যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দক্ষতা বিভাগের প্রধান হিসেবে সদ্য অব্যাহতি নিয়েছেন ইলন মাস্ক। শুক্রবার ওভাল অফিসে মাস্কের বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ইলন মাস্ককে বড় একটি সোনার চাবি উপহার দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড। খবর এএফপি, বিবিসির

এদিন ট্রাম্প একটি কাঠের বাক্সে রাখা বড়সড় সোনার চাবি ইলন মাস্কের হাতে তুলে দেন। ট্রাম্প বলেন, ‘এ ধরনের উপহার আমি কেবল ‘বিশেষ মানুষদের’ই দেই।’ দেশের পক্ষ থেকে ধন্যবাদস্বরূপ মাস্ককে এ উপহার দেওয়া হলো বলে জানান ট্রাম্প।

ওভাল অফিসে আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এটা সরকারি দক্ষতা বিভাগের শেষ নয়, বরং সত্যিকার অর্থে সূচনাপর্ব।’

সম্প্রতি ইলন মাস্ক যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দক্ষতা বিভাগের (ডিওজিই) প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। এ বিভাগে তার দায়িত্ব ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি খরচ কমানো। বিশেষ সরকারি উপদেষ্টা হিসেবে তার মেয়াদ প্রায় শেষের দিকে ছিল।

গত চার মাসে মাস্কের নেতৃত্বাধীন সরকারি দক্ষতা বিভাগ হাজার হাজার চাকরি কমিয়েছে, একাধিক সরকারি সংস্থা বন্ধ করেছে, এমনকি বৈদেশিক সহায়তায়ও কাটছাঁট করেছে। ২৬ মে পর্যন্ত সরকারি দক্ষতা বিভাগ প্রকল্পের মাধ্যমে আনুমানিক ১৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলার সাশ্রয় হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। তবে বিবিসির বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এর মধ্যে মাত্র এক-চতুর্থাংশের নথিপত্র বা প্রমাণ আছে।

সংবাদ সম্মেলনে মাস্ককে প্রশ্ন করা হয়, সরকারি দক্ষতা বিভাগের সঙ্গে তার ভবিষ্যতের ভূমিকা কেমন হবে? জবাবে তিনি বলেন, তিনি আশা করছেন প্রেসিডেন্ট যখনই চাইবেন, তখনই তিনি পরামর্শ দিতে থাকবেন।

এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওভাল অফিসে রিপাবলিকান নেতা ট্রাম্প বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রধান ইলন মাস্কের প্রশংসা করেন। ট্রাম্পের মতে, মাস্ক যেসব সরকারি সংস্কার কর্মসূচি চালিয়েছেন, তা কয়েক প্রজন্মের মধ্যে সবচেয়ে ব্যাপক ও গুরুত্বপূর্ণ।

ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেন, মাস্ক আসলে ‘সত্যিকার অর্থে বিদায় নিচ্ছেন না’।

মাস্ক যাওয়া-আসার মধ্যে থাকবেন বলে বিশ্বাস তার।

দক্ষিণ আফ্রিকার বংশোদ্ভূত ইলন মাস্ক শুক্রবার ওভাল অফিসে হাজির হয়েছিলেন কালো টি-শার্ট পরে। সেখানে সাদা অক্ষরে লেখা ছিল ‘ডিওজিই ফাদার’। মাস্কের মাথায় ছিল কালো রঙের ক্যাপ। তিনি বলেন, তার ঘোষিত ১ ট্রিলিয়ন ডলার সাশ্রয়ের একটা বড় অংশের ফল পেতে সময় লাগবে।

মাস্ক বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্টের বন্ধু ও উপদেষ্টা হিসেবে পাশে থাকতে চাই।’

তবে মাস্কের এই ঘোষণার চেয়ে তার ডান চোখের চারপাশে থাকা ঘন কালো কালশিটে দাগটি নিয়ে অনেকের মধ্যে কৌতূহল তৈরি হয়।

শুক্রবার নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের কারণে ওই কালশিটে দাগ নিয়ে জল্পনা বেড়ে যায়। ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণা চলাকালে মাস্ক এত বেশি পরিমাণে কেটামিন নামের মাদক ব্যবহার করেছিলেন যে তার মূত্রাশয়ে সমস্যা দেখা দেয়।

তবে স্পেসএক্স ও টেসলা প্রধান দাবি করেছেন, তারই ছোট ছেলের কারণেই ওই কালশিটে দাগ হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ইলন ম স ক ইলন ম স ক উপহ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

