প্রায় ৪ হাজার মানুষ যাতায়াত করতেন একটি সড়ক দিয়ে। সেই গ্রামীণ সড়কটি দীর্ঘ ১২ বছর দখল করে রেখেছিলেন এক স্থানীয় আওয়ামী লীগ (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) নেতা। অবশেষে, সড়কটি দখলমুক্ত করেছে উপজেলা প্রশাসন। এতে স্থানীয় বাসিন্দারা আনন্দিত। তবে, ওই সড়ক সংস্কার নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ফসলি জমির মাঝ দিয়ে টাঙানো হয়েছে লাল নিশানা। দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এখানে একটি সড়ক ছিল। দীর্ঘ ১২ বছরে সড়কটি কেটে কেটে আবাদি জমিতে পরিণত করেছে প্রভাবশালী মহল।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার উমরমজিদ ইউনিয়নের ডাংহাট এলাকায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারি রেকর্ডভুক্ত ৭০০ মিটার দৈর্ঘ্যের গ্রামীণ সড়কটি দীর্ঘ ১২ বছর ধরে কেটে কেটে ফসলি জমিতে পরিণত করা হয়েছে। প্রতিবাদ করতে না পারায় চরম বেকায়দায় পড়েছেন স্থানীয়রা। সড়ক না থাকায় ফসলি জমি দিয়ে চলাচল করতেন ভুক্তভোগীরা। শুকনো মৌসুমে নারী-শিশু, শিক্ষার্থীরা অতিকষ্টে যাতায়াত করলেও বর্ষায় পড়তে হয় চরম দুর্ভোগে। এখন সড়কটি অবমুক্ত করায় খুশি এলাকাবাসী।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, উমরমজিদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুস সালাম মাস্টার এবং ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সোহেল রানা সড়ক দখল করলেও তাদের ক্ষমতার দাপটের কারণে কেউ মুখ খুলতে পারতেন না। 

স্থানীয় বাসিন্দা মাহফুজার রহমান বলেছেন, দীর্ঘ ১২ বছর দখলে রাখা গ্রামীণ সড়কটি লাল নিশানা টাঙিয়ে উদ্ধার করেছে প্রশাসন। আমরা এলাকাবাসী খুব খুশি হয়েছি। এখন রাস্তায় দ্রুত মাটি ফেলে সংস্কার করা হোক। এই রাস্তার জন্য কতটা কষ্টে ছিলাম, বলার ভাষা নেই।

একই এলাকার রহিমা বেগম বলেন, রাস্তাটা না থাকার কারণে খুব কষ্ট ছিল। ছেলে-মেয়েরা স্কুল-কলেজে যেতে পারত না। এখন রাস্তা উদ্ধার হওয়ায় খুব খুশি আমরা। সরকার যদি মাটি কেটে রাস্তাটা ভরাট করে দেয়, আমাদের আর কিছু চাওয়ার নেই।

এ বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সালামের মুঠোফোনে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। 

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশাদুল হক বলেছেন, অভিযোগের ভিত্তিতে জনগণের দুর্ভোগ কমাতে দখল হয়ে যাওয়া সরকারি রেকর্ডভুক্ত সড়কটি উদ্ধার করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকা/বাদশাহ্/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ র ঘ ১২ বছর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

যে কারণে ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর

শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক ফেনী শহরের ব্যস্ততম রাস্তা। এই সড়কের পাশেই শহরের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা। একটু ভারী বৃষ্টিতেই ডুবে যায় সড়কটি। গত বছরের আগস্টের ভয়াবহ বন্যায় সড়কের দুই কিলোমিটার অংশ কোমরপানিতে তলিয়ে ছিল পাঁচ দিন। এতে সড়কের বিভিন্ন স্থান ভেঙে খানাখন্দ তৈরি হয়। পানি নেমে যাওয়ার পর পাথর ও ইটের সুরকি দিয়ে অস্থায়ী মেরামত করা হলেও স্থায়ী সংস্কার হয়নি। এ বছর বর্ষায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় আরও বেহাল হয়েছে সড়কটির দশা। ছোট ছোট গর্তে ভরা এই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলে ধীরগতিতে। ফলে সড়কে যানজট লেগেই থাকে।

পৌর শহরের এই প্রধান সড়কে তা–ও যানবাহন চলে কোনোরকমে। শহরের অলিগলি আর অভ্যন্তরীণ সড়কের দশা এর চেয়ে অনেক বেহাল। শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক থেকে একটু এগোলে হাসপাতাল মোড় থেকে সালাহ উদ্দিন মোড় পর্যন্ত যে সড়কটি রয়েছে, তাতে আগাগোড়াই বড় বড় খানাখন্দ। সড়কটির সাহেববাড়ি অংশে বড় গর্ত তৈরি হওয়ায় ইট দিয়ে সাময়িক মেরামত করলেও ছোট-বড় গাড়ির চাকা সেসবকে স্থায়ী হতে দেয়নি। এটিসহ পৌরসভার ছোট-বড় প্রায় ৩০টির বেশি সড়ক এখনো বন্যার ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে। ২০২৪ সালের বন্যার এক বছর পার হলেও ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর দৃশ্যমান কোনো সংস্কার হয়নি। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো দ্রুত মেরামতের কাজ অচিরেই শুরু হবে।

একসময়ের ছিমছাম ও সাজানো ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর। খানাখন্দে ভরা সড়কগুলোতে গাড়ি চলে হেলেদুলে। হালকা বৃষ্টিতেও প্রায় সব সড়কে পানি জমে যায়। পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে। অধিকাংশ সড়কের পিচঢালাই উঠে যাচ্ছে। ক্ষতবিক্ষত সড়ক শহরকে যেমন শ্রীহীন করেছে, তেমনি বাড়িয়েছে জনদুর্ভোগ।

সরেজমিন ঘুরে শহরের পাঠানবাড়ি সড়ক, মাস্টারপাড়া মুন্সিবাড়ি সড়ক, কদল গাজী সড়ক, বিরিঞ্চি প্রাইমারি স্কুল সড়ক, বিরিঞ্চি রতন সড়ক, সুলতানপুর আমির উদ্দিন সড়ক, গাজী ক্রস রোড, সুফি সদর উদ্দিন সড়ক, আবু বক্কর সড়ক, শহীদ ওবায়দুল হক সড়ক, মহিপাল চৌধুরী বাড়ি সড়ক, চাড়িপুর মৌলভী আব্দুস সালাম সড়ক, উত্তর চারিপুর বাইতুশ শরিফ সড়ক, পূর্ব বিজয় সিং ছোট হুদা দিঘি সড়ক, মধুপুর মালেক মিয়া বাজার সড়কের বেহাল দশা দেখা গেছে। সব মিলিয়ে ৩০টি সড়কের সব কটিই এখন বেহাল।

একসময়ের ছিমছাম ও সাজানো ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর। খানাখন্দে ভরা সড়কগুলোতে গাড়ি চলে হেলেদুলে। হালকা বৃষ্টিতেও প্রায় সব সড়কে পানি জমে যায়। পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে। অধিকাংশ সড়কের পিচঢালাই উঠে যাচ্ছে। ক্ষতবিক্ষত সড়ক শহরকে যেমন শ্রীহীন করেছে, তেমনি বাড়িয়েছে জনদুর্ভোগ।

ফেনী পৌরসভায় ইজিবাইক চালান সুজাউদ্দিন। ভাঙাচোরা সড়কের কারণে অন্য অনেকের চেয়ে তাঁকে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় বলে জানিয়েছেন। ফেনীর শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কে সম্প্রতি সুজাউদ্দিনের সঙ্গে দেখা হয়। কথায় কথায় তিনি বলেন, ছোট-বড় গর্ত থাকায় অতিরিক্ত ঝাঁকুনিতে প্রতিনিয়ত গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। অনেক সময় যাত্রীরা গাড়ি থেকে পড়ে যাওয়ার দশা হয়। রাস্তা খারাপ হওয়ায় ভাড়াও কমেছে তাঁর।

শাহিন একাডেমি এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইব্রাহিম শহরের সড়কগুলোর ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সড়কের পাশে পর্যাপ্ত নালা নেই। এ কারণে একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে। বাড়ির সামনের সড়কের এই হাল হলে আর কাজকর্ম করতে ইচ্ছা হয় না।

ফেনী পৌরসভার বিসিক–মুক্তার বাড়ি সড়কের মাঝে এমন বড় বড় খানাখন্দ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যে কারণে ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর
  • নিম্নমানের সরঞ্জাম দিয়ে সড়ক সংস্কার, দুদকের অভিযান