তামাত্তু হজ। এক ইহরামে ওমরাহ শেষ করে আরেক ইহরামে মূল হজ করাকে তামাত্তু হজ বলে। অনেক হজযাত্রী তামাত্তু হজ করেন। তামাত্তু হজের নিয়মগুলো দেখে নিন।
ওমরাহর ইহরাম (ফরজ)
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সেরে আপনাকে গোসল বা অজু করে নিতে হবে। মিকাত অতিক্রমের আগেই সেলাইবিহীন একটি সাদা কাপড় পরতে হবে। অন্যটি গায়ে জড়িয়ে নিয়ে ইহরামের নিয়তে দুই রাকাত নামাজ পড়তে হবে। শুধু ওমরাহর নিয়ত করে এক বা তিনবার তালবিয়া (লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক.
ওমরাহর তাওয়াফ (ফরজ)
অজুর সঙ্গে ইজতিবাসহ তাওয়াফ করুন। ইহরামের চাদরকে ডান বগলের নিচের দিক থেকে পেঁচিয়ে এনে বাঁ কাঁধের ওপর রাখাকে ইজতিবা বলে। হাজরে আসওয়াদ সামনে রেখে তার বরাবর ডান পাশে দাঁড়ান। সেখানে ডান পাশে তাকালে সবুজ বাতিও দেখতে পাবেন। এরপর দাঁড়িয়ে তাওয়াফের নিয়ত করুন।
এরপর ডানে গিয়ে এমনভাবে দাঁড়াবেন, যেন হাজরে আসওয়াদ পুরোপুরি আপনার সামনে থাকে। এরপর হাত তুলে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলুন। পরে হাত ছেড়ে দিন এবং হাজরে আসওয়াদের দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে হাতের তালুতে চুমু খেয়ে ডান দিকে চলতে থাকুন। এ সময় পবিত্র কাবাঘর আপনার পূর্ণ বাঁয়ে থাকবে।
পুরুষের জন্য প্রথম তিন চক্করে ‘রমল’ করা সুন্নত। ‘রমল’ অর্থ বীরের মতো বুক ফুলিয়ে কাঁধ দুলিয়ে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলা।
রুকনে ইয়ামেনিকে সম্ভব হলে শুধু হাতে স্পর্শ করবেন। চুমু খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। রুকনে ইয়ামেনি থেকে হাজরে আসওয়াদের মাঝখানে ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াকিনা আজাবান্নার, ওয়াদখিলনাল জান্নাতা মা’আল আবরার, ইয়া আজিজু ইয়া গাফফার, ইয়া রাব্বাল আলামিন’ পড়ুন। অতঃপর হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত এসে চক্কর পুরো করুন।
পুনরায় হাজরে আসওয়াদ বরাবর দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে ইশারা করে দ্বিতীয় চক্কর শুরু করুন। এভাবে সাত চক্করে তাওয়াফ শেষ করুন। হাতে সাত দানার তসবিহ অথবা গণনাযন্ত্র রাখতে পারেন। তাহলে সাত চক্কর গুনতে ভুল হবে না। এ সময় যেই দোয়া, সুরা, আয়াত মনে আসে, তা পড়ে দোয়া করবেন। কারণ, এটি দোয়া কবুলের সময়।
তাওয়াফের দুই রাকাত নামাজ (ওয়াজিব)
মাকামে ইব্রাহিমের পেছনে বা মসজিদুল হারামের যে কোনো স্থানে তাওয়াফের নিয়তে (মাকরুহ সময় ছাড়া) দুই রাকাত নামাজ পড়ে দোয়া করুন। মনে রাখবেন, এটি দোয়া কবুলের সময়। এরপর মন ভরে জমজমের পানি পান করুন।
ওমরাহর সাঈ (ওয়াজিব)
সাফা পাহাড়ের কিছুটা ওপরে উঠে (এখন পাহাড় নেই, মেঝেতে মার্বেল পাথর, শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত) কাবা শরিফের দিকে মুখ করে সাঈয়ের নিয়ত করে হাত তুলে তিনবার তাকবির বলে দোয়া করুন। তারপর মারওয়ার দিকে রওনা হয়ে দুই সবুজ দাগের মধ্যে একটু দ্রুত পথ চলে মারওয়ায় পৌঁছালে এক চক্কর পূর্ণ হয়। এটি সেই জায়গা, যেখানে হজরত হাজেরা (আ.) পানির জন্য ছোটাছুটি করেছিলেন। মারওয়া পাহাড়ে উঠে কাবা শরিফের দিকে মুখ করে হাত তুলে (দোয়া পড়ার মতো) তাকবির পড়ুন এবং হাঁটতে থাকুন। সেখান থেকে সাফায় পৌঁছালে দ্বিতীয় চক্কর পূর্ণ হবে। এভাবে সপ্তম চক্করে মারওয়ায় গিয়ে সাঈ শেষ হবে। প্রতি চক্করে সাফা ও মারওয়াতে হাত তুলে দোয়া করবেন।