এককালের প্রেম যখন উপেক্ষিত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার পুরনো বন্ধু কিম জং উনের সাথে সাম্প্রতিক এশিয়া সফরে হঠাৎ করেই আলোচনার আশা করেছিলেন। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন এ ব্যাপারে কোনো সাড়া দেননি। 

ট্রাম্প তার এশিয়া সফরের সময় কিমকে বারবার আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেছিলেন,  তিনি বৈঠকের জন্য শতভাগ উন্মুক্ত। এমনকি ট্রাম্প কয়েক দশক ধরে মার্কিন নীতির বিপক্ষে গিয়ে স্বীকার করেছেন যে উত্তর কোরিয়া ‘এক ধরণের পারমাণবিক শক্তিধর।’

কিন্তু পিয়ংইয়ং আমন্ত্রণে চুপ ছিল। এর পরিবর্তে তারা ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে এবং রাশিয়া ও বেলারুশে তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পাঠিয়েছে, যাদের সাথে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সম্পর্ক আরো গভীর হয়েছে।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়া সেন্টারের একজন ভিজিটিং স্কলার সিওং-হিওন লি বলেন, “নিষ্ঠুর বাস্তবতা হল যে কিম জং উনের অংশগ্রহণের কোনো উৎসাহ ছিল না। ওয়াশিংটনের বিশ্বাস করা যে তিনি আসবেন, এটি একটি মৌলিক ভুল হিসাব ছিল।”

লি জানান, ট্রাম্পের বারবার প্রস্তাব উত্তর কোরিয়ার নেতার জন্য একটি ‘বিজয়’ হিসেবে দেখা যায়, যা তাকে এবং তার পারমাণবিক কর্মসূচিকে বিশাল মাত্রার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রদান করে।

তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কিমকে একটি বিশাল, অপ্রাপ্ত ছাড় দিয়েছেন।”

২০১৯ সালে শেষবারের মতো ডিমিলিটারাইজড জোনের (ডিএমজেড) পানমুনজমে দেখা করেছিলেন ট্রাম্প ও কিম জং উন। ট্রাম্পের নেতৃত্বে পিয়ংইয়ংয়ের সাথে সেই বৈঠকে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সুযোগের ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়।

তারপর থেকে উত্তর কোরিয়া নিজেকে একটি‘অপরিবর্তনীয়’ পারমাণবিক রাষ্ট্র ঘোষণা করেছে এবং রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করেছে, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মস্কোকে সমর্থন করার জন্য সেনা পাঠিয়েছে।

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-এর সাবেক বিশ্লেষক সু কিম এএফপিকে বলেছেন, কিম এখন ‘বেশ স্বাচ্ছ্যন্দের জায়গায়’ আছেন।

তিনি বলেন, “রাশিয়ার সমর্থন সম্ভবত আজকাল উত্তর কোরিয়ার কৌশলগত হাতকে শক্তিশালী এবং দৃঢ় করার সবচেয়ে নির্ধারক কারণগুলোর মধ্যে একটি। তিনিই (উন) সর্বোচ্চ ক্ষমতা ধরে রেখেছেন, যার ফলে ট্রাম্পকে আমন্ত্রণ জানানো তার পক্ষে সহজ হয়ে যায়।”

দক্ষিণ কোরিয়া থেকে বাড়ি ফিরে চীনা নেতা শি জিনপিংয়ের সাথে বৈঠকের সময় ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, তিনি কিমের সাথে দেখা করার জন্য খুব ‘ব্যস্ত’ ছিলেন।

দৃশ্যটি ২০১৯ সালের থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত ছিল, যখন ভিয়েতনামের হ্যানয়ে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার আলোচনা নাটকীয়ভাবে ভেঙে পড়েছিল - কিমকে কোনো চুক্তি ছাড়াই পিয়ংইয়ং ফিরে যাওয়ার জন্য দীর্ঘ ট্রেন যাত্রা সহ্য করতে হয়েছিল।

অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের কোরিয়ান স্টাডিজের অধ্যাপক ভ্লাদিমির টিখোনভ এএফপিকে বলেছেন, “অভিজ্ঞতা পিয়ংইয়ংকে বেদনাদায়ক করে তুলেছে। তারা খুব তাড়াহুড়ো করে এগিয়ে যেতে চায় না।” 

তিনি জানান, পিয়ংইয়ং ট্রাম্পের কাছ থেকে আরো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবের জন্য অপেক্ষা করছে, যার মধ্যে রয়েছে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক স্বীকৃতি এবং পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ ছাড়াই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার।
 

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তাঞ্জানিয়ায় নির্বাচনী বিক্ষোভে নিহত ৭০০
  • এককালের প্রেম যখন উপেক্ষিত