জুলাই অভ্যুত্থানের পর গঠিত রাজনৈতিক সমঝোতা ভেঙে রাজশাহী ও চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কর্মসূচিতে হামলার অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন। ইসলামী ছাত্র শিবির এসব হামলা চালিয়েছে বলে দাবি সংগঠনটির।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তোলেন ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মশিউর রহমান খান রিচার্ড।

মশিউর রহমান বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর আমরা এক অলিখিত রাজনৈতিক চুক্তিতে পৌঁছেছিলাম, যেখানে মতপার্থক্য থাকলেও তা গণতান্ত্রিক পন্থায় প্রকাশ করার প্রতিশ্রুতি ছিল। কিন্তু ইসলামী ছাত্র শিবির সেই চুক্তি ভঙ্গ করেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কর্মসূচিতে তারা প্রকাশ্যে হামলা চালিয়েছে, যা গভীর উদ্বেগজনক।

তিনি আরও জানান, চট্টগ্রামে পুলিশের উপস্থিতিতে হামলা চালানোর পর একজনকে আটক করা হলেও থানায় গিয়ে শিবিরের নেতাকর্মীরা মব তৈরি করে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে। এটি স্পষ্টভাবে জুলাই-পরবর্তী রাজনীতির গণতান্ত্রিক ধারাকে ব্যাহত করার প্রচেষ্টা,—বলেন তিনি।

হামলাকারীদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে মশিউর বলেন, আমরা কোনোভাবেই রাজপথে সন্ত্রাসের পুনরাবৃত্তি চাই না। যারা হামলা করেছে, তাদের বিচার না হলে রাজনৈতিক সহাবস্থানের পরিবেশ নষ্ট হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ, অর্থ সম্পাদক ফারহানা মুনা, ঢাবি শাখার আহ্বায়ক আরমানুল হক, ঢাকা নগর শাখার সভাপতি আল-আমিন রহমানসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।

সংগঠনটির নেতারা এ সময় শিক্ষা খাতে জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ, শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠনের দাবিও পুনর্ব্যক্ত করেন। তারা জানান, দাবিসমূহ বাস্তবায়নে সারা দেশে স্বাক্ষর সংগ্রহ ও শিক্ষা সংলাপ কর্মসূচি চালাচ্ছে ছাত্র ফেডারেশন।

বিচার দাবি ছাত্র ফ্রন্টের

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ছাত্র শিবিরের ধারাবাহিক হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিচারের দাবি জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট। এক যুক্ত বিবৃতিতে সংগঠনটি এসব হামলাকে ‘জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষাকে ধুলিস্যাৎ’ করার চেষ্টা বলে উল্লেখ করেছে।

সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সালমান সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদের স্বাক্ষরিত এই বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২৭ মে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যুদ্ধাপরাধী এটিএম আজহারকে বেকসুর খালাস দেওয়ার প্রতিবাদে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের আয়োজিত মশাল মিছিলে ছাত্র শিবির ‘শাহবাগ বিরোধী ঐক্য’র নামে একাধিকবার হামলা চালায়। এতে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন।

পরদিন ২৮ মে একই দাবিতে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশেও শিবির ও জামায়াতপন্থী নেতাকর্মীরা পুলিশের উপস্থিতিতে ফের হামলা চালায়। এতে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলসহ বিভিন্ন সংগঠনের একাধিক নেতা-কর্মী আহত হন।

বিশেষ করে নারী আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে হামলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিবৃতিতে বলা হয়, একজন নারী আন্দোলনকারীকে লাথি মারার মতো ঘটনা সারা দেশের বিবেকবান মানুষকে গভীরভাবে ব্যথিত এবং ক্ষুব্ধ করেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত দুই দিনের হামলায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রামে যাদেরকে রক্তাক্ত করা হয়েছে তারা প্রত্যেকেই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখ সারির যোদ্ধা ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্র শিবির মিছিল চলাকালে ‘উস্কানি ও বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে’ বলেও অভিযোগ করা হয়।

