সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তানের সংঘাতটি আমাদের চোখে স্পষ্ট করে দেখিয়ে দিয়েছে যে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বিপজ্জনক অস্ত্র আসলে পারমাণবিক বোমা নয়, বরং বয়ান বা কাহিনি তৈরি করা।

ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরু করল এবং পাকিস্তান পাল্টা জবাব দিল ‘অপারেশন বুনিয়ান আল–মারসুস’-এর মাধ্যমে। কিন্তু আপনি যদি ভাবেন, এ ঘটনা কেবল পাল্টাপাল্টি সামরিক হামলার গল্প, তাহলে আসল কথাটা আপনার চোখ এড়িয়ে গেছে।
এই যুদ্ধ আসলে শুধু ক্ষেপণাস্ত্রের নয়। এটা ছিল ‘বয়ানের যুদ্ধ’।

পত্রিকার শিরোনামে, হ্যাশট্যাগে এবং টেলিভিশনের রাতের নিউজরুমে পরিকল্পিতভাবে পরিচালিত এক লড়াই। যুদ্ধের ময়দান ছিল গণমাধ্যম, গোলাবারুদ ছিল ভাষা, আর হতাহত হয়েছিল সত্য।

আমরা যা দেখলাম, তাকে আজকের দুনিয়ায় বলা হয় ‘বক্তৃতার যুদ্ধ’। অর্থাৎ ভাষার মাধ্যমে পরিচয়, বৈধতা ও ক্ষমতার পরিকল্পিত নির্মাণ। ভারত ও পাকিস্তানের গণমাধ্যমের হাতে প্রতিটি সহিংসতার ঘটনা যেন ছিল চিত্রনাট্য অনুযায়ী পরিচালিত। যুদ্ধের প্রতিটি ছবি ছিল কৌশলে নির্বাচিত। আর প্রতিটি প্রাণহানি ছিল নিছক রাজনৈতিক উপাদান। আর সংবাদগুলো ছিল অভিনয়।

আরও পড়ুনশক্তি দেখাতে গিয়ে ভারতের দুর্বলতা বেরিয়ে এল কি?১৩ মে ২০২৫দৃশ্য এক: ন্যায়সংগত আঘাত

৬ মে, প্রথম আঘাত হানে ভারত। তবে ভারতীয় গণমাধ্যম যেভাবে উপস্থাপন করল, তাতে মনে হলো—ভারত আসলে আত্মরক্ষার্থে প্রথম জবাব দিয়েছে।  
‘অপারেশন সিঁদুর’ ঘোষিত হলো নাটকীয় ভঙ্গিতে। ২৫ মিনিটে ২৪টি হামলা। ধ্বংস হলো ৯টি ‘সন্ত্রাসের ঘাঁটি’। কোনো বেসামরিক প্রাণহানি হয়নি—এমনটাই দাবি। দোষীদের নাম প্রকাশ করা হলো—জইশ-ই-মুহাম্মদ, লস্কর-ই-তইবা এবং বাহাওয়ালপুর ও মুজাফফরাবাদে ছড়িয়ে থাকা ‘সন্ত্রাসের কারখানা’। সবকিছুই নাকি মাটির সঙ্গে মিশে গেল।

শিরোনামগুলো ছিল জয়ের উল্লাসে ভরা—‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ২.

০’, ‘ভারতীয় সেনার গর্জন পৌঁছাল রাওয়ালপিন্ডিতে’, ‘ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত’। সরকারিভাবে জানানো হলো এটি ছিল পেহেলগামে ২৬ জন ভারতীয় পর্যটকের মৃত্যুর প্রতিক্রিয়ায় ‘উপযুক্ত জবাব’। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বললেন, ‘তারা ভারতের কপালে আঘাত করেছিল, আমরা তাদের বুকে আঘাত করেছি।‘ শব্দচয়নটা যেন সিনেমার চিত্রনাট্য। আর তা খুব জেনেবুঝেই এমন করা হয়েছে।

