এনসিপির রাজনীতির বড় এজেন্ডা জুলাই ঘোষণা
Published: 7th, June 2025 GMT
জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত ডিসেম্বরের শেষে এ কথা বলেছিল অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। গত মাসে আন্দোলনের মুখে সরকার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করার কথা বলেছিল। এই সময়সীমা শেষ হবে ৩০ জুন। এখন সরকারের সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দিকে নজর রাখছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
ঈদুল আজহার ছুটির পরে এনসিপির রাজনীতিতে জুলাই ঘোষণাপত্র অন্যতম বড় এজেন্ডা হিসেবে থাকবে বলে দলটির নেতারা জানিয়েছেন। সরকার যাতে ঘোষিত সময়ে ঘোষণাপত্র প্রকাশ করে, সে জন্য চাপ তৈরির চেষ্টা করবে এনসিপি। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের বিচার ও সংস্কারের পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠনের দাবিও এনসিপির নেতাদের বক্তব্য–বিবৃতিতে প্রাধান্য পাবে।
এনসিপির নেতারা বলছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বিনা ভোটের বেআইনি শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিল। এর বিরুদ্ধেই জুলাই গণ–অভ্যুত্থান ঘটেছে। ভবিষ্যতে এই অভ্যুত্থানকে ‘অসাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতা দখল’ হিসেবে দেখিয়ে অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র–জনতা বা এর মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্যদের ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ সাব্যস্ত করে শাস্তি দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেই জায়গা থেকে এই অভ্যুত্থানের একটা স্বীকৃতি দরকার। জুলাই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে সেই কাজটিই করতে হবে।
ঘোষিত সময়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তখন আমরা ভেবে দেখব কী করা যায়। কিন্তু আমরা সরকারের ওপর এ বিষয়ে আস্থা রাখতে চাই।সারোয়ার তুষার, যুগ্ম আহ্বায়ক, এনসিপিঘোষিত সময়ে জুলাই ঘোষণাপত্র এখন এনসিপির প্রধান রাজনৈতিক লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব। এর পাশাপাশি গণপরিষদ নির্বাচন ও মৌলিক সংস্কারও তাঁদের দলের অন্যতম লক্ষ্য বলে জানান তিনি।
দ্বিতীয় প্রতিশ্রুতিজুলাই ঘোষণাপত্রের বিষয়টি প্রথম আলোচনায় আসে গত বছরের ডিসেম্বরের ২৮ ডিসেম্বর। যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি প্ল্যাটফর্মের যৌথ উদ্যোগে এনসিপি গঠিত হয়েছে, সেই দুই প্ল্যাটফর্মের নেতারা সেদিন সন্ধ্যায় ফেসবুকে জানান, ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ করা হবে।
বিষয়টি নিয়ে তখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা তৈরি হয়। হঠাৎ ঘোষণাপত্রের বিষয়টি কেন সামনে আনা হলো, এর প্রভাব কী হতে পারে, তা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন ওঠে। এ ছাড়া জুলাই অভ্যুত্থানকে হঠাৎ ‘বিপ্লব’ আখ্যা দেওয়ার পেছনে কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না, সে বিষয়েও আলোচনা হয়। সবমিলিয়ে পর্দার আড়ালে বিভিন্ন মহল এর বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং তখন জানায়, এ উদ্যোগের সঙ্গে সরকার সম্পৃক্ত নয়। অবশ্য পরে ৩০ ডিসেম্বর রাতে জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ওই রাতে বৈঠক করে ৩১ ডিসেম্বর শহীদ মিনারে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। ওই কর্মসূচি থেকে ঘোষণাপত্র প্রকাশের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়।
১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি ঘোষণাপত্রের দাবিতে লিফলেট বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। সময়সীমা শেষ হওয়ার পরদিন ১৬ জানুয়ারি ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে বৈঠক হয়। তখন বিভিন্ন দলকে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণাপত্রের একটি খসড়াও দেওয়া হয়৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকারের উদ্যোগে কোনো ঘোষণাপত্র প্রকাশিত হয়নি। অবশ্য গত ২৮ ফেব্রুয়ারি এনসিপি গঠনের পর থেকে দলটির নেতাদের ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের’ পরিবর্তে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ কথাটি ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে।
