যান্য সংস্কার কমিশন নিয়ে আরও বেশি বিতর্ক হয়েছে। এই তর্ক–বিতর্ক ও আলোচনার মধ্য দিয়েই উত্তম কিছু বেছে নিতে হয়। কমিশন তাদের প্রতিবেদনে সংবিধান সংশোধন করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে অন্যতম মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বিনা মূল্যে দেওয়ার সুপারিশ করেছে।

এটা দুর্ভাগ্যজনক যে স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও সব নাগরিকের বেঁচে থাকার মৌলিক উপকরণগুলো জোগাতে রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমান সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদে অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব হিসেবে অভিহিত করলেও বাধ্যতামূলক নয়। এটা বাধ্যতামূলক হওয়া প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অগ্রাহ্য করা যাবে না।

স্বাস্থ্যসেবা সবার জন্য সাশ্রয়ী, মানসম্মত ও সহজলভ্য করতে সরকারি ও বেসরকারি খাতের সমন্বয় ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কথাও বলেছে কমিশন। একসময় সরকারি স্বাস্থ্যসেবাই প্রধান ছিল। সাম্প্রতিক কালে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার প্রসার ঘটেছে। দুই খাতের মধ্যে সমন্বয় থাকা জরুরি।

কমিশন অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ প্রাথমিক পর্যায়ে বিনা মূল্যে ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ভর্তুকি মূল্যে সরবরাহের যে প্রস্তাব করেছে, সেটাও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। তারা জাতীয় ফার্মেসি নেটওয়ার্কের আওতায় ২৪ ঘণ্টা ফার্মেসি চালু করার যে সুপারিশ করেছে, তা বাস্তবায়ন করবে বলে জানিয়েছে সরকার। এতে রোগীদের বিড়ম্বনা ও ওষুধ কেনার খরচ কমবে আশা করা যায়। ক্যানসার, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও তালিকাভুক্ত অ্যান্টিবায়োটিকের শূন্য ভ্যাট করার প্রস্তাবটি বাস্তবায়ন করলে সীমিত আয়ের মানুষ উপকৃত হবে।

ইতিমধ্যে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করেন, এমন সংগঠনগুলো কমিশনের সুপারিশ নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। নাগরিক সংগঠন সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশ কমিশনের কিছু প্রস্তাবকে অবাস্তব মনে করে। বিশেষ করে একজন রোগী একটা রোগের জন্য একজন চিকিৎসককে দেখাবেন বলে কমিশন যে সুপারিশ করেছে, সেটি অবাস্তব বলে মনে করেন চিকিৎসাসেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সরকার বা কমিশন বলে দিতে পারে না কে কোন রোগের জন্য কোন চিকিৎসককে দেখাবেন।

কমিশন বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস’ নামে একটি স্বতন্ত্র কাঠামো গঠনের প্রস্তাব করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়ে থাকেন। একাধিকবার বিশেষ পরীক্ষা নিয়েও চিকিৎসকদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস হলে সেটা লাগবে না। কিন্তু সমস্যা হলো, প্রতিটি বিশেষায়িত খাতের জন্য আলাদা প্রতিষ্ঠান হলে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও ব্যয় বাড়বে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরাও মনে করি, যেসব সুপারিশ এখনই বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলোর বিষয়ে সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিক। যেসব সুপারিশ নিয়ে বিতর্ক উঠেছে, সেসব বিষয়ে আরও বিচার–বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স প র শ কর ছ প রস ত ব র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সিটি করপোরেশন ও পুলিশ কী করছে

