চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচিত ১০ ছাত্রীকে বহিষ্কারের  ঘটনায় সিদ্ধান্তে পরিবর্তন এনেছে কর্তৃপক্ষ। এদের মধ্যে ছয়জনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। আর তিন ছাত্রীর বহিষ্কারের মেয়াদ দুই বছর থেকে কমিয়ে ছয় মাস করা হয়েছে। বাকি এক ছাত্রীর স্থায়ী বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত বহাল থাকছে। তিন মাস পর সিদ্ধান্তে পরিবর্তন ও তিন শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ বহাল রাখার কারণে সমালোচনা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বুধবার বিকেল ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব রেসিডেন্স, হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিন কমিটির এক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভা শেষে বিষয়টি সমকালকে নিশ্চিত করেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো.

কামাল উদ্দিন। ছয় মাস বহিষ্কারাদেশ বহাল থাকা ছাত্রীদের দু’জন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স আর একজন মার্কেটিং বিভাগের ছাত্রী। আর স্থায়ী বহিষ্কারাদেশ বহাল থাকা ছাত্রী আইন বিভাগের।   

এ বিষয়ে অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন সমকালকে বলেন, বিজয় ২৪ হলের (পূর্ব নাম জননেত্রী শেখ হাসিনা হল) ঘটনায় যে ১০ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, সে সিদ্ধান্তে পরিবর্তন এসেছে। শিক্ষককে শারীরিক লাঞ্ছনা করা এক ছাত্রীর স্থায়ী বহিষ্কারের আদেশ বহাল থাকছে। ছয়জনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। বাকি তিনজনের বহিষ্কারাদেশ কমিয়ে ছয় মাস করা হয়েছে। এই বহিষ্কারের আদেশ ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে বলে জানান তিনি।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি ছাত্রীদের আবাসিক বিজয় ২৪ হলের সামনে রাখা নৌকা আকৃতির বসার স্থান ভাঙচুর করতে যাওয়া কিছু শিক্ষার্থীর সঙ্গে বিতণ্ডা হয় আবাসিক ছাত্রীদের। এ সময় সহকারী প্রক্টরকে শারীরিক লাঞ্ছনা এবং ও ধর্ম অবমাননার কারণে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ১২ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ১১ জনই ছাত্রী। এর মধ্যে ১০ জন ছাত্রীকে ৫ ফেব্রুয়ারি রাতের ঘটনায় বহিষ্কার করা হয়েছিল। এই বহিষ্কারের ঘটনায় সারাদেশে বিভিন্ন পক্ষের সমালোচনার মুখে ওই ১০ শিক্ষার্থীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়। স্থায়ী বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থীর সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে আজ সিদ্ধান্তে আবারও পরিবর্তন আনা হয়েছে।

এ ঘটনায় ছাত্রীদের অভিযোগ, তারা নৌকা ভাঙার বিপক্ষে ছিলেন না। বরং প্রশাসন যেন এটি ভাঙে, সে দাবি করেছিলেন। এ জন্য তারা আগেই প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। তবে প্রশাসন সেটি ভাঙেনি। উল্টো মধ্যরাতে একদল শিক্ষার্থী সেটি ভাঙতে গিয়ে ছাত্রীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ কথা বলেছে। এসব ঘটনায় হলের আবাসিক শিক্ষক ও প্রক্টরিয়াল বডিকে ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি। 

এ ঘটনার প্রতিবাদে সেদিন রাতে উপাচার্যের বাস ভবনের সামনে প্রতিবাদ জানাতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও ড. মোহাম্মদ কুরবান আলির সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বাকবিতণ্ডা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে সহকারী প্রক্টর কোরবান আলীকে শারীরিক লাঞ্ছনা করতে দেখা যায় এক ছাত্রীকে। এ ছাড়া কয়েকটি ভিডিওতে প্রক্টরিয়াল বডির একাধিক সদস্যকে ছাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে দেখা গেছে।