হলক করা (ওয়াজিব)
পুরুষ হলে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শের অনুসরণে সম্পূর্ণ মাথা ন্যাড়া করবেন। তবে মাথার চুল ছাঁটতেও পারেন। নারী হলে চুলের অগ্রভাগ থেকে এক কড় পরিমাণ কাটতে হবে। এ পর্যন্ত করলে ওমরাহর কাজ শেষ হবে।
এরপর হজের ইহরাম বাঁধবেন। ওমরাহর পর এ সময় পর্যন্ত ব্যক্তিগত প্রয়োজনীয় কাজগুলো করতে পারবেন।
হজের ইহরাম (ফরজ)
হারাম শরিফ বা বাসা থেকে আগের নিয়মে শুধু হজের নিয়তে ইহরাম বেঁধে ৮ জিলহজ জোহর নামাজের আগেই মিনায় পৌঁছে যেতে হবে।
মিনায় অবস্থান (সুন্নত)
৮ জিলহজ জোহর থেকে ৯ জিলহজ ফজরসহ মোট পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মিনায় আদায় করতে হবে। এ সময়ে মিনায় অবস্থান করতে হবে।
আরাফাতে অবস্থান (ফরজ)
আরাফাতের ময়দানে অবস্থান হজের অন্যতম ফরজ। ৯ জিলহজ দুপুরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করুন। মসজিদে ‘নামিরা’য় উভয় নামাজ জামাতে পড়লে একসঙ্গে আদায় করুন।
আর মসজিদে নামিরা যদি আপনার কাছ থেকে দূরে হয়, তাহলে সেখানেই অবস্থান করবেন। নিজ তাঁবুতে জোহর ও আসরের নামাজ সুবিধামতো আলাদাভাবে আদায় করুন। হজের সময় সঙ্গীদের সঙ্গে কোনো বিষয়ে মতপার্থক্যের সৃষ্টি হলে বিবাদ করবেন না। মাগরিবের নামাজের আগে মুজদালিফার দিকে রওনা হোন।
মুজদালিফায় অবস্থান (ওয়াজিব)
আরাফায় সূর্যাস্তের পর মুজদালিফায় গিয়ে এশার সময়ে মাগরিব ও এশা এক আজান এবং এক ইকামতে একসঙ্গে আদায় করবেন। এখানেই রাত যাপন করুন। এটি সুন্নত। ১০ জিলহজ ফজরের পর সূর্যোদয়ের আগে কিছু সময় মুজদালিফায় অবশ্যই অবস্থান করবেন। এটি ওয়াজিব। তবে শারীরিকভাবে দুর্বল (অপারগ) ও নারীদের বেলায় এটি অপরিহার্য নয়। রাতে ৭০টি কঙ্কর সংগ্রহ করুন। মুজদালিফায় কঙ্কর খুব সহজেই পেয়ে যাবেন।
কঙ্কর নিক্ষেপ (প্রথম দিন)
১০ জিলহজ ফজর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত শুধু বড় জামারাকে (বড় শয়তান) সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করুন। এটি ওয়াজিব। ওই সময়ে এটি করা সম্ভব না হলে রাতেও কঙ্কর নিক্ষেপ করতে পারবেন। দুর্বল ও নারীদের জন্য রাতেই কঙ্কর নিক্ষেপ করা উত্তম ও নিরাপদ।
কোরবানি করা (ওয়াজিব)
১০ জিলহজ কঙ্কর নিক্ষেপের পরই কেবল নিশ্চিত পন্থায় কোরবানি আদায় করুন। কোরবানির পরই রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শের অনুসরণে মাথা ন্যাড়া বা হলক করুন। এটি ওয়াজিব। চাইলে চুল ছোটও করতে পারেন। খেয়াল রাখতে হবে, কঙ্কর নিক্ষেপ, কোরবানি করা ও চুল কাটার মধ্যে ধারাবাহিকতা যেন ঠিক থাকে।
তাওয়াফে জিয়ারত (ফরজ)
১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগেই তাওয়াফে জিয়ারত করা উত্তম। তবে নারীরা প্রাকৃতিক কারণে জিয়ারত করতে না পারলে পবিত্র হওয়ার পরে করবেন।
সাঈ (ওয়াজিব)
তাওয়াফ শেষে সাফা-মারওয়ায় গিয়ে সাঈ করুন। সাঈ সাফা থেকে শুরু করে মারওয়ায় গিয়ে শেষ হয়। সাফা থেকে মারওয়া প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন চক্কর। এভাবে সাতটি চক্কর সম্পূর্ণ হলে একটি সাঈ পূর্ণ হয় (মনে রাখার জন্য মারওয়াতে ১, ৩, ৫, ৭ নম্বর চক্করগুলো হবে)।
কঙ্কর নিক্ষেপ (ওয়াজিব)
