চ্যাটজিপিটি ও ইনভিডিও এআইয়ের ছদ্মবেশে ভয়ংকর ম্যালওয়্যার
Published: 5th, June 2025 GMT
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর জনপ্রিয় মাধ্যম চ্যাটজিপিটি ও ইনভিডিও এআইয়ের নাম ব্যবহার করে ছড়ানো হচ্ছে বিপজ্জনক ম্যালওয়্যার। ভুয়া ওয়েবসাইট ও ইনস্টলার ব্যবহার করে ব্যবহারকারীদের কম্পিউটারে গোপনে প্রবেশ করছে র্যানসমওয়্যারসহ নানা ধরনের ক্ষতিকর সফটওয়্যার। এসব ম্যালওয়্যারের মধ্যে রয়েছে ‘সাইবারলক’, ‘লাকি গোস্ট’ ও নতুন একটি ম্যালওয়্যার ‘নুমেরো’।
সম্প্রতি সাইবার নিরাপত্তা গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সিসকো ট্যালোস জানায়, বিপণন ও ডিজাইন–সম্পর্কিত কাজে ব্যবহৃত জনপ্রিয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক টুলগুলোর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সেগুলোর নাম ও লোগো নকল করে তৈরি করা হচ্ছে ভুয়া ওয়েবসাইট। এসব সাইট থেকে সফটওয়্যার নামাতে গিয়ে ব্যবহারকারীরা নিজের অজান্তেই মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, নোভালিডসএআই ডটকম নামের একটি ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছে আসল নোভালিডস প্ল্যাটফর্মের আদলে। সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের মাধ্যমে গুগল সার্চে এই ভুয়া সাইট ওপরে চলে আসে। এতে এক বছরের জন্য বিনা মূল্যে সফটওয়্যার ব্যবহারের প্রলোভন দেখিয়ে ‘নোভালিডসএআই ডট এক্সই’ নামের একটি ইনস্টলার ডাউনলোড করতে বলা হয়। ইনস্টলারটি চালু করলেই কম্পিউটারে চালু হয়ে যায় ‘সাইবারলক’ নামের র্যানসমওয়্যার।
সাইবারলক একটি পাওয়ারশেল–নির্ভর র্যানসমওয়্যার, যা প্রয়োজন হলে যন্ত্রের অ্যাডমিনিস্ট্রেটর অনুমতি নিয়ে নিজেই আবার চালু হতে পারে। এটি চালু হলে সি, ডি ও ই ড্রাইভে থাকা নির্দিষ্ট কিছু ফাইল এনক্রিপ্ট করে দেয় এবং একটি র্যানসম বার্তা রেখে যায়। ওই বার্তায় বলা হয়, তিন দিনের মধ্যে দুটি নির্দিষ্ট ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ালেটে ৫০ হাজার মার্কিন ডলার না পাঠালে ফাইলগুলো আর ফেরত দেওয়া হবে না। র্যানসম নোটে দাবি করা হয়, সংগৃহীত অর্থ ফিলিস্তিন, ইউক্রেন, আফ্রিকা ও এশিয়ার শিশুদের কল্যাণে ব্যয় করা হবে। সেখানে আরও লেখা হয়, ‘যখন নিরীহ শিশুদের জীবন হুমকির মুখে, তখন এই অর্থ খুব বেশি নয়। মানুষ স্বেচ্ছায় এগিয়ে না এলে আমাদের আর কোনো পথ থাকে না।’ এই ম্যালওয়্যার উইন্ডোজের ‘সাইফার ডট এক্সই’ টুল ব্যবহার করে ড্রাইভের খালি জায়গাগুলো এমনভাবে ওভাররাইট করে দেয়, যাতে এনক্রিপ্ট হওয়া ফাইলগুলো পুনরুদ্ধার করা সম্ভব না হয়।
একইভাবে ছড়ানো হচ্ছে ‘লাকি গোস্ট’ নামের আরেকটি ম্যালওয়্যার। এটি ছড়াতে ব্যবহার করা হচ্ছে ভুয়া প্রিমিয়াম চ্যাটজিপিটি ইনস্টলার। এই ইনস্টলারে ‘ডিডব্লিউএন ডট এক্সই’ নামের একটি ফাইল থাকে, যা উইন্ডোজের মূল ‘ডিডব্লিউএম ডট এক্সই’ ফাইলের ছদ্মবেশে কাজ করে। ইনস্টলারে প্রকৃত কিছু ওপেন সোর্স এআই টুলও যুক্ত থাকে, যাতে ব্যবহারকারী সন্দেহ না করেন। কিন্তু ইনস্টলারটি চালু করলেই স্ক্রিপ্টের মাধ্যমে সক্রিয় হয়ে যায় ‘লাকি গোস্ট’।
এই র্যানসমওয়্যার ১.
