শুভাঢ্যা খাল এখন ‘প্লাস্টিকের ভাগাড়’
Published: 14th, May 2025 GMT
ঢাকার পাশেই দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বুক চিরে বয়ে চলা শুভাঢ্যা খাল একসময় ছিল প্রাণবন্ত জলপথ। বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরীর সংযোগস্থল হিসেবে পরিচিত খালটি দখল ও দূষণে তার অস্তিত্বই হারাতে বসেছে। বেশ কয়েকবার খালটি উদ্ধার ও সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা টেকসই হয়নি। এবার সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ৩১৭ কোটি টাকার নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, একসময় খালটিতে নৌকা চলত, মাছ ধরা যেত, আশপাশের কৃষিজমিতে খালের পানি ব্যবহার করা হতো। এখন খালের প্রায় পুরোটাই দখল, বর্জ্য ও পলিথিনে ভরা। কিছু জায়গায় খাল এমনভাবে ভরাট হয়েছে যে হেঁটে পার হওয়া যায়।
শুভাঢ্যা খালের দৈর্ঘ্য সাত কিলোমিটার। ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চর কালীগঞ্জ থেকে শুরু হয়ে রাজেন্দ্রপুর বাজার এলাকায় গিয়ে শেষ হয়েছে খালটি। ভূমিদস্যুদের দখল ও স্থানীয় লোকজনের ফেলা ময়লা–আর্বজনায় ইতিমধ্যে খালটির অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে।
গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোর এই দুই প্রতিবেদক খালটির চর কালীগঞ্জ, কালীগঞ্জ বাজার, জোড়া ব্রিজ, খালপাড়, নয়া শুভাঢ্যা, কদমতলী, চরকুতুব, ঝাউবাড়ি, বেগুনবাড়ি, গোলামবাজার, রাজেন্দ্রপুরসহ আরও কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখেন। চর কালীগঞ্জ থেকে গোলামবাজার পর্যন্ত তিন কিলোমিটার এলাকা প্লাস্টিক ও বারোয়ারি বর্জ্য ফেলে ভরাট করে ফেলা হয়েছে। চট করে দেখলে মনে হবে, এটি প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলার খাল।
চর কালীগঞ্জ থেকে গোলামবাজার পর্যন্ত খালের এই অংশে কয়েক শ শিল্পকারখানা ও দোকানপাট রয়েছে। কারখানা ও দোকানের সব বর্জ্য ফেলে এটি ভরাট করা হয়েছে। এই অংশে পানির কোনো অস্তিত্ব নেই। মানুষজন সাঁকো ছাড়াই এপার থেকে ওপারে চলাচল করতে পারে। আর উত্তর শুভাঢ্যা থেকে চিতাখোলা পর্যন্ত খালে পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। সেখানে ঘাস জন্মেছে। এর পরের অংশ চিতাখোলা থেকে রাজেন্দ্রপুর পর্যন্ত খালটি খনন করে মাটি দুই পাশে ফেলে রাখা হয়েছে। সেখানে অবশ্য পানি জমে আছে; কিন্তু ওই পানি প্রবাহিত হওয়ার কোনো পথ নেই।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় মানুষজন অনেকটা নিরুপায় হয়ে খালেই বর্জ্য ফেলছে। দিনে একবার ইউনিয়ন পরিষদের তত্ত্বাবধানে এসব এলাকা থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করা হলেও এটি পর্যাপ্ত নয় বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ী ও দোকানিরা। তাঁরা বলছেন, ময়লা জমা রাখতে সুনির্দিষ্ট জায়গা নেই। বর্জ্য বেশি হলে তা খালে ফেলে দিচ্ছেন।
খালপাড় এলাকার বাসিন্দা তোফায়েল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিন যে পরিমাণ বর্জ্য জমছে, তা বিবেচনায় নিয়ে দিনে তিন থেকে চারবার বর্জ্য সংগ্রহ করার সুযোগ থাকলে খালে ময়লা ফেলার প্রবণতা হয়তো কিছুটা কমত।
জানতে চাইলে কেরানীগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাতুল মাওয়া মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ঠিক করার লক্ষ্য নিয়ে তাঁরা কাজ শুরু করেছেন।
খালপাড়ে যত্রতত্র দখল হওয়াকেও এই খালের অপমৃত্যুর জন্য দায়ী মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। খালের পাড়ে বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘদিন ধরে কাঁচাবাজার বসানো হয়েছে। প্রভাবশালীদের সমর্থনে দোকানপাটও তৈরি করা হয়েছে।
গতকাল দুপুরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কদমতলী খালপাড় এলাকায় ফারুক মার্কেটের কাছে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে খালের পাড়ে কাঁচাবাজার বসানো হয়েছে। সব দোকানি খালেই ময়লা ফেলছেন। খালে আবর্জনা কেন ফেলছেন জানতে চাইলে পেঁয়াজ বিক্রেতা আফজাল মিয়া পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, ‘ময়লা তাহলে কোথায় ফেলব?’
