ঈদের দিনে ছয় তারকা, এক পতাকার নিচে
Published: 7th, June 2025 GMT
ঈদ মোবারক প্রিয় হামজা, জামাল, তারিক, কাজেম, ফাহামিদুল ও শমিত।
এ ঈদ শুধু উৎসব নয়—এ এক গৌরবের অনুভব। আপনাদের প্রত্যেকের জন্য এ ঈদ হয়ে উঠেছে দেশ, ফুটবল আর স্বপ্নের এক অপরূপ সংমিশ্রণ।
ভাবা যায়! কিছুদিন আগেও আপনারা কেউ ইংল্যান্ডে, কেউ ইতালিতে, কেউ কানাডার নিজেদের জীবনে ব্যস্ত। তখন কে জানত, বাংলাদেশ নামের ছোট্ট একটি দেশের ফুটবল ইতিহাসে আপনারা একদিন লিখে যাবেন নতুন অধ্যায়! হয়তো আপনাদের স্বপ্নে বাংলাদেশ ছিল, হয়তো ছিল না। কিন্তু আজ আপনারা দাঁড়িয়ে আছেন এই দেশের ফুটবলে সবচেয়ে প্রতীক্ষিত লক্ষ্য সামনে রেখে—এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার স্বপ্ন পূরণে।
২০১৩ সালে জামাল ভূঁইয়ার হাত ধরে শুরু। ডেনমার্কে জন্ম, ইউরোপীয় ঘরানায় বেড়ে ওঠা জামাল হয়ে ওঠেন এক পথ প্রদর্শক। এরপর ধাপে ধাপে তারিক কাজী (ফিনল্যান্ড), কাজেম শাহ (কানাডা), হামজা চৌধুরী (ইংল্যান্ড) , ফাহামিদুল ইসলাম (ইতালি) এবং সর্বশেষ শমিত সোম (কানাডা) এসে মিলিত হয়েছেন জাতীয় দলে।
এ যেন ছয় ছয়টি নদী, যার উৎস ভিন্ন হলেও তাঁরা এসে মিশেছে বাংলার ফুটবল নামক মোহনায়।
এই ছয়জনের মধ্যে হামজা নিজেকে এরই মধ্যে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে লেস্টার সিটিতে খেলেছেন। গোটা বিশ্ব ফুটবল তাঁকে চেনে। অন্যরাও ভালো ফুটবলার। শুধু ভালো ফুটবলার বলেই নয়, তাঁরা হয়ে উঠেছেন এক নতুন আশার প্রতীক। ভিন্ন ভিন্ন দেশের লিগে খেলা, উন্নত প্রশিক্ষণ, আধুনিক কোচিংয়ের অভিজ্ঞতা আর ফিটনেস নিয়ে তাঁরা বাংলাদেশ দলে এনে দিয়েছে এক নতুন ছন্দ ও আত্মবিশ্বাস। জাতীয় দলের অনেক দিনের জড়তা, স্থবিরতা ভেঙে এসেছে চঞ্চলতা, সজীবতা। জাতীয় দলের কাছে বেড়েছে সমর্থকদের প্রত্যাশা।
২০২৭ সালের এশিয়ান কাপের মূলপর্বে খেলা—এটিই এখন শুধু স্বপ্ন। তার জন্য দরকার গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া। শুরুটা হয়েছে গত ২৫ মার্চ ভারতের সঙ্গে ড্র দিয়ে তাদেরই মাঠে, তবে সে ম্যাচে অন্তত দুই-তিন গোলে জেতার সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের সামনে। হামজার পারফরম্যান্স নজর কেড়েছে দেশের বাইরেও। ৪ জুন ভুটানের বিপক্ষে ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে ফিফা প্রীতি ম্যাচে জয় এসেছে ২-০ গোলে, যেখানে ইতালিফেরত তরুণ ফাহামিদুল ছিলেন মূল একাদশে।
এখন সামনে ১০ জুন, সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে লড়াই। যে ম্যাচে জয় মানেই ইতিহাসের দিকে আরেক ধাপ এগিয়ে যাওয়া।
আর এই সময়ে এসে হাজির হয়েছে ঈদ। সবকিছুর ঊর্ধ্বে এক সাংস্কৃতিক অনুভূতি, সম্প্রীতির উৎসব। এমন ঈদ আপনারা আগেও উদ্যাপন করেছেন, কিন্তু এই ঈদ একেবারেই আলাদা। এই ঈদ—দেশের মাটিতে, দেশের পতাকা গায়ে জড়িয়ে। দেশের স্বপ্ন বহন করে মাঠের বাইরে একটুখানি প্রশান্তির উৎসবও।
আপনাদের হয়তো কেউ কেউ দেশের মাটিতে প্রথমবার ঈদ করছেন। অনেকের সঙ্গে পরিবার রয়েছে, অনেকের সঙ্গী সতীর্থরাই পরিবার হয়ে উঠেছে। জাতীয় দলের ক্যাম্প এখন ঢাকার একটি পাঁচতারকা হোটেলে। তবু বাইরে ঈদের রোদের উজ্জ্বলতা, ভক্তদের ভালোবাসা, সাংবাদিকদের আগ্রহ—সব মিলিয়ে সেই পুরোনো দেশি ঈদের মতোই একটা অনুভব।
আপনারা ফুটবলার, তাই ঈদের দিনেও ‘কোচের ছক’ ভুলে যাওয়ার সুযোগ নেই। অনুশীলন, ডায়েট, বিশ্রাম—সবই চালু আছে। ঈদ মানে এখানে ছুটি নয়, বরং খানিকটা ভিন্ন অনুভবে ডুবে গিয়ে দায়িত্বকে আরও গভীর করে তোলা।