১১ ও ১২ জিলহজ প্রতিদিন তিন (ছোট, মধ্যম, বড়) শয়তানকেই কঙ্কর নিক্ষেপ (ওয়াজিব) করতে হবে। ১১-১২ জিলহজ দুপুর থেকে কঙ্কর নিক্ষেপের সময় শুরু। ভিড় এড়ানোর জন্য আসর নামাজের পর অথবা সুবিধাজনক সময়ে সাতটি করে কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে–প্রথমে ছোট, মধ্যম, তারপর বড় শয়তানকে। ছোট জামারা থেকে শুরু করে বড় জামারায় শেষ করুন। দুর্বল ও নারীদের জন্য রাতেই কঙ্কর নিক্ষেপ করা উত্তম ও নিরাপদ।
মিনায় রাতযাপন
১০ ও ১১ জিলহজ মিনাতেই রাতযাপন করুন। আর যদি ১৩ তারিখ ‘রমি’ (কঙ্কর ছুড়ে মারা) শেষ করে ফিরতে চান (সুন্নত), তবে ১২ তারিখ রাতযাপন করুন।
মিনা ত্যাগ
১৩ জিলহজ মিনায় না থাকতে চাইলে ১২ জিলহজ সন্ধ্যার আগে অথবা সন্ধ্যার পর ভোর হওয়ার আগে মিনা ত্যাগ করুন। সূর্যাস্তের আগে মিনা ত্যাগ করা উত্তম। তবে করতেই হবে, এমন নয়।
বিদায়ী তাওয়াফ (ওয়াজিব)
বাংলাদেশ থেকে যাওয়া হজযাত্রীদের হজ শেষে বিদায়ী তাওয়াফ করতে হয়।
ইহরাম থাকা অবস্থায় যা যা করা যাবে না
ইহরাম থাকা অবস্থায় বেশ কিছু কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। যদি ইচ্ছাকৃতভাবে এই কাজগুলো সম্পাদন করা হয়, সে ক্ষেত্রে আপনাকে ‘দম’ বা পশু কোরবানি দিতে হবে।
ইহরামরত অবস্থায় যে কাজগুলো করা যাবে না, সেগুলো হলো– চুল বা নখ কাটা; সুগন্ধি বা পারফিউম ব্যবহার করা; পুরুষেরা সেলাই করা কাপড় পরিধান করতে পারবেন না; নারীরা মুখ ঢাকতে পারবেন না বা হাতে গ্লাভস পরতে পারবেন না; পশু শিকার করা যাবে না; মশা-মাছিও মারা যাবে না; গাছ বা পাতা ছেঁড়া যাবে না; কারও পড়ে যাওয়া জিনিস ওঠানো যাবে না, যদি না ফেরত দেওয়ার জন্য ওঠানো হয়; স্বামী-স্ত্রী সহবাস করা যাবে না এবং ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়া যাবে না।
তবে ইহরাম থাকা অবস্থায় কিছু কাজ করা যেতে পারে। যেমন– বেল্ট পরা, হিয়ারিং এইড, পাওয়ার চশমা পরা ইত্যাদি। গোসল করা। তবে সাবান হবে গন্ধহীন। ইহরামের কাপড় ধোয়া বা নতুন ইহরামের কাপড় পরা ইত্যাদি করা যাবে।
পথ হারালে কী করবেন
সৌদি আরবে হজ করতে গিয়ে নতুন পরিবেশে যে কেউ হারিয়ে যেতে পারেন। দলছুট হয়ে গেলে বা হারিয়ে গেলে অস্থির বা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়া যাবে না।
ঠান্ডা মাথায় নিচের কাজগুলো করার চেষ্টা করতে হবে। শুরুতেই সঙ্গীকে জানিয়ে রাখুন হারিয়ে গেলে কোথায় অপেক্ষা করবেন। আপনার ফোন চালু থাকলে, সঙ্গীকে ফোন দিন। নিজের ফোন দিয়ে কল করা সম্ভব না হলে, সেখানে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশিকে পাবেন, তাদের সাহায্য নিতে পারেন। তারা মক্কা ও মদিনায় বাংলাদেশ হজ অফিসে আপনাকে পৌঁছাতে সাহায্য করতে পারেন।
বাংলাদেশ হজ অফিস মক্কার ঠিকানা: ইব্রাহিম খলিল রোডে মিসফালাহ কার পার্কিংয়ের উল্টোদিকে।
মদিনায় হজ অফিসের ঠিকানা: মসজিদে নববির উত্তর (ওহুদ পাহাড়) দিকে কিং ফাহাদ গেট অর্থাৎ ২১ নম্বর গেট দিয়ে বের হয়ে বাঙালি মার্কেটের পরে টপটেনের উল্টোপাশে বাংলাদেশ হজ অফিস।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হজ অবস থ ন কর অবস থ য় ইহর ম র ম রওয় য় রব ন ন দ য় কর ন কর ন প রব ন র জন য স ন নত শ ষ কর আপন র মসজ দ করব ন র সময় এ সময় ওমর হ
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রাম বন্দরে মাশুল বৃদ্ধিতে কার লাভ, কার ক্ষতি
প্রশ্ন: বিতর্কের সূত্রপাত কখন থেকে? কেন?