আরও পড়ুনভারত হামলা চালিয়ে যেভাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি বাড়িয়ে দিল২০ মে ২০২৫

ভারতীয় গণমাধ্যম নিজের এমন এক পরিচয় দাঁড় করাল, যেখানে সে নৈতিক শক্তির অধিকারী এক রাষ্ট্র, যাকে বাধ্য না করলে সে আঘাত করে না। সে প্রতিশোধ নেয় না। সংযম রক্ষা করে। তার যে শুধু ক্ষেপণাস্ত্র আছে, তা–ই নয়, তার বড় অস্ত্র—ন্যায়ধর্ম ও নৈতিকতা অস্ত্র। তার শত্রু পাকিস্তান নয়, বরং সন্ত্রাস।

এভাবেই বয়ান তৈরি হয়। এখানে সে নিজেকে আক্রমণকারী নয়, বরং ন্যায়ের পক্ষে এক যোদ্ধা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করল। আর তা করল ভাষার মাধ্যমে। ভারতের জন্য এই পরিচয় গড়ে তুলল গণমাধ্যম। একটি কাহিনি গড়ে তুলে। সামরিক শক্তির সঙ্গে এখানে মিশে আছে নৈতিকতা। হামলাগুলো আগ্রাসন ছিল না। ছিল ন্যায় প্রতিষ্ঠার কর্তব্য সম্পাদন।

দৃশ্য দুই: পবিত্র প্রতিরক্ষা

তিন দিন পর পাকিস্তান পাল্টা জবাব দেয়। চালু হয় ‘অপারেশন বুনিয়ান আল–মারসুস’—আরবিতে যার অর্থ ‘লোহার প্রাচীর’। এই নামই সব বলে দেয়। এটা কেবল প্রতিশোধ ছিল না, বরং এক ধর্মীয় ঘোষণা। একজাতীয় আহ্বান। শত্রু ঢুকে পড়ার দুঃসাহস করেছিল। এবার তার জবাব হবে মনে রাখার মতো।

পাকিস্তানি ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষিত হয় ভারতীয় সামরিক ঘাঁটিতে—ব্রিগেড সদর দপ্তর, এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা ও পাঞ্জাব ও জম্মুর সামরিক স্থাপনায়। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ঘোষণা দেন, পাকিস্তান ‘১৯৭১-এর যুদ্ধের প্রতিশোধ নিয়েছে’। সেই যুদ্ধে পাকিস্তান আত্মসমর্পণ করেছিল এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। পাকিস্তানও তার কাহিনি তৈরি করা শুরু করল।

পাকিস্তানের গণমাধ্যম এই গল্প ছড়িয়ে দেয়। সারা দেশ দেশপ্রেমের উত্তেজনায় কাঁপতে থাকে। ভারতের হামলাকে দেখানো হয় যুদ্ধাপরাধ হিসেবে—মসজিদে হামলা, বেসামরিক মানুষ নিহত। ধ্বংসাবশেষ ও রক্তাক্ত ছবির সঙ্গে যুক্ত হয় ‘শহীদ’ শব্দটি।
পাকিস্তান নিজের জাতীয় পরিচয় গড়ে তোলে—আমার শান্তিপ্রিয়, কিন্তু প্ররোচিত; সংযত, কিন্তু দৃঢ়। আমরা যুদ্ধ চাই না, কিন্তু ভয়ও পাই না।

ভারত–পাকিস্তান দুই দেশের হাজির করা গল্পের মধ্যে অবিশ্বাস্য মিল। উভয় রাষ্ট্রই নিজেকে ভাবছে আত্মরক্ষাকারী। তাদের কেউই আক্রমণকারী নয়। উভয়েরই দাবি—তারা নৈতিকভাবে শ্রেষ্ঠ। উভয়েরই ভাষা—প্রথম গুলি চালিয়েছে শত্রু। জবাব দেওয়া ছাড়া আমাদের কোনো উপায় ছিল না।

আরও পড়ুনমোদির ‘চিরস্থায়ী যুদ্ধ’ ভারতকে আরও বিপদে ফেলবে১৫ মে ২০২৫কে জালিম আর কে মজলুম

