ব্রাহ্মণবাড়িয়া আখাউড়া উপজেলার ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি কমতে শুরু করেছে। প্লাবিত হওয়া সীমান্তবর্তী ১৯টি গ্রামের পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় হাওড়া নদীর ভারত সীমান্তে ১২৯ সেন্টিমিটার পানি হ্রাস পেয়েছে। আর স্থলবন্দরের ব্যবসা কার্যক্রমসহ যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক আছে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ভারতের পাহাড়ি ঢলের পানিতে উপজেলার ১৯ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তবে পানি কমতে শুরু করেছে। পাহাড়ি ঢলের পানিতে পানিবন্দী ৫১১ পরিবারের হাজার ৪৪ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাঁদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করা হচ্ছে। পানিবন্দী পরিবারের জন্য ১৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

গত শনিবার রাত থেকে উপজেলায় পাহাড়ি ঢল নামতে শুরু করে। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারণে আখাউড়ার বিভিন্ন নদ-নদী, খাল-বিলে পানি বেড়ে চলেছে। আখাউড়া স্থলবন্দরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা কালন্দি খাল, কালিকাপুর হয়ে আবদুল্লাপুর দিয়ে জাজি গাঙ, বাউতলা দিয়ে মরা গাঙ ও মোগড়া ইউনিয়ন দিয়ে বয়ে চলা হাওড়া নদী দিয়ে গত শনিবার রাতে অস্বাভাবিকভাবে ঢলের পানি ঢুকতে শুরু করে। এতে আখাউড়া উপজেলার দক্ষিণ, মোগড়া ও মনিয়ন্দ ইউনিয়নের গ্রামের ফসলি জমি, রাস্তাঘাট ও কিছু বাড়িঘর তলিয়ে যায়।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত শনিবার রাত থেকে গত রোববার রাত তিনটা পর্যন্ত উপজেলার কালন্দি খাল, জাজি গাঙ ও হাওড়া নদী দিয়ে পানি ঢুকছে। গতকাল সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত পানি সামান্য কমেছে। তবে ৯টার পর বৃষ্টি শুরু হলে পানি আবার বাড়তে শুরু করে। এতে দক্ষিণ ইউনিয়নের কালিকাপুর বীরচন্দ্রপুর, আবদুল্লাহপুর, কেন্দুয়া, বঙ্গেরচর; মোগড়া ইউনিয়নের বাউতলা, উমেদপুর, সেনারবাদী, জয়নগর, কলাপাড়া, রাজেন্দ্রপুর, আওড়ার চর, ছয়গরিয়া; মনিয়ন্দা ইউনিয়নের ইটনা, আইড়ল, টনকি, তুলাইশিমুল, শোনলহগর, নতুনপাড়া গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের কিছু রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। এতে লোকজনের দুর্ভোগ বেড়েছে।

আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন পুলিশ চেকপোস্টের পরিদর্শক মোহাম্মদ আবদুস সাত্তার বলেন, দুই দেশের যাত্রীদের পারাপার স্বাভাবিক রয়েছে। যাত্রী সেবায় কোনো বিঘ্ন ঘটেনি। পানির পরিস্থিতি গত ২৪ ঘণ্টায় হাওড়া নদীর ভারত সীমান্তে ১২৯ সেমি পানি হ্রাস পেয়েছে এবং একই নদীর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার গঙ্গাসাগর অংশে ৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।

পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মনজুর রহমান জানান, আখাউড়া উপজেলার হাওড়া নদীর ভারত সীমান্তে আজ সকাল ৯টায় পানির সমতল ছিল ৯ দশমিক ৯৩ মিটার। স্থানটির বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৭০ মিটার। পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বর্তমানে বিপৎসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। গতকাল একই সময়ে পানির সমতল ছিল ১১ দশমিক ২২ মিটার। অর্থাৎ গত ২৪ ঘণ্টায় ১২৯ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়েছে।

মনজুর রহমান বলেন, হাওড়া নদীর আখাউড়ার গঙ্গাসাগর অংশে আজ সকাল ৯টায় পানির সমতল ছিল ৪ দশমিক ৯৫ মিটার। স্থানটির বিপৎসীমা ৬ দশমিক শূন্য ৫ মিটার। বর্তমানে বিপৎসীমার ১১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল একই সময়ে পানির সমতল ছিল ৪ দশমিক ৮৭ মিটার। অর্থাৎ গত ২৪ ঘণ্টায় পানি হ্রাস পেয়েছে ৮ সেন্টিমিটার।

আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জি এম রাশেদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ২৪ ঘণ্টায় পানি ১২৯ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, স্থানীয় চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের দেওয়া তথ্যমতে উপজেলার পানি কমছে এবং পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে। আজ আর বৃষ্টি না হলে পরিস্থিতি আরও উন্নতি হবে। প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী হয়ে পড়া ৫১১ পরিবারের ২ হাজার ৪৪ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাঁদের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তবে ১৯ গ্রাম এখনো আংশিক প্লাবিত।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ন র সমতল ছ ল ব র হ মণব ড় য় ঢল র প ন পর স থ ত ব পৎস ম উপজ ল র পর ব র ত হয় ছ ১২৯ স দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

‘কারফিউ ভেঙে নারীদের সমাবেশের স্মরণে শাহবাগে সমাবেশ, ৩ দফা দাবি

‘কারফিউ ভেঙে নারীদের সমাবেশ’–এর এক বছর পূর্তিতে প্রগতিশীল নারী সংগঠন, স্বতন্ত্র অধিকারকর্মী এবং নারী শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে আজ সোমবার বিকেলে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে স্মরণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখান থেকে তিন দফা দাবি জানানো হয়। সমাবেশের প্রতিপাদ্য ছিল ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রাম চলবেই।

গত বছরের ২৭ জুলাই কারফিউ ভেঙে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার নারীরা পল্টন মোড়ে ‘হামার বেটাক মারলু ক্যানে’ শীর্ষক একটি সমাবেশ করেছিলেন।

সমাবেশে নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনামলের অবসান ঘটলেও এখনো ফ্যাসিবাদী কাঠামোর অবসান হয়নি। বরং দিন দিন নব্য ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটছে। যেখানে পাহাড়–সমতলের একের পর এক নারী নিপীড়ন, ধর্ষণ ও মব সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে। অন্যদিকে নিপীড়ককে আশ্রয় ও দায়মুক্তি দিচ্ছে রাষ্ট্র।

তথ্য আপা রাজস্বকরণ আন্দোলনের প্রতিনিধি রোমানা ইসলাম বলেন, তথ্য আপারা দুই মাস ধরে প্রেসক্লাবে তাঁদের চাকরি রাজস্বকরণের দাবি জানিয়ে আন্দোলন করছেন, বসে আছেন। অথচ তাঁদের চাকরি নিশ্চিত করা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো দৃষ্টি নেই। তাঁদের ৭ বছর কর্মজীবনে বেতন থেকে কেটে নেওয়া ২০ কোটি টাকাও ফেরত দেওয়া হচ্ছে না।

হিল উইমেনস ফেডারেশনের সদস্য রুপসী চাকমা বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের পর কল্পনা চাকমার অপহরণ মামলার সুষ্ঠু বিচার হবে, তাই ভেবেছিল বাংলাদেশের নারী সমাজ। কিন্তু চিহ্নিত অপহরণকারী লেফটেন্যান্ট ফেরদৌস নিরাপদে ঘুরে বেড়ালেও কল্পনা চাকমার যে মামলাটি আওয়ামী সরকার খারিজ করেছে, তা একইভাবে বলবৎ আছে এবং মামলা পুনরায় শুরুর জন্য শুনানির তারিখ বারবার পেছাচ্ছে।

বম স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি লালরিথাং বম অভিযোগ করেন, আওয়ামী সরকার বম জাতির ওপর ‘কালেক্টিভ পানিশমেন্ট’–এর নামে যত্রতত্র থেকে নিরীহ বমদের আটক শুরু করেছিল। আজও কারাগারে বমরা আটকে আছে। তিনজন বম ব্যক্তিকে কারাগারে অত্যাচারের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে হত্যা করা হয়েছে।

আজ সমাবেশ থেকে তিন দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো, দুই মাস ধরে আন্দোলনরত তথ্য আপাদের চাকরি রাজস্বভুক্ত করতে হবে; নিম্ন আদালতে কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলা খারিজের আদেশ বাতিল করে পুনঃ তদন্ত ও চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস গংদের বিচারের আওতায় আনা এবং পাহাড় ও সমতলে নারী ধর্ষণ, নিপীড়ন এবং মব সন্ত্রাসের বিচার করতে হবে এবং কারাগারে আটক সব বমকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।

সমাবেশে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য মারজিয়া প্রভার সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন শহীদ শেখ ফাহমিন জাফরের মা কাজী লুলু মাখামিন শিল্পী, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক অর্ণি আনজুম প্রমুখ।

পাশাপাশি সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন অ্যাকটিভিস্ট ও কবি ফেরদৌস আরা রুমী, আইনজীবী সাদিয়া আরমান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সদস্য জাকিয়া শিশির, অ্যাকটিভিস্ট প্রাপ্তি তাপসী, চিকিৎসক সুরাইয়া ইয়াসমিনসহ আরও অনেকে।

সমাবেশে সূচনা ও সমাপনী সংগীত পরিবেশন করে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘কারফিউ ভেঙে নারীদের সমাবেশের স্মরণে শাহবাগে সমাবেশ, ৩ দফা দাবি