উত্তর: চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশি অপারেটর নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েই। তখন অবশ্য বড় ধরনের বির্তক তৈরি হয়নি। পরিস্থিতি বদলে যায় অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর। বন্দর ব্যবহারকারীদের ধারণা ছিল, আওয়ামী লীগ আমলে বিদেশি অপারেটর নিয়োগের প্রক্রিয়া থেকে সরে আসবে অন্তর্বর্তী সরকার। বিশেষ করে ভালোভাবে চলতে থাকা নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে না দেওয়ার সিদ্ধান্তই হবে; কিন্তু বিপরীতে অন্তর্বর্তী সরকারই এই টার্মিনাল সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক ডিপি ওয়ার্ল্ডের হাতে দীর্ঘমেয়াদে হস্তান্তরের উদ্যোগ নেয়। আবার কোনো প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র ছাড়া জি টু জি (সরকার–সরকার) প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিলে বিতর্ক দানা বাঁধে।
নিউমুরিং টার্মিনালে বিদেশি অপারেটর নিয়োগ নিয়ে এ বছরের মার্চে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের বন্দর শাখা নানা কর্মসূচি পালন শুরু করে। এরপর বাম গণতান্ত্রিক জোটও সরব হয়। রাজনৈতিক মহলে শুরু হয় আলোচনা।
আরও পড়ুনচট্টগ্রাম বন্দর: বিদেশি অপারেটর নিয়ে কেন বিতর্ক২৫ আগস্ট ২০২৫এই বিতর্কের মধ্যেই সরকার চট্টগ্রাম বন্দরের নতুন ট্যারিফ ঠিক করে। ব্যবসায়ীদের আপত্তির পরও গত ১৪ সেপ্টেম্বর বন্দর সেবার মাশুল একলাফে ৪১ শতাংশ বাড়ানো হয়। এক মাস পর গত ১৫ অক্টোবর তা কার্যকর হয়। মাশুল বাড়ানোর প্রতিবাদে আন্দোলনে নামে ব্যবসায়ীরাও।
প্রশ্ন: মাশুল নিয়ে কাদের আপত্তি, কেন আপত্তি?
উত্তর: মাশুল বৃদ্ধি নিয়ে প্রথম আপত্তি তোলেন ব্যবসায়ীরা। ‘চট্টগ্রামের সর্বস্তরের ব্যবসায়ীবৃন্দ’ ব্যানারে গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামের র্যাডিসন ব্লু হোটেল এক সভায় অভিযোগ তোলা হয়, বিদেশি অপারেটরদের সুবিধা দিতেই মাশুল বাড়ানো হয়েছে। এরপর ২১ অক্টোবর ব্যবসায়ীরা ‘চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজার্স ফোরাম’–এর ব্যানারে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। তাঁরা বলেন, যদি মাশুল শুধু বিদেশি অপারেটরদের জন্যই বাড়ানো হয়, তবে তাদের নিয়োগের বিরুদ্ধেও অবস্থান নেবে ফোরাম।
ব্যবসায়ীদের পর ‘বন্দর রক্ষায় চট্টগ্রামের শ্রমিক-ছাত্র-পেশাজীবী-নাগরিকবৃন্দ’–এর ব্যানারে কর্মসূচি পালন করেন শ্রমিক, ছাত্র ও পেশাজীবীরা। নগরের আগ্রাবাদ এলাকার বাদামতলী মোড়ে গত ২৫ অক্টোবর এক সমাবেশে তাঁরা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর বছরে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি মুনাফা করে। তার পরও বিদেশি কোম্পানির হাতে বন্দর তুলে দেওয়ার আগে তাদের মুনাফা নিশ্চিতের জন্য সরকার বন্দরের মাশুল ৪১ শতাংশ বাড়িয়েছে। অথচ অন্তর্বর্তী সরকারের এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই।
প্রশ্ন: বিদেশি অপারেটর নিয়োগের সঙ্গে মাশুল বৃদ্ধির যোগসূত্র আছে? পক্ষে–বিপক্ষে যুক্তি কী?
