গণ–অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। শুরু থেকেই সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল করা এবং আইনশৃঙ্খলার উন্নতি ঘটানো। সাড়ে ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও সরকার সেই চ্যালেঞ্জ ঠিকমতো মোকাবিলা করতে পারছে না।
গত কয়েক দিনে রাজনৈতিক উত্তাপ–উত্তেজনার সুযোগে রাজধানী ঢাকায় যেভাবে অপরাধ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, তা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক ও বিপজ্জনক। মেট্রোস্টেশনের নিচে, জনবহুল সড়কে বা আবাসিক এলাকার গলিতে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। ছিনতাই, ডাকাতি, খুন—এমনকি প্রকাশ্য দিবালোকে চাপাতি ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালানোর মতো ঘটনা ঘটেছে, যা আমাদের উদ্বিগ্ন করে।
সাম্প্রতিক সময়ে পল্লবী, মগবাজার, বনশ্রী, বাড্ডাসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘটে যাওয়া ছিনতাই ও ডাকাতির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এসব ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, অপরাধীরা সংগঠিত, বেপরোয়া ও সশস্ত্র। অথচ ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ করার পরও পুলিশের সাড়া না পাওয়া এবং অপরাধীদের শনাক্ত করতে বিলম্ব হওয়াই যেন এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। ঢাকার বাড্ডায় বিএনপি নেতা খুনের ঘটনায় সোমবার দুপুর পর্যন্ত কোনো মামলা না হওয়ার খবরটি আমাদের বিস্মিত করেছে।
পরিসংখ্যান বলছে, ছিনতাই ও ডাকাতির সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকাভেদে ভিন্ন ধরনের অপরাধী চক্র সক্রিয়। যেমন উত্তরায় কিশোর গ্যাং, গুলিস্তানে পেশাদার ছিনতাইকারী, ধানমন্ডিতে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সক্রিয়তা। ফলে শহরজুড়ে একধরনের ছায়াযুদ্ধ চলছে, যেখানে নাগরিকেরা বিপর্যস্ত এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিভ্রান্ত। খিলগাঁও, মগবাজার, বাড্ডা ও মহাখালী এলাকায় আবার পেশাদার অপরাধীদের পাশাপাশি মৌসুমি অপরাধীদের তৎপরতা বেশি পেয়েছে পুলিশ।
অপরাধ পরিস্থিতির উন্নতির অন্যতম নির্দেশক হলো মানুষ ঘরে–বাইরে কিংবা চলাচলে নিরাপদ বোধ করছে কি না, সেই প্রশ্নটি। ঢাকা শহরের মানুষ এখন নিরাপদ বোধ করছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। অপরাধীদের দ্রুত জামিনে মুক্তি এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। যারা গ্রেপ্তার হয়, তারাও কয়েক দিনের মধ্যে ছাড়া পেয়ে আবার অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই পুলিশের মধ্যে কার্যকর সমন্বয়ের অভাব দেখা যাচ্ছে। সেই সময় পুলিশে অনেক বদলি–পদায়ন করা হয়। নতুন দায়িত্ব পাওয়া অনেক পুলিশ সদস্যের ঢাকায় অপরাধসংক্রান্ত অভিজ্ঞতা না থাকায় এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা দেখা দিয়েছে। আবার পুলিশ কর্মকর্তারা নিজেরাও বলছেন, নানা রকম রাজনৈতিক বিবেচনা তাঁদের নিষ্ক্রিয় করে রেখেছে। ফলে অপরাধীরা পুলিশকে ভয় পায় না, বরং পুলিশের দুর্বলতা তাদের সাহসী করে তুলেছে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে অপরাধ মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি—১.
রাজধানীর বাসিন্দাদের অন্যতম চাহিদা নিরাপত্তা, সেই জননিরাপত্তা আজ প্রশ্নবিদ্ধ। একটি সমাজের আইনশৃঙ্খলার হাল যদি এভাবে নড়বড়ে হয়ে পড়ে, তবে শুধু রাজধানী নয়; সমগ্র রাষ্ট্রব্যবস্থাই ভঙ্গুর হয়ে পড়তে পারে। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে জনগণ এখনই কার্যকর পদক্ষেপ আশা করে। এর ব্যত্যয় হলে জনগণের আস্থা হারানোর পাশাপাশি দেশে দীর্ঘ মেয়াদে অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা কোনোভাবেই আমাদের কাম্য নয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অপর ধ দ র পর স থ ত র জন ত ক ছ নত ই সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে গুমের সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে: তারেক রহমান
মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে গুমের সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক সপ্তাহে ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে তিনি বলেন, আর কোনো ব্যক্তি যাতে গুমের শিকার না হয় সেজন্য রাষ্ট্রকে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। আর যেন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গুমের মতো অমানবিক ঘটনা না ঘটে সেজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে সোচ্চার থাকতে হবে।
গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক সপ্তাহ উপলক্ষে সোমবার এক বিবৃতিতে তারেক রহমান বলেন, প্রতি বছরের মতো এবছরও মে মাসের শেষ সপ্তাহে গুম সপ্তাহ পালিত হচ্ছে। গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে এ আন্তর্জাতিক সপ্তাহ। ২০০৯ থেকে ২০২৪ এর মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে প্রায় ৬৬৬ জন ব্যক্তি গুম হয়েছেন। আমাদের হিসেবে উল্লেখিত গুমের সংখ্যা আরও কয়েকগুণ বেশি হবে। এদের মধ্যে অধিকাংশ এখনও নিখোঁজ, অনেকেরই মৃতদেহ পাওয়া গেছে আবার অনেকদিন পর কাউকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এটি বিগত আওয়ামী শাসনামলের একটি বর্বর দুঃশাসনের নমুনা। উল্লেখিত সংখ্যা গুম হয়ে যাওয়া পরিবার কর্তৃক প্রদত্ত রিপোর্ট এর ভিত্তিতে, আর অনেক আতঙ্কিত পরিবারই রিপোর্ট করার সাহস পায়নি।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেওয়া ব্যক্তিদের ১০ থেকে ১৫ বছরেও কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশের গুমের ঘটনাগুলোর সবচেয়ে বেশি শিকার হয়েছেন বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মী ও সমর্থকবৃন্দ। এছাড়াও গুমের শিকার হয়েছেন দেশের ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী এবং সাধারণ মানুষও। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রোম আইন অনুযায়ী- কোনো ব্যক্তিকে গুম করা একটি মানবাধিকারবিরোধী অপরাধ। মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে গুমের সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে।