তামাত্তু হজ। এক ইহরামে ওমরাহ শেষ করে আরেক ইহরামে মূল হজ করাকে তামাত্তু হজ বলে। অনেক হজযাত্রী তামাত্তু হজ করেন। তামাত্তু হজের নিয়মগুলো দেখে নিন। 
ওমরাহর ইহরাম (ফরজ)
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সেরে আপনাকে গোসল বা অজু করে নিতে হবে। মিকাত অতিক্রমের আগেই সেলাইবিহীন একটি সাদা কাপড় পরতে হবে। অন্যটি গায়ে জড়িয়ে নিয়ে ইহরামের নিয়তে দুই রাকাত নামাজ পড়তে হবে। শুধু ওমরাহর নিয়ত করে এক বা তিনবার তালবিয়া (লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক.

..) পড়তে হবে।
ওমরাহর তাওয়াফ (ফরজ)
অজুর সঙ্গে ইজতিবাসহ তাওয়াফ করুন। ইহরামের চাদরকে ডান বগলের নিচের দিক থেকে পেঁচিয়ে এনে বাঁ কাঁধের ওপর রাখাকে ইজতিবা বলে। হাজরে আসওয়াদ সামনে রেখে তার বরাবর ডান পাশে দাঁড়ান। সেখানে ডান পাশে তাকালে সবুজ বাতিও দেখতে পাবেন। এরপর দাঁড়িয়ে তাওয়াফের নিয়ত করুন। 
এরপর ডানে গিয়ে এমনভাবে দাঁড়াবেন, যেন হাজরে আসওয়াদ পুরোপুরি আপনার সামনে থাকে। এরপর হাত তুলে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলুন। পরে হাত ছেড়ে দিন এবং হাজরে আসওয়াদের দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে হাতের তালুতে চুমু খেয়ে ডান দিকে চলতে থাকুন। এ সময় পবিত্র কাবাঘর আপনার পূর্ণ বাঁয়ে থাকবে।
পুরুষের জন্য প্রথম তিন চক্করে ‘রমল’ করা সুন্নত। ‘রমল’ অর্থ বীরের মতো বুক ফুলিয়ে কাঁধ দুলিয়ে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলা।
রুকনে ইয়ামেনিকে সম্ভব হলে শুধু হাতে স্পর্শ করবেন। চুমু খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। রুকনে ইয়ামেনি থেকে হাজরে আসওয়াদের মাঝখানে ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াকিনা আজাবান্নার, ওয়াদখিলনাল জান্নাতা মা’আল আবরার, ইয়া আজিজু ইয়া গাফফার, ইয়া রাব্বাল আলামিন’ পড়ুন। অতঃপর হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত এসে চক্কর পুরো করুন।
পুনরায় হাজরে আসওয়াদ বরাবর দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে ইশারা করে দ্বিতীয় চক্কর শুরু করুন। এভাবে সাত চক্করে তাওয়াফ শেষ করুন। হাতে সাত দানার তসবিহ অথবা গণনাযন্ত্র রাখতে পারেন। তাহলে সাত চক্কর গুনতে ভুল হবে না। এ সময় যেই দোয়া, সুরা, আয়াত মনে আসে, তা পড়ে দোয়া করবেন। কারণ, এটি দোয়া কবুলের সময়।
তাওয়াফের দুই রাকাত নামাজ (ওয়াজিব)
মাকামে ইব্রাহিমের পেছনে বা মসজিদুল হারামের যে কোনো স্থানে তাওয়াফের নিয়তে (মাকরুহ সময় ছাড়া) দুই রাকাত নামাজ পড়ে দোয়া করুন। মনে রাখবেন, এটি দোয়া কবুলের সময়। এরপর মন ভরে জমজমের পানি পান করুন। 
ওমরাহর সাঈ (ওয়াজিব)