উত্তর: বিদেশি অপারেটর নিয়োগসংক্রান্ত নথিপত্রে বিদ্যমান ট্যারিফ কাঠামো পরোক্ষভাবে হালনাগাদের পরামর্শ দেওয়া হয়। যেমন বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়া প্রকল্পের ট্রানজেকশন অ্যাডভাইজার বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) গত এপ্রিলে তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, বিদ্যমান ট্যারিফ কাঠামো বেসরকারি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য যথেষ্ট নয়, বিশেষ করে নতুন বন্দর বা টার্মিনাল উন্নয়নের ক্ষেত্রে। এর পরই বন্দরে মাশুল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত গতি পায়, যা গত ১৫ অক্টোবর থেকে কার্যকর হয়। আইএফসির এই পরামর্শকেই ব্যবসায়ীরা বিদেশি অপারেটরের সুবিধা দেওয়ার কারণ হিসেবে দেখছেন।
ব্যবসায়ীদের সমালোচনার পর বন্দর কর্তৃপক্ষ মাশুল বাড়ানোর যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে। গণমাধ্যমে পাঠানো সেই ব্যাখ্যায় বিদেশি অপারেটরকে সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি; বরং বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, ৪০ বছরের মধ্যে ২০০৭ সালে ৫২টি সেবা খাতের মধ্যে ৫টির মাশুল বাড়ানো হয়েছে। অথচ এ সময়ে যন্ত্রপাতি, জ্বালানি, জনবল ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় অনেক গুণ বেড়েছে। আবার চট্টগ্রাম বন্দরের বাস্তবায়নাধীন ও পরিকল্পনাধীন সব প্রকল্প বাস্তবায়নে ৩৩ হাজার ৩২১ কোটি টাকা প্রয়োজন। এ বিপুল অর্থ জোগান দিতে হবে বন্দরকে।
প্রশ্ন: মাশুল বাড়ায় বেশি সুবিধা পাবে কারা? বিদেশি অপারেটর না বন্দর?
উত্তর: বন্দরে মোটাদাগে দুই ধরনের মাশুল আদায় হয়। একটি হলো বন্দর জলসীমায় বা সি-সাইডে যেসব সেবা দেওয়া হয়, সেগুলোর জন্য মাশুল। যেমন পোর্ট ডিউজ, পাইলটেজ, টাগ ভাড়া, রিভার ডিউজ, বার্থিং চার্জ ইত্যাদি। দুই. টার্মিনালে বা ল্যান্ডসাইডে সেবা দেওয়ার বিপরীতে মাশুল। যেমন জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো–নামানোর মাশুল, টার্মিনালের অভ্যন্তরে কনটেইনার পরিবহন, সংরক্ষণ কিংবা কনটেইনার খুলে পণ্য খালাসের মাশুল ইত্যাদি।
নিউমুরিং টার্মিনাল কনটেইনার ও লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনালে কনসেশন চুক্তির প্রক্রিয়া অনুযায়ী, টার্মিনালকেন্দ্রিক যেসব সেবা দেওয়া হয় সেগুলোর বিপরীতে মাশুল আদায় করতে পারবে বিদেশি অপারেটর। বন্দর শুধু জলসীমায় সেবার বিপরীতে মাশুল আদায় করবে।
বন্দরে যত মাশুল আদায় হয়, তার বেশির ভাগ বা ৭০ শতাংশের কাছাকাছি টার্মিনালকেন্দ্রিক। এই মাশুল যেহেতু আদায় করবে অপারেটররা, সে জন্য মাশুল বৃদ্ধিতে সুবিধাও বেশি পাবে বিদেশি অপারেটররা। বন্দর তুলনামূলক কম সুবিধা পাবে; যদিও চুক্তি অনুযায়ী বিদেশি অপারেটরের মাশুল থেকে কিছু ভাগ বন্দরও পাবে।
২০২৪ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনালের চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী টার্মিনালের সেবার বিপরীতে মাশুল আদায় করছে সৌদি কোম্পানিটি। সেখানে সরকার নির্ধারিত মাশুল আদায়ের কথা বলা আছে। তবে বন্দর মাশুল বাড়ালে সেটা রেড সি গেটওয়ে টার্মিনালের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে বলে চুক্তিতে আছে।
প্রশ্ন: মাশুল বাড়ানোয় বন্দর ব্যবহারের খরচ কত বাড়বে?