বিবৃতিতে সংগঠনের দুই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত ছাত্র জোটের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ছাত্র শিবির ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়ে জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষাকে ধুলিস্যাৎ করেছে। ছাত্র শিবিরের সন্ত্রাসসহ সমস্ত ধরনের সন্ত্রাস-দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সারাদেশের ছাত্র-জনতাকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

তারা আরও বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে সন্ত্রাস-দখলদারিত্বের রাজনীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আওয়াজ উঠেছিল। জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে যেসব সংগঠন নতুন করে সন্ত্রাসের রাজনীতির পথে হাঁটছে তাদের বিরুদ্ধে এদেশের শিক্ষার্থী-জনতার সোচ্চার হওয়া একান্ত জরুরি।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট হামলাকারীদের অবিলম্বে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানিয়েছে।

এ দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রামে ছাত্রশিবিরের হামলা এবং যুদ্ধাপরাধী এটিএম আজহারের বেকসুর খালাসের প্রতিবাদে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ) ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ আয়োজনে বিকাল সাড়ে ৪টায় রাজু ভাস্কর্যে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক ছ ত র জ ট র স গঠন র র জন ত ন র পর ন ত কর

এছাড়াও পড়ুন:

সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন এইচআরসিবিএম

বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা এক গভীর সংকটে রূপ নিয়েছে বলে মনে করে হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম)। সংগঠনটির হিসাবে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ৯০ জন সংখ্যালঘু নাগরিক নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকে হত্যার শিকার হয়েছেন, আবার অনেকের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। এ অবস্থায় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এইচআরসিবিএম।

বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আজ বুধবার সকালে রাজধানীর বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে (ক্র্যাব) সংবাদ সম্মেলন করে এইচআরসিবিএম এ কথা বলেছে। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এইচআরসিবিএম বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের আহ্বায়ক লাকী বাছাড় এ তথ্য জানিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন লাকী বাছাড়। তাতে তিনি বলেন, ২০২৫ সাল বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সংখ্যালঘুরা হামলা, লুটপাট, মব সহিংসতার শিকার হয়েছেন। তাঁদের বাড়িঘর পোড়ানো হয়েছে, নারী নির্যাতন হয়েছে, ধর্ম অবমাননার অভিযোগে হেনস্তার ঘটনা ঘটেছে। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভূমি দখল হয়েছে। হত্যা, মিথ্যা মামলা, উচ্ছেদের শিকার হয়েছেন সংখ্যালঘুরা। এসব অপরাধে জড়িতদের বিচার হয়নি সেভাবে। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাহীনতা উদ্বেগ তৈরি করছে।

এইচআরসিবিএমের তথ্যমতে, শুধু ডিসেম্বর মাসের প্রথম ৯ দিনে দেশে ৯ জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ হত্যার শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ৯০ জন সংখ্যালঘু নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে বা রহস্যজনকভাবে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে।

সংগঠনটি জানায়, তারা গত এক বছর বিভিন্ন সহিংসতা ও নির্যাতনের ঘটনায় জরুরি মনিটরিং সেল সক্রিয় করেছে। মাঠপর্যায়ে তথ্য যাচাই ও স্বাধীন প্রতিবেদন সংগ্রহ করেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ওসমান হাদির ওপর হামলায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি নাগরিক কোয়ালিশনের
  • বাড়ল স্বর্ণের দাম, শুক্রবার থেকে কার্যকর
  • রিয়ালের ৪ তারকা ফুটবলার নিষিদ্ধ
  • ২২টি যুদ্ধের পর শত্রুমুক্ত হয় কুষ্টিয়া
  • টানা ১২ বছর ধরে সভাপতি, বিধি ভেঙে আবারও প্রার্থী
  • গত ১৫ বছর ছিল ‘মানবাধিকার সংকটের ভয়াবহ সময়’
  • সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন এইচআরসিবিএম
  • জনতার প্রত্যাশা পরবর্তী কর্মপরিকল্পনায় কাজে লাগাতে চাই : মাসুদুজ্জামান
  • মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় দায়ীদের জবাবদিহি নিশ্চিতের দাবি ব্লাস্টের