গরমে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ছে। অসহ্য গরমে গলা যখন শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়, তখন চোখের সামনে যে ধরনের পানীয় থাকুক না কেন, তা দিয়ে গলা ভেজাতেই মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে। পানীয় দূষিত, না বিশুদ্ধ– সেদিকে কারও নজর থাকে না। এভাবে খাদ্য ও পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে।

ডায়রিয়ার জীবাণু

দেশে এ সময় ব্যাপক হারে ডায়রিয়ার প্রধান কারণ রোটা ভাইরাস, কখনও কখনও নোরো ভাইরাস। অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন জীবনযাপন, যেখানে-সেখানে ও পানির উৎসের কাছে মলত্যাগ, সঠিকভাবে হাত না ধোয়া, অপরিচ্ছন্ন উপায়ে খাদ্য সংরক্ষণ এবং দোকান, রেস্তোরাঁ বা বাসায় ফ্রিজে পচন ধরা খাবার গ্রহণের ফলে ডায়রিয়া হতে পারে। 

যা করণীয়

ডায়রিয়া হলে শরীর দ্রুত পানিশূন্য হয়ে যায় এবং রক্তে লবণের তারতম্য দেখা দেয়। এ দুটি রোধ করাই ডায়রিয়ার মূল চিকিৎসা।

প্রাথমিক পরিচর্যা

প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর বয়স অনুযায়ী পরিমাণমতো খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। এ ছাড়া ডাবের পানি, ঘরে তৈরি তরল খাবার, যেমন– ভাতের মাড়, চিড়ার পানি, তাজা ফলের রস ইত্যাদি দেওয়া যেতে পারে। স্বাভাবিক খাবারও পাশাপাশি চালিয়ে যেতে হবে। বুকের দুধ খাওয়া শিশুরা খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি বুকের দুধও খাবে।

ডায়রিয়ার জটিলতা

পাতলা পায়খানার সঙ্গে রক্ত, জ্বর, পেটব্যথা বা কামড়ানো, পিচ্ছিল মল, মলত্যাগে ব্যথা ইত্যাদি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে হবে। প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া বা জিভ ও ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, নিস্তেজ ভাব পানিশূন্যতার লক্ষণ। এসব লক্ষণ দেখা দিলে বা বমির কারণে পর্যাপ্ত স্যালাইন না খেতে পারলে রোগীকে হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে।

ডায়রিয়া প্রতিরোধে করণীয়

রাস্তাঘাটের শরবত, পানি, খাবার ইত্যাদি পরিহার করতে হবে।
পচা-বাসি খাবার খাওয়া যাবে না।
হাত পরিষ্কার করে খাবার খেতে হবে।
ছয় মাসের কম বয়সী শিশুকে শুধু মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
খাবার তৈরি ও শিশুকে খাওয়ানোর আগে এবং মলত্যাগের পর সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে।
সেদ্ধ করে পানি ব্যবহার করতে হবে।
স্যানিটারি ল্যাট্রিন ব্যবহার করতে হবে।

লেখক : অধ্যাপক, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গরম র করত

এছাড়াও পড়ুন:

সদ্য জন্ম দেওয়া সন্তানসহ ক্লিনিকে এইচএসসি পরীক্ষা দিলেন শিক্ষার্থ

অদম্য ইচ্ছাশক্তির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন শরীয়তপুর সরকারি কলেজের মানবিক বিভাগের একজন এইচএসসি পরীক্ষার্থী। সন্তান জন্মের দুই দিন পর রবিবার (২৯ জুন) ক্লিনিকেই এইচএসসি’র দ্বিতীয় পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন তিনি।

শিক্ষার্থীর পরিবার জানায়, শরীয়তপুর সদর উপজেলার তুলাশার গ্রামের ইশা আলম নামে এই শিক্ষার্থীর বিয়ে হয় গত বছরের ২৮ জুন। তার বাবার নাম মো. শাহআলম সিকদার। স্বামী একই উপজেলার কাশাভোগ এলাকার মুজিবুর রহমানের ছেলে মাহবুবুর রহমান তুষার ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। 

সন্তানসম্ভবা অবস্থায় চলতি এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছিলেন ইশা। গত বৃহস্পতিবার বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষা দিয়েছিলেন ইশা। শুক্রবার (২৭ জুন) রাতে প্রসব বেদনা শুরু হলে তাকে শরীয়তপুর সদর উপজেলার নিপুণ ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ওই রাতেই সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি। এরপর রবিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ছিল তার বাংলা ২য় পত্র পরীক্ষা।

ইশার পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল সরকারি গোলাম হায়দার খান মহিলা কলেজে। তবে শারীরিক অবস্থার কারণে কলেজের শিক্ষক মো. মাসুম মিয়ার পরামর্শে কলেজ অধ্যক্ষের কাছে ক্লিনিকেই পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। অধ্যক্ষের অনুমতি পাওয়ার পর রবিবার সকালে একজন মহিলা শিক্ষক ও একজন মহিলা পুলিশ উপস্থিত থেকে নিপুণ ক্লিনিকের বিছানাতেই পরীক্ষার আয়োজন করা হয়।

ইশা আলম বলেন, ‘‘আমি আইন পড়তে চাই, বিচারক হয়ে নিপীড়িত নারীদের পাশে দাঁড়াতে চাই। সন্তান জন্মের পরও পরীক্ষা দিতে পেরে আমি আনন্দিত। আল্লাহ, শিক্ষক, পরিবার, সহকর্মী ও চিকিৎসকদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’’ 

তিনি আরও বলেন, ‘‘গর্ভকালীন সময়েই পরীক্ষার সময় চলে আসে। তবে আমি মনোবল হারাইনি। পরিবারের উৎসাহ ও সহযোগিতায় এই অবস্থাতেও পরীক্ষায় বসার সিদ্ধান্ত নেই। আমি বিশ্বাস করি, মনোবল ধরে রাখলে প্রত্যেক মেয়েই নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে।’’ 

ইশার মা সুহাদা বেগম বলেন, ‘‘মেয়ের এমন সাহস আর মনোবল দেখে গর্বিত। এমন অবস্থায়ও যে সে পরীক্ষা দেবে, তা কখনও ভাবিনি। সবাই দোয়া করবেন আমার মেয়ে ও নাতনির জন্য।’’ 

ইশার স্বামী তুষার বলেন, ‘‘ইশা সবসময় পড়াশোনার বিষয়ে আমাকে পাশে থাকতে বলেছে, আমি চেষ্টা করেছি সাপোর্ট দিতে। কিন্তু সন্তান জন্মের পরপরই পরীক্ষা দেবে তা কখনও ভাবিনি। পরে আমি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষের কাছে লিখিতভাবে বিষয়টি জানাই। এরপরেই স্যারসহ সকলে ওকে সহযোগিতা করেছেন পরীক্ষা দেওয়ার জন্য। আল্লাহ ওদের সুস্থ রাখুক।’’ 

ক্লিনিকের গাইনি বিশেষজ্ঞ ও কনসালট্যান্ট ডা. হোসনে আরা বেগম রোজী বলেন, ‘‘২৭ জুন রাতে প্রসববেদনা নিয়ে ইশা আমাদের কাছে এসেছিলেন। তার প্রবল ইচ্ছে ছিল পরীক্ষা দেওয়ার। তার মনের শক্তির কারণে শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা দিয়েছে। এখন মা ও মেয়ে দুজনেই সুস্থ আছেন।’’ 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কেন্দ্র সচিব ও সরকারি গোলাম হায়দার খান মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. ওয়াজেদ কামাল বলেন, ‘‘শিক্ষকরা সবসময় মানবিক। সিজারিয়ান পদ্ধতিতে সন্তান জন্ম দেওয়ার পরও পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অদম্য ইচ্ছা প্রকাশ করে ইশা আলম। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ হাসপাতালে এক নারী শিক্ষক ও নারী পুলিশ সদস্যের উপস্থিতিতে পরীক্ষার ব্যবস্থা করে। ইশার হাতের লেখা ছিল সুন্দর, পরীক্ষাও দিয়েছে ভালো। মা ও নবজাতক দুজনেই সুস্থ। আল্লাহর কাছে প্রার্থণা, একদিন এই শিশুকন্যাও গ্র্যাজুয়েট হয়ে মায়ের স্বপ্ন পূরণ করুক।’’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সদ্য জন্ম দেওয়া সন্তানসহ ক্লিনিকে এইচএসসি পরীক্ষা দিলেন শিক্ষার্থ
  • সামাজিক মাধ্যমে বাড়বে কনটেন্ট চাহিদা
  • আমি আফরান নিশোর ফ্যান: স্বস্তিকা
  • যত্নে থাকুক মন...
  • আম্পায়ারিং নিয়ে ক্ষোভ ওয়েস্ট ইন্ডিজের, জবাবদিহির আওতায় আনার পরামর্শ
  • আ.লীগ আর কখনও সুস্থ ন্যারেটিভ নিয়ে ফিরতে পারবে না: মান্না
  • জয়া আহসান কবে বিয়ে করবেন?
  • নাটকে ভালোবাসার গল্পের প্রাধান্য