উত্তর: মাশুল বাড়ানোর পর খরচ কত বাড়বে তা জানতে এই প্রতিবেদক ২০২৩–২৪ অর্থবছরে বন্দরের নিরীক্ষা প্রতিবেদন পর্যালোচনা করেছে। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে খাত অনুযায়ী কত বেড়েছে, তা হিসাব করে বন্দরের আয় কত বাড়বে অর্থাৎ ব্যবহারকারীদের খরচ কত বাড়বে, তা জানার চেষ্টা করা হয়েছে।
পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, নতুন মাশুল কার্যকর হওয়ার পর গড়ে প্রতিটি কনটেইনারে (২০ ফুট লম্বা) বাড়তি মাশুল দিতে হচ্ছে প্রায় ৩৯ ডলার (৪ হাজার ৩৯৫ টাকা)। বন্দর কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, নতুন ট্যারিফে প্রতি কনটেইনারে গড়ে বেড়েছে ৩ হাজার ৮০০ টাকা, যা পণ্যের মূল্যে কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ১২ পয়সা যোগ করবে।
প্রশ্ন: বন্দরের বর্ধিত মাশুলে ভোক্তার খরচ কীভাবে বাড়বে?
উত্তর: বন্দর যেসব খাতে মাশুল আদায় করে, তার সিংহভাগ দেয় শিপিং এজেন্টরা। কনটেইনার রাখার ভাড়াসহ কিছু মাশুল সরাসরি আমদানিকারকেরা বন্দরকে পরিশোধ করে। শিপিং এজেন্টরা বন্দরকে মাশুল দিলেও তা ভাড়ার সঙ্গে আদায় করে নেয় আমদানিকারক বা রপ্তানিকারক থেকে।
চট্টগ্রাম বন্দর মাশুল বাড়ানোর পর ভাড়া না বাড়িয়ে তাৎক্ষণিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রতি একক কনটেইনারে ৪৫–১০০ ডলার করে সারচার্জ বা অতিরিক্ত মাশুল আদায় করার ঘোষণা দিয়েছিল শিপিং কোম্পানিগুলো। অবশ্য বন্দরের হস্তক্ষেপে এসব কোম্পানি সারচার্জের নোটিশ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তারা এখন ভাড়ার সঙ্গে আমদানিকারক বা রপ্তানিকারক থেকে এই অতিরিক্ত মাশুল আদায় করে নেবে বলে শিপিং কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে। আমদানিকারকেরা শিপিং এজেন্টকে বাড়তি মাশুল পরিশোধ করার পর পণ্যের আমদানি খরচের সঙ্গে যুক্ত করে ভোক্তার কাছ থেকেই আদায় করবে। অর্থাৎ বন্দর যা বাড়িয়েছে, তা অন্তত দুই হাত ঘুরে দ্বিগুণের কাছাকাছি খরচের বোঝা বহন করতে হতে পারে ভোক্তাদের।
প্রশ্ন: বর্ধিত মাশুলে রপ্তানিকারক কি ক্ষতিগ্রস্ত হবে?
উত্তর: রপ্তানিকারকেরা কারখানা থেকে কাভার্ড ভ্যানে করে ডিপোতে রপ্তানি পণ্য পৌঁছে দেন। ডিপোতেই বিদেশি ক্রেতাদের প্রতিনিধিদের হাতে এসব পণ্য তুলে দেওয়া হয়। এরপর রপ্তানির গন্তব্যে পৌঁছানো পর্যন্ত সব মাশুলই পরিশোধ করেন বিদেশি ক্রেতা ও তাদের প্রতিনিধিরা।
রপ্তানিকারকেরা বলছেন, আমদানিকারক বা রপ্তানিকারক যেই বাড়তি মাশুল পরিশোধ করুক না কেন তা দিন শেষে পণ্যের দামে হিসাব হবে। বাড়তি মাশুল বা ভাড়া সমন্বয় করে বিদেশি ক্রেতারা পণ্য কেনার জন্য দর–কষাকষি করেন। মাশুল বাড়ায় এখন পণ্যের দামের সঙ্গে সমন্বয় করে নিতে চাইবেন বিদেশি ক্রেতারা। তাতে প্রতিযোগিতামূলক দামে পণ্য রপ্তানিতে পিছিয়ে পড়ার শঙ্কা করছেন দেশীয় রপ্তানিকারকেরা।
প্রশ্ন: আঞ্চলিক বন্দরগুলোর তুলনায় চট্টগ্রামের মাশুল কেমন? ব্যবসায়ীদের অভিযোগের সত্যতা কতটুকু?