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, খালের পাশে অবৈধ স্থাপনার তালিকা মাস ছয়েক আগে করা হয়েছে। যখন খাল খননকাজ শুরু হবে, তখন এসব স্থাপনা ভেঙে ফেলা হবে।
সর্বশেষ গত সোমবার খালটি পরিদর্শন শেষে অন্তর্বর্তী সরকারের পানিসম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, শুভাঢ্যা খাল পুনঃখনন প্রকল্পে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কাজ করবে। খাল খননের পাশাপাশি পাড় বাঁধাই, ওয়াকওয়ে নির্মাণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজও করা হবে। আগামী জুনে কাজ শুরু হয়ে ২০২৬ সালের জুনে শেষ হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এই খাল বাঁচানো মানেই কেরানীগঞ্জকে টিকিয়ে রাখা—এমন মন্তব্য করে আগানগর এলাকার বাসিন্দা হাসিবুর রহমান বলেন, আগের ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়। নতুবা শুভাঢ্যার ভাগ্যে জুটবে আরও কয়েক শ কোটি টাকার ব্যর্থতার গল্প।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বর জ য ফ ল প রথম আল বর জ য ব ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
মুন্সীগঞ্জে আখক্ষেতে বৈদ্যুতিক ফাঁদে প্রাণ গেল কিশোরের
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় আখক্ষেতে পেতে রাখা বৈদ্যুতিক ফাঁদে শাহিন (১৪) নামের এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে।
বুধবার (১৩ জুলাই) সকাল ৮টার দিকে গজারিয়া উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের কলসেরকান্দী গ্রামের সাইদুর রহমানের আখক্ষেত থেকে ওই কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) রাতের কোনো একসময়ে বিদ্যুৎস্পর্শে মারা যায় শাহিন। সে উপজেলার হোসেন্দী ইউনিয়নের ইসমানিরচর গ্রামের জহিরুল ইসলামের ছেলে।
আরো পড়ুন:
কুষ্টিয়ায় বজ্রপাতে ২ কৃষকের মৃত্যু
নৌকায় বিস্ফোরণে দগ্ধ আরো একজনের মৃত্যু
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শিয়ালসহ অন্যান্য প্রাণী থেকে আখক্ষেত রক্ষায় বৈদ্যুতিক ফাঁদ তৈরি করেন জমির মালিক সাইদুর রহমান সেন্টু। মঙ্গলবার রাতের কোনো একসময়ে শাহিন ওই ফাঁদে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আখক্ষেতে পড়ে থাকে। সকালে কয়েকজন পথচারী স্থানীয় সড়ক দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় শাহিনকে পড়ে থাকতে দেখে তার পরিবার ও পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শাহিনের মরদেহ উদ্ধার করে।
এদিকে, শাহিনের মরদেহ উদ্ধারের পর জমির মালিক সাইদুর রহমান সেন্টু বাড়ি থেকে পালিয়েছেন।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য কিরণ সরদার জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বিদ্যুৎস্পর্শে মারা গেছে শাহিন।
গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ার আলম আজাদ জানিয়েছেন, ওই কিশোরের মরদেহ সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হবে। এ বিষয়ে তদন্ত করা হবে।
ঢাকা/রতন/রফিক