ঈদ মোবারক প্রিয় হামজা,  জামাল, তারিক, কাজেম, ফাহামিদুল ও শমিত।

এ ঈদ শুধু উৎসব নয়—এ এক গৌরবের অনুভব। আপনাদের প্রত্যেকের জন্য এ ঈদ হয়ে উঠেছে দেশ, ফুটবল আর স্বপ্নের এক অপরূপ সংমিশ্রণ।

ভাবা যায়! কিছুদিন আগেও আপনারা কেউ ইংল্যান্ডে, কেউ ইতালিতে, কেউ কানাডার নিজেদের জীবনে ব্যস্ত। তখন কে জানত, বাংলাদেশ নামের ছোট্ট একটি দেশের ফুটবল ইতিহাসে আপনারা একদিন লিখে যাবেন নতুন অধ্যায়! হয়তো আপনাদের স্বপ্নে বাংলাদেশ ছিল, হয়তো ছিল না। কিন্তু আজ আপনারা দাঁড়িয়ে আছেন এই দেশের ফুটবলে সবচেয়ে প্রতীক্ষিত লক্ষ্য সামনে রেখে—এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার স্বপ্ন পূরণে।

২০১৩ সালে জামাল ভূঁইয়ার হাত ধরে শুরু। ডেনমার্কে জন্ম, ইউরোপীয় ঘরানায় বেড়ে ওঠা জামাল হয়ে ওঠেন এক পথ প্রদর্শক। এরপর ধাপে ধাপে তারিক কাজী (ফিনল্যান্ড), কাজেম শাহ (কানাডা), হামজা চৌধুরী (ইংল্যান্ড) , ফাহামিদুল ইসলাম (ইতালি) এবং সর্বশেষ শমিত সোম (কানাডা) এসে মিলিত হয়েছেন জাতীয় দলে।
এ যেন ছয় ছয়টি নদী, যার উৎস ভিন্ন হলেও তাঁরা এসে মিশেছে বাংলার ফুটবল নামক মোহনায়।

এই ছয়জনের মধ্যে হামজা নিজেকে এরই মধ্যে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে লেস্টার সিটিতে খেলেছেন। গোটা বিশ্ব ফুটবল তাঁকে চেনে। অন্যরাও ভালো ফুটবলার। শুধু ভালো ফুটবলার বলেই নয়, তাঁরা হয়ে উঠেছেন এক নতুন আশার প্রতীক। ভিন্ন ভিন্ন দেশের লিগে খেলা, উন্নত প্রশিক্ষণ, আধুনিক কোচিংয়ের অভিজ্ঞতা আর ফিটনেস নিয়ে তাঁরা বাংলাদেশ দলে এনে দিয়েছে এক নতুন ছন্দ ও আত্মবিশ্বাস। জাতীয় দলের অনেক দিনের জড়তা, স্থবিরতা ভেঙে এসেছে চঞ্চলতা, সজীবতা। জাতীয় দলের কাছে বেড়েছে সমর্থকদের প্রত্যাশা।

২০২৭ সালের এশিয়ান কাপের মূলপর্বে খেলা—এটিই এখন শুধু স্বপ্ন। তার জন্য দরকার গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া। শুরুটা হয়েছে গত ২৫ মার্চ ভারতের সঙ্গে ড্র দিয়ে তাদেরই মাঠে, তবে সে ম্যাচে অন্তত দুই-তিন গোলে জেতার সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের সামনে। হামজার পারফরম্যান্স নজর কেড়েছে দেশের বাইরেও। ৪ জুন ভুটানের বিপক্ষে ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে ফিফা প্রীতি ম্যাচে জয় এসেছে ২-০ গোলে, যেখানে ইতালিফেরত তরুণ ফাহামিদুল ছিলেন মূল একাদশে।
এখন সামনে ১০ জুন, সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে লড়াই। যে ম্যাচে জয় মানেই ইতিহাসের দিকে আরেক ধাপ এগিয়ে যাওয়া।

আর এই সময়ে এসে হাজির হয়েছে ঈদ। সবকিছুর ঊর্ধ্বে এক সাংস্কৃতিক অনুভূতি, সম্প্রীতির উৎসব। এমন ঈদ আপনারা আগেও উদ্‌যাপন করেছেন, কিন্তু এই ঈদ একেবারেই আলাদা। এই ঈদ—দেশের মাটিতে, দেশের পতাকা গায়ে জড়িয়ে। দেশের স্বপ্ন বহন করে মাঠের বাইরে একটুখানি প্রশান্তির উৎসবও।

আপনাদের হয়তো কেউ কেউ দেশের মাটিতে প্রথমবার ঈদ করছেন। অনেকের সঙ্গে পরিবার রয়েছে, অনেকের সঙ্গী সতীর্থরাই পরিবার হয়ে উঠেছে। জাতীয় দলের ক্যাম্প এখন ঢাকার একটি পাঁচতারকা হোটেলে। তবু বাইরে ঈদের রোদের উজ্জ্বলতা, ভক্তদের ভালোবাসা, সাংবাদিকদের আগ্রহ—সব মিলিয়ে সেই পুরোনো দেশি ঈদের মতোই একটা অনুভব।

আপনারা ফুটবলার, তাই ঈদের দিনেও ‘কোচের ছক’ ভুলে যাওয়ার সুযোগ নেই। অনুশীলন, ডায়েট, বিশ্রাম—সবই চালু আছে। ঈদ মানে এখানে ছুটি নয়, বরং খানিকটা ভিন্ন অনুভবে ডুবে গিয়ে দায়িত্বকে আরও গভীর করে তোলা।

