‘আগে বিচার এরপরে সংস্কার তারপর নির্বাচন’
Published: 31st, May 2025 GMT
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, ‘‘আগে বিচার হবে, এরপরে সংস্কার হবে, তারপর হবে নির্বাচন।’’
শনিবার (৩১ মে) দুপুরে কিশোরগঞ্জ শহরের পুরাতন স্টেডিয়ামে ২০ বছর পর অনুষ্ঠিত জেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘‘বাংলাদেশে সুবিচার কায়েম করার জন্য বিচার ব্যবস্থাকে মজবুত হতে হবে। এটিএম আজহারুল ইসলামের বিচার একটি সুবিচার হয়েছে।’’
তিনি বলেন, ‘‘যারা বিচার চায় না, যারা শুধু তাড়াতাড়ি নির্বাচন চায়, সংস্কার চায় না, তাদের কথায় নির্বাচন হবে না। আগে রিফর্মেশন তারপর নির্বাচন চায় জামায়াতে ইসলামী।’’
এর আগে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড.
২০ বছর পর কর্মী সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আজ ভোর থেকে ১৩ টি উপজেলা ও বিভিন্ন ইউনিয়ন-ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা দলে দলে সম্মেলনস্থলে এসে উপস্থিত হন। দুপুরের মধ্যে লাখো নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে উৎসব আমেজে মুখরিত হয় জেলা শহরের পুরাতন স্টেডিয়াম মাঠ।
কর্মী সম্মেলনে কিশোরগঞ্জ জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির অধ্যাপক মো. রমজান আলীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ড. মাওলানা সামিউল হক ফারুকী।
সম্মেলন শেষে জেলার ৬টি সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে উপস্থিত সকলের মাঝে পরিচয় করিয়ে দেন প্রধান অতিথি।
ঢাকা/রুমন//
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
জি এম কাদের ঢাকায় ফিরলে কর্মসূচি দেবে রংপুর জাপা, বৈষম্যবিরোধীদের বিক্ষোভ স্থগিত
জাতীয় পার্টির (জাপা) ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত রংপুর। সেখানে দলীয় চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের উপস্থিতিতেই বাড়িতে হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ নেতা–কর্মীরা। ‘মব–সন্ত্রাস’ তৈরি করে এই হামলা চালানোর জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) দায়ী করছেন তাঁরা। তবে আপাতত দলের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিবাদ কর্মসূচি নেই। চেয়ারম্যান রংপুর সফর শেষে ঢাকায় ফিরলে মাঠে নামতে চান তাঁরা।
এদিকে জাতীয় পার্টির এই দাবিকে নাকচ করেছেন এনসিপির সংগঠক ও বৈষম্যবিরোধী নেতারা। তাঁরা বলছেন, ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের রংপুর সফরের প্রতিবাদে তাঁরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। তাঁদের বিক্ষোভে হামলা করেছেন জাপার স্থানীয় নেতা–কর্মীরা। এর প্রতিবাদে তাঁরা আজ বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করলেও পরে ‘বৈরী আবহাওয়ার কারণে’ স্থগিত করা হয়।
ব্যক্তিগত সফরে গতকাল বৃহস্পতিবার জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের রংপুরে আসেন। তিনি নগরের সেনপাড়ায় অবস্থিত তাঁর বাড়ি ‘দ্য স্কাই ভিউয়ে’ ওঠেন। বিকেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেন। এরপর রাতে তাঁর বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা জি এম কাদেরের বাড়ি দ্য স্কাই ভিউয়ের জানালার কাচ ভাঙচুর ও একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করেন।
এ ঘটনার বিষয়ে আজ শুক্রবার বিবিসি বাংলার সঙ্গে আলাপকালে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের অভিযোগ করেন, রংপুরে বাড়িতে হামলার মাধ্যমে মূলত তাঁর ‘প্রাণনাশের চেষ্টা করা হয়েছে’। হামলাকারীদের সঙ্গে পিস্তল-বন্দুক-রামদার মতো অস্ত্র ছিল বলেও দাবি করেছেন তিনি।
পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ, দুই পক্ষের উত্তেজনা৫ আগস্টের পর থেকেই বিভিন্ন সময় নানা ইস্যুতে রংপুরে জাতীয় পার্টি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ মিছিল হয়ে আসছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা থাকাকালীন এনসিপি নেতা সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহর রংপুরে আগমনকে কেন্দ্র করে পাল্লাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
সবশেষ ২৮ মে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমানকে রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে পুনর্বহালের দাবিতে রংপুরে বিক্ষোভ করেন জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা। ওই দিন নগর ভবনের সামনে অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘অথর্ব’ বলেন মোস্তাফিজার। একই সঙ্গে দাবি বাস্তবায়নে সাত দিনের আলটিমেটাম দেওয়া হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, জাতীয় পার্টির বিক্ষোভের প্রতিবাদে ওই দিন রাতে পাল্টা বিক্ষোভ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। পরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী নেতারা মোস্তাফিজার রহমান ও জাতীয় পার্টির নেতাদের আওয়ামী লীগের দোসর উল্লেখ করে তাঁদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান। এ নিয়ে কয়েক দিন ধরে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। এর মধ্যে জি এম কাদের বৃহস্পতিবার রংপুর সফরে এলে উত্তেজনা বাড়ে।
এনসিপরি মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় পার্টিকে আওয়ীমী লীগের দোসর উল্লেখ করে এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘...সেই জি এম কাদের এখনো বাইরে কীভাবে? সরকারকে ধাক্কা না দিলে কি কাজ হয় না? নাকি প্রত্যেকটা কাজের জন্য ছাত্র-জনতাকে নতুন করে মাঠে নামতে হবে?’ এরপর গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বৈষম্যবিরোধীদের পক্ষ থেকে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের রংপুরে অবস্থান করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
মিছিল, হামলা, ভাঙচুরপ্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, কর্মসূচি ঘোষণার পর বৈষম্যবিরোধী ও এনসিপির নেতা-কর্মীরা রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হন। রাত আটটার দিকে গ্র্যান্ড হোটেল মোড়ে অবস্থান নেন। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে নগরের সেনপাড়ার দিকে যান। এরপর জি এম কাদেরের বাসায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
জাতীয় ছাত্রসমাজের কেন্দ্রীয় কমিটির সদ্যসচিব আরিফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বৈষ্যম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগর কমিটির সভাপতি ইমতিয়াজ আহম্মদ, বহিষ্কৃত মুখপাত্র নাহিদ হাসান খন্দকার, জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন হামলার নেতৃত্ব দেন। হামলায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বাড়ি কাচ ভাঙচুর ও একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। হামলার সময় জি এম কাদের ওই বাড়িতে ছিলেন।
হামলার সময় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মিলন চৌধুরী ওই বাড়িতে ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওরা (বৈষম্যবিরোধী) মিছিল নিয়ে মাইকে ঘোষণা দিয়ে ছোরা, লাঠি নিয়ে চেয়ারম্যানের বাড়ির সামনে চৌরাস্তা মোড়ে আসে। সেখানে ককটেল ফোটানোর শব্দ হয়। এরপর মব–সন্ত্রাস তৈরি করে চেয়ারম্যানের বাড়িতে এসে গালাগালি, হামলা ও ভাঙচুর করে চলে যায়। পরে তারা পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে গিয়ে আবার হামলার প্রস্তুতি নেয়।’
হামলা খবরে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বাড়িতে ছিল নেতা–কর্মীদের আনাগোনা। আজ শুক্রবার সকালে রংপুর নগরের সেনপাড়ায়