সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া অনুমোদনের প্রতিবাদে সচিবালয়ের ভেতরে গতকাল রোববারও বিক্ষোভ করেছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। দাবি পূরণ না হলে আজ সোমবার সচিবালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের ব্যানারে দু’দিন ধরে এই আন্দোলন চলছে। গত বৃহস্পতিবার সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। কর্মচারীরা এই অনুমোদিত খসড়াকে ‘নিবর্তনমূলক ও কালাকানুন’ আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন তারা। 

ফিরেছে অল্প সময়ে চাকরিচ্যুতির বিশেষ বিধান 
আন্দোলনের মধ্যে গতকাল সন্ধ্যায় সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর গেজেটের বিজ্ঞপ্তি জারি করে সরকার। এতে বলা হয়েছে, ‘ইহা অবিলম্বে কার্যকর হবে। সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ধারা ৩৭ এর পর নিম্নরূপ নূতন ধারা ৩৭ক সন্নিবেশিত হবে।’ এ ছাড়া সরকারি কর্মচারীদের আচরণ ও দণ্ড সংক্রান্ত বিশেষ বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
এই বিশেষ বিধানে চার ধরনের অপরাধ ও তিন ধরনের শাস্তির কথা বলা আছে। অপরাধগুলো হলো– সরকারি কর্মচারী এমন কোনো কাজ করতে পারবেন না, যাতে অন্য কর্মচারীর মধ্যে অনানুগত্য তৈরি হয় বা শৃঙ্খলা ব্যাহত হয় বা কাজে বাধার সৃষ্টি হয়; অন্যদের সঙ্গে সংঘবদ্ধভাবে বা আলাদাভাবে ছুটি ব্যতীত বা কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া কাজে অনুপস্থিত থাকেন বা কর্তব্য কাজে ব্যর্থ হন; অন্য কর্মচারীকে কাজে অনুপস্থিত থাকতে, বিরত থাকতে বা কর্তব্য পালন না করতে উস্কানি দেওয়া এবং  যে কোনো কর্মচারীকে কাজে অনুপস্থিত থাকতে বা কাজ না করতে প্ররোচিত করা।
বিশেষ এই বিধানে এসব অপরাধের তিন ধরনের শাস্তি দেওয়া যাবে– বরখাস্ত, অব্যাহতি এবং পদাবনতি বা বেতন কমানো।
এটা মূলত সরকারি কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ, ১৯৭৯ পুনরায় কার্যকর করেছে  সরকার। ফলে সরকারি চাকরিজীবীদের অল্প সময়ের মধ্যে চাকরিচ্যুতিসহ তিন ধরনের শাস্তি দেওয়া যাবে।

সকাল থেকেই বিক্ষোভ
গতকাল সকাল ১০টার দিকে সচিবালয়ের শত শত কর্মচারী দপ্তর ছেড়ে মিছিলে যোগ দেন। মিছিল থেকে ‘অবৈধ কালো আইন মানব না, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়। মিছিলটি সচিবালয়ের ভেতরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ প্রদক্ষিণ করে। একপর্যায়ে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে সমাবেশ করেন কর্মচারীরা। 
এ সময় সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি বাদিউল কবীর ও কো-চেয়ারম্যান মো.

নুরুল ইসলাম নেতৃত্বে ১০ থেকে ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের দপ্তরে যান। তখন উপদেষ্টা আদিলুর দপ্তরে ছিলেন না। পরে সেখান থেকে বের হয়ে তারা সচিবালয়ে মূল ফটকের কাছে যান। এ সময় কিছুক্ষণের জন্য ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সেখানে কর্মচারী নেতা মো. বাদিউল কবীর অনুমোদিত অধ্যাদেশের খসড়াকে কালাকানুন আখ্যায়িত করে বলেন, এটি প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত আমরা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাব। পরে দুপুরে সচিবালয়ের বাদামতলায় অবস্থান নেন কর্মচারীরা। পরে অবশ্য উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন কর্মচারী নেতারা। বাদিউল কবীর বলেন, আমরা দুই উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। আশা করি, তারা আমাদের দাবির বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরবেন।