দুই দেশই নিজেকে মজলুম হিসেবে জাহির করেছে। দুই দেশই বলছে, তাদের ওপর অন্যায় আক্রমণ হয়েছে। এই ক্ষেত্রেও দুই দেশের তৈরি করা গল্পে অদ্ভুত মিল।
ভারত উপস্থাপন করে পাকিস্তানকে ‘সন্ত্রাসের কারখানা’ হিসেবে, যে কিনা প্রতারক, নিয়ন্ত্রণহীন, জিহাদের নেশায় মত্ত এক পারমাণবিক দানব। এই দৃষ্টিভঙ্গিতে শান্তি অসম্ভব। কারণ ‘ওরা’ কোনো যুক্তিবুদ্ধির ধার ধারে না।

অন্যদিকে পাকিস্তান ভারতকে তুলে ধরে এক ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে, যার নেতৃত্বে সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদী সরকার, যার উদ্দেশ্য ইতিহাস থেকে মুসলমানদের মুছে ফেলা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই আক্রমণকারী। ভারতই দখলদার। তাদের হামলা সন্ত্রাসবিরোধী নয়, বরং ধর্মযুদ্ধ।

ভারতীয় গণমাধ্যম যে ভাষায় কথা বলেছে, তার নাম ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’। পাকিস্তানে ঘাঁটি গাড়া জঙ্গিদের লক্ষ করে হামলা চালিয়ে ভারত নিজেকে তুলে ধরেছে বৈশ্বিক নিরাপত্তার অংশীদার হিসেবে। এই একই পদ্ধতি ব্যবহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে, আর ইসরায়েল গাজায়।

উভয় ক্ষেত্রেই শত্রু কেবল হুমকি নয়, সে এক মতাদর্শ। আর মতাদর্শের সঙ্গে যুক্তি চলে না।

এটাই গণমাধ্যম-নির্ভর পরিচয় নির্মাণের বিপদ। একবার যদি ‘অন্যজন’কে আপনি তামাশার পাত্র করে দেন, নিজেকে নায়ক বানিয়ে ফেলেন, তাহলে আর সংলাপ সম্ভব নয়। তখন কূটনীতি হয়ে ওঠে দুর্বলতা। আপস হয় বিশ্বাসঘাতকতা। আর যুদ্ধ হয়ে পড়ে কাঙ্ক্ষিত।

ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। মানুষ মরেছে। দুই কাশ্মীরেই বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। সীমান্ত গ্রামের ওপর গোলাবর্ষণ হয়েছে। নিরপরাধ মানুষ ঘরছাড়া হয়েছে। কিন্তু এই মানবিক গল্পগুলো চাপা পড়ে গেছে কৃত্রিম গল্পের ধ্বংসস্তূপে। কোনো দেশের গণমাধ্যম অন্য দেশের নিরীহ নিহত মানুষের জন্য কোনো শোক প্রকাশ করেনি। যারা ‘আমাদের’, তারা শহীদ। যারা ‘ওদের’? তারা হয় নেহাত ক্ষয়ক্ষতি, নয়তো ভুয়া মিথ্যা গল্প। যখন আমরা কেবল নিজেদের মৃতদের জন্য কাঁদি, তখন ন্যায়বিচার মরে যায়। আর সেই অসাড়তার মধ্যেই পরবর্তী সহিংসতা হয়ে ওঠে আরও সহজ।

বৈধতার জন্য লড়াই

ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে কেবল ভূখণ্ড বা কৌশলগত সুবিধা নিয়ে ছিল না। সবচেয়ে বড় বিষয় ছিল বৈধতা। উভয় রাষ্ট্রই নিজেদের জনগণ ও গোটা বিশ্বের কাছে নিজেকে তুলে ধরতে চেয়েছে ‘ইতিহাসের সঠিক পক্ষে’ অবস্থানকারী হিসেবে।

