‘মা হওয়ার পর নারীর জীবন বদলে যায়, তা যেমন কঠিন, তেমনিই অসাধারণ’
Published: 18th, May 2025 GMT
৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে নিজের নতুন ছবি ‘ডাই মাই লাভ’এর প্রচারে এসে মাতৃত্ব ও প্রসব-পরবর্তী মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অকপট মন্তব্য করলেন অস্কারজয়ী অভিনেত্রী জেনিফার লরেন্স। কানের প্রেস কনফারেন্সে তিনি বললেন, “মাতৃত্ব অত্যন্ত একাকীত্বপূর্ণ বিষয়। অনেক সময় মনে হয় আপনি যেন একজন এলিয়েন।”
‘ডাই মাই লাভ’ একটি মানসিক থ্রিলার। যেখানে এক সদ্য মা হওয়া নারী ধীরে ধীরে মানসিক ভারসাম্য হারানোর গল্প তুলে আনা হয়েছে। এই ছবিরে প্রেস কনফারেন্সে বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে লরেন্স জানান, প্রথম সন্তানের জন্মের পর এই সিনেমার শ্যুটিং তার জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল। তিনি বলেন, ‘আমি তখন নতুন মা। নিজের অনুভূতির সঙ্গে চরিত্রের অনুভূতিকে আলাদা করা ছিল অত্যন্ত কষ্টকর।’
ছবিতে লরেন্সের স্বামীর চরিত্রে রয়েছেন রবার্ট প্যাটিনসন। এটি লেখিকা অ্যারিয়ানা হারউইচের ২০১৭ সালের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত। ছবিটির প্রিমিয়ার শেষে দর্শকদের ছয় মিনিট দীর্ঘ করতালিতে মুখরিত হয়ে ওঠে কানের প্রেক্ষাগৃহ।
লরেন্স আরও জানান, ‘আমি যখন ছবিটির শ্যুটিং করি, তখন আমার দ্বিতীয় সন্তান গর্ভে। সন্তান হওয়ার পর জীবন বদলে যায়। তা যেমন কঠিন, তেমনি অসাধারণ। আমার কাজের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে। আমি আগের চেয়ে অনেক বেশি সংবেদনশীল। সন্তানরা আমাকে সৃজনশীলভাবে পরিবর্তন করেছে।’
ছবির শ্যুটিংয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে জেনিফার বলেন, “প্রথম দিনের আগের দিন পরিচালক লিন আমাদের একটি দৃশ্য দেখান যেখানে চরিত্রদ্বয় একে অপরকে বাঘের মতো আক্রমণ করছে। বললেন, ‘তোমরা এটা নগ্ন হয়ে করবা, ঠিক আছে?’ আমরা তখন শুধু বললাম, ‘ওকে।’ এটাই ছিল শ্যুটিংয়ের প্রথম দিন।”
কানের অফিসিয়াল প্রতিযোগিতা বিভাগে লড়ছে ছবিটি। ইতোমধ্যে কানে ভালো সাড়া পেয়েছে। গত ১৩ মে দক্ষিণ ফ্রান্সের কান শহরের পালে দ্য ফেস্টিভ্যালে শুরু হয়েছে ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসব। চলবে ২৪ মে পর্যন্ত। এই উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক লালগালিচা পর্ব। এই পর্বে বিশ্বের খ্যাতিনামা অভিনেত্রী, গায়িকা ও মডেলরা বাহারি পোশাকে হাঁটেন। এবারের আসরে মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে নির্বাচিত হয়েছে ২২টি চলচ্চিত্র। এছাড়া ‘আঁ সার্তে রিগা’, ‘আউট অব কম্পিটিশন’, ‘মিডনাইট স্ক্রিনিংস’, ‘কান প্রিমিয়ার’ এবং ‘স্পেশাল স্ক্রিনিংস’-প্রতিটি বিভাগেই দেখা যাবে নানা ঘরানার, নানা দেশের চলচ্চিত্র।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক ন চলচ চ ত র উৎসব চলচ চ ত র
