অন্তর্বর্তী সরকার নয়, জনগণ নির্বাচিত সরকার চায়: নজরুল ইসলাম খান
Published: 24th, May 2025 GMT
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব আছে। সেই দায়িত্ব পালন করে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে তাদের চলে যেতে হবে। জনগণ স্থায়ী সরকার চায়। যে সংস্কারের কথা অন্তর্বর্তী সরকার বলছে, তার সবই বিএনপির ৩১ দফার মধ্যে আছে।
শনিবার বগুড়ায় তারুণ্যের সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। সেন্ট্রাল হাই স্কুল মাঠে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের সমন্বয়ে তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার এই সমাবেশে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে নজরুল ইসলাম খান বলেন, আগামী জুনের মধ্যে নির্বাচন দিতে পারলে ডিসেম্বরে দিতে অসুবিধা কি? কালক্ষেপণ করে কী লাভ? জনগণ এক দফার দাবিতে আন্দোলন করেছে। ভোটের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সেই আন্দোলন। তরুণ সমাজ রক্ত দিয়ে ফ্যাসিবাদী সরকারকে উৎখাত করেছে; কিন্তু তাদের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে না। তরুণরা যা চাচ্ছে, তা অন্তর্বর্তী সরকার পূরণ করতে পারছে না।
তিনি যুবক ও তরুণদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। দেশের কৃষক, শ্রমিক, যুবক, ছাত্র গুম-খুন হয়েছে। এই ত্যাগ যেন বৃথা না যায়। আপনারা জানবাজি রেখে লড়াই করেছেন একটি স্বপ্ন নিয়ে। সেই স্বপ্ন যদি পূরণ না হয়, গণতন্ত্র যদি প্রতিষ্ঠিত না হয়, তাহলে সবই বৃথা যাবে। সমাজে বৈষম্য দূর না হলে কৃষক, শ্রমিকসহ সব শ্রেণির পেশার মানুষ বঞ্চিত হবে। আপনাদের সচেতন থাকতে হবে, সক্রিয় থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, বারবার আমাদের বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, এ দেশ আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন করেছিলাম। স্বাধীনতার মাধ্যমে যে গণতন্ত্র অর্জন করেছিলাম, সেই গণতন্ত্র কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। তবে বিএনপি তা ফিরিয়ে এনেছিল। আবারও স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে ৯ বছর লড়াই করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিল বিএনপি।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে বলেন, ড.
দুপুরের পর থেকে পঞ্চগড়, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে তরুণরা সমাবেশে অংশ নেন। এ ছাড়া বিএনপিসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন। বিকেল ৩টার আগেই সমাবেশস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়। মাঠে জায়গা না হওয়ায় অনেকে চারদিকের রাস্তায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি উপেক্ষা করে বক্তৃতা শোনেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে একবার মুষলধারে বৃষ্টির কারণে মাঠে পানি জমে যায়। সন্ধ্যার আগে প্রধান অতিথি বক্তৃতা দেওয়ার সময় আবারও বৃষ্টি নামে। বৃষ্টির মধ্যেই বক্তৃতা চালিয়ে যান তিনি।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম। বক্তব্য দেন যুবদল সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি এস এম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান। সমাবেশে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলার বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা এবং সাবেক সংসদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে বগুড়া শহরের বাদুড়তলা এলাকার ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবদল সভাপতি ইমরান হোসেনকে খুন করার বিষয়টি তুলে ধরেন তাঁর ছোট বোন মিম। তিনি বলেন, ইমরানকে ২০১৩ সালে যুবলীগ নেতা মতিন নৃশংসভাবে খুন করেছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত বিচার পাননি। তিনি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ নজর ল ইসল ম খ ন গণতন ত র সরক র র ন কর ছ ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদের বাস্তবায়নে দেরি হলে জনগণ আবারও রাস্তায় নামবে: জামায়াত নেতা রফিকুল
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি এখন দেশের ১৮ কোটি মানুষের দাবি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘এই সনদ নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জারি করা হোক এবং প্রয়োজনে গণভোটের আয়োজন করা হোক। তবে এই গণভোট অবশ্যই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই হতে হবে, নির্বাচনের পরে নয়।’
আজ বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে তৃতীয় ধাপে তৃতীয় দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন রফিকুল ইসলাম খান। এ সময় উপস্থিত ছিলে জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ।
জুলাই সনদের বাস্তবায়নে দেরি হলে জনগণ স্বাভাবিকভাবেই আবারও রাস্তায় নেমে আসবে বলে মন্তব্য করেন রফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর সে সময়কার দলগুলোর ঐকমত্য থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতায় থাকা দলগুলো সেটি (তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা) যথাসময়ে বাস্তবায়ন করেনি। পরে আন্দোলনের মাধ্যমেই তা সংবিধানে যুক্ত হয়।
জামায়াতের এই নেতা আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল হয়েছিল বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ের মাধ্যমে। আদালতের ওপর প্রভাব বিস্তার করে এ রায় দেওয়ানো হয়েছিল। তাই বিচার বিভাগকে আবার বিতর্কের মুখে না ফেলে সংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে জামায়াত।
জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ঐকমত্য কমিশন একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে চারটি বিকল্প নিয়ে কাজ করেছে, যার মধ্যে কমিশন সংবিধানিক আদেশের প্রস্তাবটি সমর্থন করেছে। এই আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদের ২২টি আর্টিকেল বাস্তবায়িত হতে পারে। এটি আইনিভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী ভিত্তি।
এক প্রশ্নের জবাবে হামিদুর রহমান বলেন, সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন করার এখতিয়ার সংসদের নেই, এবং এ ধরনের পরিবর্তন করতে হলে অবশ্যই গণভোটের প্রয়োজন হয়।
জামায়াতে ইসলামী জনগণের অভিপ্রায়কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় উল্লেখ করে জামায়াতের এ সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, জনগণের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষাই হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আইন।
জুলাই সনদের যে আদর্শ ও চেতনা, তা বাস্তবায়ন হওয়া উচিত এবং যারা এই আদর্শের পথে হাঁটবে না, জনগণ তাদের ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে বলে মনে করেন হামিদুর রহমান আযাদ। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ এটি প্রমাণ করে যে এ দেশের তরুণসমাজ ও জনগণ নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা চায় এবং জুলাই বিপ্লবের যোদ্ধাদের পক্ষেই রয়েছে।