উত্তর: পোর্ট ইউজার্স ফোরামের অভিযোগ, মাশুল বাড়ানোর কারণে বিশ্বের ব্যয়বহুল বন্দরে পরিণত হবে চট্টগ্রাম বন্দর। এই অভিযোগ আমলে নিয়ে বিশ্বের বন্দরগুলোর মাশুল তুলনা করা যাক।
চট্টগ্রামের মাশুল বাড়ানোর আগে বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) গত মার্চে এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া—এই ৭টি দেশের ১৪টি বন্দর ও টার্মিনালের মাশুলের তুলনা করেছে।
ওই তুলনায় মাশুল বাড়ানোর আগে প্রতি বক্স কনটেইনার (যেকোনো আকারের কনটেইনার একটি ধরে) চট্টগ্রাম বন্দরে ওঠানো–নামানো ও সংরক্ষণের মাশুল দেখানো হয় গড়ে ১২৬ ডলার ৬৬ সেন্ট। এই মাশুল পোশাকশিল্পে বাংলাদেশের প্রতিযোগী কম্বোডিয়ার নমপেন বন্দর, থাইল্যান্ডের ল্যাম চাবাং ইন্টারন্যাশনাল টার্মিনাল, মালয়েশিয়ার তেনজুন পেলাপাস, ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটির ভিয়েতনাম ইন্টারন্যাশনাল কনটেইনার টার্মিনালসহ ১০টি টার্মিনালের চেয়ে বেশি। শুধু শ্রীলঙ্কার সাউথ এশিয়া গেটওয়ে টার্মিনাল (এসএজিটি), মিয়ানমার ইন্টারন্যাশনাল টার্মিনালস থিলাওয়া (এমআইটিটি) এবং ভারতের এপিএম টার্মিনালস পিপাভবের মাশুলের চেয়ে কম ছিল।
হিসাব করে দেখা গেছে, নতুন মাশুল কার্যকর হওয়ার পর তাতে বন্দরে প্রতিটি বক্স কনটেইনারে ওঠানো–নামানো ও সংরক্ষণ ব্যয় বাড়বে সম্ভাব্য ৪৭ ডলার। আইএফসির সমীক্ষা আমলে নিয়ে দেখা যায়, মাশুল কার্যকরের পর ১৩টি বন্দরের মাশুলের চেয়ে চট্টগ্রামের মাশুল বেশি। শুধু শ্রীলঙ্কার সাউথ এশিয়া গেটওয়ে টার্মিনালের চেয়ে কম। অর্থাৎ আঞ্চলিক বন্দরগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয়বহুল হয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর।
আইএফসির তুলনায় দেখা যায়, চট্টগ্রামে পণ্য খালাসে বেশি সময় লাগে। তাতে কনটেইনার রাখার খরচ তুলনামূলক বেশি। এ জন্য সব মিলিয়ে গড় মাশুল বেশি।
তবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, শ্রীলংকার সাউথ এশিয়া গেটওয়ে টার্মিনাল ও মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনের চেয়ে চট্টগ্রামের মাশুল কম।
প্রশ্ন: বিদেশের বন্দরে মাশুল কীভাবে নির্ধারিত হয়?
উত্তর: বিদেশের বন্দরগুলোতে মাশুল কীভাবে নির্ধারিত হয় তা জানতে জার্মানিভিত্তিক নীতি সংস্থা ‘গ্লোবাল সলিউশনের’ এ–সংক্রান্ত নীতি প্রতিবেদনের সহায়তা নেওয়া যাক। ২০২২ সালে প্রকাশিত বেসরকারি খাতে বন্দর বিনিয়োগ উৎসাহিত করা বিষয়ক এই প্রতিবেদনে ২১টি দেশের বন্দর ট্যারিফ কীভাবে নির্ধারিত হয় তা তুলে ধরা হয়েছে।
তাতে দেখা যায়, ইউরোপসহ উন্নত দেশ ১৩টি দেশে প্রতিযোগিতা আইনের আওতায় বাজারভিত্তিক ট্যারিফ নির্ধারণ করা হয়। ইন্দোনেশিয়ায় ব্যবহারকারীদের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে সরকার ট্যারিফ অনুমোদন করে। সৌদি আরব ও দক্ষিণ আফ্রিকায় সরকারি কর্তৃপক্ষ ট্যারিফ নির্ধারণ করে। চীনে সরকার ট্যারিফ নিয়ন্ত্রণ করে।
প্রতিবেশী দেশ ভারতের প্রধান বন্দরগুলোতে ট্যারিফ নির্ধারণ করে আসছে ট্যারিফ অথরিটি অব মেজর পোর্টস বা টাম্প। তবে এখন বাজারভিত্তিক প্রতিযোগিতার মাধ্যমেও ট্যারিফ নির্ধারণ করা হচ্ছে।
দেখা যাচ্ছে, উন্নত বন্দরগুলোতে বাজারভিত্তিক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ট্যারিফ নির্ধারণ করা হলেও একচেটিয়া বাড়ানোর সুযোগ নেই। কারণ, প্রতিযোগিতা আইনের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আবার এসব দেশে সরকারি–বেসরকারি অংশীদারত্বে বন্দর পরিচালিত হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দর দীর্ঘদিন ধরে ‘টুল পোর্ট’ মডেলে পরিচালিত হয়ে আসছে। এই মডেলে সরকারি নিয়ন্ত্রণ রেখে কিছু কাজ বেসরকারি অপারেটর দ্বারা পরিচালিত হয়। ফলে বন্দরের মাশুল কস্ট বেজড বা খরচ অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে ১৯৮৬ সালে ট্যারিফ প্রণয়নের পর ২০০৭ সালে পাঁচটি খাতে গেজেটের মাধ্যমে মাশুল বাড়ানো হয়।
