শাহরিয়ার হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিলেন প্রত্যক্ষদর্শী বন্ধু
Published: 14th, May 2025 GMT
গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘোরার পর একটি মোটরসাইকেলে করে ক্যাম্পাসে ফিরছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য (২৫) ও তাঁর দুই বন্ধু। পথে অন্য একটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে তাঁদের মোটরসাইকেলের ধাক্কা লাগে। ওই মোটরসাইকেলের দু-তিন আরোহী ও তাঁদের সঙ্গে থাকা আরও দু-তিনটি মোটরসাইকেলের আরোহীসহ মোট ১০-১২ জনের সঙ্গে শাহরিয়ারদের তর্কাতর্কি হয়। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তিরা তাঁদের মারতে শুরু করেন। তাঁরাও আত্মরক্ষার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। এর মধ্যেই শাহরিয়ারকে ছুরিকাঘাত করা হয়।
শাহরিয়ারের সঙ্গে থাকা বন্ধু আশরাফুল আলম রাফি প্রথম আলোর কাছে ঘটনার এমন বর্ণনা দেন। আজ বুধবার সন্ধ্যায় কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। নিহত শাহরিয়ারও একই শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত ছিলেন। শাহরিয়ার স্যার এ এফ রহমান হলের শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন।
আশরাফুল আলম বলেন, ‘আমরা তিনজন (সাম্য, রাফি ও মো.
কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে তাঁদের তিনজনের ওপর ওই ব্যক্তিরা আক্রমণ করেন বলে জানান আশরাফুল আলম। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আত্মরক্ষার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু এর মধ্যে সাম্যকে ছুরিকাঘাত করা হয়। সাম্যর শরীর থেকে প্রচুর রক্ত ঝরে। বলা যায়, ঘটনাস্থলেই সাম্য মারা যায়। অর্থাৎ স্পট ডেথ।’
আশরাফুল বলেন, ৬-৭ বছর তাঁরা একসঙ্গে পড়াশোনা করেছেন। তাঁদের সম্পর্কটা শুধু বন্ধু নয়, ভাইয়ের মতো ছিল।
শাহরিয়ার আলম হত্যার ঘটনায় গতকাল রাতে ও আজ দিনভর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। ক্যাম্পাসে শাহরিয়ারের জানাজা হয়েছে। এ হত্যার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এরই মধ্যে ঘটনা তদন্তে আজ সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই হত্যার ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেছে ছাত্রদল।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আশর ফ ল
এছাড়াও পড়ুন:
২৬ টুকরো লাশ উদ্ধার: প্রধান আসামিসহ গ্রেপ্তার ২
ঢাকার জাতীয় ঈদগাহ মাঠের গেটের কাছ থেকে দুটো ড্রামের ভেতর থেকে ব্যবসায়ী আশরাফুলের মরদেহের ২৬ টুকরো উদ্ধারের ঘটনায় প্রধান আসামিসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার দুজন হলেন, আশরাফুলের বন্ধু জরেজুল ইসলাম ও তার প্রেমিকা শামীমা আক্তার।
কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে জরেজুলকে গ্রেপ্তার করে ঢাকার ডিবি পুলিশ। আর শামীমাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তাঁর কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডের আলামত উদ্ধার করা হয়েছে বলে র্যাব জানিয়েছে।
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) রাতে ডিএমপি গণমাধ্যম শাখার উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য জানান।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে মিন্টু রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাবেন ডিবি প্রধান।
অন্যদিকে, খুদে বার্তায় শুক্রবার রাতে র্যাব সদরদপ্তর থেকে জানানো হয়, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে পরকীয়ার কারণে এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত জানানো হবে।
শুক্রবার নিহত আশরাফুল হকের বোন আনজিরা বেগম বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় জরেজুল ইসলামকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
নিহত আশরাফুল হক (৪৩) দিনাজপুরের হিলি বন্দর থেকে পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, আলুসহ কাঁচামাল সরবরাহ করতেন। তার গ্রামের বাড়ি রংপুর।
ডিবি সূত্রে জানা গেছে, আশরাফুল ও মালায়েশিয়াপ্রবাসী জরেজুল বাল্যবন্ধু। তাদের বাড়ি রংপুরের একই গ্রামে। তিন বছর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘বিগো লাইভে’ কুমিল্লার এক প্রবাসীর স্ত্রী শামীমা আক্তারের সঙ্গে জরেজুলের পরিচয় হয়। শামীমা দুই সন্তান নিয়ে কুমিল্লায় বসবাস করেন। একপর্যায়ে জরেজুল ও শামীমা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। জরেজুল মাঝেমধ্যেই মালয়েশিয়া থেকে দেশে আসতেন এবং শামীমার সঙ্গে সময় কাটাতেন। এই সম্পর্কের কথা জরেজুল তার বন্ধু আশরাফুলকে জানিয়েছিলেন। একসময় জরেজুলের কাছ থেকে আশরাফুল শামীমার ফোন নম্বর নেন। তিনিও শামীমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর তাদের মধ্যে দুজনের মধ্যেও সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর জরেজুল মালয়েশিয়া থেকে দেশে আসেন। এরপর ঢাকার দক্ষিণ দনিয়া এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নেন। ওই বাসায় তিনি শামীমাকে নিয়ে ওঠেন। শামীমা তার দুই সন্তানকে কুমিল্লায় রেখে আসেন। গত মঙ্গলবার জরেজুল তার বন্ধু আশরাফুলকে সঙ্গে নিয়ে ওই বাসায় আসেন। একপর্যায়ে জরেজুল বুঝতে পারেন, শামীমার সঙ্গে আশরাফুল সম্পর্কে জড়িয়েছেন।
এ ঘটনার জেরে আশরাফুলকে হত্যা করা হয় এবং লাশ গুমের জন্য ২৬ টুকরো করে দুটি নীল রঙের ড্রামের ভেতর ভরে হাইকোর্টসংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠের গেটের কাছে ফেলে দেওয়া হয় বলে ডিবি পুলিশ জানায়। নিহতের ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে পরিচয় শনাক্ত করা হয়।
ঢাকা/এমআর/ইভা