রাজশাহীর চারঘাট ও পুঠিয়া উপজেলাসংলগ্ন জয়পুর বাজার। মাছ ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলামকে ঘিরে অনেক ভিড়। বড় সাইজের মাগুর মাছ মাত্র ২২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কম দামে পেয়ে ক্রেতারাও কিনছেন দেদার। 

বিক্রেতা জানালেন, ১০০ শতাংশ দেশি মাছ। মৎস্য অফিসের লোকজনকে ডাকার কথা বলতে পাশে ডেকে নিয়ে জানালেন, মাছটি আফ্রিকান মাগুর। পুঠিয়ার বানেশ্বর এলাকার মুরাদ আলীর কাছ থেকে কিনেছেন। বিষয়টি কাউকে না জানাতে অনুরোধ করেন। 

সম্প্রতি গোবিন্দপুর বাজারে আফ্রিকান মাগুর বিক্রির সময় তবিবার রহমানকে আটক করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরিফ হোসেন ও মৎস্য কর্মকর্তা মো.

আসাদুজ্জামান। ৮০ কেজি মাগুর জব্দ ও বিক্রেতাকে চার হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এভাবে একের পর এক অভিযান চললেও রাজশাহীর চারঘাট, বাঘা ও পুঠিয়া উপজেলার বাজারগুলোতে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে এ জাতের রাক্ষুসে মাগুর। সংঘবদ্ধ একটি চক্র যশোর থেকে এ মাছের পোনা সংগ্রহ করে উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে সরবরাহ করছে। পুকুর ও বাড়ির আনাচে-কানাচে রাক্ষুসে এ মাছ চাষ করে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। দাম কম হওয়ায় মধ্যবিত্ত, নিম্নআয়ের মানুষের কাছে এ মাছের চাহিদাও রয়েছে।

২০১৪ সালের জুন থেকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় আফ্রিকান মাগুরের আমদানি, উৎপাদন, বিপণনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। বিদেশ থেকে মাছ, রেণু ও পোনা আমদানি করলে জেল-জরিমানার বিধান রাখা হয়; যাতে সর্বভূক মাগুরের জন্য দেশি প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত না হতে পারে।

সম্প্রতি বাঘার মীরগঞ্জ ও পুঠিয়ার বানেশ্বর হাটেও আফ্রিকান মাগুর বিক্রি করতে দেখা গেছে। ছোট সাইজের মাগুরকে দেদার দেশি হিসেবে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে।  

মাছ ব্যবসায়ী মহসিন আলী বলেন, আফ্রিকান মাগুর যে নিষিদ্ধ, এটি অনেকে জানে না। এ কারণে অনেকে বাড়ির পাশে নলকূপের পানি নামাতে গর্তের মতো ছোট জলাশয় তৈরি করে, সেতুর নিচে পানি আটকে এসব মাগুর চাষ করছেন। বড়গুলো শহরের বিভিন্ন হোটেলে চলে যায়। ১০০-১৫০ গ্রাম সাইজের মাছ স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হয়। অনেকে দেশি মাগুর মনে করে কিনে নেন। 

পুঠিয়ার জামিরা এলাকার শিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, বানেশ্বর হাটে শিং মাছ না পেয়ে দেশি মাগুর কিনেছিলাম এক কেজি। বিক্রেতা বলল বিলের মাছ, দেখতেও কালো রঙের ছিল। বাড়ি নিয়ে রান্নার পর খাওয়ার উপযোগী ছিল না। 

চারঘাটের পাটিয়াকান্দি গ্রামের আজিবার রহমান পুকুরে দেশি মাছের পোনা ছেড়েছিলেন। ক’দিন আগে পানি সেচে দেখেন, ১০ ভাগের এক ভাগ মাছও নেই। তিনটি বিশাল সাইজের আফ্রিকান মাগুর পেয়েছেন। মৎস্য অফিসের কর্মকর্তা জানান, এ মাগুরই সব খেয়ে ফেলেছে। 

স্থানীয় এক মাছচাষি জানান, আফ্রিকান মাগুরের রেণুপোনা উৎপাদন করা হয় যশোরের কাজীপুরে। ফোনে পোনার অর্ডার করলে দিয়ে যায়। পরে ছোট জলাশয় ও বদ্ধ জায়গায় সেগুলো ছাড়া হয়। মুরগির নাড়িভুঁড়ি, পাখনা ও মাছের নাড়িভুঁড়ি খেতে দেওয়া হয়। তাতে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে মাছ বেড়ে ওঠে। 

চারঘাট উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আফ্রিকান মাগুর রাক্ষুসে মাছ। মুহূর্তেই ছোট-বড় মাছ, ডিম, পোনা খেয়ে ফেলে। কোনোক্রমে এ মাছ নদী বা মুক্ত জলাশয়ে চলে গেলে মৎস্য সম্পদে বিপর্যয় ডেকে আনবে। নিষিদ্ধ এ মাছ ঠেকাতে বাজার তদারকি করা হচ্ছে। 

চারঘাটের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরিফ হোসেন বলেন, আফ্রিকান মাগুরের বিষয়ে প্রচারণার পাশাপাশি আইনগত কার্যক্রমও নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে একজনকে জরিমানা করা হয়েছে। ক্রেতাকেও সচেতন হবার পরামর্শ দেন তিনি। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ইজ র উপজ ল মৎস য

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ায় গুলিতে ৩ পুলিশ নিহত

যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যে গুলিতে অন্তত তিনজন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও দুজন পুলিশ সদস্য।

অঙ্গরাজ্যটির পুলিশ কমিশনার ক্রিস্টোফার প্যারিস বুধবার সংবাদমাধ্যমকে হতাহতের এ তথ্য জানান।

ক্রিস্টোফার প্যারিসের বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, স্থানীয় সময় বুধবার দুপুরের এ ঘটনায় সন্দেহভাজন বন্দুকধারীও পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। আহত দুই পুলিশ সদস্যের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

পেনসিলভানিয়ার গভর্নর জশ শাপিরো ফিলাডেলফিয়া থেকে প্রায় ১৮৫ কিলোমিটার বা প্রায় ১১৫ মাইল পশ্চিমে নর্থ কোডোরাস টাউনশিপে ঘটনাস্থলে গেছেন।

কে বা কারা এ গুলিবর্ষণের পেছনে জড়িত, সে সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে পুলিশ কোনো তথ্য দেয়নি।

অ্যাটর্নি জেনারেল পামেলা বন্ডি পুলিশের বিরুদ্ধে সহিংসতাকে ‘আমাদের সমাজের জন্য একটি অভিশাপ’ বলে অভিহিত করেছেন।

পামেলা বন্ডি আরও বলেন, স্থানীয় কর্মকর্তাদের সহায়তার জন্য ফেডারেল এজেন্টরা ঘটনাস্থলে গিয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