গত জুলাই আগস্টের গণ অভ্যুত্থানে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে দুইটি হত্যা ও একটি হত্যা চেষ্টার মামলায় সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর জামিন আবেদন আবারও না মঞ্জুর করেছে আদালত। 

পোশাক শ্রমিক মিনারুল হত্যা মামলায় দুইদিনের রিমান্ড শেষে সোমবার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আবু শামীম আজাদের আদালতে তিনটি মামলায় আইভীর জামিনের জন্য আবেদন করেন তার পক্ষের আইনজীবিরা। এর মধ্যে পোশাক শ্রমিক মিনারুল ও রিকশাচালক তুহিন হত্যা এবং হকার নাদিম হত্যা চেষ্টার মামলা রয়েছে। 

উভয়পক্ষের আইনজীবিদের শুনানি শেষে আদালত তিন মামলার জামিন আবেদনই না মঞ্জুর করেন। এসময় ডা.

সেলিনা হায়াৎ আইভী গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে ভার্চুয়ালি আদালতের রিমান্ড শুনানিতে হাজিরা দেন। এর আগে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে আরও দুইবার আইভীর জামিনের জন্য আবেদন করা হলে না মঞ্জুর হয়।

নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত পিপি এ্যাডভোকেট ওমর ফারুক নয়ন বলেন, পোশাক শ্রমিক মিনারুল হত্যা মামলায় আইভীকে দুইদিনের রিমান্ডে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটন হয়েছে।

আজকে দুইটি হত্যা ও একটি হত্যা চেষ্টার মোট তিনটি মামলায় জামিন আবেদন করা হয়েছে। তিনটি মামলাতেই আইভীর সংশ্লিষ্টতার তথ্য প্রমান আমরা আদালতে উপস্থাপন করেছি। বিজ্ঞ আদালত সেগুলো আমলে নিয়ে আইভীর সবগুলো জামিন আবেদন না মঞ্জুর করেছেন। 

অপরদিকে সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষের আইনজীবি এ্যাডভোকেট আওলাদ হোসেন বলেন, যতগুলো মামলায় আইভীকে আসামি করা হয়েছে সেগুলোর অধিকাংশ মামলাতেই তিনি ৮ নম্বর ও ১১ নম্বর আসামি। কোন মামলাতেই আইভীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ নেই। তাই আমরা আশা করি আদালত ন্যায়বিচার করবেন। 

উল্লেখ্য, গত বছরের জুলাই আগস্টের গণ অভ্যুত্থানে নারায়ণগঞ্জে সংঘটিত বিভিন্ন হত্যাকান্ড ও হত্যা চেষ্টার ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ এবং ফতুল্লা থানায় দায়ের করা ছয়টি মামলায় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে আসামি করা হয়েছে।

গত ৯ মে ভোরে নগরির দেওভোগ এলাকায় নিজ বাড়ি থেকে আইভীকে গ্রেপ্তার করে আইন শৃংখলা বাহিনী। পরে আদালতের নির্দেশে ওইদিনই তাকে কাশিমপুর কারাগারে প্রেরণ করা হয়।

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ আইভ র জ ম ন ন র য়ণগঞ জ হ য় ৎ আইভ আইভ ক

এছাড়াও পড়ুন:

গ্রেপ্তারের সময় পরিবারের একজনকে প্রত্যক্ষদর্শী রাখা, জবানবন্দির সময় আইনজীবীর উপস্থিতিসহ নানা প্রস্তাব

গ্রেপ্তারের সময় অভিযুক্ত ব্যক্তির পরিবারের একজনকে প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে রাখা, আসামিপক্ষের আইনজীবীর উপস্থিতিতে জবানবন্দি রেকর্ড করা, ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করা, মামলার আগে প্রাথমিক তদন্ত করা, গ্রেপ্তারের পর অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অন্য কোথাও না রেখে শুধু থানায় রাখাসহ ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধনের প্রাথমিক খসড়ার বিভিন্ন প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে মতামত দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলেছেন, প্রস্তাবিত খসড়ায় অনেক বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। সেগুলো চূড়ান্ত করতে হবে।

মঙ্গলবার রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত ‘কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর (সংশোধন) অর্ডিন্যান্স-২০২৫’-এর খসড়া নিয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় আইনজীবী, আইনের শিক্ষক, পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পেশার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা নিজেদের মত তুলে ধরেন। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।

খসড়া অনুযায়ী বেত্রাঘাতের বিধান বাতিল করার ভাবনাকে স্বাগত জানান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সারা হোসেন। তিনি বলেন, ‘এখানে যেসব চেঞ্জ (সংশোধন) নিয়ে কথা হচ্ছে, সেগুলো যথাযথভাবে করা গেলে আমি মনে করি, গত ২৫ বছরে যে পরিবর্তনের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি, সেটা আমরা পেয়ে যাব।’

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, খসড়ায় গ্রেপ্তার ব্যক্তির ‘মেডিকেল এক্সামিনেশনের’ (স্বাস্থ্য পরীক্ষা) উল্লেখ থাকলেও কারা এটা করতে পারবেন, তার উল্লেখ নেই—এটি থাকলে ভালো হতো। খসড়া প্রস্তাবে প্রাথমিক তদন্তের কথা বলা হয়েছে। সিআরপিসিতে (ফৌজদারি কার্যবিধি) তদন্তের সংজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু প্রাথমিক তদন্ত কী, সেটা স্পষ্ট নয়। এটা স্পষ্ট করা দরকার।

