বিনয়ী, প্রতিবাদী সাম্যের হত্যা মানতে পারছে না কেউ
Published: 15th, May 2025 GMT
দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারানো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য (২৫) ছিলেন সদা বিনয়ী। সিরাজগঞ্জের বেলকুচির সড়াতৈল মধ্যপাড়া গ্রামের সন্তান সাম্যর পরিবারেরই এলাকায় ঝামেলায় জড়ানোর রেকর্ড নেই। এমন ভদ্র ছেলে হত্যার শিকার হতে পারেন– তা মানতেই পারছেন না গ্রামবাসী।
বন্ধু-পরিচিতজনের কথা– নম্র হলেও যে কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদে সাম্য থাকতেন এগিয়ে। তাঁর এই গুণের কথা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও।
গতকাল বুধবার এক ফেসবুক পোস্টে আসিফ মাহমুদ লেখেন, ‘২০১৯ সালের দিকে ক্যাম্পাসে গেস্টরুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে কিংবা শিক্ষার্থীদের যে কোনো যৌক্তিক দাবির আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে যেসব মুখ সবসময় দেখা যেত, সাম্য তাদের একজন। মশিউর আমিন শুভ আর Shahriar Alam Shämmo– এই দু’জন সবসময় একসাথে আসতো। প্রথম বর্ষ থেকেই সাম্য ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী এবং অসম্ভব ভদ্র একজন ছেলে। সেই ছোট ভাই সাম্য আজ আর আমাদের মাঝে নেই– এটা মেনে নেওয়া সত্যিই কষ্টকর।’
ঢাবির শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র সাম্য ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক। গত মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতর দিয়ে মোটরসাইকেলে হলে ফেরার পথে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে আহত হন সাম্য। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় সাম্যের বড় ভাই শহিদুল আলম সৈকতের মামলায় গতকাল তিন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে গণমাধ্যমে সাম্যর মৃত্যুর খবর জেনে সকাল থেকেই তাঁর বেলকুচি উপজেলার সড়াতৈল গ্রামের বাড়িতে ভিড় করেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা। বুধবার দুপুরে সরেজমিন সাম্যর গ্রামের বাড়িতে দেখা যায়, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীর ভিড়। তাদের সবারই আফসোস– এমন একটি ছেলে অকালে ঝরে গেল!
সাম্যর ছোট চাচা কায়সারুল আলম কায়েস জানান, তাঁর বড় ভাই ফারহাদ হোসেনের চার ছেলের মধ্যে সবার ছোট ছিল সাম্য। ভাতিজারা গ্রামে বড় হলেও এখন সবাই থাকে ঢাকায়। ভাই ফরহাদ বিদেশ থেকে ফিরে ব্যবসা সূত্রে ঢাকায় থাকেন। ২০১৫ সালে সাম্যর মা মারা যান।
তিনি বলেন, আমাদের পরিবারের প্রায় সবাই উচ্চশিক্ষিত। আমাদের বংশে উচ্ছৃঙ্খল কোনো সদস্য নেই। আমরা কখনও এলাকায় মারামারি দূরে থাক, কোনো ঝামেলাতেই জড়াইনি। তার পরও সাম্যর মতো নম্র-ভদ্র একটা ছেলে যে হত্যার শিকার হতে পারে, তা মানাই যায় না। আমরা এ হত্যার উপযুক্ত বিচার চাই।
ওই গ্রামের মামুন বিশ্বাস বলেন, সাম্যদের পরিবারের সবাই উচ্চশিক্ষিত, ঢাকায় থাকেন। ঈদ ও বিশেষ অনুষ্ঠান উপলক্ষে তারা গ্রামে আসেন। সাম্যকে মেধাবী হিসেবে দেখেছি। এলাকার কারও সঙ্গে কোনো ঝামেলার খবর কখনও শুনিনি। এমন মেধাবী একটা ছেলে এভাবে ঝরে যাবে, আমরা কখনও ভাবিনি।
সাম্য হত্যায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে গতকাল বুধবার সিরাজগঞ্জ শহরে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। এতে নেতৃত্ব দেন জেলা ছাত্রদল সভাপতি জুনায়েদ হোসেন সবুজ, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল কায়েস প্রমুখ।