সাফা পাহাড়ের কিছুটা ওপরে উঠে (এখন পাহাড় নেই, মেঝেতে মার্বেল পাথর, শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত) কাবা শরিফের দিকে মুখ করে সাঈয়ের নিয়ত করে হাত তুলে তিনবার তাকবির বলে দোয়া করুন। তারপর মারওয়ার দিকে রওনা হয়ে দুই সবুজ দাগের মধ্যে একটু দ্রুত পথ চলে মারওয়ায় পৌঁছালে এক চক্কর পূর্ণ হয়। এটি সেই জায়গা, যেখানে হজরত হাজেরা (আ.) পানির জন্য ছোটাছুটি করেছিলেন। মারওয়া পাহাড়ে উঠে কাবা শরিফের দিকে মুখ করে হাত তুলে (দোয়া পড়ার মতো) তাকবির পড়ুন এবং হাঁটতে থাকুন। সেখান থেকে সাফায় পৌঁছালে দ্বিতীয় চক্কর পূর্ণ হবে। এভাবে সপ্তম চক্করে মারওয়ায় গিয়ে সাঈ শেষ হবে। প্রতি চক্করে সাফা ও মারওয়াতে হাত তুলে দোয়া করবেন।
হলক করা (ওয়াজিব)
পুরুষ হলে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শের অনুসরণে সম্পূর্ণ মাথা ন্যাড়া করবেন। তবে মাথার চুল ছাঁটতেও পারেন। নারী হলে চুলের অগ্রভাগ থেকে এক কড় পরিমাণ কাটতে হবে। এ পর্যন্ত করলে ওমরাহর কাজ শেষ হবে। 
এরপর হজের ইহরাম বাঁধবেন। ওমরাহর পর এ সময় পর্যন্ত ব্যক্তিগত প্রয়োজনীয় কাজগুলো করতে পারবেন।
হজের ইহরাম (ফরজ)
হারাম শরিফ বা বাসা থেকে আগের নিয়মে শুধু হজের নিয়তে ইহরাম বেঁধে ৮ জিলহজ জোহর নামাজের আগেই মিনায় পৌঁছে যেতে হবে।
মিনায় অবস্থান (সুন্নত)
৮ জিলহজ জোহর থেকে ৯ জিলহজ ফজরসহ মোট পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মিনায় আদায় করতে হবে। এ সময়ে মিনায় অবস্থান করতে হবে।
আরাফাতে অবস্থান (ফরজ)
আরাফাতের ময়দানে অবস্থান হজের অন্যতম ফরজ। ৯ জিলহজ দুপুরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করুন। মসজিদে ‘নামিরা’য় উভয় নামাজ জামাতে পড়লে একসঙ্গে আদায় করুন।
আর মসজিদে নামিরা যদি আপনার কাছ থেকে দূরে হয়, তাহলে সেখানেই অবস্থান করবেন। নিজ তাঁবুতে জোহর ও আসরের নামাজ সুবিধামতো আলাদাভাবে আদায় করুন। হজের সময় সঙ্গীদের সঙ্গে কোনো বিষয়ে মতপার্থক্যের সৃষ্টি হলে বিবাদ করবেন না। মাগরিবের নামাজের আগে মুজদালিফার দিকে রওনা হোন।
মুজদালিফায় অবস্থান (ওয়াজিব)
আরাফায় সূর্যাস্তের পর মুজদালিফায় গিয়ে এশার সময়ে মাগরিব ও এশা এক আজান এবং এক ইকামতে একসঙ্গে আদায় করবেন। এখানেই রাত যাপন করুন। এটি সুন্নত। ১০ জিলহজ ফজরের পর সূর্যোদয়ের আগে কিছু সময় মুজদালিফায় অবশ্যই অবস্থান করবেন। এটি ওয়াজিব। তবে শারীরিকভাবে দুর্বল (অপারগ) ও নারীদের বেলায় এটি অপরিহার্য নয়। রাতে ৭০টি কঙ্কর সংগ্রহ করুন। মুজদালিফায় কঙ্কর খুব সহজেই পেয়ে যাবেন।
কঙ্কর নিক্ষেপ (প্রথম দিন)
১০ জিলহজ ফজর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত শুধু বড় জামারাকে (বড় শয়তান) সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করুন। এটি ওয়াজিব। ওই সময়ে এটি করা সম্ভব না হলে রাতেও কঙ্কর নিক্ষেপ করতে পারবেন। দুর্বল ও নারীদের জন্য রাতেই কঙ্কর নিক্ষেপ করা উত্তম ও নিরাপদ।
কোরবানি করা (ওয়াজিব)
