ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা ও ফুলবাড়িয়া উপজেলায় আয়মন নদীর ৪২ কিলোমিটার খনন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। খননের পর নদীর প্রস্থ দাঁড়াচ্ছে ২৩ থেকে ২৮ মিটার। সেতু ও কালভার্ট এলাকায় নদীর প্রস্থ ১০-১৫ মিটার। সরু স্থানে পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় গোড়া থেকে মাটি সরে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে অন্তত ৩১টি সেতু ও বক্স কালভার্ট।
নদী খনন শুরু হওয়ার পর পাউবোর ময়মনসিংহ দপ্তর থেকে এলজিইডি, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট ইউএনওদের বারবার চিঠি দিয়ে সতর্ক করলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, খনন প্রকল্পটি মুক্তাগাছার আটআনি বাজার থেকে শুরু হয়ে ফুলবাড়িয়ার রাধাকানাই ইউনিয়নের দুগাঙ্গায় শেষ হবে। প্রকল্পের আওতায় ফুলবাড়িয়ায় ১৮টি ও মুক্তাগাছায় ১৩টি সেতু ও কালভার্ট রয়েছে। এর মধ্যে গত ৩১ মে মুক্তাগাছায় আয়মন নদীর ওপর গহুর মোল্লার কালভার্ট ধসে পড়ে। কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে নদীতে পানির চাপ বেড়ে এবং দু’পাশের মাটি সরে যাওয়ায় এ ঘটনা ঘটে। এছাড়া আরও ৩০টি সেতু ও কালভার্ট হুমকির মুখে রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, আয়মন নদীর খননকাজ শুরু হয় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় সিএস নকশা অনুযায়ী নদী খনন চলছে। প্রকল্পের আওতাধীন এলাকার সেতু ও কালভার্টগুলো সিএস নকশা মেনে নির্মাণ করা হয়নি।

খননকাজ-সংশ্লিষ্টদের মতে, পাউবোর নকশা অনুযায়ী ২৩ থেকে ২৮ মিটার প্রশস্ত করে খনন করতে হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে নদীর গভীরতা আগের তুলনায় গড়ে ৭ থেকে ১০ ফুট বাড়বে।  যেসব স্থানে সেতু ও কালভার্ট আছে, সেখানে খননের আগে নদীর প্রশস্ততা ছিল ১০-১৫ মিটার। সরকারের নিয়ম মেনে পুনর্খনন করতে গিয়ে ঘটছে বিপত্তি।
পাউবোর প্রকৌশলীরা বলছেন, প্রকল্প এলাকার সব স্থানে নিয়ম মেনে প্রশস্ততা ঠিক রেখে নদী খনন করতে গেলে আগে থেকে নির্মাণ করা সেতু ও কালভার্টগুলো নদীতে চলে যায়। এ জন্য ৩১টি সেতু ও কালভার্ট প্রতিস্থাপনের জন্য ব্যবস্থা নিতে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করা হয়েছে। ২০২৩ সালের ২৩ নভেম্বর পাউবো ময়মনসিংহ দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আখলাক উল জামিল স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে দেখা যায়, ফুলবাড়িয়ার ইউএনওকে খনন প্রকল্পের ৩১ কিলোমিটারে থাকা ১৮টি সেতু ও কালভার্টের বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। এতে বলা হয়, অধিকাংশ সেতু-কালভার্টের দৈর্ঘ্য নদীর প্রকৃত গড় প্রস্থের তুলনায় কম এবং ভিত্তিস্তর নদীর তলদেশ থেকে উঁচুতে। যে কারণে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। চিঠিতে আয়মন নদীর ধারণ ক্ষমতা বাড়ানো ও পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় রাখার লক্ষ্যে এসব সেতু ও কালভার্ট প্রতিস্থাপন-পুনর্বাসনের জন্য অনুরোধ করা হয়। একই বছরের ২৩ ও ২৬ নভেম্বরে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী স্বাক্ষরিত চিঠিতে মুক্তাগাছার ইউএনও, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ময়মনসিংহ এবং এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীকে একই ধরনের ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়। গত ১ জানুয়ারিতেও মুক্তাগাছার ইউএনও, এলজিইডিকে ঝুঁকিপূর্ণ সেতু-কালভার্ট প্রতিস্থাপনে ব্যবস্থা নিতে পুনরায় চিঠি দেয় পাউবো।

সরেজমিন দেখা গেছে, গহুর মোল্লা কালভার্টটি ধসে যাওয়ায় পানিতে ভিজেই নদী পারাপার হচ্ছেন স্থানীয়রা। নদী পারাপারের কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। 
গহুর মোল্লা কালভার্ট থেকে এক কিলোমিটার সামনে চোখ আটকে যায় কবিরপুর খিলগাতী বক্স কালভার্টে; যার দু’পাশের মাটি সরে যাওয়ায় ঝুঁকিতে রয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, টানা দু’একদিন বৃষ্টি হলেই কালভার্টটি ধসে যাবে।
শুধু গহুর মোল্লা কিংবা কবিরপুর খিলগাতী কালভার্ট নয়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতে– মুক্তাগাছার পয়েরকান্দি, সোনাপুর, দিগলগাঁও, আমুদপুর, মৃদাবাড়ী, বিটিবাড়ি পূর্বপাড়া, বাহের বাজাইল, ঘরবাজাইল নয়াবিলা বাজারসংলগ্ন ও নবীনগঞ্জ বাজার কালভার্ট অতিঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া ফুলবাড়িয়ায় অতিঝুঁকিপূর্ণ কালভার্টগুলো হলো– মণ্ডলবাড়ী, দেউলী গ্রাম, বৈদ্দবাড়ি, ঘরপাড়া সোলের বাজার। এসব কালভার্ট থেকে ৩০-৪০ মিটার দূরে নদী বেশি প্রশস্ত হওয়ায় ভারী বর্ষণের সময় সরু কালভার্টের নিচ দিয়ে প্রবল বেগে পানি প্রবাহিত হয়। এতে গোড়া থেকে মাটি সরে গিয়ে কালভার্ট ধসে পড়ছে বলে জানান স্থানীয়রা।
মুক্তাগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতিকুল ইসলাম জানান, ভেঙে পড়া কালভার্টের স্থানে বিকল্প সেতু নির্মাণের জন্য কেনাকাটা চলছে। বাকিগুলোর ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন উপজেলা প্রকৌশলী ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। 

পাউবোর চিঠির বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চিঠি পাইনি। তাদের বলেন চিঠির রিসিভড কপি দেখাতে।’
এলজিইডির ফুলবাড়িয়া উপজেলা প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার দাসের অভিযোগ, সরকারি একটি দপ্তর যখন কাজ করে তখন অন্য দপ্তরের সংশ্লিষ্টতা থাকলে তাদের কাছ থেকে এনওসি নিতে হয়। পাউবো কীভাবে খননকাজ চালাচ্ছে সেটি পরিদর্শনে গেলে বোঝা যাবে।
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী সালমান রহমান রাসেলের মতে, আয়মন নদীর ওপর সেতু ও কালভার্টগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল ২০-২৫ বছর আগে। তখন নদী অনেক ছোট ছিল। খননের পর নদী অনেক প্রশস্ত হয়েছে। সেতু-কালভার্টগুলো পুনর্নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হচ্ছে।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আখলাক উল জামিল জানান, খনন শুরুর আগেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। সম্পূর্ণ নিয়ম মেনেই খননকাজ চলছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নদ প রশস ত ব যবস থ প রকল প খননক জ নদ র প ন নদ র প রক শ র জন য উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

কুড়িগ্রামে সারের দাবিতে সড়কে কৃষকদের বিক্ষোভ

কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় সারের দাবিতে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন কৃষকরা। এসময় তারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে অবরুদ্ধ করেন। 

রবিাবর (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ২টার দিকে উপজেলার সোনাহাট স্থলবন্দর সড়ক অবরোধ করেন কৃষকরা। একপর্যায়ে তারা ভূরুঙ্গামারী উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সারোয়ার তৌহিদকে অবরুদ্ধ করেন। বিকেল ৫টার দিকে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপ জন মিত্রের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেন কৃষকরা।

আরো পড়ুন:

বাগেরহাটে হরতাল কর্মসূচিতে পরিবর্তন

ফরিদপুরে মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ, ভোগান্তি চরমে

আন্দোলনরত কৃষকরা জানান, তীব্র সার সংকট দেখা দিয়েছে। রোপা আমন ধানে সার দিতে না পেরে ক্ষতির মুখে পড়ছেন তারা। 

ভুরুঙ্গামারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল হেলাল মাহমুদ জানান, কৃষকরা বিকেল ৫টার দিকে অবরোধ তুলে নিলে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

ইউএনও দীপ জন মিত্র জানান, কৃষকরা কেন সার পাচ্ছেন না, সেটি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকা/বাদশাহ/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাবনায় পুলিশ দেখে পালালেন শিকারিরা, উদ্ধার ৪৫টি ঘুঘু অবমুক্ত
  • শেরপুরে বেশি দামে সার বিক্রি: ২ ব্যবসায়ীকে সোয়া লাখ টাকা জরিমানা
  • কুড়িগ্রামে সারের দাবিতে সড়কে কৃষকদের বিক্ষোভ