ভারতীয় গণমাধ্যম যে ভাষায় কথা বলেছে, তার নাম ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’। পাকিস্তানে ঘাঁটি গাড়া জঙ্গিদের লক্ষ করে হামলা চালিয়ে ভারত নিজেকে তুলে ধরেছে বৈশ্বিক নিরাপত্তার অংশীদার হিসেবে। এই একই পদ্ধতি ব্যবহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে, আর ইসরায়েল গাজায়।

অন্যদিকে পাকিস্তানি গণমাধ্যম নির্ভর করেছে সার্বভৌমত্বের বয়ানের ওপর। ভারতের হামলা তাদের কাছে কেবল পাকিস্তানের মাটিতে হয়নি। এই আঘাত তাদের ইজ্জতের ওপর আঘাত। পাকিস্তান ধর্মীয় স্থান ও বেসামরিক মৃত্যুর ছবি ছড়িয়ে দিয়ে ভারতকে তুলে ধরেছে ধর্মদ্রোহী হিসেবে।

এই কথার যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত সত্যকে ঢেকে দিয়েছে। ভারত যখন দাবি করে ৮০ জঙ্গিকে হত্যা করেছে, পাকিস্তান বলে—সবই বানানো। পাকিস্তান দাবি করে, তারা ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে, ভারত বলে—মিথ্যা প্রচার। উভয়ই একে অপরকে দোষ দেয় ভুল তথ্য ছড়ানোর জন্য। তাদের প্রত্যেকের সংবাদমাধ্যম হয়ে ওঠে ‘আরশিনগর’— ‘আয়নার ঘর’। এখানে শুধু নিজের মুখই দেখা যায়।

নতুন করে শোনার ডাক

১৩ মে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় অস্ত্রবিরতি হয়। দুই দেশই বিজয় দাবি করে। কিন্তু থেকে যায় দুই পক্ষের তৈরি করা নিজেদের বয়ান—আমরা ঠিক ছিলাম। ওরা ভুল। আমরা শক্তি দেখিয়েছি। ওরা লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে।  

এই বয়ানই ভবিষ্যতের পাঠ্যপুস্তক, নির্বাচন, সেনাবাহিনীর বাজেট নির্ধারণ করবে। পরবর্তী সংঘাত, পরবর্তী গোলাগুলি, পরবর্তী যুদ্ধের ভিত্তি গড়ে দেবে।

এবং এই বয়ান বদল না হওয়া পর্যন্ত কিছুই বদলাবে না। কিন্তু এই বয়ান বদলানো সম্ভব। বদলাতে হবে। কারণ, দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বিপজ্জনক অস্ত্র পারমাণবিক বোমা নয়। সেই অস্ত্রের নাম কাহিনী বা বয়ান।

সাইয়িদা সানা বাতুল  যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাংবাদিক
আল–জাজিরা থেকে নেওয়া ইংরেজির অনুবাদ

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পরবর ত র কর ছ কর ছ ল র জন য উভয় র র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

জনতার প্রত্যাশা পরবর্তী কর্মপরিকল্পনায় কাজে লাগাতে চাই : মাসুদুজ্জামান

নারায়ণগঞ্জের জনগণের প্রত্যাশা, অভিজ্ঞতা ও উন্নয়নমূলক চাহিদাকে কেন্দ্র করে পরিচালিত “মাসুদুজ্জামানের প্রত্যাশার ক্যানভাস” ৪ দিন ব্যাপী কার্যক্রমের সমাপনী অনুষ্ঠান বুধবার সকালে চাষাড়া শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত হয়। 

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী, বিশিষ্ট সমাজসেবী, ও ক্রীড়ানুরাগী মাসুদুজ্জামান। বিগত চার দিন যাবৎ সদর ও বন্দরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, সরকারি তোলারাম কলেজ, নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারী হাজী ইব্রাহীম আলমচান স্কুল এন্ড কলেজ ও মদনপুর নাজিম উদ্দিন ভূইয়া কলেজসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দিনব্যাপী জনমত গ্রহণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

