কক্সবাজারে সরকারি খাসজমি বরাদ্দের আবেদনপত্রে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) সই জাল করে জমা দেওয়ার অভিযোগে বুধবার বিকেলে রেজাউল করিম ওরফে সোহাগ নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি নিজেকে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ পরিষদের সভাপতি পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে।

জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রেজাউল করিম কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের বড়ছড়া এলাকায় ভূমিহীন, দরিদ্র ও প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার জন্য খাসজমি বরাদ্দ চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি আবেদন করেন। আবেদন পত্রে সাংবাদিক কল্যাণ পরিষদের সভাপতি হিসেবে সই রয়েছে রেজাউল করিমের। ওই আবেদনে ‘স্কুল নির্মাণের অনুমতি দেওয়া গেল’ লিখে নিচে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনের সই জুড়ে দেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসকের সইযুক্ত আবেদনপত্র দেখে সন্দেহ হয় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নিজাম উদ্দিন আহমদের। তিনি আবেদনপত্রটি যাচাই করে দেখতে পান জেলা প্রশাসকের সই জাল। এরপর রেজাউল করিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি সই জাল করার বিষয়টি স্বীকার করেন।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সই জাল করা গুরুতর অপরাধ। এর সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘রেজাউল করিমকে বুধবার বিকেলে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।’

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

ইলিয়াস খান বলেন, এ ঘটনায় রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাঁর সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কি না, তা তদন্ত করা হচ্ছে। তাঁকে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করা হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সই জ ল র সই জ

এছাড়াও পড়ুন:

ব্যাংক খাত সংস্কার: সফলতা নির্ভর করবে বাস্তবায়নের ওপর

বাংলাদেশের ব্যাংক খাত সংস্কারের জন্য তিন বছরের পরিকল্পনা বহুপ্রতীক্ষিত উদ্যোগ; এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। এই পথনকশার লক্ষ্য হলো আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এবং জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। দেউলিয়াত্ব আইন সংস্কার, খেলাপি ঋণের (এনপিএল) সমাধান, সংকট ব্যবস্থাপনা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রতি সরকারের প্রতিশ্রুতি এই পরিকল্পনায় প্রতিফলিত হয়েছে। বিষয়টি প্রশংসনীয়।

এই পথনকশায় পরিষ্কার ও কাঠামোবদ্ধ সংস্কারের রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে। নিঃসন্দেহে এসব পদক্ষেপ ব্যাংক খাতের গভীর সমস্যাগুলো সমাধানের লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা যেমন আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও এডিবি এই উদ্যোগে সমর্থন দিচ্ছে।

তবে এই পরিকল্পনার জটিলতা ও ব্যাপকতার কারণে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। সফলতা শুধু নতুন আইন প্রণয়ন নয়, বরং সেগুলোর কার্যকর বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করে। সময়মতো ও কার্যকর বাস্তবায়ন বাংলাদেশের নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ার দীর্ঘদিনের দুর্বলতা। অতীতে বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিরোধ এবং সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে সংস্কার কার্যক্রম ব্যাহত করেছে। কাঠামোগত সমস্যাগুলো আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার গভীরে প্রোথিত। দেশে ছোট ও দুর্বল ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি, মূলধন পর্যাপ্ত নয় এবং অভ্যন্তরীণ ঋণ দেওয়ার বিষয়টি প্রায় নিয়ন্ত্রণহীন। বর্তমানে ২০ শতাংশের বেশি ঋণ অনাদায়ি (নন পারফর্মিং) এবং ভবিষ্যতে এই হার আরও বাড়তে পারে। যদি এই সংস্কার কার্যক্রম যথাযথভাবে বাস্তবায়িত না হয়, তাহলে বাংলাদেশের ব্যাংক খাত ভবিষ্যতেও নানা ধাক্কার মুখে পড়বে। টেকসই প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে পারবে না এই খাত। বাস্তবতা হলো বাংলাদেশের বর্তমান আর্থিক খাতের অবস্থা উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যের সঙ্গে একেবারেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

বাস্তব অগ্রগতি অর্জনের জন্য সরকারকে এই পথনকশা আইন আকারে প্রণয়ন ও প্রয়োগের দিকে নজর দিতে হবে। আরও যা যা দরকার, তা হলো প্রথমেই দুর্বল ব্যাংকগুলো একীভূত করে অধিকতর শক্তিশালী ও স্থিতিশীল প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করা; বাংলাদেশ ব্যাংককে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের ওপর পূর্ণ স্বাধীনতা ও কর্তৃত্ব দেওয়া; জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে খেলাপি ও চুরি হওয়া অর্থের পুনরুদ্ধার স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করা ইত্যাদি। অন্যদিকে কার্যকর ঋণ পুনর্বিক্রয় বাজার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এতে ব্যাংকগুলোর ওপর চাপ কমবে এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিকল্প অর্থায়নের সুযোগ তৈরি হবে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এসব সংস্কারের সফলতা নির্ভর করছে বাস্তবায়নের ওপর। ভালো পরিকল্পনা জরুরি হলেও রাজনৈতিক নেতৃত্বের দৃঢ় অঙ্গীকার ছাড়া কার্যকর বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এই দায়িত্ব বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এবং নতুন সরকারের কাঁধে বর্তায়।

সেলিম রায়হান: নির্বাহী পরিচালক, সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)

সম্পর্কিত নিবন্ধ