স্বজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপনে রাজধানী ছাড়ছে মানুষ। লম্বা ছুটি থাকায় এবারের ঈদযাত্রায় ভোগান্তি কম। যথাসময়ে ছাড়ছে রেল ও সড়কপথের গণপরিবহন। এসব গণপরিবহনে যাত্রীর সংকট না দেখা গেলেও ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। লঞ্চে মানুষের ভিড় ছিল কম। আগাম টিকিটেও নেই প্রত্যাশিত সাড়া। অধিকাংশ কেবিনের টিকিটও বিক্রি হয়নি।  

ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিশেষ ব্যবস্থা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। গতকাল সোমবার ঈদযাত্রার তৃতীয় দিনে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যথাসময়ে ছেড়ে গেছে ট্রেন। সকাল থেকেই যাত্রীদের পদচারণায় মুখরিত ছিল কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন। এতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরাও। তারা বলছেন, এবার স্টেশনে প্রবেশপথে কয়েক দফা চেকিং হয়েছে। ফলে টিকিটবিহীন কেউ ঢুকতে পারছে না। এ ছাড়া সময়মতো ট্রেন ছাড়ায় দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে না, পোহাতে হচ্ছে না ভোগান্তিও। 

এদিকে রাজধানীবাসীর ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বাড়তি সতর্কতাসহ বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। টিকিটবিহীন কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না রেলস্টেশনে। এ বিষয়ে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার সাজেদুল ইসলাম বলেন, বিনা টিকিটের যাত্রী প্রতিরোধ এবং অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে ব্যাপকভাবে চেকিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। হকার ও ভবঘুরেদের স্টেশনে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এ নিয়ে বিশেষ একটি টিম কাজ করছে। 

এ ছাড়া বাস টার্মিনালগুলোতেও যাত্রীর চাপ কম। এতে করে স্বস্তিতে বাড়ি ফিরছে রাজধানীবাসী। ঈদের দুই দিন আগে যাত্রীর চাপ বাড়বে বলে মনে করছেন পরিবহনসংশ্লিষ্টরা। যাত্রীরা বলছেন, এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের ভোগান্তির শিকার হননি তারা। বেশি ভাড়াও আদায় করা হচ্ছে না। 
ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। নাড়ির টানে ঘরমুখো মানুষের উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম। আগাম টিকিট বিক্রিতেও নেই প্রত্যাশিত সাড়া। লঞ্চগুলোর অন্তত ৭০ শতাংশ কেবিনের টিকিট বিক্রি হয়নি। সব মিলিয়ে টার্মিনালে যেন ঈদের ব্যস্ততা এখনও ধরা দেয়নি। সদরঘাট থেকে সবচেয়ে বেশি যাত্রী যায় বরিশাল রুটে। তবে পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় সড়কপথে যাত্রা অনেক সহজ হয়েছে। ফলে নৌপথে যাত্রী সংখ্যা অনেক কমে গেছে।

ঈদের ১৫ দিন আগে থেকেই লঞ্চের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কেবিনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। কিন্তু এবার বেশির ভাগ লঞ্চেই সেই চিরচেনা চিত্র অনুপস্থিত। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বৈরী আবহাওয়াই এর অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। 
অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) জানিয়েছে, ঈদ উপলক্ষে আজ থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ৪১টি রুটে বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস চালু হবে, যা চলবে ১০ জুন পর্যন্ত। কিন্তু যাত্রী সেভাবে না থাকায় সংশ্লিষ্টরা উদ্বিগ্ন।

লঞ্চ মালিকরা জানিয়েছেন, ৩০ শতাংশ কেবিনের টিকিটও বিক্রি হয়নি। আগে এই সময় কেবিন পাওয়া যেত না। এবার লোকজন আসছেই না। পদ্মা সেতুর পর আমরা এখন ভাগ্যের ওপর নির্ভর করি। আবহাওয়া খারাপ, রাজনৈতিক পরিস্থিতিও ভালো নয়। এ জন্য অনেকে গ্রামে যেতে চাচ্ছেন না। 
পারাবত লঞ্চের মালিক মোহাম্মদ হাবিব বলেন, সাধারণত ঈদের আগের দু’দিন যাত্রীর চাপ সবচেয়ে বেশি থাকে। গার্মেন্ট ছুটি শুরু হলে শেষ মুহূর্তে কিছু যাত্রী বাড়তে পারে।

 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঈদয ত র প রব শ

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