এত দূর আসার পেছনে অবশ্যই বড় ভূমিকা আপনাদের নিজেদের। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা—আপনারা এই মাটিকে গ্রহণ করেছেন, বাংলাদেশকে ভালোবেসেছেন। আপনারা বাংলা ভাষাও আয়ত্ত করে ফেলেছেন। আপনাদের মুখে এখন ‘আমরা’ শব্দটা অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য লাগে। তিন দিন আগে ঢাকায় পা রাখা শমিত গতকাল জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুশীলনে ফাঁকে বারবারই যখন বলেন, ‘আমরা ম্যাচটা জিতব’, তখন বোঝা যায়—এই ‘আমরা’ শুধু কাগজে-কলমে নয়, হৃদয়ে ধারণ করা এক পরিচয়।
ভবিষ্যৎ কী হবে কেউ জানে না, কিন্তু এই মুহূর্তের বাংলাদেশ ফুটবলে আপনারা প্রতিটি মানুষকে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। আপনাদের দেখে প্রবাসে থাকা আরও তরুণ এখন জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখছে। হয়তো কয়েক বছরের মধ্যে আরও নতুন ‘হামজা’ কিংবা ‘শমিত’কে আবিষ্কার করে ফেলবে বাংলাদেশের ফুটবল। যাঁরা হয়ে উঠবেন লালসবুজকে বহুদূর নিয়ে যাওয়ার বাহক।
এই ঈদ তাই শুধু উৎসব নয়। এটা এক অভিন্নহৃদয় হয়ে ওঠার মুহূর্ত, যেখানে প্রবাস আর দেশ একসূত্রে বাঁধা পড়ে শুধু একটি স্বপ্নে। এক পতাকার নিচে, এক পতাকার জন্য।
১০ জুনের ম্যাচের জন্য রইল নিঃশর্ত সমর্থন। আপনাদের পায়ে যদি থাকে দেশের স্বপ্ন, তবে এই দেশের মানুষ হৃদয়ে রাখবে আপনাদের ভালোবাসা।
ঈদ মোবারক, ছয় তারকা!
ঈদ মোবারক, বাংলাদেশ!
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ত য় দল আপন দ র র ফ টবল র জন য আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
পূজাকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলায় বাহিনী তৎপর : ডিসি
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, আইনসৃঙ্খলা স্বাভাবিক রয়েছে, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে সকল ধর্মমত, সকল সম্প্রদায় তারা একত্রিত হয়েছে।
সকলেই সার্বিক সহয়তা করছে যাতে করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা উৎসব সুন্দর ভাবে পজলন করতে পারে। পূজাকে ঘিরে একটি গোষ্ঠি চাইবে পূজা উৎসব নষ্ট করে দেয়ার জন্য।
সে জন্য আমাদের তৎপরতা রয়েছে। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। তার পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশবাহিহনী সবাই কাজ করছে যাতে করে সুন্দর ভাবে পূজা উৎসব শেষ করতে পারি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ৫নং ঘাটে দূর্গা পূজার প্রতিমা বিসর্জনের স্থান পরিদর্শনকালে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
দূর্গা পূজা বিজয়া দশমী শেষে প্রতিমা বিসর্জনের সময় যেকোনো অপ্রীতিকর দূর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সুন্দর ভাবে প্রতিমা বিসর্জনের স্থান নিরাপদ রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, নারায়ণগঞ্জের ২২৩টি পূজা মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে পূজা উদযাপনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এবং সম্প্রীতি বজায় রেখে বর্তমানে পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে।
এসময় তিনি প্রতিটি মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে ও নির্বিঘ্নে পূজা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাযথ সহযোগিতার নির্দেশনা দেন।
তিনি বলেন, সকলে মিলে সব উৎসব উদযাপন করাই বাংলার ঐতিহ্য ও গৌরব।
এসময় জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।