মায়ের সামনে যমুনার স্রোতে ভেসে গেল স্কুলছাত্র
Published: 9th, June 2025 GMT
পাবনার বেড়া উপজেলায় মা–সহ পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে যমুনা নদীতে গোসলে নেমে এক স্কুলছাত্র নিখোঁজ হয়েছে। আজ সোমবার বেলা দেড়টার দিকে হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নের নতুন পেঁচাকোলা গ্রামের পেঁচাকোলা ঘাটে এ ঘটনা ঘটে। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, স্রোতের টানে ভেসে গেছে সে।
নিখোঁজ উৎসব কর্মকার উপজেলার হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নের নতুন পেঁচাকোলা গ্রামের উত্তম কর্মকারের ছেলে এবং রাজধানীর একটি স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সে ঢাকায় মা-বাবার সঙ্গে থাকত। ঈদের ছুটিতে সম্প্রতি গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল সে।
স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা যায়, আজ বেলা দেড়টার দিকে বাড়ির পাশের যমুনা নদীতে মা–সহ পরিবারের আরও কয়েকজনের সঙ্গে গোসল করতে যায় উৎসব। সে কিছুদিন ধরে সাঁতার শিখেছিল। গোসলের একপর্যায়ে মায়ের চোখের সামনে হঠাৎ সে স্রোতের টানে নদীর কিছুটা ভেতরের দিকে চলে যায়। এ সময় লোকজন তাকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে সে স্রোতের টানে তলিয়ে যায়।
খবর পেয়ে কাশিনাথপুর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল আজ বেলা আড়াইটার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিকেল পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চালায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিস স্টেশনটির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল হান্নান বলেন, নদীতে প্রবল স্রোত আছে। তাই তাঁকে আশপাশে খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা কম। আপাতত উদ্ধার অভিযান স্থগিত হলেও পরে অবস্থা বুঝে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
২০০ বছরের ঐতিহ্য নিয়ে ভোলার বৈষা দধি
ভোলার ভ্যাপসা গরম, দুপুর গড়াতে না গড়াতেই সদর রোডজুড়ে তীব্র যানজট নাগরিক জীবনকে ব্যস্ত করে ফেলে। গরমে হাঁসফাঁস করা মানুষ একটু স্বস্তি খোঁজে। আর সেই স্বস্তি এনে দিতে পারে ভোলার বিখ্যাত বৈষা দধি।
দুপুরের আগেই সব দোকানের হাঁড়ি ফাঁকা হয়ে যায়। মহিষের কাঁচা দুধে পাতানো এই দই ভোলার স্বাদ, ইতিহাস ও গর্বের এক অনন্য বহিঃপ্রকাশ।
ভোলার দোকানগুলোতে প্রতিদিন মণকে মণ বৈষা দধি তৈরি হয়। এই দইয়ের বিশেষত্ব হলো, মহিষের কাঁচা দুধ দিয়ে এটি পাতা হয়। বাজারে সচরাচর যে দই পাওয়া যায়, সেসব তৈরি হয় গরুর দুধ দিয়ে এবং দুধ জ্বালিয়ে গাঢ় করে। কিন্তু ভোলার বৈষা দধি হয় মহিষের কাঁচা দুধ দিয়ে।
জলবেষ্টিত দ্বীপ জেলা ভোলার এক অমূল্য সম্পদ মহিষ। পূর্বে মেঘনা, পশ্চিমে তেঁতুলিয়া, উত্তরে ইলিশা আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর—এই চার নদী ও সমুদ্রবেষ্টিত চরাঞ্চলে ঘুরে বেড়ায় হাজার হাজার মহিষ। সরকারি হিসাবে এই সংখ্যা দেড় লাখের কাছাকাছি, তবে স্থানীয় লোকজনের মতে তা দুই লাখ ছাড়িয়েছে। এই মহিষের দুধই বৈষা দধির প্রাণ।
প্রায় দুই শতাব্দী ধরে এ অঞ্চলের মানুষের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় থাকে এই দই। এ ছাড়া অতিথি আপ্যায়নের অন্যতম প্রধান উপাদান এটি। উৎসব-পার্বণ, বিয়েশাদি কিংবা যেকোনো সামাজিক আয়োজনে বৈষা দধি ছাড়া যেন ভোলার কোনো উৎসব পরিপূর্ণতা পায় না।
মুহাম্মদ শওকাত হোসেনের ‘ভোলা জেলার ইতিহাস’ বই থেকে জানা যায়, দুই শ বছর আগে থেকে ভোলায় চর জাগতে শুরু করে। বসতি হয়, মহিষ পালন শুরু হয়। দুধ সংরক্ষণের উপায় ছিল না বলে স্থানীয় বাসিন্দারা দই বানাতেন। সেখান থেকেই বৈষা দধির যাত্রা শুরু, যা পরে ছড়িয়ে পড়ে পুরো অঞ্চলে।
ভোলার মানুষের খাদ্যসংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে এই দই। এটি ভাতের সঙ্গে খাওয়া হয়, চিড়া-মুড়ির সঙ্গে মিশিয়ে তৈরি হয় মুখরোচক খাবার, আবার গরমের দিনে দই, পানি ও চিনি মিশিয়ে তৈরি করা হয় ঘোল—যা শরীরকে শীতল রাখে। শীতকালে হাঁসের মাংসের সঙ্গে টক দই ও খেজুরের গুড়—ভোলার ভোজনরসিকদের কাছে এক অনন্য স্বাদ। পান্তাভাতের সঙ্গে দই ও খেজুরের গুড় এই অঞ্চলের জনপ্রিয় একটি খাবার।
বর্তমানে প্রতি কেজি বৈষা দই বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। তবে ঈদে দাম বেড়ে যায়। ঈদের আগেই বিক্রেতারা দুধ জমাতে শুরু করেন এবং এ সময়ে প্রতিদিন ৮০০–৯০০ কেজি পর্যন্ত দই বিক্রি হয়।
ভোলার দোকানগুলোতে প্রতিদিন মণকে মণ বৈষা দধি তৈরি হয়