রাজশাহী কলেজের সামনে এক মাস ধরে চলছে ফুটপাতের স্ল্যাব চুরির ঘটনা আর এর করুণ পরিণতি হলো একজন শিক্ষার্থীর নালায় পড়ে গুরুতর আহত হওয়া। সম্প্রতি সেখানে একই ধরনের আরও ঘটনা ঘটেছে। এটি আমাদের নগর ব্যবস্থাপনার অবহেলা ও উদাসীনতার উদাহরণ। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে এমন ঝুঁকিপূর্ণ ফুটপাত কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, প্রায় এক মাস রাজশাহী কলেজের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে, যেখানে হাজারো শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ চলাচল করে, সেখানে ফুটপাতের স্ল্যাব চুরি হচ্ছে। প্রায় ৫০০ মিটার সড়কের দুই পাশে থাকা ফুটপাত থেকে অন্তত ২০টি স্ল্যাব চুরি হয়ে গেছে। গত বছরও শহরের বিভিন্ন রাস্তা থেকে স্ল্যাব ও লোহার ফ্রেম চুরি হয়েছিল, কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সিটি করপোরেশন এ বিষয়ে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি। এবারও স্ল্যাব চুরির ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে বলে জানা গেছে, কিন্তু সেটি সমস্যার সমাধান করতে পারেনি।

নালায় পড়ে আহত হওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম নয়। স্থানীয় লোকজন গত ১০ দিনে অন্তত চারজনকে এই ফুটপাতে পড়ে যেতে দেখেছেন। এটি স্পষ্ট করে যে এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটছে এবং কর্তৃপক্ষের নজরে আসার পরও কোনো প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। একজন কলেজের ফটকের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি নিজের ছেলেকে আহত হওয়ার পর নিজেই চোর ধরার জন্য পাহারা দিচ্ছেন, কিন্তু তাতেও কোনো ফল হচ্ছে না।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল অবিলম্বে এই অরক্ষিত ফুটপাত মেরামত করা এবং স্ল্যাব চুরি রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া। শুধু কাগজে-কলমে ব্যবস্থা নিয়ে নাগরিকদের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলে রাখা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

একজন শিক্ষার্থী পড়াশোনার জন্য শহরে আসে, কিন্তু শহরের অব্যবস্থাপনা তাকে হাসপাতালের বিছানায় ঠেলে দেয়, এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কী হতে পারে?

এ ঘটনা একটি সতর্কতা। অবিলম্বে রাজশাহী কলেজের সামনের ফুটপাত সংস্কার করা হোক। একই সঙ্গে নগরজুড়ে এ ধরনের অরক্ষিত স্থানগুলো চিহ্নিত করে জরুরি ভিত্তিতে সেগুলোর মেরামতের ব্যবস্থা করা হোক। নগর কর্তৃপক্ষের প্রধান দায়িত্ব নাগরিকদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এই দায়িত্ব পালনে তাদের ব্যর্থতা কোনোভাবেই কাম্য নয়। স্ল্যাব চুরির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তৎপর হতে হবে। এসব ক্ষেত্রে দেখা যায়, গ্রেপ্তার হওয়ার পর জামিন নিয়ে বের হয়ে অনেক অভিযুক্ত ব্যক্তি একই কাজে জড়িয়ে পড়েন। তাঁদের কীভাবে এ অপরাধকর্ম থেকে বিরত রাখা যায়, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পুরো আসনের ফল বাতিল করতে পারবে ইসি, ফিরছে ‘না’ ভোট 
  • লালমনিরহাটে সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় একজন গ্রেপ্তার
  • মৌচাকে হাসপাতালের পার্কিংয়ে প্রাইভেটকারে ২ মরদেহ 
  • তুরস্কে ভূমিকম্পে একজন নিহত, ধসে পড়েছে ১৬টি ভবন
  • তুরস্কে শক্তিশালী ভূমিকম্পে একজনের মৃত্যু, আহত ২৯
  • অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া কীভাবে করব
  • সবুজবাগে ব্যবসায়ীকে লক্ষ্য করে দুর্বৃত্তের ছোড়া গুলিতে পথচারী আহত
  • দেব আনন্দর স্বপ্ন সেদিন ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিল
  • ই–মেইলের জমানায় কদর নেই ডাকবাক্সের 
  • সিটি করপোরেশন ও পুলিশ কী করছে