খাল দখলকারীরা এখন আরও প্রবল প্রতাপে অনেক জায়গায় ভিন্ন চরিত্রে ফিরে এসেছে। সরকার বদল হলেও দখলদারেরা আইনের হাত থেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে আছেন। এ জন্য খাল-জলাশয় দখলকারীদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি নগরে জলাবদ্ধতা কমাতে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রয়োজন।

‘আগাম বর্ষায় নগর এলাকায় জলাবদ্ধতা: আইপিডির পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক এক অনলাইন আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তারা। ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) মঙ্গলবার এ আলোচনার আয়োজন করে।

আলোচনায় নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর খাল-জলাশয় দখলের কারণে কাউকে কারাগারে যেতে হয়নি। পরিবেশগত হত্যার মতো বিষয়কে যেন দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ফলে খাল দখলদাররা এখন আরও প্রবল প্রতাপে অনেক জায়গায় ভিন্ন চরিত্রে ফেরত এসেছে।

খাল-জলাশয় দখলদারদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি নগরে জলাবদ্ধতা কমাতে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রয়োজন বলে মনে করেন আদিল মুহাম্মদ খান। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দখলদারেরা সবসময়ই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকে। সরকার বদল হলেও দখলদারেরা আইনের হাত থেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে আছেন এখনো।

অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধে আইপিডির পরিচালক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, নগর এলাকায় বিগত বছরগুলোতে খাল সংস্কার ও পুনরুদ্ধার, ড্রেনেজ প্রকল্পসহ বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প নেওয়া হলেও অল্প বৃষ্টিতেই ঢাকা, কুমিল্লা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, খুলনা, ময়মনসিংহসহ অনেক নগরেরই বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। আবার সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার ফলে চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে ছিল। ঢাকা শহরেও খাল উদ্ধারে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, বিপরীতে আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল আবার ভরাট শুরু হয়ে যাওয়ায় প্রকল্পের ৩০ কোটি টাকা পানিতে গেছে।

বড় শহরগুলোর জলাবদ্ধতার বিশ্লেষণ করে আইপিডির পক্ষ থেকে জলজটের প্রধান কারণগুলো ব্যাখ্যা করা হয়। এর মধ্যে নির্বিচারে খাল, পুকুর, জলাশয় দখল ও ভরাট, অপরিকল্পিত ও দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থা, খাল-নদী এবং কৃত্রিম ড্রেনেজ ব্যবস্থার আন্তসংযোগ নষ্ট হয়ে পড়া, নিচু ও জলাভূমি এলাকায় নগরায়ণ ও আবাসন, ক্রমাগত রাস্তা উঁচু করে ফেলা, নগর-পরিকল্পনা ও ড্রেনেজ পরিকল্পনার ঘাটতি, নগর সংস্থাসমূহের তদারকির গাফিলতি, বর্জ্য ফেলার ক্ষেত্রে জনগণের অসচেতনতা, আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব অন্যতম।

নগর এলাকায় জলাবদ্ধতা কমাতে আইপিডি বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পানিপ্রবাহের পথ নিরবচ্ছিন্ন ও নির্বিঘ্ন রাখা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উন্নতি করা ও জনগণকে সচেতন করা, উন্মুক্ত পদ্ধতিতে খালের ব্যবহার, নগর এলাকায় সবুজ এলাকা ২৫ শতাংশ ও জলাশয়-জলাধার এলাকা ১০-১৫ শতাংশ এবং কংক্রিট এলাকা সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ রাখা, পুকুর জলাধার জলাশয় রক্ষা করা ও প্রয়োজনে নতুনভাবে তৈরি করা।

এ ছাড়া জিআইএস-ওয়াটার মডেলিংসহ আধুনিক ড্রেনেজ ও নগর-পরিকল্পনার সমন্বয়, নগর সংস্থাসমূহে কারিগরি জ্ঞান ও যন্ত্রপাতিসমৃদ্ধ ড্রেনেজ বিভাগ তৈরি করা, পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ও আইনের প্রয়োগ, খাল দখলদারদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করে তাদের দায়বদ্ধ করা, বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বিত পরিকল্পনা ও উদ্যোগের পাশাপাশি পরিকল্পনা, প্রকৌশল, ব্যবস্থাপনা, কমিউনিটি অংশগ্রহণ, নজরদারি ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কার্যকর মিথস্ক্রিয়া নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে সংগঠনটি।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফরহাদুর রেজা, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহজালাল মিশুক, পরিকল্পনাবিদ শেখ আদনান ইসলাম, সামাজিক আন্দোলনের নেতা মিজানুর রহমান, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ আসিফ ইকবাল, পরিকল্পনাবিদ ফাহিম আহম্মেদ মন্ডল, আবদুল আহাদ নাফিস প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস থ দখলদ র আইপ ড আইন র

