নিষিদ্ধ, তবুও প্রকাশ্যে বিক্রি আফ্রিকান মাগুর
Published: 29th, May 2025 GMT
রাজশাহীর চারঘাট ও পুঠিয়া উপজেলাসংলগ্ন জয়পুর বাজার। মাছ ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলামকে ঘিরে অনেক ভিড়। বড় সাইজের মাগুর মাছ মাত্র ২২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কম দামে পেয়ে ক্রেতারাও কিনছেন দেদার।
বিক্রেতা জানালেন, ১০০ শতাংশ দেশি মাছ। মৎস্য অফিসের লোকজনকে ডাকার কথা বলতে পাশে ডেকে নিয়ে জানালেন, মাছটি আফ্রিকান মাগুর। পুঠিয়ার বানেশ্বর এলাকার মুরাদ আলীর কাছ থেকে কিনেছেন। বিষয়টি কাউকে না জানাতে অনুরোধ করেন।
সম্প্রতি গোবিন্দপুর বাজারে আফ্রিকান মাগুর বিক্রির সময় তবিবার রহমানকে আটক করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরিফ হোসেন ও মৎস্য কর্মকর্তা মো.
এভাবে একের পর এক অভিযান চললেও রাজশাহীর চারঘাট, বাঘা ও পুঠিয়া উপজেলার বাজারগুলোতে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে এ জাতের রাক্ষুসে মাগুর। সংঘবদ্ধ একটি চক্র যশোর থেকে এ মাছের পোনা সংগ্রহ করে উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে সরবরাহ করছে। পুকুর ও বাড়ির আনাচে-কানাচে রাক্ষুসে এ মাছ চাষ করে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। দাম কম হওয়ায় মধ্যবিত্ত, নিম্নআয়ের মানুষের কাছে এ মাছের চাহিদাও রয়েছে।
২০১৪ সালের জুন থেকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় আফ্রিকান মাগুরের আমদানি, উৎপাদন, বিপণনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। বিদেশ থেকে মাছ, রেণু ও পোনা আমদানি করলে জেল-জরিমানার বিধান রাখা হয়; যাতে সর্বভূক মাগুরের জন্য দেশি প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত না হতে পারে।
সম্প্রতি বাঘার মীরগঞ্জ ও পুঠিয়ার বানেশ্বর হাটেও আফ্রিকান মাগুর বিক্রি করতে দেখা গেছে। ছোট সাইজের মাগুরকে দেদার দেশি হিসেবে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
মাছ ব্যবসায়ী মহসিন আলী বলেন, আফ্রিকান মাগুর যে নিষিদ্ধ, এটি অনেকে জানে না। এ কারণে অনেকে বাড়ির পাশে নলকূপের পানি নামাতে গর্তের মতো ছোট জলাশয় তৈরি করে, সেতুর নিচে পানি আটকে এসব মাগুর চাষ করছেন। বড়গুলো শহরের বিভিন্ন হোটেলে চলে যায়। ১০০-১৫০ গ্রাম সাইজের মাছ স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হয়। অনেকে দেশি মাগুর মনে করে কিনে নেন।
পুঠিয়ার জামিরা এলাকার শিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, বানেশ্বর হাটে শিং মাছ না পেয়ে দেশি মাগুর কিনেছিলাম এক কেজি। বিক্রেতা বলল বিলের মাছ, দেখতেও কালো রঙের ছিল। বাড়ি নিয়ে রান্নার পর খাওয়ার উপযোগী ছিল না।
চারঘাটের পাটিয়াকান্দি গ্রামের আজিবার রহমান পুকুরে দেশি মাছের পোনা ছেড়েছিলেন। ক’দিন আগে পানি সেচে দেখেন, ১০ ভাগের এক ভাগ মাছও নেই। তিনটি বিশাল সাইজের আফ্রিকান মাগুর পেয়েছেন। মৎস্য অফিসের কর্মকর্তা জানান, এ মাগুরই সব খেয়ে ফেলেছে।
স্থানীয় এক মাছচাষি জানান, আফ্রিকান মাগুরের রেণুপোনা উৎপাদন করা হয় যশোরের কাজীপুরে। ফোনে পোনার অর্ডার করলে দিয়ে যায়। পরে ছোট জলাশয় ও বদ্ধ জায়গায় সেগুলো ছাড়া হয়। মুরগির নাড়িভুঁড়ি, পাখনা ও মাছের নাড়িভুঁড়ি খেতে দেওয়া হয়। তাতে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে মাছ বেড়ে ওঠে।
চারঘাট উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আফ্রিকান মাগুর রাক্ষুসে মাছ। মুহূর্তেই ছোট-বড় মাছ, ডিম, পোনা খেয়ে ফেলে। কোনোক্রমে এ মাছ নদী বা মুক্ত জলাশয়ে চলে গেলে মৎস্য সম্পদে বিপর্যয় ডেকে আনবে। নিষিদ্ধ এ মাছ ঠেকাতে বাজার তদারকি করা হচ্ছে।
চারঘাটের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরিফ হোসেন বলেন, আফ্রিকান মাগুরের বিষয়ে প্রচারণার পাশাপাশি আইনগত কার্যক্রমও নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে একজনকে জরিমানা করা হয়েছে। ক্রেতাকেও সচেতন হবার পরামর্শ দেন তিনি।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমার তো একেবারেই গন্ডারের চামড়া’
ভারতীয় বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রীনন্দা শঙ্কর। সৃজিত মুখার্জির ‘এক যে ছিল রাজা’, সুমন ঘোষের ‘বসুপরিবার’-এর মতো সিনেমায় অভিনয় করেছেন এই তারকা। বলা যায়, টলিউডের প্রথম সারির সব নির্মাতার সঙ্গেই কাজ করেছেন এই নৃত্যশিল্পী।
গত কয়েক বছর ধরে কলকাতা ছেড়ে মুম্বাইয়ে বসবাস করছেন শ্রীনন্দা। সেখানে সংসার, কাজ নিয়ে সময় কাটছে তার। তবে অভিনয়ে নেই। অভিনয় থেকে দূরে থাকার কারণ কী? ফের কী অভিনয়ে ফিরবেন না শ্রীনন্দা?
ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে আলাপকালে এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন শ্রীনন্দা। এ অভিনেত্রী বলেন, “টলিউডে যাদের সঙ্গেই কাজ করেছি, তাদের সঙ্গে এখনো আমার খুব ভালো সম্পর্ক। ভীষণ ভালো অভিজ্ঞতাও বলা চলে। মুশকিল হলো, বাংলা সিনেমায় তেমন বাজেট থাকে না। সত্যিই যদি খুব ভালো সিনেমা হয় বা এমন কোনো পরিচালক আমাকে অফার দেন যেখানে কোনো ভাবেই ‘না’ করব না। আমি নিশ্চয়ই আবার অভিনয়ে ফিরব।”
আরো পড়ুন:
কলকাতায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি অভিনেত্রী
পরিচালকের আপত্তিকর মন্তব্য নিয়ে মুখ খুললেন শোলাঙ্কি
কিছু কিছু লোকের সঙ্গে কাজ করতে গিয়েও মাঝপথে থেমে গিয়েছেন শ্রীনন্দা। কারণ, তাদের সঙ্গে মানসিকভাবে মেলেনি। তার ভাষায়—“মুম্বাই, কলকাতা বা সাউথ ইন্ডাস্ট্রি যেখানেই হোক না কেন, আমি ভালো মানুষের সঙ্গে কাজ করতে চাই। কেউ এমন চরিত্রে সুযোগ দেন, যেখানে প্রয়োজনে টাকাটা ভুলে গিয়ে শুধু পরিচালকের নাম দেখেই কাজটা করব।”
কিছুটা ইঙ্গিপূর্ণভাবে শ্রীনন্দা বলেন, “কাজের পাশাপাশি আমার সংসারও রয়েছে। কর্মক্ষেত্রে এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অবশ্যই পেতে হবে, যার জন্য সংসারটা ইগনোর করার কথা ভাবব। অর্থাৎ মনে হবে সংসার ফেলে এই সিনেমাটা আমাকে করতেই হবে। এই বয়েসে একটু কফি খেতে যাবেন? কাজ দেবেন? এগুলো করতে পারব না। সবাই তো চেনেই আমাকে। কাজ দিতে হলে দেবেন।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব শ্রীনন্দা। অনেকে ভেবেছিলেন, এ মাধ্যমে কাজ করে টাকা আয় করে থাকেন। তাদের উদ্দেশে শ্রীনন্দা বলেন, “অনেকেরই ভ্রান্ত ধারণা এটাও আমার পেশা। এখান থেকে অনেক টাকা উপার্জন করা যায়। আমি নিজেও আগে বিষয়টা জানতাম না। পোস্ট করতে করতে বুঝেছি। আমি এখন মুম্বাইয়ে মায়ের সঙ্গে পুরোদমে নাচের স্কুল চালাচ্ছি। এখন মোট ছয়টা ব্রাঞ্চ এবং ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও নেহাতই কম নয়। সব মিলিয়ে ভালো আছি।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রলের শিকার হন শ্রীনন্দা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “আমার তো একেবারেই গন্ডারের চামড়া হয়ে গিয়েছে। কয়েকদিন আগে আমাকে একজন বলেছিলেন, ‘রিল মামনি’। আমি আর মা এটা শুনে হেসে গড়িয়ে পড়েছি। মাঝেমধ্যে এসব বেশ মজাও লাগে। তবে যে পরিমাণ ভালোবাসা পাচ্ছি, সেটা খুব মন থেকেই ভক্তরা দিচ্ছেন বলে আমার বিশ্বাস। আমি মনে করি, এটা আমার জীবনে আশীর্বাদ।”
ঢাকা/শান্ত