কুড়িগ্রামের চরের কৃষক আবদুল মমিনের একটি মন্তব্য এ দেশের কৃষিব্যবস্থার করুণ বাস্তবতাকে তুলে ধরে: ‘আমরা কৃষক মানুষ, টাচফোন চালাইবার পারি না। সরকার কোনে বন্যার পূর্বাভাস দেয়, হেইডা তো আমরা দেখপার পাই না।’ প্রথম আলোর প্রতিবেদনে কৃষক আবদুল মমিনের এ বক্তব্য প্রকাশ পেয়েছে।
কৃষক মমিনের মনে লুকিয়ে আছে বাংলাদেশের প্রান্তিক কৃষকদের দুঃখ-বেদনা, সেই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অবহেলা ও অব্যবস্থাপনা। আধুনিক প্রযুক্তির জোয়ারে যখন শহরের মানুষ বন্যার পূর্বাভাস পাচ্ছে মোবাইল অ্যাপে, তখন সীমান্তঘেঁষা চরাঞ্চলের কৃষকেরা নিজের ফসল পানিতে ভাসতে দেখে আক্ষেপ করছেন, ‘জানলে আগেই ফসল তুলতাম।’
কুড়িগ্রামে সম্প্রতি ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে প্রায় ৩০০ হেক্টর ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। এতে চিনাবাদাম, তিল, ভুট্টা, শাকসবজি ও বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অথচ পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো ওয়েবসাইট ও ডিজিটাল মাধ্যমে পূর্বাভাস প্রচার করেছিল। প্রশ্ন হলো এই বার্তা কি আদৌ সেই সব কৃষকের কাছে পৌঁছায়, যাঁরা দিনে রোদে-ধুলায় খেটে খাওয়া মানুষ, যাঁদের ফোন ‘টাচস্ক্রিন’ নয়, যাঁদের নিকটবর্তী বাজারে নেই কোনো তথ্য বোর্ড?
এটি আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি ও কৃষি সেবাদানব্যবস্থার একটি বড় ব্যর্থতা। সরকার যেসব ‘ডিজিটাল কিয়স্ক ড্যাশ বোর্ড’ বসিয়েছে, সেগুলোর কথা অনেক কৃষক জানেনই না। ইউনিয়ন পর্যায়ের দুর্যোগ কমিটি কতটা সক্রিয় বা কার্যকর, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত দিন দিন প্রকট হচ্ছে। আগাম বন্যা, খরার আশঙ্কা কিংবা ঘূর্ণিঝড়—এসবের মোকাবিলা করে যাচ্ছেন কৃষকেরা। অথচ তাঁদের হাতে থাকে না প্রয়োজনীয় তথ্য, থাকে না সময়মতো প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ। তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর উন্নয়ন কৌশল যদি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকেই ছুঁতে না পারে, তবে তার উদ্দেশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।
এই সংকট মোকাবিলায় কিছু জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলো হলো বন্যার পূর্বাভাস প্রচারে স্থানীয়ভিত্তিক প্রচারব্যবস্থা—চরাঞ্চলে মাইকিং, বাজারে অডিও বার্তা, স্কুল-মসজিদভিত্তিক তথ্য প্রচার স্থাপন করতে হবে। প্রান্তিক কৃষকদের জন্য উপযোগী যোগাযোগ কৌশল—শুধু ওয়েবসাইট বা অ্যাপে না গিয়ে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সরাসরি যোগাযোগ করতে হবে। জোরালো নজরদারি ও জবাবদিহিমূলক কৃষিসহায়তা কাঠামো—ক্ষয়ক্ষতির পর অনুদান বা সহায়তার প্রতিশ্রুতি যেন বাস্তব রূপ পায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রান্তিক কৃষকেরা একটিমাত্র আশায় মাঠে নামেন—প্রকৃতির দয়া। কিন্তু রাষ্ট্রের দায়িত্ব তাঁদের এই নির্ভরতাকে তথ্য ও প্রস্তুতির শক্তিতে রূপান্তর করা। কৃষকের কান্না থামাতে হলে কেবল উন্নয়ন প্রকল্প নয়, প্রয়োজন কার্যকর, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানবিক যোগাযোগব্যবস্থা। তথ্য যখন সময়মতো পৌঁছায় না, তখন তার মূল্য দিতে হয় চোখের পানি আর ডুবে যাওয়া ফসল দিয়ে। এই ব্যর্থতা আর কতকাল চলবে?
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
বিয়ে বাড়িতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বরের বাবার মৃত্যু
হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় বিয়ে বাড়ির আলোকসজ্জায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারালেন বরের বাবা বিষু পাল (৬৫)। বুধবার (৩০ জুলাই) উপজেলার গুনই মদনমুরত গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
বানিয়াচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
স্থানীয়রা জানান, বিষু পালের বড় ছেলে বিজয় পালের বিয়ে ঠিক হয় ৩১ জুলাই (বৃহস্পতিবার)। সেই উপলক্ষে বাড়িতে আলোকসজ্জার আয়োজন করা হয়। বাড়ির একটি গ্রিলে অস্থায়ী বিদ্যুৎ লাইনের তার ঝুলছিল। যেখানে লিকেজ ছিল। সকালে অসাবধানতাবশত সেই গ্রিলে হাত দিলে বিষু পাল বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। পরিবারের লোকজন তাকে উদ্দার করে হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আরো পড়ুন:
কুড়িগ্রামে সাপের কামড়ে সাপুড়ের মৃত্যু
কিশোরগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ২ কৃষকের মৃত্যু
বানিয়াচং থানার এসআই সজিব ঘোষ জানান, ঘটনাটি মর্মান্তিক। বিয়ের আনন্দময় পরিবেশ হঠাৎ করে বিষাদে পরিণত হয়েছে। বিকেলে বিষু পালের পরিবারের সদস্যরা বিনা ময়নাতদন্তে লাশ নিয়ে যাওয়ার জন্য হবিগঞ্জ জেলা সদরে গিয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর আবেদন করেছেন। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
ঢাকা/মামুন/বকুল