এ ছাড়া ইনভিডিও এআইয়ের ছদ্মবেশে ছড়ানো হচ্ছে ‘নুমেরো’ নামের আরও একটি নতুন ম্যালওয়্যার। এর ইনস্টলারে একটি ব্যাচ ফাইল, একটি ভিজ্যুয়াল বেসিক স্ক্রিপ্ট ও একটি এক্সিকিউটেবল ফাইল থাকে। ইনস্টলার চালু হলেই ব্যাচ ফাইলটি ইনফিনিট লুপে স্ক্রিপ্ট চালিয়ে ‘নুমেরো’কে সক্রিয় করে তোলে।
সি প্লাস প্লাস ভাষায় তৈরি ৩২ বিটের এই ম্যালওয়্যার উইন্ডোজ ডেস্কটপ ইন্টারফেসকে বিকল করে দেয় এবং কম্পিউটার কার্যত অচল করে ফেলে। কম্পিউটারে তখন শুধু ‘১২৩৪৫৬৭৮৯০’ লেখা দেখা যায়। গবেষকদের ধারণা, এটি প্রথম ২০২৫ সালের ২৪ জানুয়ারি কম্পাইল করা হয়।
গুগলের মালিকানাধীন সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ম্যান্ডিয়েন্ট জানায়, ভুয়া লুমা এআই, ক্যানভা ড্রিমল্যাব ও ক্লিং এআইয়ের মতো প্ল্যাটফর্মের নাম ব্যবহার করে তৈরি করা হচ্ছে অনেক ভুয়া ওয়েবসাইট। এসব সাইটে ফেসবুক ও লিংকডইনে বিজ্ঞাপন চালিয়ে ব্যবহারকারীদের ফাঁদে ফেলা হচ্ছে। ম্যান্ডিয়েন্ট জানায়, এই পুরো ম্যালওয়্যার ছড়ানোর পেছনে রয়েছে ভিয়েতনামভিত্তিক হ্যাকার গোষ্ঠী ‘ইউএনসি৬০৩২’। এসব ভুয়া ওয়েবসাইটে ব্যবহারকারীদের এআই প্রম্পট দিয়ে ভিডিও তৈরি করতে বলা হলেও আসলে ইনস্টল হয়ে যায় ‘স্টার্কভেইল’ নামের রাস্ট ভাষায় লেখা একটি ড্রপার। এটি একে একে ‘গ্রিমপুল’, ‘ফ্রস্টরিফট’ ও ‘এক্সওয়ার্ম’ নামের তিনটি ম্যালওয়্যার কম্পিউটারে সক্রিয় করে। ম্যান্ডিয়েন্ট সতর্ক করে জানিয়েছে, এখন শুধু গ্রাফিক ডিজাইনার নন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর যেকোনো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারে আগ্রহী ব্যক্তিরাই বড় ধরনের সাইবার হামলার ঝুঁকিতে রয়েছেন।
সূত্র: দ্য হ্যাকার নিউজ
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম য লওয় য র ব যবহ র কর এনক র প ট ন ম র একট এআইয় র
এছাড়াও পড়ুন:
সম্পর্কের মতো জীবনঘনিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নিতেও এআইয়ে ঝুঁকছে মানুষ, পরিণতি কী
চলতি বছরের এপ্রিলে কেটি মোরান প্রেমিকের সঙ্গে তাঁর ছয় মাসের সম্পর্কের ইতি টানার সিদ্ধান্ত নেন। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি এমন এক সাহায্যকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান, সচরাচর এমনটা দেখা যায় না। তাঁর কৃতজ্ঞতা পেয়েছে চ্যাটজিপিটি বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) চ্যাটবট।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির ৩৩ বছর বয়সী এই নারী চ্যাটবটটিকে স্নেহের সঙ্গে ‘চ্যাট’ নামে ডাকেন। তিনি বলেন, ‘এটি আমাকে কিছু বিষয়ে গভীরভাবে ভাবতে এবং নিজের সঙ্গে আলাপে বাধ্য করেছে, যা আমি এড়িয়ে যাচ্ছিলাম।’