এদিকে গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রথম জানাজা শেষে সন্ধ্যায় সাম্যর মরদেহ সড়াতৈল গ্রামে নেওয়া হয়। এ সময় স্বজনের আহাজারিতে হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
সাম্যর বড় ভাই আমিনুল ইসলাম সাগর এ সময় বলেন, আমরা তো কারও কখনও ক্ষতি করিনি। এমনকি আমার ভাই তো কারও সঙ্গে কখনও ঝামেলায় জড়ায়নি। তাহলে কেন এভাবে তাকে অকালে প্রাণ হারাতে হলো।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
গোপন বিয়ের ছবি প্রকাশ না করার কারণ জানালেন রানী
বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী রানী মুখার্জি। প্রযোজক আদিত্য চোপড়ার সঙ্গে দীর্ঘ পাঁচ বছর প্রেম করেন। আর এ খবর পুরোটাই গোপন রেখেছিলেন। ২০১৪ সালে বিয়ে করেন এই জুটি। তা-ও বিদেশে। এ খবরও গোপন রেখেছিলেন তারা। পরবর্তীতে বিয়ের ঘোষণা দেন রানী মুখার্জি। তবে বিয়ের ছবি প্রকাশ করেননি এই তারকা যুগল।
ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন রানী মুখার্জি। এ আলাপচারিতায় বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। গোপন বিয়ের ছবি প্রকাশ না করার কারণও ব্যাখ্যা করেছেন এই অভিনেত্রী।
আরো পড়ুন:
পণ্ডিত চন্নুলাল মারা গেছেন
‘আমি আর জাহ্নবী মেঝেতে ঘুমিয়ে ছিলাম’
রানী মুখার্জি বলেন, “আমি সবসময় ব্যক্তিগত জীবনকে ব্যক্তিগত রাখি। আমার কর্মজীবন আর ব্যক্তিগত জীবন আলাদা। আপনি যদি লক্ষ্য করেন, তাহলে দেখবেন আমি শুধু প্রয়োজনে জনসমক্ষে আসি, তা-ও সেটা সবসময় না। কারণ কিছু জিনিস নিজের জন্য রাখতে হয়। আপনাকে আপনার পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। সব কিছু সবার দেখার জন্য নয়।”
স্বামী আদিত্য চোপড়া ও রানীর মতাদর্শ এক। তা জানিয়ে ‘ব্ল্যাক’খ্যাত এই অভিনেত্রী বলেন, “আমাদের দুজনের মতাদর্শ এক। আমরা আমাদের মেয়ের ক্ষেত্রেও একই দর্শন অনুসরণ করি। আমরা চাইনি, সে এমন একটা অবস্থায় থাকুক যেখানে সে অতিরিক্ত আলোচনায় চলে আসে বা সে ভাবুক যে তার জীবনে বিশেষ কিছু ঘটছে...। তার জীবন যেন একেবারেই স্বাভাবিক হয়। এমন নয় যে, কেউ তাকে দেখে চিনে ফেলছে বা তাকে আলাদাভাবে বিচার করছে।”
আদিরা যখন নিজের পেশা বেছে নেবে, তখন তার প্রাপ্ত সম্মান যেন তার নিজের যোগ্যতায় আসে। এ তথ্য উল্লেখ করে রানী মুখার্জি বলেন, “আদিরা তার যোগ্যতায় যা কিছু অর্জন করবে, সেটাই ওর প্রকৃত পরিচিতি হবে। এই স্বীকৃতি সে পায় না, পেয়েছে বিখ্যাত বাবা-মায়ের কারণে—এমনটা যেন না হয়। আদিরা যেন নিজে নিজের পরিচিতি তৈরি করে।”
‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’ সিনেমার জন্য ৭১তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন রানী। বয়সজনিত জটিলতার কারণে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অনুষ্ঠানে মায়ের সঙ্গে যেতে পারেনি আদিরা। রানী কন্যা আদিরার আদ্যক্ষর খচিত একটি নেকলেস পরে অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন; যাতে আদিরাকে হৃদয়ের কাছে রাখতে পারেন।
রানী মুখার্জি বিশ্বাস করেন আদিরার নিজস্ব মতামত রয়েছে, সে বড় হয়ে নিজের পথ নিজেই নির্ধারণ করবে। রানীর ভাষায়—“আমি নিশ্চিত, আদিরা যখন নির্দিষ্ট বয়সে পৌঁছাবে, ও ওর বাবার সঙ্গে সুন্দরভাবে আলোচনা করবে এবং নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিজেই নেবে, সে যেমন চায়, ঠিক তেমন।”
ঢাকা/শান্ত