ভয় দেখিয়ে যারা শাসন করতে চায়, তাদের হারিয়ে দাও: পেদ্রো পাসকাল
Published: 18th, May 2025 GMT
কান চলচ্চিত্র উৎসবের আলোচিত চলচ্চিত্র “এডিংটন”-এর প্রেস কনফারেন্সে মার্কিন অভিনেতা পেদ্রো পাসকাল সরব হলেন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক সংকট নিয়ে। তার বক্তব্যে ছিল সাহস, প্রতিবাদ আর সামাজিক সচেতনতার ডাক। উপস্থিত আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ভয় দেখিয়ে যারা তোমাকে কাবু করতে চায়, তাদের হারাও। ওদের জিততে দিও না। গল্প বলো, প্রতিবাদ করো, নিজেকে প্রকাশ করো—এটাই আমাদের হাতিয়ার।”
পাসকালের এই বক্তব্য শুধুমাত্র একটি অভিনেতার দায়িত্ববোধের বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং অভিবাসী অভিজ্ঞতা থেকে উঠে আসা এক অন্তর্দৃষ্টির প্রতিফলন। তিনি বলেন, “আমি নিজে একজন অভিবাসী। আমার বাবা-মা চিলির স্বৈরশাসন থেকে পালিয়ে আসেন। প্রথমে ডেনমার্ক, পরে আমেরিকায় এসে আমরা নতুন জীবন পাই। সে সুযোগ না পেলে আজকের আমি কখনই হতাম না। তাই আমি অভিবাসী নিরাপত্তার পক্ষে, মানবাধিকারের পক্ষে, ইতিহাসের সঠিক দিকেই দাঁড়াতে চাই।”
‘এডিংটন’ ছবির প্রেক্ষাপট ২০২০ সালের মে মাস—কোভিড-১৯ মহামারির চূড়ান্ত পর্যায়ের চিত্র। ছবির গল্পে নিউ মেক্সিকোর এক ছোট শহরের শেরিফ (জোয়াকিন ফিনিক্স) এবং মেয়র (পাসকাল)-এর মধ্যে রাজনৈতিক ও আদর্শগত দ্বন্দ্ব ক্রমেই বিস্ফোরক পরিস্থিতির জন্ম দেয়, যেখানে প্রতিবেশী দাঁড়িয়ে যায় প্রতিবেশীর বিপক্ষে। এটি যেন আমেরিকার বিভাজিত বাস্তবতার প্রতীক।
পরিচালক অ্যারি আস্টার জানান, তিনি এই চিত্রনাট্য লিখেছিলেন এক গভীর উদ্বেগ, বিষণ্নতা ও বাস্তবতা বিভ্রান্তির সময়ে। তার ভাষ্য, ‘আমাদের চারপাশে এমন এক জগৎ তৈরি হয়েছে যেখানে কেউ আর সত্যিকার অর্থেই আর একমত নয়।। না সত্যে, না বিশ্বাসে। কোভিড ছিল সেই সম্মিলিত উপলব্ধির বিচ্ছেদের মুহূর্ত।’
ছবির প্রিমিয়ারে পাঁচ মিনিট ধরে চলা স্ট্যান্ডিং ওভেশনে দর্শকদের আবেগের প্রকাশ ছিল চোখে পড়ার মতো। জোয়াকিন ফিনিক্সের চোখে জল দেখা যায়, যা ছিল চলচ্চিত্রের গভীর প্রভাব ও তাৎপর্যের প্রতিফলন।
পাসকালের ভাষ্য অনুযায়ী, এই চলচ্চিত্র তার কাছে একটি সতর্কবার্তা। তিনি বলেন, “স্ক্রিপ্ট পড়ে মনে হয়েছিল কেউ যেন ভিতর থেকে চিৎকার করে বলছে—এই দেখো, কীভাবে ধ্বংস নামছে আমাদের সমাজে। সেই চিৎকার আমি মনের গভীরে অনুভব করেছি। তাই এর অংশ হতে পেরে আমি গর্বিত।”
এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে শুধু একটি গল্প বলা হয়নি—প্রকাশ পেয়েছে প্রতিবাদের ভাষা। পাসকালের মতো শিল্পীদের সরব উপস্থিতি তাই এখন শুধু শিল্প নয়, সামাজিক আন্দোলনের অংশ বলেই মনে করছেন অনেকে।
আয়োজনের একেবারে শেষে এসে পাসকাল বলেন, “চুপ করে থাকলে, ভয় পেলে ওরা জিতবে। আর আমরা তো জানিই—ওদের জিততে দেওয়া যায় না।”