মোরান তাঁর বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সদস্যদের কাছেও মনের কথা খুলে বলেছিলেন। এরপরও তিনি মনে করেন, চ্যাটজিপিটিই তাঁকে উপলব্ধি করতে সাহায্য করেছিল যে, তাঁর সম্পর্কের মধ্যেই লুকিয়ে আছে তাঁর দুশ্চিন্তার মূল কারণ। চ্যাটবটটির সঙ্গে এক সপ্তাহ কথা বলার পর, তিনি সম্পর্কটি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ের সাম্প্রতিক এক গবেষণা অনুযায়ী, চ্যাটজিপিটিতে দেওয়া বার্তার প্রায় অর্ধেকই ‘জিজ্ঞাসা’ বিভাগে পড়ে। ওপেনএআই এটিকে ‘সিদ্ধান্ত নিতে তথ্য খোঁজা বা যাচাই’ বিভাগে রেখেছে।বিচ্ছেদ, চাকরি পরিবর্তন বা অন্য দেশে চলে যাওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ জীবনঘনিষ্ঠ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মানুষই সাধারণত বন্ধুবান্ধব, পরিবার বা থেরাপিস্টের পরামর্শ নিতে অভ্যস্ত। তবে এখন কিছু মানুষ নিজের অনুভূতির বিষয়ে তাৎক্ষণিক নির্মোহ মূল্যায়ন পেতে এআইয়ের দিকে ঝুঁকছেন।
মোরানের মতো কেউ কেউ কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আত্মবিশ্বাস জোগানোর কৃতিত্ব এআইকে দিচ্ছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়ে বলছেন, এআইয়ের তোষামুদে স্বভাব কখনো কখনো ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার দিকে ঠেলে দিতে পারে।
নিখুঁত নয়
জুলি নাইসকে চ্যাটজিপিটির কাছে মনের কথা খুলে বলতে বাধ্য করেছিল মূলত অবসাদ। যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর প্রযুক্তি শিল্পে তিন বছর কাজ করার পর তিনি দুশ্চিন্তা, বিষণ্নতা এবং ক্রমাগত ক্লান্তিতে ভুগতে শুরু করেন।
গত বছরের শেষের দিকের সেই সময়টি সম্পর্কে জুলি বলেন, ‘অবশেষে আমি এমন একটা পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছি, যেখানে মনে হচ্ছিল— আমাকে কিছু একটা করতেই হবে, পরিবর্তন আনতেই হবে। আমি তখন একটা মানব-খোলস মাত্র ছিলাম (নিষ্প্রাণ)।’
জুলি সিদ্ধান্ত নিলেন— স্থান পরিবর্তন করবেন, বিশেষত ফ্রান্সে চলে যাবেন। আর এ বিষয়ে পরামর্শের জন্য তিনি দ্বারস্থ হন চ্যাটজিপিটির। তিনি তাঁর চাওয়াগুলো (একটি শান্ত শহর, যেখানে ভালো সংখ্যক প্রবাসীর বসবাস থাকবে) এবং তাঁর অপছন্দগুলো (প্যারিসের মতো ব্যস্ত শহর নয়) বিশদভাবে উল্লেখ করলেন। চ্যাটবটটি তাঁকে ফ্রান্সের দক্ষিণের একটি ছোট্ট শহর ইউজেস সুপারিশ করল। সেখানকার বাসিন্দা ৮ হাজার ৩০০ জনের মতো।
জুলি চলতি বছরের এপ্রিলে সেখানে চলে যান। তিনি বলেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণের এই প্রক্রিয়াটি চ্যাটজিপিটির হাতে তুলে দেওয়ায় পুরো ব্যাপারটি নিয়ে তাঁর অতিরিক্ত চাপ অনেক কমে গিয়েছিল। যদিও তিনি এখন বলছেন, সিদ্ধান্তটি নিখুঁত ছিল না। ইউজেসে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে আসা প্রবাসীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আছে ঠিকই। তবে চ্যাটজিপিটি যে তথ্যটি দিতে ব্যর্থ হয়েছিল, সেটি হলো এই প্রবাসীদের বেশিরভাগই অবসরপ্রাপ্ত। আর জুলির বয়স ৪৪ বছর।
