কান চলচ্চিত্র উৎসবের আলোচিত চলচ্চিত্র “এডিংটন”-এর প্রেস কনফারেন্সে মার্কিন অভিনেতা পেদ্রো পাসকাল সরব হলেন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক সংকট নিয়ে। তার বক্তব্যে ছিল সাহস, প্রতিবাদ আর সামাজিক সচেতনতার ডাক। উপস্থিত আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ভয় দেখিয়ে যারা তোমাকে কাবু করতে চায়, তাদের হারাও। ওদের জিততে দিও না। গল্প বলো, প্রতিবাদ করো, নিজেকে প্রকাশ করো—এটাই আমাদের হাতিয়ার।”

পাসকালের এই বক্তব্য শুধুমাত্র একটি অভিনেতার দায়িত্ববোধের বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং অভিবাসী অভিজ্ঞতা থেকে উঠে আসা এক অন্তর্দৃষ্টির প্রতিফলন। তিনি বলেন, “আমি নিজে একজন অভিবাসী। আমার বাবা-মা চিলির স্বৈরশাসন থেকে পালিয়ে আসেন। প্রথমে ডেনমার্ক, পরে আমেরিকায় এসে আমরা নতুন জীবন পাই। সে সুযোগ না পেলে আজকের আমি কখনই হতাম না। তাই আমি অভিবাসী নিরাপত্তার পক্ষে, মানবাধিকারের পক্ষে, ইতিহাসের সঠিক দিকেই দাঁড়াতে চাই।”

‘এডিংটন’ ছবির প্রেক্ষাপট ২০২০ সালের মে মাস—কোভিড-১৯ মহামারির চূড়ান্ত পর্যায়ের চিত্র।  ছবির গল্পে নিউ মেক্সিকোর এক ছোট শহরের শেরিফ (জোয়াকিন ফিনিক্স) এবং মেয়র (পাসকাল)-এর মধ্যে রাজনৈতিক ও আদর্শগত দ্বন্দ্ব ক্রমেই বিস্ফোরক পরিস্থিতির জন্ম দেয়, যেখানে প্রতিবেশী দাঁড়িয়ে যায় প্রতিবেশীর বিপক্ষে। এটি যেন আমেরিকার বিভাজিত বাস্তবতার প্রতীক।

পরিচালক অ্যারি আস্টার জানান, তিনি এই চিত্রনাট্য লিখেছিলেন এক গভীর উদ্বেগ, বিষণ্নতা ও বাস্তবতা বিভ্রান্তির সময়ে। তার ভাষ্য, ‘আমাদের চারপাশে এমন এক জগৎ তৈরি হয়েছে যেখানে কেউ আর সত্যিকার অর্থেই আর একমত নয়।। না সত্যে, না বিশ্বাসে। কোভিড ছিল সেই সম্মিলিত উপলব্ধির বিচ্ছেদের মুহূর্ত।’

ছবির প্রিমিয়ারে পাঁচ মিনিট ধরে চলা স্ট্যান্ডিং ওভেশনে দর্শকদের আবেগের প্রকাশ ছিল চোখে পড়ার মতো। জোয়াকিন ফিনিক্সের চোখে জল দেখা যায়, যা ছিল চলচ্চিত্রের গভীর প্রভাব ও তাৎপর্যের প্রতিফলন।

পাসকালের ভাষ্য অনুযায়ী, এই চলচ্চিত্র তার কাছে একটি সতর্কবার্তা। তিনি বলেন, “স্ক্রিপ্ট পড়ে মনে হয়েছিল কেউ যেন ভিতর থেকে চিৎকার করে বলছে—এই দেখো, কীভাবে ধ্বংস নামছে আমাদের সমাজে। সেই চিৎকার আমি মনের গভীরে অনুভব করেছি। তাই এর অংশ হতে পেরে আমি গর্বিত।”

এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে শুধু একটি গল্প বলা হয়নি—প্রকাশ পেয়েছে প্রতিবাদের ভাষা। পাসকালের মতো শিল্পীদের সরব উপস্থিতি তাই এখন শুধু শিল্প নয়, সামাজিক আন্দোলনের অংশ বলেই মনে করছেন অনেকে।

আয়োজনের একেবারে শেষে এসে পাসকাল বলেন, “চুপ করে থাকলে, ভয় পেলে ওরা জিতবে। আর আমরা তো জানিই—ওদের জিততে দেওয়া যায় না।”

এর আগে গত শুক্রবার দিবাগত রাতে ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের লাল গালিচায়  সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হয়ে উঠেছিলেন  পেদ্রো প্যাসকাল। গ্ল্যামারাস ওই সন্ধ্যায় প্যাসকাল নজর কাড়েন একটি ক্লাসিক অল-ব্ল্যাক টাক্সেডো, ম্যাচিং জুতা ও কালচার এন্ড গ্রস  ব্র্যান্ডের স্টাইলিশ চশমা পরে। লাল গালিচায় হাসিমুখে এমা স্টোনের সঙ্গে ছবি তুলতে দেখা যায় তাঁকে। এ সময় এমা স্টোন পরেছিলেন একটি হোয়াইট কাস্টম লুই ভিটনের গাউন, ঝকঝকে ড্রপ ইয়ারিংস এবং সাহসী ছোট চুলের হেয়ারস্টাইল।