জিজ্ঞাসাবাদের সময় অভিযুক্ত ব্যক্তির আইনজীবীর উপস্থিতি থাকার সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে কথা বলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, পুলিশ অ্যাক্ট, প্রিজন্স অ্যাক্ট, প্রিজনার্স অ্যাক্ট এবং জেল কোড ইত্যাদির ভেতর থেকে ঔপনিবেশিকতা বাদ দিতে হবে।

অভিযুক্ত ব্যক্তির জবানবন্দি নিয়ে সমস্যা হচ্ছে উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, আসামির জবানবন্দি রেকর্ড করার সময় আইনজীবীর উপস্থিতি ও অডি-ভিডিও রেকর্ড করা উচিত। ভারত তাঁদের সিআরপিসিতে ইতিমধ্যে এটা যুক্ত করেছে। যদি কোনো অভিযুক্ত চান তাঁর আইনজীবীর উপস্থিতিতে জবানবন্দি নিতে হবে। একা একা গোপনে ম্যাজিস্ট্রেটের কক্ষে নেওয়া যাবে না।

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, গ্রেপ্তারের সময় অভিযুক্ত ব্যক্তির পরিবার থেকে অন্তত একজনকে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু আসামি গ্রেপ্তারের সময় এটা অনুসরণ করা কঠিন হবে। এটা করতে গেলে অনেক সময় আসামির পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সিআরপিসি সংশোধনের খসড়ার বিভিন্ন বিষয়ের ওপর মত দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মিলন, পাবলিক প্রসিকিউটর মো. ওমর ফারুক ফারুকী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিকী, ব্যারিস্টার তানিম হোসেন শাওনসহ বেশ কয়েকজন।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।

সরকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আইন সংস্কারের মাধ্যমে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে শতাধিক বাস্তবায়নযোগ্য সংস্কার প্রস্তাব চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এগুলোর বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।

আসিফ নজরুল বলেন, ‘আইনের এমন সংস্কার করতে সরকার কাজ করছে যেন আরেকটি ফ্যাসিবাদ গড়ে ওঠা কঠিন হয়ে ওঠে। তাদের (স্বৈরশাসকদের) জন্য আইন যতটা সম্ভব কঠিন করে যেতে চাই।’

আইনের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘অনেকে বলেন সংস্কার হচ্ছে না। আমরা এমন কাজ করেছি, যা কেউ কখনো করেনি। অনেক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এসব কাজের প্রশংসা করেছেন। এমনকি সমালোচকেরাও সাইবার সুরক্ষা আইন সংশোধনের প্রশংসা করেছেন।’ উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেকের অনুরোধে আমরা পাওয়ার অব অ্যাটর্নির বিধান পরিবর্তন করেছি, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করেছি। এ কাজ করতে গিয়ে বাধা এসেছিল। অথচ যাঁরা তখন প্রতিবাদ করেছিলেন, এখন তাঁরা এসে বলেন ভালো হয়েছে।’

বিয়ের আশ্বাসে ধর্ষণ বিষয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘অনেক সুশিক্ষিত মানুষ প্রশ্ন তুলেছেন, এটা আলাদা অপরাধ কেন? এটা প্রতারণার জায়গায় ছিল, যার শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড। এটাকে আমরা আলাদা করে ফেলেছি। আর ভয়ংকর যে ধর্ষণের ঘটনা, সেটাকে আমরা দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করেছি।’

সংস্কার চলমান থাকবে উল্লেখ করে আসিফ নজরুল বলেন, ‘মতবিনিময় সভায় যেসব গঠনমূলক পরামর্শ এসেছে, তা বিবেচনায় নিয়ে আইনটি সংশোধন করা হবে।’ মামলার জট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সবাই বলেন মামলার জট কমাতে হবে। আমরা সেদিকেই কাজ করছি। লিগ্যাল সার্ভিস অ্যাক্টে বড় পরিবর্তন আনছি। সেখানে একটা বিধান করা হবে, যাতে ছোটখাটো অপরাধ, পারিবারিক বিরোধ বা মীমাংসাযোগ্য মামলা আগে মধ্যস্থতায় যেতে হবে। মধ্যস্থতায় যাওয়ার পর আদালতে আসতে পারবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গ্রেপ্তারের সময় পরিবারের একজনকে প্রত্যক্ষদর্শী রাখা, জবানবন্দির সময় আইনজীবীর উপস্থিতিসহ নানা প্রস্তাব
  • নরসিংদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশ
  • পাঁচ মামলায় চিন্ময়ের জামিন নামঞ্জুর
  • পাঁচ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুর
  • দেওয়ানি কার্যবিধি আইনের প্রস্তুতির জন্য করণীয়
  • আইনজীবী ফোরামের উদ্যোগে জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী পালন
  • রাশেদ খান মেননের আরও ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
  • বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন মামলায় গ্রেপ্তারে অনুমতির সিদ্ধান্ত স্থগিতের আদেশ আপাতত বহাল
  • তারেক রহমানসহ আসামিদের খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি পেল রাষ্ট্রপক্ষ