বার্সায় ক্যারিয়ার শেষ করার স্বপ্নে চুক্তি নবায়ন রাফিনিয়ার
Published: 23rd, May 2025 GMT
ব্রাজিলের উইঙ্গার রাফিনিয়া বার্সেলোনা জার্সিতে নিজের ক্যারিয়ারের ফাইনাল অধ্যায় শুরু করতে চান। ক্লাবের সঙ্গে নতুন করে ২০২৮ সাল পর্যন্ত চুক্তি বাড়ানোর পর এই প্রতিশ্রুতি দিলেন তিনি। গত মৌসুমে তার অসাধারণ ফর্ম বার্সেলোনার ঘরোয়া ট্রেবল জয়ে বড় অবদান রেখেছে।
রাফিনিয়া লা লিগা, কোপা দেল রে এবং স্প্যানিশ সুপার কাপ জয়ী বার্সেলোনার এই মৌসুমে শৈল্পিক ফুটবলে ৩৪ গোল ও ২৫টি অ্যাসিস্ট করেছেন। ব্যালন ডি’অরের মনোনয়ন প্রাপ্ত এই তারকা জানালেন, বার্সেলোনায় নিজের খেলার যাত্রা শেষ করতে চান তিনি।
চুক্তি নবায়ন পর রাফিনিয়া বললেন, “বার্সেলোনার অংশ হয়ে যাওয়া আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আনন্দ। অনেক আগে থেকেই আমি পরিবারকে জানিয়েছি, এখানেই শেষ করতে চাই। যতদিন মাঠে থাকব, সেরাটা দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাব।”
আরো পড়ুন:
বার্সেলোনার হোঁচট, রিয়ালের জয়ে পিচিচির দৌড়ে এগিয়ে এমবাপ্পে
দুই ম্যাচ হাতে রেখেই বার্সেলোনা চ্যাম্পিয়ন
২০২২ সালে ইংলিশ ক্লাব লিডস ইউনাইটেড থেকে বার্সেলোনায় আসেন রাফিনিয়া। যদিও প্রথম দুই মৌসুমে তার পারফরম্যান্স প্রত্যাশার তুলনায় ছিল না তেমন ভাল। তবে ২০২৪-২৫ মৌসুমে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে প্রমাণ করেছেন। লা লিগায় ১৮ গোলের পাশাপাশি চ্যাম্পিয়নস লিগে বার্সেলোনাকে সেমিফাইনালে নিয়ে যাওয়ার পথ প্রসারিত করেছেন ১৩ গোল ও ৯ অ্যাসিস্টের মাধ্যমে।
এই অসাধারণ ছন্দে প্রিমিয়ার লিগ ও সৌদি লিগের শীর্ষ ক্লাবগুলোর নজর ছিল তার উপর। তবে বার্সেলোনা তাকে ধরে রেখেছে দলের ভবিষ্যতের ভিত্তি হিসেবে। চলতি মৌসুমেই তাকে পাঁচ অধিনায়কের মধ্যে একজন করা হয়েছে, যেখানে তার সঙ্গী রয়েছেন টার স্টেগেন, আরাউহো, ডি ইয়ং ও পেদ্রি।
রাফিনিয়া বলেন, “আমি শুধু একজন ফুটবলার নই, এখন আমি বাবা ও অধিনায়কও। দায়িত্ব বেড়েছে, অভিজ্ঞতাও। আশা করি, এই পথ চলায় আরও ভালো মানুষ ও খেলোয়াড় হব।” নিজের ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে তিনি যোগ করেন, “আমি আরও গোল ও সাহায্য করতে চাই, তবে সবচেয়ে বড় লক্ষ্য হলো বার্সেলোনার জার্সিতে আরও অনেক শিরোপা জেতা।”
বার্সেলোনার চলতি মৌসুমের শেষ ম্যাচ রবিবার (২৫ মে) অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