এর আগে গত শুক্রবার দিবাগত রাতে ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের লাল গালিচায় সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হয়ে উঠেছিলেন পেদ্রো প্যাসকাল। গ্ল্যামারাস ওই সন্ধ্যায় প্যাসকাল নজর কাড়েন একটি ক্লাসিক অল-ব্ল্যাক টাক্সেডো, ম্যাচিং জুতা ও কালচার এন্ড গ্রস ব্র্যান্ডের স্টাইলিশ চশমা পরে। লাল গালিচায় হাসিমুখে এমা স্টোনের সঙ্গে ছবি তুলতে দেখা যায় তাঁকে। এ সময় এমা স্টোন পরেছিলেন একটি হোয়াইট কাস্টম লুই ভিটনের গাউন, ঝকঝকে ড্রপ ইয়ারিংস এবং সাহসী ছোট চুলের হেয়ারস্টাইল।
গত ১৩ মে দক্ষিণ ফ্রান্সের কান শহরের পালে দ্য ফেস্টিভ্যালে শুরু হয়েছে ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসব। চলবে ২৪ মে পর্যন্ত। এই উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক লালগালিচা পর্ব। এই পর্বে বিশ্বের খ্যাতিনামা অভিনেত্রী, গায়িকা ও মডেলরা বাহারি পোশাকে হাঁটেন। এবারের আসরে মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে নির্বাচিত হয়েছে ২২টি চলচ্চিত্র। এছাড়া ‘আঁ সার্তে রিগা’, ‘আউট অব কম্পিটিশন’, ‘মিডনাইট স্ক্রিনিংস’, ‘কান প্রিমিয়ার’ এবং ‘স্পেশাল স্ক্রিনিংস’-প্রতিটি বিভাগেই দেখা যাবে নানা ঘরানার, নানা দেশের চলচ্চিত্র।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক ন চলচ চ ত র উৎসব চলচ চ ত র প রক শ
এছাড়াও পড়ুন:
ছাদখোলা বাসে শিরোপা উদযাপন ইয়ামালদের
শুধু ট্রফি জেতাই নয়, সেটা নিয়ে উৎসব করাটাও যে একধরনের শিল্প তা যেন আরও একবার প্রমাণ করল বার্সেলোনা।
কাতালান ক্লাবটি যখন স্পেনের ঘরোয়া ফুটবলের তিনটি শিরোপাই নিজের করে নেয়, তখন সেটাকে উদযাপন করতে হয় একটু ভিন্নভাবেই। তাই তো লা লিগা জয়ের পর কাতালুনিয়ায় ছাদখোলা বাসে চড়ে উদযাপনে নামে ইয়ামাল-পেদ্রি-রাফিনিয়রা।
স্প্যানিশ সুপার কাপ, কোপা দেল রে ও সর্বশেষ লা লিগা সবক’টি শিরোপাই এখন বার্সার ঘরে। ইউরোপিয়ান মঞ্চে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালে হোঁচট খেলেও ঘরোয়া ট্রেবল জিতে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছে ক্লাবটি। এই অনন্য অর্জনের আনন্দ শুধু খেলোয়াড়দের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকেনি। বার্সার প্রতিটি সাফল্যে অবিচ্ছেদ্য অংশ যে তাদের প্রাণপ্রিয় সমর্থকরা, তাদের সঙ্গেও এই জয় ভাগাভাগি করে নিতে ছাদখোলা বাসে চড়েছে বার্সার পুরো স্কোয়াড।
বাসে করে ইয়ামাল পেদ্রিরা ঘুরেছে কাতালান অঞ্চলের ব্যস্ততম সড়কগুলো। সেই রাস্তাগুলো যেন রূপ নিয়েছিল এক বিশাল উৎসবমুখর জনসমুদ্রে। রাস্তার দুই ধারে হাজারো সমর্থকের চোখেমুখে ছিল উচ্ছ্বাস, গলায় ছিল জয়ধ্বনি। তাদের হাত ছুঁয়ে যাচ্ছিল ঘরোয়া ট্রেবলের তিনটি ট্রফি।
বাসে থাকা ফুটবলাররা পরেছিলেন বিশেষ জার্সি। নেচেছেন, গেয়েছেন, সমর্থকদের উদ্দেশে দিয়েছেন ধন্যবাদ ও ভালোবাসা জড়ানো বার্তা।
কোচ হ্যান্সি ফ্লিকও ছিলেন উৎসবের প্রাণভোমরা। বিজয় প্যারেড সম্পূর্ণ করলেও এই মৌসুমে বার্সার এখনও দুটি ম্যাচ বাকি। এরপর তারা যাবে বিশ্রামে।
ছাদখোলা বাসে উদযাপনের মধ্যেও আগামী মৌসুমেও দাপটের সঙ্গে খেলার আশ্বাস দিয়েছেন রাফিনিয়া, ইয়ামাল ও পেদ্রিরা।