ওয়াশিংটনে বন্দুক হামলায় নিহত ২ দূতাবাস কর্মীর নাম জানাল ইস
Published: 22nd, May 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত ইসরায়েলি দূতাবাস ওয়াশিংটনে বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত দুই দূতাবাস কর্মীর নাম প্রকাশ করেছে। নিহতরা হলেন- ইয়ারন এবং সারাহ, সম্পর্কে তারা স্বামী-স্ত্রী ছিলেন। খবর বিবিসির।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, তাদের পুরো নাম ইয়ারন লিশিনস্কি এবং সারাহ মিলগ্রাম।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘এক্স’-এ দূতাবাসের একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “নিহতরা ‘তাদের জীবনের সেরা সময়ে ছিলেন’। স্থানীয় সময় বুধবার রাত ৯:০৫ মিনিটের দিকে ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটাল ইহুদি জাদুঘরে একটি অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে আসার সময় একজন সন্ত্রাসী তাদের গুলি করে হত্যা করে।”
আরো পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রের সুরক্ষায় ‘গোল্ডেন ডোম’ নির্মাণের ঘোষণা ট্রাম্পের
পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হয়নি: বিক্রম মিশ্রি
দূতাবাস বলেছে, “হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দূতাবাসের কর্মীরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন এবং তারা বিধ্বস্ত।”
পোস্টে আরো বলা হয়, “এই ভয়াবহ ক্ষতিতে আমাদের শোক ও ভয়াবহতার গভীরতা কোনো ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আমাদের হৃদয় তাদের পরিবারের সাথে আছে এবং এই ভয়াবহ সময়ে দূতাবাস তাদের পাশে থাকবে।”
এদিকে, ইসরায়েলি দূতাবাসের দুই কর্মীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন একমাত্র ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে ওয়াশিংটন ডিসির পুলিশ। শিকাগোর ৩০ বছর বয়সী এলিয়াস রদ্রিগেজকে সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করার পর তাকে দ্রুত আটক করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় তাকে ‘ফিলিস্তিন মুক্ত করুন’ বলে স্লোগান দিতে শোনা গেছে।
ওয়াশিংটন ডিসির মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রধান পামেলা স্মিথ এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, সন্দেহভাজন এলিয়াস রদ্রিগেজকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্রটিও উদ্ধার করা হয়েছে। এসময় তিনি ইঙ্গিত দেন যে, রদ্রিগেজ অপরাধটি করেছেন।
এদিকে ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, বিশ্বব্যাপী ইসরায়েলি প্রতিনিধি এবং কূটনৈতিক মিশনগুলোতে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হবে।
তিনি বলেন, “আমার হৃদয় সেই প্রিয় যুবক এবং নারীর পরিবারের জন্য ব্যাথা করছে, যাদের জীবন একজন জঘন্য ইহুদি-বিদ্বেষী খুনির দ্বারা সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে।”
নেতানিয়াহু আরো বলেন, “আমরা ইহুদি-বিদ্বেষ এবং ইসরায়েল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বর্বর উস্কানির ভয়াবহ মূল্য প্রত্যক্ষ করছি।”
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নেতানিয়াহু মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি এবং যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূতের সাথে কথা বলেছেন।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র ইসর য় ল ইসর য় ল ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