দাবি-দাওয়া কমিটি পুনর্গঠন 
সচিবালয়ে নানা দাবি নিয়ে আন্দোলনের মধ্যে সরকারি কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া পর্যালোচনা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সুপারিশ দেওয়ার জন্য এ-সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। গতকাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এই কমিটি পুনর্গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে সভাপতি করে কমিটিতে একই মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা-১ অধিশাখা), যুগ্ম সচিব (বিধি-১ অধিশাখা), যুগ্ম সচিব (মাঠ প্রশাসন, এপিডি অধিশাখা), যুগ্ম সচিব (প্রশাসন অধিশাখা), মন্ত্রিপরিষদ, অর্থ, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক  বিভাগ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন করে প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। জনপ্রশাসনের যুগ্ম সচিব (সচিবালয় ও কল্যাণ অধিশাখা) সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন।
এই কমিটি সরকারি কর্মচারীদের যৌক্তিক দাবি-দাওয়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মতামত ও সুপারিশ দেবে। কমিটি প্রতি মাসে একবার সভায় মিলিত হবে এবং প্রয়োজনে কর্মচারীদের উপযুক্ত সংখ্যক প্রতিনিধির সঙ্গে মতবিনিময় করতে পারবে। কমিটি প্রয়োজনীয় সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে।

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চ কর উপদ ষ ট অন ম দ ধরন র গতক ল সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সচিবালয়ে বিক্ষোভ, মন্ত্রণালয় থেকে মিছিল নিয়ে আসছেন কর্মচারীরা

‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ অনুমোদনের প্রতিবাদে টানা তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ মিছিল করছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে সচিবালয়ের বাদামতলায় এসে তাঁরা জড়ো হয়েছেন।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে মিছিল নিয়ে এসে বাদামতলায় জমায়েত হন কর্মচারীরা। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুসারে তাঁরা এই জমায়েত করেন।

‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ অনুমোদনের প্রতিবাদে সচিবালয়ের ভেতরে গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ-মিছিল করেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। তাঁরা এই অধ্যাদেশকে ‘নিবর্তনমূলক ও কালাকানুন’ আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। তা না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।

বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের ব্যানারে এই আন্দোলন হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ সংশোধন করে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ -এর খসড়া অনুমোদনের পর গতকাল অধ্যাদেশ জারি করা হয়। কর্মচারীদের অভিযোগ, সাড়ে চার দশক আগের বিশেষ বিধানের কিছু ‘নিবর্তনমূলক ধারা’ সংযোজন করে অধ্যাদেশটি করা হয়েছে।

আন্দোলনকারী কর্মচারীরা অধ্যাদেশটিকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাহারের দাবি করছেন।

বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি মো. বাদিউল কবীর অধ্যাদেশটিকে কালাকানুন আখ্যায়িত করে বলেন, এটি প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আসেন সচিবালয়ের কর্মচারীরা। আজ সোমবার সকালে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আজও বিক্ষোভ সচিবালয়ে 
  • ৭৩৮ কোটি টাকায় নির্মিত হবে ‘হিমছড়ি-রেজুখাল ক্যাবল কার’
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (২৭ মে ২০২৫)
  • সচিবালয়ে মঙ্গলবার সব ধরনের দর্শনার্থী প্রবেশ বন্ধ থাকবে: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
  • আগামীকালও সচিবালয়ে বিক্ষোভ, দেশব্যাপী সরকারি দপ্তরেও একই কর্মসূচি পালনের আহ্বান
  • সচিবালয়ে মঙ্গলবারও বিক্ষোভ
  • সচিবালয়ে আগামীকালও বিক্ষোভ, দেশের সরকারি কর্মচারীদের একই কর্মসূচি পালনের আহ্বান
  • সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে উত্তাল সচিবালয়
  • আজও সচিবালয়ে বিক্ষোভ
  • সচিবালয়ে বিক্ষোভ, মন্ত্রণালয় থেকে মিছিল নিয়ে আসছেন কর্মচারীরা