খাল দখলকারীরা প্রবল প্রতাপে ভিন্ন চরিত্রে ফিরে এসেছে
Published: 4th, June 2025 GMT
খাল দখলকারীরা এখন আরও প্রবল প্রতাপে অনেক জায়গায় ভিন্ন চরিত্রে ফিরে এসেছে। সরকার বদল হলেও দখলদারেরা আইনের হাত থেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে আছেন। এ জন্য খাল-জলাশয় দখলকারীদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি নগরে জলাবদ্ধতা কমাতে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রয়োজন।
‘আগাম বর্ষায় নগর এলাকায় জলাবদ্ধতা: আইপিডির পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক এক অনলাইন আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তারা। ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) মঙ্গলবার এ আলোচনার আয়োজন করে।
আলোচনায় নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর খাল-জলাশয় দখলের কারণে কাউকে কারাগারে যেতে হয়নি। পরিবেশগত হত্যার মতো বিষয়কে যেন দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ফলে খাল দখলদাররা এখন আরও প্রবল প্রতাপে অনেক জায়গায় ভিন্ন চরিত্রে ফেরত এসেছে।
খাল-জলাশয় দখলদারদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি নগরে জলাবদ্ধতা কমাতে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রয়োজন বলে মনে করেন আদিল মুহাম্মদ খান। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দখলদারেরা সবসময়ই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকে। সরকার বদল হলেও দখলদারেরা আইনের হাত থেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে আছেন এখনো।
অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধে আইপিডির পরিচালক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, নগর এলাকায় বিগত বছরগুলোতে খাল সংস্কার ও পুনরুদ্ধার, ড্রেনেজ প্রকল্পসহ বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প নেওয়া হলেও অল্প বৃষ্টিতেই ঢাকা, কুমিল্লা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, খুলনা, ময়মনসিংহসহ অনেক নগরেরই বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। আবার সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার ফলে চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে ছিল। ঢাকা শহরেও খাল উদ্ধারে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, বিপরীতে আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল আবার ভরাট শুরু হয়ে যাওয়ায় প্রকল্পের ৩০ কোটি টাকা পানিতে গেছে।
বড় শহরগুলোর জলাবদ্ধতার বিশ্লেষণ করে আইপিডির পক্ষ থেকে জলজটের প্রধান কারণগুলো ব্যাখ্যা করা হয়। এর মধ্যে নির্বিচারে খাল, পুকুর, জলাশয় দখল ও ভরাট, অপরিকল্পিত ও দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থা, খাল-নদী এবং কৃত্রিম ড্রেনেজ ব্যবস্থার আন্তসংযোগ নষ্ট হয়ে পড়া, নিচু ও জলাভূমি এলাকায় নগরায়ণ ও আবাসন, ক্রমাগত রাস্তা উঁচু করে ফেলা, নগর-পরিকল্পনা ও ড্রেনেজ পরিকল্পনার ঘাটতি, নগর সংস্থাসমূহের তদারকির গাফিলতি, বর্জ্য ফেলার ক্ষেত্রে জনগণের অসচেতনতা, আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব অন্যতম।
নগর এলাকায় জলাবদ্ধতা কমাতে আইপিডি বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পানিপ্রবাহের পথ নিরবচ্ছিন্ন ও নির্বিঘ্ন রাখা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উন্নতি করা ও জনগণকে সচেতন করা, উন্মুক্ত পদ্ধতিতে খালের ব্যবহার, নগর এলাকায় সবুজ এলাকা ২৫ শতাংশ ও জলাশয়-জলাধার এলাকা ১০-১৫ শতাংশ এবং কংক্রিট এলাকা সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ রাখা, পুকুর জলাধার জলাশয় রক্ষা করা ও প্রয়োজনে নতুনভাবে তৈরি করা।
এ ছাড়া জিআইএস-ওয়াটার মডেলিংসহ আধুনিক ড্রেনেজ ও নগর-পরিকল্পনার সমন্বয়, নগর সংস্থাসমূহে কারিগরি জ্ঞান ও যন্ত্রপাতিসমৃদ্ধ ড্রেনেজ বিভাগ তৈরি করা, পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ও আইনের প্রয়োগ, খাল দখলদারদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করে তাদের দায়বদ্ধ করা, বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বিত পরিকল্পনা ও উদ্যোগের পাশাপাশি পরিকল্পনা, প্রকৌশল, ব্যবস্থাপনা, কমিউনিটি অংশগ্রহণ, নজরদারি ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কার্যকর মিথস্ক্রিয়া নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে সংগঠনটি।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফরহাদুর রেজা, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহজালাল মিশুক, পরিকল্পনাবিদ শেখ আদনান ইসলাম, সামাজিক আন্দোলনের নেতা মিজানুর রহমান, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ আসিফ ইকবাল, পরিকল্পনাবিদ ফাহিম আহম্মেদ মন্ডল, আবদুল আহাদ নাফিস প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস থ দখলদ র আইপ ড আইন র
এছাড়াও পড়ুন:
মতলবের দুই বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি-দখলদারির অভিযোগ, দল থেকে বহিষ্কার
চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলার বিএনপির দুই নেতাকে দলের সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
চাঁদাবাজি, দখলদারি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানা ধরনের অপকর্মে লিপ্ত থাকার অভিযোগে ওই দুজনের বিরুদ্ধে এ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
বহিষ্কৃত নেতারা হলেন মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌর বিএনপির সহসভাপতি আবদুল মান্নান লস্কর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া। এর মধ্যে মতলব উত্তরের আবদুল মান্নান লস্করকে চাঁদাবাজির মামলায় গত সোমবার রাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আবদুল মান্নান লস্কর ও আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়াকে চাঁদাবাজি, দখলদারি ও মানুষকে ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত থাকার অভিযোগে দলের প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই একই অভিযোগে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইমাম হোসেন গাজীকেও দলের সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহম্মেদের (মানিক) মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে মতলব উত্তর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম বলেন, ওই দুই নেতাকে বহিষ্কারের বিষয়টি জেনেছেন। তবে এ ব্যাপারে চিঠি এখনো পাননি। যেকোনো বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এটি অন্যান্য নেতার জন্যও একটি বার্তা ও শিক্ষা।