সর্বশেষ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে গত ৮ মে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর আহ্বানে প্রধান উপদেষ্টারর বাসভবন যমুনার সামনে আন্দোলন শুরু হয়। পরে তা শাহবাগে গড়ায়। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন ইসলামপন্থী দল ও সংগঠনের নেতারাও এই আন্দোলনে যোগ দেন।
আরও পড়ুনজুলাই সনদ–ঘোষণাপত্র হলে ঘোষিত সময়ে নির্বাচনে আপত্তি নেই: এনসিপি১২ ঘণ্টা আগেআন্দোলনের দ্বিতীয় দিনে তিনটি দাবি সামনে আনেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ অন্য নেতারা। এগুলো হলো আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে আওয়ামী লীগের দলগত বিচারের বিধান যুক্ত করা এবং জুলাই ঘোষণাপত্র জারি।
সেই আন্দোলনের মুখে ১০ মে রাতে অন্তর্বর্তী সরকার উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভা ডেকে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সরকারের সেই সিদ্ধান্তের পর গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ১৮ কার্যদিবস পার হয়েছে। ৫ জুন থেকে ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হয়েছে। ঈদের টানা ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটি বাদ দিলে ৩০ কার্যদিবস শেষ হওয়ার কথা রয়েছে আগামী ৩০ জুন।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার প্রথম আলোকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়ার কথা বলার পর এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তারা কোনো কথা বলেনি। এবার যেহেতু তারা দ্বিতীয়বার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, এটা অবশ্যই করা উচিত। প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য কোনো চাপে এবার নতি স্বীকার না করাটাই গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে মানানসই হবে। ঘোষিত সময়ের মধ্যেই এটা হওয়া উচিত।
আওয়ামী লীগের বিচারের পাশাপাশি জুলাই ঘোষণাপত্র, জুলাই সনদ তথা সংস্কার—এসব বিষয় নিয়ে ঈদুল আজহার পর মাঠের রাজনীতি চাঙা হবে বলেও মন্তব্য করেন এই নেতা। তিনি বলেন, ‘ঘোষিত সময়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তখন আমরা ভেবে দেখব কী করা যায়। কিন্তু আমরা সরকারের ওপর এ বিষয়ে আস্থা রাখতে চাই।’
আরও পড়ুনসংসদ নির্বাচন আগামী এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো দিন: প্রধান উপদেষ্টা১৩ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ঘ ষ ত সময় র র জন ত র জন ত ক ড স ম বর সরক র র এনস প র ইসল ম আওয় ম র একট
এছাড়াও পড়ুন:
মায়ের কবরে আবেগঘন শুভ: ‘তোমার স্মৃতিতেই বেঁচে আছি, মা’
অভিনেতা আরিফিন শুভর মা–ভক্তির কথা তার অনুরাগীদের অজানা নয়। মা হারানোর ১৬ মাস ১৩ দিন পরও যেন মায়ের শূন্যতা তাড়া করে বেড়াচ্ছে শুভকে। প্রায়ই মাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্মৃতিচারণা করেন।ঈদের দিনেও সেই মাকেই মনে করলেন তিনি। এমন আনন্দের দিনে মাকে স্মরণ করে আবেগে ভেসে গেলেন এই অভিনেতা।
ঈদের দিন মায়ের করব জিয়ারত করার একটি ছবি পোস্ট করেছেন শুভ। সেখানে দেখা যাছে, মায়ের কবরের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি মোনাজাত করছেন।
পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘মা, তোমার মনে আছে? ছোটবেলায় ঈদের দিন নতুন জামা পরে তোমার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেই, তুমি কী বলতে আমাকে?’
আরো পড়ুন:
চট্টগ্রামে ৮ ঘণ্টায় পশুর বর্জ্য অপসারিত: মেয়র
ঈদের শহরে মাংসের হাট
এরপর তিনি লিখেছেন, ‘আজও নতুন জামাটা পরেই তোমার কাছে গিয়েছিলাম। তুমি কি চিনতে পেরেছ, আমার ঈদের জামার কাপড়টা। আমার গলার চেইন খেয়াল করেছিল? তোমার সব কিছুই আমি খুব যত্নে রেখেছি মা, শুধু রাখতে পারলাম না তোমাকে।‘
একদম শেষে গভীর শোক নিয়ে এই অভিনেতা লিখেছেন, ‘আমাদের দেখা হওয়ার দিনে আজ আকাশটাও কাঁদছিল, মা। আমি কিন্তু আজ একটুও কাঁদিনি...তোমার স্মৃতিগুলো নিয়েই আছি, ঈদ মোবারক, মা।’
প্রায় ৮ বছর ধরে শুভর ঢাকার বাসাতেই থাকতেন তার মা খাইরুন নেছা। ২০১৭ সাল থেকে সিজোফ্রেনিয়া রোগে ভুগছিলেন তিনি। এছাড়া, বার্ধক্যজনিত আরও নানান সমস্যা ছিল।
২০২৪ সালের ২৪ জানুয়ারি আরিফিন শুভ তার মাকে হারান।
উল্লেখ্য, ‘নীলচক্র’ সিনেমা দিয়ে অনেক দিন পর ঈদে ফিরেছেন আরিফিন শুভ। ৭ জুন মুক্তি পেয়েছে সিনেমাটি। এখানে তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন মন্দিরা চক্রবর্তী। এছাড়া মুক্তির অপেক্ষায় আছে তার ‘নূর’, ‘লহু’ ও ‘ঠিকানা বাংলাদেশ’। বলিউডের ‘জ্যাজ সিটি’ শিরোনামের একটি ওয়েব সিরিজও মুক্তির অপেক্ষায় আছে এই নায়কের।
ঢাকা/ফিরোজ