যেখানে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, ব্যবসায়ী, শ্রমজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন এবং মাদক, যানযট, ছিনতাই ও সন্ত্রাস-সহ শিক্ষা, পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপত্তা, যুব উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও স্থানীয় সেবা–ব্যবস্থা বিষয়ে প্রায় ২,০০০ মানুষ তাদের প্রত্যাশা ও মতামত লিখিতভাবে ক্যানভাসে তুলে ধরেন।

আজকের সমাপনী অনুষ্ঠানে মাসুদুজ্জামান বলেন, “নারায়ণগঞ্জের মানুষের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও প্রত্যাশা জানাই আমাদের প্রকৃত লক্ষ্য। যে পরিবর্তন মানুষ দেখতে চায়, তাদের কাছ থেকেই তা সরাসরি জানা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।” 

তিনি জানান, গত চারদিন ধরে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে পরিচালিত “জনতার প্রত্যাশার ক্যানভাস” কার্যক্রমে সংগ্রহ করা সব লিখিত মতামত ইতোমধ্যে নথিভুক্ত করা হয়েছে এবং এগুলো ভবিষ্যতের পরিকল্পনা, গবেষণা ও নীতি–প্রস্তাবনার ভিত্তি হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, অবকাঠামো, সড়কব্যবস্থা, নগরসেবা ও স্থানীয় সুযোগ–সুবিধার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে অনেক সময় নাগরিকের প্রকৃত চাহিদা পরিকল্পনায় প্রতিফলিত হয় না, যার ফলে অসামঞ্জস্যপূর্ণ নকশা, এবং উন্নয়ন অবকাঠামোয় সীমাবদ্ধতা দেখা দেয় যা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হয়। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো নারায়ণগঞ্জেও এমন উদাহরণ রয়েছে, যেখানে মানুষের বাস্তব সমস্যার সঙ্গে সামঞ্জস্য না থাকায় বিভিন্ন প্রকল্প টেকসই হয়নি বা সাধারণ মানুষের উপকারে আসেনি।

জনসাধারণের মতামতের গুরুত্ব আজ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। আমরা বিশ্বাস করি নাগরিকদের প্রত্যাশা, অভিজ্ঞতা ও বাস্তব সমস্যাকে ভিত্তি করে টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জনবান্ধব উন্নয়নের পথ তৈরি হয়।

এই উদ্যোগে মানুষ সরাসরি লিখিতভাবে জানিয়েছেন তারা কোন পরিবর্তন চান, কোন সমস্যার সমাধান জরুরি এবং স্থানীয় উন্নয়ন নিয়ে তাদের অভিমত কী। সব মতামত অগ্রাধিকার অনুযায়ী শ্রেণিবদ্ধ করে সংরক্ষণ করা হয়েছে, যা পরবর্তী কর্মপরিকল্পনার জন্য দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজে লাগাতে চাই।

আজকের আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সদর ও বন্দরের সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ।

জনতার প্রত্যাশার ক্যানভাস” নারায়ণগঞ্জের মানুষের জন্য একটি উন্মুক্ত ও অংশগ্রহণমূলক প্ল্যাটফর্মের ভূমিকা পালন করেছে, যেখানে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষ স্বাধীনভাবে তাঁদের চাহিদা, সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেছেন।

সংগৃহীত এই লিখিত মতামতই নারায়ণগঞ্জের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন–অগ্রাধিকার নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা হিসেবে বিবেচিত হবে— মনটাই বিশ্বাস করেন নারায়ণগঞ্জের সাধারন জনগণ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রিয়ালের ৪ তারকা ফুটবলার নিষিদ্ধ
  • ২২টি যুদ্ধের পর শত্রুমুক্ত হয় কুষ্টিয়া
  • গত ১৫ বছর ছিল ‘মানবাধিকার সংকটের ভয়াবহ সময়’
  • জনতার প্রত্যাশা পরবর্তী কর্মপরিকল্পনায় কাজে লাগাতে চাই : মাসুদুজ্জামান