তরুণদের মধ্যে জিজ্ঞাসার প্রবণতা বেশি
চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ের সাম্প্রতিক এক গবেষণা অনুযায়ী, চ্যাটজিপিটিতে দেওয়া বার্তার প্রায় অর্ধেকই ‘জিজ্ঞাসা’ বিভাগে পড়ে। ওপেনএআই এটিকে ‘সিদ্ধান্ত নিতে তথ্য খোঁজা বা যাচাই’ বিভাগে রেখেছে। ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যান উল্লেখ করেছেন, এই প্রবণতাটি তরুণ ব্যবহারকারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
গত মে মাসে ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সিকোইয়া ক্যাপিটালের ‘এআই অ্যাসেন্ট’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বয়সে ২০ থেকে ৩০ বছরের কোঠায় থাকা ব্যবহারকারীদের বিষয়ে অল্টম্যান বলেন, ‘তাঁরা চ্যাটজিপিটির কাছে জিজ্ঞাসা না করে আসলেই জীবনঘনিষ্ঠ সিদ্ধান্তগুলো নেন না।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘তাঁদের জীবনে আসা প্রতিটি ব্যক্তি এবং তাঁদের আলাপের সম্পূর্ণ প্রেক্ষাপট এআইয়ের কাছে আছে।’ (এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য ওপেনএআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা সাড়া দেয়নি)।
আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এআইয়ের হাতে ছেড়ে দিলে, সমস্যা সমাধানের আমাদের নিজস্ব দক্ষতা কমে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়অধ্যাপক লিওনার্ড বুসিও, ফস্টার স্কুল অব বিজনেস, ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনতবে এভাবে তরুণেরাই শুধু এআইয়ের শরণাপন্ন হচ্ছেন, ব্যাপারটা তা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের কানসাস সিটির বাসিন্দা মাইক ব্রাউন। ২০২৩ সালে ৫২ বছর বয়সে এসে নিজের ৩৬ বছরের বিবাহিত জীবন নিয়ে কী করা উচিত, সেই পরামর্শের জন্য একটি চ্যাটবটের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। তাঁর বন্ধু, যাজক এবং বিবাহ পরামর্শক সবাই তাঁকে বিচ্ছেদের পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে তিনি বলেন, ওই বছরই চালু হওয়া একটি ইন্টারেকটিভ চ্যাটবট ‘পাই.এআই’-এর সঙ্গে ৩০ মিনিটের কথোপকথনের পরই তিনি তাঁর সিদ্ধান্তের বিষয়ে নিশ্চিত হন।
ব্রাউন বলেন, ‘আমার এই ভাবনাগুলো যাচাই করে নেওয়া দরকার ছিল এবং এই পথে এগোনোই যে সঠিক, সেটির জন্য নিশ্চয়তা পাওয়াটা দরকার ছিল।’ তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে একটি ‘বিশ্বাসযোগ্য’ দৃষ্টিভঙ্গি পেতে তিনি চ্যাটবটটির ওপর আস্থা রেখেছিলেন।
আরও পড়ুনচ্যাটবট কি মানুষের মতো বুদ্ধিমান হতে পারবে২৯ মে ২০২৪কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা
ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের ফস্টার স্কুল অব বিজনেসের অধ্যাপক লিওনার্ড বুসিও কীভাবে মানুষ ও এআইয়ের মধ্যে সহযোগিতায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের যথার্থতা বাড়ানো যায়, তা নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি বুঝতে পারছেন, কেন মানুষ এভাবে এআইয়ের দিকে ঝুঁকছে। এর প্রধান কারণগুলো হলো সার্বক্ষণিক এটি হাতের কাছে পাওয়া যায়, বেশিরভাগ মানুষের চেয়ে অনেক দ্রুত উত্তর দিতে পারে এবং এটিকে তুলনামূলক বেশি নিরপেক্ষ বলেও মনে করা হয়।
বুসিও বলেন, ‘এআই সাধারণত অনেকটাই কূটনৈতিক ভাষায় অভ্যস্ত, পক্ষান্তরে মানুষ বিশেষত ব্যক্তিগত পরামর্শের ক্ষেত্রে নিজের চিন্তাভাবনা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মতামত দিয়ে থাকে।’
তবে বুসিও সতর্ক করে বলেন, বেশিরভাগ এআই মডেলের ‘তোষামোদী’ প্রবণতা থাকায় তারা ব্যবহারকারীকে খুশি করার বিষয়ে যতটা আগ্রহী, ততটা সেরা পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহী নয়। তিনি আরও বলেন, ‘তাদের (চ্যাটবট) এমনভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা ব্যবহারকারীকে খুশি করতে পারে। কারণ, ব্যবহারকারী খুশি হলে, তারা আবার ফিরে আসে।’
কেটি মোরানের ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়েছিল। চ্যাটজিপিটি বন্ধুর মতো করে কথা বলায় তিনি অবাক হয়েছিলেন বলে জানান। চ্যাটবটটি তাঁকে এ রকম বলেছিল, ‘আপনি এমন কাউকে পাওয়ার যোগ্য, যে আপনাকে আশ্বস্ত করবে; এমন কাউকে নয়, যার নীরবতা আপনাকে দুশ্চিন্তার গোলকধাঁধায় ফেলে দেবে।’
আরও পড়ুনকিশোরকে আত্মহত্যায় উৎসাহ দিয়েছে চ্যাটবট, নির্মাতার বিরুদ্ধে মায়ের মামলা২৪ অক্টোবর ২০২৪রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলা ব্যক্তিদের কেউই এআইয়ের ওপর নির্ভর করার জন্য অনুতপ্ত নন বলে জানিয়েছেন। মাইক ব্রাউনের মতে, এআই ‘আবেগী, নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকের’ মতো কাজ করেছে। কেটি মোরানের কাছে এটি ছিল ‘সবচেয়ে কাছের বন্ধুর’ মতো। আর জুলি নাইস বলেন, এআই তাঁকে তিনি আসলে কী চান, তা উপলব্ধি করতে সাহায্য করেছে।
এরপরও, অধ্যাপক বুসিও একটি সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এআইয়ের হাতে ছেড়ে দিলে, সমস্যা সমাধানের আমাদের নিজস্ব দক্ষতা কমে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।’
এই অধ্যাপক বলেন, ‘আমি বলব, একটু পিছিয়ে আসুন এবং নিজেদেরই সিদ্ধান্ত নেওয়ার মধ্যে যে সৌন্দর্য আছে, তা নিয়ে ভাবুন। একই সঙ্গে এটাও নিশ্চিত করার জন্য যে, আমরা নিজেরাও চিন্তাভাবনার কাজটা করছি।’
আরও পড়ুনচ্যাটজিপিটিসহ অন্য এআই চ্যাটবটকে যে ৭ তথ্য দেওয়া যাবে না৩১ অক্টোবর ২০২৫