দীর্ঘদিন পর বন্দর এখন ল্যান্ডলর্ড মডেলে বা সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব ব্যবস্থাপনায় যাচ্ছে। এই মডেলে বন্দরের জায়গা সরকারের মালিকানায় থাকে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জেটি বা যন্ত্রপাতিসহ নানা অবকাঠামো নির্মাণ করে দীর্ঘ মেয়াদে পরিচালনা করে। বাংলাদেশে গত বছরের জুনে চালু হওয়া পতেঙ্গা টার্মিনাল এই মডেলে পরিচালিত হচ্ছে।
নতুন ব্যবস্থাপনায় যাওয়ার আগমুহূর্তে সরকার মাশুল বাড়িয়েছে। এ জন্য মাশুল নির্ধারণের আগে সমীক্ষা করেছে একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান। এরপর বন্দর ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় বন্দর ব্যবহারকারীদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। তবে তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি বলে ব্যবহারকারী সংগঠনগুলো জানিয়েছে। আবার ব্যবসায়ীদের বড় সংগঠনগুলোতে নেতৃত্ব না থাকায় উপযুক্ত ব্যবসায়ী প্রতিনিধি এই আলোচনায় অংশ নিতে পারেনি।
প্রশ্ন: মাশুল বাড়ল, বিদেশি অপারেটর নিয়োগ কখন?
উত্তর: চারটি টার্মিনালের মধ্যে দুটি টার্মিনালে বিদেশি অপারেটর নিয়োগের প্রক্রিয়া গুছিয়ে এনেছে বন্দর। প্রথম চুক্তি হতে পারে লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নিয়ে। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে নেদারল্যান্ডসের এপিএম টার্মিনালসের সঙ্গে এই টার্মিনাল নির্মাণ, বিনিয়োগ ও পরিচালনার চুক্তি হতে পারে। সবচেয়ে আলোচিত নিউমুরিং টার্মিনাল নিয়ে আগামী ডিসেম্বরে চুক্তি হওয়ার সম্ভাব্য সময় ঠিক করা হয়েছে। এটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ডিপি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
এর বাইরে বে টার্মিনাল প্রকল্পের আওতায় দুটি টার্মিনাল হচ্ছে। একটি টার্মিনাল সিঙ্গাপুরের পিএসএ ইন্টারন্যাশনাল এবং অন্যটিতে আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ডকে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। তবে এ বছর চুক্তির সম্ভাবনা নেই। আগামী বছর চুক্তি হতে পারে।
সমুদ্রগামী কনটেইনার টার্মিনাল ছাড়াও নতুন করে অভ্যন্তরীণ নৌ টার্মিনাল পানগাঁও টার্মিনালও বিদেশি কোম্পানির হাতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এটি ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি–রপ্তানি হওয়া পণ্যের নগণ্য অংশ বা ১ শতাংশের কম এই টার্মিনাল দিয়ে আনা–নেওয়া করা হয়।
প্রশ্ন: বিদেশি অপারেটর নিয়োগ ও মাশুল বৃদ্ধি নিয়ে বিরোধিতাকারী ও সরকারের সর্বশেষ তৎপরতা সম্পর্কে কী জানা যাচ্ছে?
উত্তর: বিদেশি অপারেটর নিয়োগ ও মাশুল বৃদ্ধি নিয়ে এ পর্যন্ত অনড় অবস্থানে রয়েছে সরকার। অন্যদিকে পেশাজীবী ও ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ ও অসন্তোষের পাশাপাশি নানা আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছেন।
এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দরের আশপাশ এলাকায় ১১ অক্টোবর থেকে আগামী এক মাসের জন্য সব ধরনের মিছিল, সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন ও পথসভা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ। বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম নির্বিঘ্ন ও নিরবচ্ছিন্ন রাখতে এ উদ্যোগ নেওয়ার কথা পুলিশ জানালেও বিরোধিতাকারীরা বলছেন, বিদেশি অপারেটর নিয়োগ ও মাশুল বৃদ্ধি নিয়ে যাতে বন্দর এলাকায় কোনো কর্মসূচি পালন করা না যায়, সে জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালসহ চট্টগ্রাম বন্দরের স্থাপনা দেশি বা বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে ১ নভেম্বর গণ–অনশন কর্মসূচি পালন করে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)