গত ১৩ মে দক্ষিণ ফ্রান্সের কান শহরের পালে দ্য ফেস্টিভ্যালে শুরু হয়েছে ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসব। চলবে ২৪ মে পর্যন্ত। এই উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক লালগালিচা পর্ব। এই পর্বে বিশ্বের খ্যাতিনামা অভিনেত্রী, গায়িকা ও মডেলরা বাহারি পোশাকে হাঁটেন। এবারের আসরে মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে নির্বাচিত হয়েছে ২২টি চলচ্চিত্র। এছাড়া ‘আঁ সার্তে রিগা’, ‘আউট অব কম্পিটিশন’, ‘মিডনাইট স্ক্রিনিংস’, ‘কান প্রিমিয়ার’ এবং ‘স্পেশাল স্ক্রিনিংস’-প্রতিটি বিভাগেই দেখা যাবে নানা ঘরানার, নানা দেশের চলচ্চিত্র।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক ন চলচ চ ত র উৎসব চলচ চ ত র প রক শ

এছাড়াও পড়ুন:

মাছবোঝাই পিকআপ খাদে, এলাকাবাসীর মাছ ধরার ‘উৎসব’

ফরিদপুরের নগরকান্দায় মাছবোঝাই একটি পিকআপ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের পাশের খাদে পড়ে যায়। এরপর খাদে ছড়িয়ে পড়া মাছ ধরতে স্থানীয় লোকজন ভিড় করেন। আজ শুক্রবার ভোরে এ ঘটনা ঘটে উপজেলার ডাঙ্গী ইউনিয়নের যদুরদিয়া এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পশ্চিম পাশে।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাবদা মাছবোঝাই পিকআপটি গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ফরিদপুর থেকে ভাঙ্গার দিকে যাচ্ছিল। রাত সাড়ে তিনটার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে যদুরদিয়া এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি খাদে পড়ে যায়। এতে গাড়িতে থাকা মাছের ঝুড়িগুলো পানিতে তলিয়ে যায় এবং মাছ ছড়িয়ে পড়ে।

দুর্ঘটনার দুই ঘণ্টা পর ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে রেকার দিয়ে পিকআপটি তোলা হয়। ওই সময় গাড়ির লোকজন যতটা সম্ভব মাছ উদ্ধার করে গাড়ি নিয়ে চলে যান। এরপর সকাল ছয়টা থেকে আশপাশের গ্রাম থেকে মানুষ মাছ ধরতে খাদে নামেন। নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ—সবাই মাছ ধরায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। মহাসড়কের ধারে দাঁড়িয়ে বহু মানুষ এ দৃশ্য উপভোগ করেন। কেউ খ্যাপলা জাল, কেউ গামছা, আবার কেউ হাত দিয়ে মাছ ধরতে থাকেন।

সকাল সাড়ে আটটার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মাছ ধরার প্রতিযোগিতায় যেন কেউ কারও থেকে পিছিয়ে থাকতে চান না। এক বালতি মাছ হাতে খাদ থেকে উঠলেন ফাতেমা বেগম (২৮)। তিনি জানান, প্রায় ১০ কেজি মাছ ধরতে পেরেছেন। হাসতে হাসতে বলেন, ‘আমার থেকে অনেক বেশি মাছ ধরেছে অনেকে।’

স্থানীয় বাসিন্দা হারুন অর রশিদ (৫৫) বলেন, খবর পেয়ে গ্রামের মানুষ ছুটে আসে। এরপর শুরু হয় মাছ ধরার ধুম।

মাছ ধরার খবর শুনে সেখানে এসেছিলেন ভাঙ্গার মহেশ্বর্দী গ্রামের মাইনুদ্দীন আহমেদ (৩৫)। তিনি বলেন, সবাই পাবদা মাছ ধরছেন। কেউ খালি হাতে ফেরেননি। কেউ ১৫ কেজি, কেউ আধা মণ পর্যন্ত মাছ পেয়েছেন।

পিকআপটি কোথা থেকে এসেছিল, কোথায় যাচ্ছিল কিংবা মাছের পরিমাণ ও মালিকের পরিচয় জানা যায়নি। ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রকিবুজ্জামান বলেন, আজ ভোরে নগরকান্দার যদুরদিয়ায় মাছবোঝাই একটি পিকআপ খাদে পড়ে যায়। তবে এতে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কক্সবাজারে শিখো-প্রথম আলো জিপিএ-৫ উৎসব
  • ঝিনাইদহে জিপিএ-৫ উৎসব: ‘সমৃদ্ধশালী দেশ গড়তে চাই, তার জন্য তৈরি হতে হবে’
  • কক্সবাজারে শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাসে শুরু জিপিএ-৫ উৎসব
  • ভোঁদড়পল্লির শিশুদের রঙিন ক্যানভাসে গ্রামবাংলার চিত্র
  • ঢাকার রাস্তা কীভাবে ভেনিসের উৎসবে জায়গা পেল
  • আপনারা নিশ্চিন্তে এ দেশে বসবাস করবেন
  • না’গঞ্জে বর্ণাঢ্য আয়োজনে পালিত হলো শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উৎসব
  • ছক্কার উৎসবে পুরান ছাড়া সবাই নতুন
  • মাছবোঝাই পিকআপ খাদে, এলাকাবাসীর মাছ ধরার ‘উৎসব’