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়: ডাকসু

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগের সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায় বলে দাবি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)।

রবিবার (২ নভেম্বর) ডাকসুর ভিপি মো. আবু সাদিক, জিএস এসএম ফরহাদ ও এজিএস মুহা: মহিউদ্দিন খান স্বাক্ষরিত ‘রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কাৃরের বিরোধিতা এবং ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো অক্ষুণ্ন রাখার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে ডাকসুর প্রতিবাদ' শীর্ষক এক প্রতিবাদলিপিতে এ কথা বলা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

ঢাবি শিক্ষার্থীদের মানবিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করতে ২ কমিটি

ঢাবিতে সপ্তাহব্যাপী শিল্পকর্ম প্রদর্শনী শুরু

প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, জুলাই বিপ্লব ছিল বৈষম্য, অবিচার ও ফ্যাসিবাদী শাসনকাঠামোর বিরুদ্ধে এ দেশের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার এক সম্মিলিত বিপ্লব। কেবল সরকার পরিবর্তন নয় বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার, ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ, স্বাধীন ও শক্তিশালী সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান গঠন, প্রশাসনিক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং একটি বৈষম্যহীন-ন্যায়ভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল এই বিপ্লবের মূল ভিত্তি। নতুন প্রজন্ম চেয়েছিল এমন একটি বাংলাদেশ, যেখানে কোন প্রকার বৈষম্য ও রাজনৈতিক একচেটিয়া কর্তৃত্বের জায়গা থাকবে না।

কিন্তু দুঃখজনকভাবে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ধারাবাহিকভাবে সংস্কার কার্যকর করার বিরোধিতা করে তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। বিশেষত বিএনপি এমন সব মৌলিক সংস্কারের বিরোধিতা করেছে যা সরাসরি ছাত্র–জনতার স্বপ্নের সঙ্গে জড়িত। পিএসসি, দুদক, ন্যায়পাল ও মহা-হিসাব নিরীক্ষকের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগ নিশ্চিত করার সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তারা ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়।

যে বৈষম্যমূলক চাকরি ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করেই জুলাই বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল সেই কাঠামো পরিবর্তনের বিরুদ্ধাচরণ করে বিএনপি নতুন প্রজন্মের ন্যায্য দাবি অস্বীকার করছে। পাশাপাশি জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কমিশনের বিরোধিতা, অনুচ্ছেদ–৭০ সংস্কারে আপত্তি, প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান আলাদা দুজন ব্যক্তির মতো আধুনিক গণতান্ত্রিক প্রস্তাবে বিরোধিতা, আইন পেশায় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের প্রতিবন্ধকতা, স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস গঠনে তাদের আপত্তি রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার এবং তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নির্মাণের পথে বড় বাঁধার সৃষ্টি করছে। এভাবে বিএনপি মূলত জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে অস্বীকার করে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে।

প্রতিবাদলিপিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, এই সংস্কারগুলো ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থ নয় বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার এবং আধুনিক, গণতান্ত্রিক ও শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান তৈরির লক্ষ্যেই প্রস্তাবিত হয়েছে। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ গঠনের নৈতিক দায়িত্ব ছাত্র ও সর্বস্তরের জনগণের। তাই সংস্কারের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জনগণ থেকে নিতে হবে। আর গণভোটই জনগণের ম্যান্ডেট নিশ্চিতের উপযুক্ত মাধ্যম। গণভোটের মাধ্যমেই জনগণ ঠিক করবে দেশের স্বার্থে কোন কোন সংস্কার প্রস্তাবনাগুলোকে তারা সমর্থন দিবে।

কোনো রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রভাব যদি রাষ্ট্রগঠনমূলক সংস্কারের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তবে ছাত্র-জনতা  সেই বাধা অতিক্রমে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেবে জানিয়ে প্রতিবাদলিপিতে আরো বলা হয়, জুলাই বিপ্লব শুধু শাসক বা সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন নয় বরং জুলাই বিপ্লব হলো ফ্যাসিবাদী কাঠামো বিলোপ করে ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণ।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়: ডাকসু
  • ট্রাম্প কি সত্যি ইসরায়েলি দখলদারি বন্ধ করতে চান
  • ভূমি দখলদার চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন