মুজিবনগর সীমান্ত দিয়ে ১২ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
Published: 10th, June 2025 GMT
মেহেরপুরের মুজিবনগর সীমান্ত দিয়ে ৪ শিশুসহ ১২ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। আজ মঙ্গলবার ভোরে উপজেলার আনন্দবাস সীমান্ত এলাকা থেকে তাঁদের আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
বিজিবি জানিয়েছে, আটক ব্যক্তিরা সবাই বাংলাদেশি। তাঁরা হলেন জাহাঙ্গীর আলম (৪২), শাহাজাদি খাতুন (৩০), লাভলী খাতুন (৪২), হাসেন আলী (১৮), জান্নাতি খাতুন (২০), বাবলু হোসেন (২৪), জেসমিন খাতুন (২০), ইয়াসিন হোসেন (২৫) এবং ১৫ বছর বয়সী এক কিশোর, ৩ বছর, ১ বছর ও ১০ দিন বয়সী তিন শিশু। তাঁদের সবার বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়িয়া উপজেলায়।
বিজিবির মুজিবনগর উপজেলা ক্যাম্প জানায়, আজ ভোরে উপজেলার আনন্দবাস গ্রামের সীমান্তে টহল দিচ্ছিল বিজিবির একটি দল। তখন তারা সীমান্তের ৯৭/১ নম্বর পিলারের কাছে সন্দেহভাজন কয়েকজনকে ঘোরাঘুরি করতে দেখে। পরে তাঁদের আটক করে ক্যাম্পে আনা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জানান, তাঁরা সবাই বাংলাদেশি। বিভিন্ন সময় তাঁরা অবৈধভাবে ভারতে গিয়েছিলেন। সেখানকার পুলিশ তাঁদের আটক করে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করে। পরে আজ ভোরে বিএসএফ আনন্দবাস গ্রামের সীমান্তে এনে কাঁটাতারের ফটক খুলে জোর করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়।
আরও পড়ুনমুজিবনগর সীমান্ত দিয়ে ৩০ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ২৭ মে ২০২৫মুজিবনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের পর আটক ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, তাঁদের বাড়ি উত্তরবঙ্গের কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়িয়া থানায়। তাঁদের নামে মুজিবনগর থানায় অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা হয়েছে। তাঁদের প্রত্যেকের জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই-বাছাই করা হবে।
এর আগে গত ২৭ মে মুজিবনগর সীমান্ত দিয়ে ৩০ জনকে, ২০ মে উপজেলার সোনাপুর সীমান্ত দিয়ে ১৯ জন এবং ৪ মে ভবেরপাড়া সীমান্ত দিয়ে ১০ জনকে ঠেলে পাঠায় বিএসএফ।
আরও পড়ুনমুজিবনগর সীমান্ত দিয়ে ১৯ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ২৫ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম জ বনগর স ম ন ত দ য় ব এসএফ উপজ ল র আটক
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতে আটক ১৯ জেলে ৯৭ দিন পর বাড়ি ফিরলেন
ভোলার সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের ১৯ জেলে ৯৭ দিন ভারতে আটক থাকার পর দেশে ফিরেছেন। গত বুধবার রাতে তাঁরা নিজ নিজ বাড়ি ফিরেছেন।
দেশে ফেরত জেলেরা বলছেন, সাগরে মাছ ধরা শেষে ফেরার পথে ঝড়ে দিগ্ভ্রান্ত হয়ে তাঁদের বহনকারী ট্রলার ভারতীয় জলসীমায় ঢুকে যায়। পরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) তাঁদের আটক করে।
দেশে ফেরা জেলেরা হলেন সফিজল ব্যাপারী (মাঝি), শাহে আলম, ছিডু মুন্সি, রাজীব চন্দ্র দাস, আক্তার হোসেন, মিন্টু হাওলাদার, মো. ফরিদ, মো. আলমগীর, মোহাম্মদ ফরিদ, মো. ইউনুছ, মো. বাবুল সরদার, মো. নিরব হোসেন, মো. ইসমাইল, মো. শাহ আলম হাওলাদার, গৌতম চন্দ্র দাস, জাকির হোসেন, সগির সিকদার, মো. টুটুল ও শহীদুল ইসলাম। তাঁরা সবাই ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
জেলে ও স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সূত্রে জানা গেছে, ৫ সেপ্টেম্বর শান্তির হাট ঘাট এলাকা থেকে একটি মাছ ধরার নৌকা নিয়ে বঙ্গোপসাগরে যান ওই জেলেরা। মাছ ধরা শেষে ফেরার পথে ঝড়ে দিক হারিয়ে তাঁরা ভারতীয় জলসীমায় প্রবেশ করেন। বিএসএফ তাঁদের আটক করে সুন্দরবনের কোস্টাল থানায় হস্তান্তর করে। সেখান থেকে তাঁদের আলীপুর সদর ও পরে বারাইপুর জেলে পাঠানো হয়। দুই দেশের সরকারের সিদ্ধান্তে বন্দিবিনিময়ের অংশ হিসেবে তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়। গত মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মেরিটাইম বাউন্ডারিতে হস্তান্তরের পর পশ্চিমাঞ্চলীয় কোস্টগার্ডের সহায়তায় বুধবার সন্ধ্যায় মোংলা বন্দরে পৌঁছান তাঁরা। পরে দিবাগত রাত দুইটার দিকে নিজ নিজ বাড়িতে ফেরেন।
জেলেরা ফিরলেও মাছ ধরার নৌকাটি ফেরত দেওয়া হয়নি দাবি করেন সফিজল মাঝির ছেলে হোসাইন স্বাধীন। তিনি বলেন, ‘৩০ লাখ টাকা মূল্যের ফিশিং বোটটি ফেরত পাইনি। নৌকাটি না পেলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাব।’
আরও পড়ুনবঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ট্রলার বিকল, ভোলার ১৯ জেলে ভারতের কারাগারে২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫জেলে মো. শাহে আলম বলেন, সাগর থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকার মাছ পাওয়া গিয়েছিল। ভারতীয় প্রশাসন মাছসহ ফিশিং বোট নিয়ে গেছে।
ভারতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ওই জেলেদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালিয়েছেন বলে দাবি করেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী ও জেলে সমিতির ভোলা সদর উপজেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল মামুন শেখ। তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে যেন আর কোনো জেলেকে এভাবে নির্যাতন না করা হয়, সেই অনুরোধ জানাই।’
আরও পড়ুনসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ১২ দিন ধরে ১৫ জেলে নিখোঁজ২২ নভেম্বর ২০২৫আল মামুন শেখ বলেন, জেলেরা আটক হওয়ার খবর পেয়ে সংশ্লিষ্ট পরিবারের কাছ থেকে সব কাগজপত্র সংগ্রহ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রশাসন, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর ফলে দীর্ঘ ৯৭ দিন পর কোস্টগার্ডের সহায়তায় ওই জেলেরা দেশে ফিরেছেন।
কোস্টগার্ড সূত্রে জানা যায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার মাধ্যমে বন্দিবিনিময়ের সিদ্ধান্ত হলে বাংলাদেশ ৪৭ ভারতীয় জেলেকে ও ভারত ৩২ বাংলাদেশি জেলেকে ফেরত দেয়।
ভোলা সদর ইউএনও মো. আরিফুজ্জামান বলেন, সাধারণত এ ধরনের ঘটনায় জেলেদের ফিরিয়ে আনতে দীর্ঘ সময় লাগে। এ ক্ষেত্রে ৯৭ দিনের মাথায় তাঁরা ফিরেছেন। আটক থাকা অবস্থায় তাঁদের পরিবারগুলোকে খাদ্যসহায়তা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
আরও পড়ুনভোলায় সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ ১৩ জেলে ভারতের কারাগারে বন্দী০১ ডিসেম্বর ২০২৫