এত দূর আসার পেছনে অবশ্যই বড় ভূমিকা আপনাদের নিজেদের। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা—আপনারা এই মাটিকে গ্রহণ করেছেন, বাংলাদেশকে ভালোবেসেছেন। আপনারা বাংলা ভাষাও আয়ত্ত করে ফেলেছেন। আপনাদের মুখে এখন ‘আমরা’  শব্দটা অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য লাগে। তিন দিন আগে ঢাকায় পা রাখা শমিত গতকাল জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুশীলনে ফাঁকে বারবারই  যখন বলেন, ‘আমরা ম্যাচটা জিতব’, তখন বোঝা যায়—এই ‘আমরা’ শুধু কাগজে-কলমে নয়, হৃদয়ে ধারণ করা এক পরিচয়।

ভবিষ্যৎ কী হবে কেউ জানে না, কিন্তু এই মুহূর্তের বাংলাদেশ ফুটবলে আপনারা  প্রতিটি মানুষকে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। আপনাদের দেখে প্রবাসে থাকা আরও তরুণ এখন জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখছে। হয়তো কয়েক বছরের মধ্যে আরও নতুন ‘হামজা’ কিংবা ‘শমিত’কে আবিষ্কার করে ফেলবে বাংলাদেশের ফুটবল। যাঁরা হয়ে উঠবেন লালসবুজকে বহুদূর নিয়ে যাওয়ার বাহক।

এই ঈদ তাই শুধু উৎসব নয়। এটা এক অভিন্নহৃদয় হয়ে ওঠার মুহূর্ত, যেখানে প্রবাস আর দেশ একসূত্রে বাঁধা পড়ে শুধু একটি স্বপ্নে। এক পতাকার নিচে, এক পতাকার জন্য।

১০ জুনের ম্যাচের জন্য রইল নিঃশর্ত সমর্থন। আপনাদের পায়ে যদি থাকে দেশের স্বপ্ন, তবে এই দেশের মানুষ হৃদয়ে রাখবে আপনাদের ভালোবাসা।

ঈদ মোবারক, ছয় তারকা!
ঈদ মোবারক, বাংলাদেশ!

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ত য় দল আপন দ র র ফ টবল র জন য আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

ডাইনির সাজে শাবনূর!

ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা শাবনূর এখন অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। মাঝেমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টের মাধ্যমে নিজের খবর জানান দেন তিনি। এবার সেই পর্দার প্রিয় নায়িকা হাজির হয়েছেন এক ভিন্ন সাজে—ডাইনির রূপে!

প্রতি বছর ৩১ অক্টোবর বিশ্বের নানা প্রান্তে পালিত হয় ঐতিহ্যবাহী হ্যালোইন উৎসব। পশ্চিমা বিশ্বে এটি এক জনপ্রিয় দিন, যেখানে মানুষ নানা ভুতুড়ে সাজে নিজেদের উপস্থাপন করে। যদিও অনেকেই মনে করেন এটি কেবল ভূতের সাজের উৎসব, আসলে মৃত আত্মাদের স্মরণেই হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী এ দিনটি উদযাপিত হয়।

আরো পড়ুন:

পর্দায় ‘মহল্লা’র ভালো-মন্দ

বাবা হওয়ার কোনো বয়স আছে? সত্তরে কেলসির চমক

সেই উৎসবের আমেজে এবার শামিল হয়েছেন শাবনূরও। ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা এক ছবিতে দেখা গেছে, ছেলে আইজানকে সঙ্গে নিয়ে তিনি সেজেছেন ভয়ংকর এক ডাইনির সাজে—চোখের কোণ বেয়ে নেমে আসছে লাল রক্তের রেখা, সঙ্গে এক ‘ভূতুড়ে’ চেহারার চরিত্র।

ছবির ক্যাপশনে শাবনূর লিখেছেন, “আমি সাধারণ মা নই, আমি একজন দুর্দান্ত মা—যিনি একজন ডাইনিও! হ্যালোইনের শুভেচ্ছা, বাচ্চারা!”

পোস্টের শেষে তিনি যোগ করেছেন, “এটা শুধু মজা করার জন্য।”

ভক্তরা কমেন্টে ভরিয়ে দিয়েছেন শুভেচ্ছা ও প্রশংসায়। কেউ লিখেছেন, “শাবনূর মানেই চমক,’ কেউ আবার জানিয়েছেন, ‘হ্যালোইনেও আপনি আমাদের শাবনূরই—ভালোবাসা রইল।”

ঢাকা/রাহাত/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এবারও কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে নেই বাংলাদেশ
  • ডাইনির সাজে শাবনূর!
  • টগি ফান ওয়ার্ল্ডে উদযাপিত হলো হ্যালোইন উৎসব
  • উদ্ভাবন–আনন্দে বিজ্ঞান উৎসব
  • নবীনদের নতুন চিন্তার ঝলক
  • বিজ্ঞান উৎসব উদ্বোধন করল রোবট নাও
  • ‘ফাতেমা রানীর তীর্থোৎসবে’ আলোয় ভাসল গারো পাহাড়
  • টোকিওতে জমেছে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব
  • সন্ধ্যা নদীর দুকূলে উৎসবের ঢেউ, উজিরপুরে নৌকাবাইচে মাতলেন হাজারো মানুষ
  • রাঙামাটি রাজবন বিহারে দুদিনের কঠিন চীবর দানোৎসব শুরু