১০ জিলহজ কঙ্কর নিক্ষেপের পরই কেবল নিশ্চিত পন্থায় কোরবানি আদায় করুন। কোরবানির পরই রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শের অনুসরণে মাথা ন্যাড়া বা হলক করুন। এটি ওয়াজিব। চাইলে চুল ছোটও করতে পারেন। খেয়াল রাখতে হবে, কঙ্কর নিক্ষেপ, কোরবানি করা ও চুল কাটার মধ্যে ধারাবাহিকতা যেন ঠিক থাকে।
তাওয়াফে জিয়ারত (ফরজ)
১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগেই তাওয়াফে জিয়ারত করা উত্তম। তবে নারীরা প্রাকৃতিক কারণে জিয়ারত করতে না পারলে পবিত্র হওয়ার পরে করবেন।
সাঈ (ওয়াজিব)
তাওয়াফ শেষে সাফা-মারওয়ায় গিয়ে সাঈ করুন। সাঈ সাফা থেকে শুরু করে মারওয়ায় গিয়ে শেষ হয়। সাফা থেকে মারওয়া প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন চক্কর। এভাবে সাতটি চক্কর সম্পূর্ণ হলে একটি সাঈ পূর্ণ হয় (মনে রাখার জন্য মারওয়াতে ১, ৩, ৫, ৭ নম্বর চক্করগুলো হবে)।
কঙ্কর নিক্ষেপ (ওয়াজিব)
১১ ও ১২ জিলহজ প্রতিদিন তিন (ছোট, মধ্যম, বড়) শয়তানকেই কঙ্কর নিক্ষেপ (ওয়াজিব) করতে হবে। ১১-১২ জিলহজ দুপুর থেকে কঙ্কর নিক্ষেপের সময় শুরু। ভিড় এড়ানোর জন্য আসর নামাজের পর অথবা সুবিধাজনক সময়ে সাতটি করে কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে–প্রথমে ছোট, মধ্যম, তারপর বড় শয়তানকে। ছোট জামারা থেকে শুরু করে বড় জামারায় শেষ করুন। দুর্বল ও নারীদের জন্য রাতেই কঙ্কর নিক্ষেপ করা উত্তম ও নিরাপদ।
মিনায় রাতযাপন
১০ ও ১১ জিলহজ মিনাতেই রাতযাপন করুন। আর যদি ১৩ তারিখ ‘রমি’ (কঙ্কর ছুড়ে মারা) শেষ করে ফিরতে চান (সুন্নত), তবে ১২ তারিখ রাতযাপন করুন।
মিনা ত্যাগ
১৩ জিলহজ মিনায় না থাকতে চাইলে ১২ জিলহজ সন্ধ্যার আগে অথবা সন্ধ্যার পর ভোর হওয়ার আগে মিনা ত্যাগ করুন। সূর্যাস্তের আগে মিনা ত্যাগ করা উত্তম। তবে করতেই হবে, এমন নয়। 
বিদায়ী তাওয়াফ (ওয়াজিব)
বাংলাদেশ থেকে যাওয়া হজযাত্রীদের হজ শেষে বিদায়ী তাওয়াফ করতে হয়।
ইহরাম থাকা অবস্থায় যা যা করা যাবে না
ইহরাম থাকা অবস্থায় বেশ কিছু কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। যদি ইচ্ছাকৃতভাবে এই কাজগুলো সম্পাদন করা হয়, সে ক্ষেত্রে আপনাকে ‘দম’ বা পশু কোরবানি দিতে হবে। 
ইহরামরত অবস্থায় যে কাজগুলো করা যাবে না, সেগুলো হলো– চুল বা নখ কাটা; সুগন্ধি বা পারফিউম ব্যবহার করা; পুরুষেরা সেলাই করা কাপড় পরিধান করতে পারবেন না; নারীরা মুখ ঢাকতে পারবেন না বা হাতে গ্লাভস পরতে পারবেন না; পশু শিকার করা যাবে না; মশা-মাছিও মারা যাবে না; গাছ বা পাতা ছেঁড়া যাবে না; কারও পড়ে যাওয়া জিনিস ওঠানো যাবে না, যদি না ফেরত দেওয়ার জন্য ওঠানো হয়; স্বামী-স্ত্রী সহবাস করা যাবে না এবং ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়া যাবে না। 
তবে ইহরাম থাকা অবস্থায় কিছু কাজ করা যেতে পারে। যেমন– বেল্ট পরা, হিয়ারিং এইড, পাওয়ার চশমা পরা ইত্যাদি। গোসল করা। তবে সাবান হবে গন্ধহীন। ইহরামের কাপড় ধোয়া বা নতুন ইহরামের কাপড় পরা ইত্যাদি করা যাবে।