এছাড়াও পড়ুন:
রবীন্দ্রসরোবরে সুরে–ছন্দে জমজমাট নবান্ন উৎসব
অগ্রহায়ণের প্রথম দিনে নবান্ন উৎসব হলো রাজধানীতে। নাচ, গান, আবৃত্তি, আলোচনায় রোববার ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর উন্মুক্ত মঞ্চে উদ্যাপন করা হলো ঋতুভিত্তিক এই ঐতিহ্যবাহী উৎসব।
হেমন্তের বেলা শেষে ষড়ঋতু উদ্যাপন জাতীয় পর্ষদ আয়োজিত নবান্ন উৎসবের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে। এরপর ছিল ফারহানা করিমের নেতৃত্বে সমবেত নৃত্য।
নবান্নকথনে অংশ নেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি এহসান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘আবহমানকাল থেকে আমাদের কৃষিপ্রধান দেশে অগ্রহায়ণে কৃষকের ঘরে নতুন ফসল ওঠে। নতুন ধান তাঁদের জীবনে নিয়ে আসে সচ্ছলতা। নিয়ে আসে আনন্দ। তবে নবান্ন কেবল ফসলের আনন্দই নয়, আমাদের লোকসংস্কৃতির একটি শক্তিশালী উপাদান। নাগরিক পরিবেশে ঋতুভিত্তিক এই উৎসবকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় বসন্ত, বর্ষা, শরৎসহ ঋতুভিত্তিক উৎসবগুলো আয়োজন করা হবে।’
নবান্ন উৎসব উপলক্ষে রবীন্দ্রসরোবর মঞ্চ ও মঞ্চের চারপাশের স্থান বর্ণাঢ্যভাবে সাজিয়ে তোলা হয়। এর সঙ্গে ছিল ঐতিহ্যবাহী পিঠাপুলির স্টল।
আলোচনার পরে শুরু হয় গানের পালা। সাগর বাউল শুরু করেছিলেন ভবা পাগলার গান ‘বারে বারে আসা হবে না’ গেয়ে। এরপর তিনি পরিবেশন করেন লালন সাঁইয়ের গান ‘লোকে বলে লালন ফকির কোন জাতের ছেলে’ এবং রাধারমণ দত্তের গান ‘অবলারে কান্দাইয়া’। ঢোল, একতারার বাজনা, বাঁশির সুর আর লোকসাধকদের এসব মরমি গানে গানে সাগর বাউল শ্রোতাদের মাতিয়ে তোলেন।
অনুষ্ঠানে নজরুলসংগীত পরিবেশনের কথা ছিল শিল্পী ফেরদৌস আরার। তবে তিনি অসুস্থতার জন্য সংগীত পরিবেশন করতে পারেননি। এই চমৎকার অনুষ্ঠানের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ ও শ্রোতাদের শুভেচ্ছা জানান।
লোকশিল্পী আলেয়া বেগম পরিবেশন করেন ‘মালা কার লাগিয়া গাঁথি’সহ বেশ কয়েকটি গান। গানের ফাঁকে ফাঁকে ছিল আবৃত্তি ও কবিদের কবিতা পাঠ। এই পর্বে অংশ নেন কবি রাসেল রায়হান, রিক্তা রিনি, সানাউল্লাহ সাগর, জব্বার আল নাইম, ইসমত শিল্পীসহ অনেকে।
সংগীতশিল্পীদের মধ্যে কোহিনূর আক্তার পরিবেশন করেন লালন সাঁইয়ের গান ‘তিন পাগলের হইল মেলা’। ডলি মণ্ডল পরিবেশন করেন ‘সব লোক কয় লালন কী জাত সংসারে’। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ষড়ঋতু উদ্যাপন জাতীয় পর্ষদের সদস্যসচিব দীপান্ত রায়হান।
শীতের মৃদু পরশ লেগেছে রাজধানীর হাওয়ায়। হালকা কুয়াশাও জমছে আকাশে। নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশে সুরে-ছন্দে বেশ খানিকটা রাত অবধি জমজমাট হয়ে উঠেছিল এই নাগরিক নবান্ন উৎসব।