এর মধ্যে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি স্ক্রিনশটে দেখা যায়, ওই ছাত্রীদের বহিষ্কার করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই প্রক্টর উসকানিমূলক বার্তা দিয়েছেন কিছু শিক্ষার্থীকে। ছড়িয়ে পড়া এসব স্ক্রিনশটে ছিল সহকারী প্রক্টর কোরবান আলী ও নুরুল হামিদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীর কথোপকথন।

ফেসবুকের মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো বার্তায় দেখা যায়, এই দুই প্রক্টর ওই ১০ ছাত্রীকে বহিষ্কারের জন্য ‘প্রশাসনকে চাপ দিতে’ বলেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হ র কর সহক র ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

সিলেটে বিএনপি নেতার ফোনে আ.লীগের সাবেক মেয়রের ‘কল’, ফেসবুকে সমালোচনা

সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরীর মুঠোফোনে সিলেট সিটি করপোরেশনের আওয়ামী লীগদলীয় সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর ‘কল’ এসেছে—এমন অভিযোগ তুলে ইমদাদের বিপক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা শুরু করেছে বিএনপির নেতা-কর্মীদের একটি অংশ।

তবে বিএনপি নেতা ইমদাদ হোসেন চৌধুরী সংবাদ সম্মেলন করে ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরের বারুতখানা এলাকায় বিএনপির নেতাদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের একটি মতবিনিময় সভা ছিল। সভার একপর্যায়ে মাগরিবের নামাজে যান ইমদাদ। তখন তাঁর মুঠোফোনটি অন্য একজনের কাছে ছিল। তখন ইমদাদের মুঠোফোনে একটি কল আসে এবং ডিসপ্লেতে দেখা যায়, ‘আনোয়ারুজ্জামান ইউকে’। এ দৃশ্য সেখানে থাকা কয়েকজন তাঁদের মুঠোফোনে ধারণ করেন। সভা শেষে সন্ধ্যায় ফেসবুকে এর স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়ে। এরপরই ইমদাদের মুঠোফোনে লন্ডনে অবস্থানরত সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামানের কল দেওয়া নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে আলোচনা–সমালোচনা শুরু হয়।

এ নিয়ে গতকাল রাত ১১টার দিকে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে নিজের ব্যাখ্যা দেন ইমদাদ হোসেন চৌধুরী। এ সময় তিনি দাবি করেন, অনুষ্ঠানের ছবি তোলার জন্য আখতার নামের একজনের কাছে তাঁর মুঠোফোনটি ছিল। সভা শেষে নামাজ সেরে নাশতা খেয়ে ওই স্থান থেকে বের হওয়ার পর একজন তাঁকে কল করে জানান, তাঁর (ইমদাদ) ফোনে নাকি আনোয়ারুজ্জামানের কল এসেছে। তখন তিনি কললিস্ট ঘেঁটে দেখতে পান, ৬টা ৫১ মিনিটে ‘আনোয়ারুজ্জামান ইউকে’ লেখা একটি নম্বর থেকে কল এসেছে।

ইমদাদ হোসেন চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কল এসেছে দেখতে পেয়ে তিনি আখতারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি জিজ্ঞাসা করেন। তখন আখতার তাঁকে জানান, তাঁর (আখতার) কাছে ফোন থাকাকালে বিএনপির সিলেট বিমানবন্দর থানা শাখার সদস্যসচিব সৈয়দ সারোয়ার রেজা ও মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদীর ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) ইমন কিছুক্ষণের জন্য আখতারকে নিয়ে আলাদা একটি টেবিলে বসেন এবং ওই সময় ইমদাদের ফোনের ডিসপ্লের ছবি সরোয়ার-ইমন তুলেছেন। এর বেশি কিছু আখতার জানেন না।

মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘যে আনোয়ারুজ্জামানের কারণে সিলেটের রাজনীতি কলুষিত হয়েছে, যাঁর আদেশে নগরে জুলাইয়ে আমাদের দলীয় নেতা-কর্মীরা হামলার শিকার হয়েছে। সেই ডেভিল আনোয়ারুজ্জামানের সঙ্গে আমার যোগাযোগ থাকার প্রশ্নই আসে না। যাঁরা ফোনের ছবি তুলেছেন, তাঁরাই ষড়যন্ত্র করে আমার ইমেজকে নষ্ট করার চেষ্টা করছেন। আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তাঁরা এমনটা করেছেন।’

ইমদাদ হোসেন চৌধুরী দাবি করেন, যুক্তরাজ্যে থাকা অবস্থায় ৮ থেকে ১০ বছর আগে আনোয়ারুজ্জামানের মুঠোফোন নম্বর তাঁর মুঠোফোনে স্টোর হয়ে থাকতে পারে। তবে কখনো আনোয়ারুজ্জামানের সঙ্গে তাঁর কথা হয়নি।

আজ বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে যোগাযোগ করলে ইমদাদ হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘যিনি আমার জনপ্রিয়তায় অ্যাফেকটেড, তিনিই এ ষড়যন্ত্র করেছেন। তিনিই পিএস দিয়ে এমন ষড়যন্ত্র করেছেন। কারণ, তখন আমার হাতে ফোনটি ছিল না। কোনো প্রযুক্তি দিয়েই হোক কিংবা কাউকে দিয়ে আনোয়ারুজ্জামানের ফোন থেকে হোক, ঠিক জানি না, কীভাবে এ কল করিয়েছে। মোটকথা আনোয়ারুজ্জামান আমাকে কল করার কথা নয়।’

এ ঘটনার নেপথ্যে মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী সম্পৃক্ত আছেন বলে ইমদাদ হোসেন প্রথম আলোর এ প্রতিবেদককে ইঙ্গিত দেন।

তবে ইমদাদের অভিযোগ প্রসঙ্গে রেজাউল হাসান কয়েস লোদী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার কোনো পিএসই নেই। এ ছাড়া এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক নেতা বলেন, গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান লন্ডনে চলে যান। তিনি কেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদককে কল করবেন? নিশ্চয়ই তাঁর (ইমদাদ) সঙ্গে আনোয়ারুজ্জামানের সখ্য, আঁতাত কিংবা যোগাযোগ আছে। এ বিষয়টির সঠিক তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। নতুবা দলের তৃণমূলে ভুল বার্তা যাবে।

স্থানীয় বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নে নির্বাচন করতে মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী দীর্ঘদিন ধরে নগরে কাজ করছেন। মেয়র পদে ইমদাদ হোসেনও দলীয় মনোনয়নে নির্বাচন করতে আগ্রহী। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে ভেতরে ভেতরে দূরত্বও আছে। তবে লোদী-ইমদাদ ছাড়াও মেয়র পদে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকীর নামও জোরেশোরে আলোচনায় আছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদি জাদুঘরে গুলিবর্ষণ, ইসরায়েলি দূতাবাসের দুই কর্মী নিহত
  • শার্লক হোমস স্রষ্টা আর্থার কোনান ডয়েলের জগৎ
  • হামলা করে আহত করেছ, আরো যা ইচ্ছা কর, অটোপাস দেব না: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য
  • ‘শাহরুখকে নিয়ে সিনেমা নির্মাণের চেয়ে তাকে জানতে পারাটা সৌভাগ্যের’
  • আইরিশ নাবিকের চোখে বাংলার হজযাত্রী
  • চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ ছাত্রীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার, দুজনের স্থায়ী বহিস্কার বহাল
  • গরমেও কেন নাক বন্ধ থাকে
  • নারী কমিশন নিয়ে গালাগাল আলোচনাকে খারাপ দিকে নিয়ে গেছে: ফরহাদ মজহার
  • সিলেটে বিএনপি নেতার ফোনে আ.লীগের সাবেক মেয়রের ‘কল’, ফেসবুকে সমালোচনা