পথ হারালে কী করবেন

সৌদি আরবে হজ করতে গিয়ে নতুন পরিবেশে যে কেউ হারিয়ে যেতে পারেন। দলছুট হয়ে গেলে বা হারিয়ে গেলে অস্থির বা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়া যাবে না। 
ঠান্ডা মাথায় নিচের কাজগুলো করার চেষ্টা করতে হবে। শুরুতেই সঙ্গীকে জানিয়ে রাখুন হারিয়ে গেলে কোথায় অপেক্ষা করবেন। আপনার ফোন চালু থাকলে, সঙ্গীকে ফোন দিন। নিজের ফোন দিয়ে কল করা সম্ভব না হলে, সেখানে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশিকে পাবেন, তাদের সাহায্য নিতে পারেন। তারা মক্কা ও মদিনায় বাংলাদেশ হজ অফিসে আপনাকে পৌঁছাতে সাহায্য করতে পারেন। 
বাংলাদেশ হজ অফিস মক্কার ঠিকানা: ইব্রাহিম খলিল রোডে মিসফালাহ কার পার্কিংয়ের উল্টোদিকে। 
মদিনায় হজ অফিসের ঠিকানা: মসজিদে নববির উত্তর (ওহুদ পাহাড়) দিকে কিং ফাহাদ গেট অর্থাৎ ২১ নম্বর গেট দিয়ে বের হয়ে বাঙালি মার্কেটের পরে টপটেনের উল্টোপাশে বাংলাদেশ হজ অফিস।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হজ অবস থ ন কর অবস থ য় ইহর ম র ম রওয় য় রব ন ন দ য় কর ন কর ন প রব ন র জন য স ন নত শ ষ কর আপন র মসজ দ করব ন র সময় এ সময় ওমর হ

এছাড়াও পড়ুন:

সৌদি আরবে ১২০ সরকারি কর্মী গ্রেপ্তার

সৌদি আরবে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে ১২০ জন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ মাসের শুরু থেকে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরের মোট ৪৩৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দেশটির দুর্নীতি প্রতিরোধ সংস্থা নাজহা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের মধ্যে ১২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

শুক্রবার নাজহার পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আটককৃতরা স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা, নগর প্রশাসন, আবাসন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, পরিবহন, স্বাস্থ্য, জাকাত, কর এবং কাস্টমস বিভাগের। সরকারের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ ও দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন গ্রেপ্তার ১২০ জনের তালিকায়। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। রয়টার্স।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