হোয়াটসঅ্যাপ আসার আগে মায়ের সঙ্গে কথা বলার জন্য অ্যাপ বানিয়েছিলাম
Published: 16th, November 2025 GMT
তখন হোয়াটসঅ্যাপ ছিল না। বাইরে থেকে বাংলাদেশে টেলিফোন করাটা ছিল এক বিরাট ঝক্কি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রায়ই সময়ে অসময়ে আমাকে বাংলাদেশে মায়ের সঙ্গে কথা বলতে হতো। টেলিফোন করার দু-একটা অ্যাপ আমার আইফোনে ছিল, কিন্তু সেগুলো ছিল খুব বাজে।
হঠাৎ লাইন কেটে যেত, ক্রেডিট কার্ড থেকে বেশি পয়সা কেটে নিতো। একসময় মনে হলো নিজেই একটা টেলিফোন অ্যাপ বানাই না কেন। যেহেতু আইফোন ব্যবহার করি, তাই নিয়েই শুরু করলাম।
কিছুদিন পড়াশোনা করে বুঝলাম, কাজটা সহজ নয়। আর বেশ সময়সাপেক্ষ। ভয়েসওভার টেলিফোন (ভিওআইপি) অ্যাপ্লিকেশন এমনিতেই বেশ জটিল ধরনের অ্যাপ। আর আমরা যেসব প্ল্যাটফর্মে কাজ করি, সেগুলো কতগুলো নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডার্ড ও প্রচলিত প্রটোকল মেনে চলে।
কিন্তু স্টিভ জব আপেলের জন্য সবকিছু নিজস্ব ধারায় করে গেছেন। আপেল তাদের প্ল্যাটফর্মে সব কিছুতে এখনো নিজেদের তৈরি কাস্টম মেনে চলে। তবু কাজ শুরু করলাম, দেখা যাক কতটুকু যাওয়া যায়!
অ্যাপের নাম দিলাম ‘কলকরো’প্রথমে স্ক্রিনের কাজ, যেমন ডায়াল প্যাড ও বিভিন্ন আইকন। যুক্তরাষ্ট্রে এসব গ্রাফিকসের কাজ খুব ব্যয়বহুল। ঠিক করলাম, বাইরের ফ্রিলান্সার দিয়ে করাব। ইন্টারনেটে ফ্রিলান্সারদের ভালো কিছু প্ল্যাটফর্ম আছে। আমার পছন্দ ‘আপওয়ার্ক’। কী কী লাগবে তার বিবরণ দিয়ে একটা ‘প্রয়োজন’ পোস্ট করলাম।
দুই দিনের মধ্যেই সারা দুনিয়ার গ্রাফিকস ডিজাইনার হাজির! দুজনকে বাছাই করে কয়েক দিন ধরে তাঁদের সঙ্গে আমার প্রয়োজন ও অগ্রাধিকারগুলো নিয়ে কথা বললাম। দুজনের মধ্যে ইউক্রেনের ডিজাইনার ছিলেন ব্যয়বহুল।
তাঁকে বাদ দিয়ে ভারতীয় একজন ডিজাইনারকে নিয়োগ দিলাম। এখানে বলে রাখি, ফ্রিলান্সারের পারিশ্রমিক ও টাকাকড়ির লেনদেন সব আপওয়ার্ক ব্যবহার করে করা হয় এবং একটা অংশ তারা কমিশন হিসেবে কেটে নেয়।
গ্রাফিকস ডিজাইন এমন কাজ যে একবারে তৃপ্ত হওয়া যায় না, বারবার আরও ভালো করার চেষ্টা চলতে থাকে। একসময় ডিজাইন শেষ হলো। স্ক্রিন লে–আউট ডিজাইনও বেশ কষ্টসাধ্য। পরের ধাপগুলো ছিল রুটিন—আপেল এপিআই ব্যবহার করে ব্যাকগ্রাউন্ড সার্ভিসগুলো তৈরি করে ব্যবহারকারী ও ব্যাকগ্রাউন্ড সার্ভিসের মধ্যে সংযোগ সৃষ্টি।
অ্যাপস্টোরে ‘কলকরো’ অ্যাপ.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র ড জ ইন করল ম
এছাড়াও পড়ুন:
ঝিনাইদহে ৩২ বছর পর ছেলে পেলেন পিতৃপরিচয়, মা পেলেন স্ত্রীর স্বীকৃতি
ঝিনাইদহে দীর্ঘ ৩২ বছর পর আদালতের মাধ্যমে নির্মাণশ্রমিক মাইদুল ইসলাম (৩২) তাঁর পিতৃপরিচয় পেয়েছেন। তাঁর মা ফরিদা খাতুনকে (৫০) দেওয়া হয়েছে স্ত্রীর মর্যাদা। এখন তাঁরা খুশি।
মাইদুল ও তাঁর মা ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার মামুনসিয়া গ্রামের বাসিন্দা। মাইদুলের বাবা পাশের বাড়ির মোহাম্মদ আলী (৫৮)। তিনি এই দীর্ঘ সময় তাঁর স্ত্রী ও ছেলের স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেন। শেষে বিষয়টি আদালতে মীমাংসা হয়।
গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ফরিদার বাবার বাড়ি ঝিনাইদহ সদরে। বাবা সদর আলী মারা যাওয়ার পর তাঁর মা তিন ছেলে ও ফরিদাকে নিয়ে মামুনসিয়া গ্রামে তাঁর বোনের বাড়িতে চলে আসেন। এরপর ফরিদা তাঁর খালু আবুল হোসেনের বাড়িতেই বড় হন। এখানে প্রায় ৩২ বছর আগে পরিচয় হয় প্রতিবেশী মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে। দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলে একপর্যায়ে তাঁরা গোপনে বিয়ে করেন। তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে মোহাম্মদ আলী বিয়ের কথা অস্বীকার করেন। একসময় এ নিয়ে গ্রামে বিচার–সালিসও হয়। বিচারে মোহাম্মদ আলী তাঁকে অস্বীকার করেন।
ফরিদা খাতুনের ভাষ্য, তাঁর খালু ৩ শতাংশ জমি দিয়েছিলেন তাঁকে। সেখানে সরকারিভাবে নির্মাণ করে দেওয়া একটি ঘরে তিনি এখনো বসবাস করছেন। এই দীর্ঘ সময় তিনি অন্যের বাড়িতে কাজ করে বেঁচে আছেন, ছেলেকে বড় করে তুলেছেন। নিজে আর বিয়ে করেননি। আশা ছিল, তাঁর স্বামী মোহাম্মদ আলী কোনো একদিন তাঁকে মেনে নেবেন।
ছেলে মাইদুল ইসলাম বলেন, তিনি মায়ের কাছে বড় হয়েছেন। বাবার কথা জানতে চাইলে তাঁর মা মোহাম্মদ আলীর কথা বলেছেন। পাশাপাশি এটাও বলেছেন যে তাঁদের মেনে নেননি মোহাম্মদ আলী। এসব শুনে তিনি কষ্ট পেয়েছেন, কিন্তু মায়ের কথা চিন্তা করে কোনো প্রতিবাদ করেননি।
আদালতে যাওয়ার বিষয়ে মাইদুল ইসলাম বলেন, তাঁর বাবার আরেক সংসার আছে। সম্প্রতি তাঁদের বাড়ি যাওয়ার পথ নিয়ে বাবার আরেক পক্ষের ছেলেদের সঙ্গে বিরোধ দেখা দেয়। এ সময় মোহাম্মদ আলী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। যেখানে মাইদুলের নামের শেষে বাবার নাম লেখা হয় ইউনুছ আলী। এটা দেখে তিনি কষ্ট পান। তখন মা ও ছেলে মিলে স্বীকৃতির দাবি নিয়ে আদালতে যান।
মাইদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, চলতি বছরের ২৬ আগস্ট তিনি লিগ্যাল এইডের সহযোগিতায় ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা করেন। পাশাপাশি ওই আদালতে তাঁর মা আরেকটি মামলা করেন। মামলা চলা অবস্থায় আদালতে মোহাম্মদ আলী স্ত্রী-সন্তানের পরিচয় দিতে অস্বীকৃতি জানান। তখন তাঁরা ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। আদালতের নির্দেশে মাইদুল ইসলাম টাকা জমা দিতে চাইলেও মোহাম্মদ আলী সময় নেন। শেষে ১২ নভেম্বর তিনি আদালতে উপস্থিত হয়ে ফরিদা খাতুনকে স্ত্রী ও মাইদুল ইসলামকে ছেলে হিসেবে স্বীকৃতি দেন।
গতকাল শনিবার মামুনসিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মাইদুল বাড়িতে বসে আছেন। তিনি তালসার গ্রামের ঝিনু বেগমকে বিয়ে করেছেন। ঝিনু বেগম বাক্প্রতিবন্ধী। তাঁদের দুই সন্তান। মাইদুলের মা অন্যের বাড়িতে কাজ শেষে বাড়ি ফিরলেন। তিনি হাত উঁচিয়ে দেখালেন তাঁর স্বামীর বাড়ি। স্বামী তাঁকে ঘরে না নিয়ে অন্যত্র বিয়ে করেছেন। সেই ঘরে তাঁর তিন ছেলে ও দুই মেয়ে আছে। ৩২ বছর তিনি স্ত্রীর মর্যাদা পেতে চেষ্টা করেছেন। ছেলেকে নিয়ে কষ্ট নিয়ে সমাজে চলেছেন। এখন তাঁদের আশা পূর্ণ হয়েছে।
মামুনসিয়া গ্রামের বাসিন্দা কামাল হোসেন বলেন, ঘটনাটির বিচার একসময় তাঁরা করেছিলেন। সে সময় মোহাম্মদ আলী কোনোভাবেই ফরিদা খাতুনকে মেনে নিতে চাননি। যে কারণে তাঁরা ফরিদাকে ঘরে তুলে দিতে পারেননি।
মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে মুঠোফোনে তিনি জানান, তিনি আদালতে গিয়েছিলেন। তাঁদের সঙ্গে কথা হয়েছে, তাঁরা মামলা তুলে নেবেন। তিনিও তাঁদের স্বীকৃতি দিয়েছেন।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী আশরাফুল আলম জানিয়েছেন, তাঁরা আদালতে ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন করলে বিবাদীপক্ষ নানা অজুহাতে টালবাহানা করে। একপর্যায়ে মোহাম্মদ আলী আদালতে স্ত্রী-সন্তানের স্বীকৃতি দেওয়ার কথা জানান।