স্ত্রীর সামনে মারধরের শিকার হওয়ায় প্রতিবেশীকে খুন, থানায় আসামির আত্মসমর্পণ
Published: 11th, June 2025 GMT
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় স্ত্রীর সামনে মারধরের শিকার হওয়ায় প্রতিশোধ নিতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক শাহীন আহমদকে (২৬) হত্যা করেন বলে স্বীকার করেছেন আসামি আবদুল হান্নান (৩৫)। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বড়লেখা থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণের পর পুলিশকে এ তথ্য জানান তিনি। ওই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ বুধবার তাঁকে আদালতে পাঠানোর কথা আছে।
গ্রেপ্তার আবদুল হান্নান বড়লেখা উপজেলার গঙ্গারজল এলাকার বাসিন্দা। তবে তিনি দীর্ঘদিন ধরে কুলাউড়া পৌর শহরের দক্ষিণ জয়পাশা এলাকায় বাসা ভাড়া করে থাকতেন। তিনি সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালাতেন। হত্যাকাণ্ডের শিকার শাহীন আহমদও একই এলাকার বাসিন্দা ও হান্নানের প্রতিবেশী ছিলেন। ৩০ মে কুলাউড়া শহরের দক্ষিণ বাজার এলাকায় খুন হন তিনি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কুলাউড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এনামুল হক আজ বুধবার সকালে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পর থেকে হান্নান বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলের দিকে বড়লেখা থানায় আত্মসমর্পণ করেন তিনি। তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
হান্নানকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে এসআই এনামুল জানান, পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়াঝাঁটি করতেন হান্নান। বিভিন্ন সময় তাঁকে এ কাজে বাধা দিতেন প্রতিবেশী শাহীন। ২৯ মে আবার ঝগড়াঝাঁটি করতে দেখে শাহীন ক্ষিপ্ত হয়ে স্ত্রীর সামনেই হান্নানকে মারধর করেন। এ কারণে প্রতিশোধ নিতে পরদিন (৩০ মে) শাহীনকে ছুরিকাঘাত করেন হান্নান। তাঁকে মৌলভীবাজারের আদালতে পাঠানো হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ৩০ মে কুলাউড়া শহরের দক্ষিণ বাজার এলাকায় কাঁচাবাজারে কেনাকাটা করতে যান শাহীন। এ সময় হঠাৎ হান্নান সেখানে গিয়ে শাহিনের তলপেটে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে থানায় নেয় এবং সিসিটিভি ফুটেজ দেখে হান্নানকে শনাক্ত করে। নিহত ব্যক্তির পরিবারের করা মামলায় হান্নানকে আসামি করা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আসামি না হয়েও স্বেচ্ছায় কারাগারে
তাঁর নামে পুলিশের খাতায় কোনো মামলা নেই। পুলিশও তাঁকে ধরেনি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের একটি মামলার আসামি সেজে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। এরপর সাত দিন ধরে কারাগারে আছেন মো. রাকিব নামের এক যুবক। কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে স্বেচ্ছায় প্রকৃত আসামি মো. সুমনের হয়ে জেল খাটতে আসেন রাকিব।
এ যেন জনপ্রিয় বাংলা চলচ্চিত্র ‘আয়নাবাজি’-এর কাহিনি। এই চলচ্চিত্রের মূল চরিত্র শরাফত করিম আয়না (চঞ্চল চৌধুরী) জাহাজে বাবুর্চির কাজ করেন। মাঝেমধ্যে দুই-তিন মাসের জন্য হাওয়া হয়ে যান তিনি। কোথায় যান? আসলে এ সময় তিনি সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের হয়ে টাকার বিনিময়ে জেল খাটেন।
আদালত সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৩১ আগস্ট নগরের আকবর শাহ থানার কৈবল্যধাম এলাকায় একটি পিকআপ ভ্যানে অভিযান চালিয়ে ৪০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে র্যাব। যার মূল্য ৪ লাখ টাকা। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় গাড়িচালক রাহাত ইসলামকে। পালিয়ে যান চালকের সহকারী (হেলপার) মো. সুমন। এ ঘটনায় র্যাব কর্মকর্তা বাদী হয়ে আকবর শাহ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। তদন্ত শেষে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এতে রাহাত ইসলাম ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়।
আদালত পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে পলাতক আসামি সুমনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরই মধ্যে সুমনের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। বিষয়টি জানতে পেরে সুমন নিজেকে কারামুক্ত রাখতে তাঁর পরিবর্তে নোয়াখালীর রাকিবকে আদালতে আত্মসমর্পণ করায় ১ জুলাই। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তফা শুনানি শেষে আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। সুমনের হয়ে রাকিব আত্মসমর্পণের সময় তাঁর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ওয়াহিদ মুরাদ। তাঁর মুঠোফোনটি বন্ধ থাকায় একাধিকবার চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুনচট্টগ্রামে ‘আয়নাবাজি’, ধরা পড়েছে আঙুলের ছাপে০৮ নভেম্বর ২০২৩আদালতে একের পরিবর্তে আরেকজন আত্মসমর্পণের বিষয়টি ধরা না পড়লেও কারাগারে গিয়ে ধরা পড়ে। জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজে (তথ্যভান্ডার) ভোটারদের আঙুলের ছাপ সংরক্ষিত আছে। এ পদ্ধতিকে বলা হয় ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেনটিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদ্ধতি ব্যবহার শুরু করে চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে আঙুলের ছাপে ধরা পড়েছে অনেক বন্দীর আসল পরিচয়। এসব ঘটনায় মামলাও হয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি মাসের জুলাই পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করে জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আসা ১৬ জনের আঙুলের ছাপে শনাক্ত করা হয়।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আদালত থেকে কারাগারে আসা প্রত্যেক নতুন আসামির আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। সেখানে আসামির জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা আসল পরিচয় উঠে আসে। ইকবাল হোসেন আরও বলেন, ‘সুমনের হয়ে কারাগারে আসা রাকিব স্বীকার করেছেন তিনি মাদক মামলার প্রকৃত আসামি নন। ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি সুমন সেজেছেন। তাঁকে বলা হয়েছে, দ্রুত কারাগার থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হবে। তাই তিনি রাজি হয়েছেন। বিষয়টি চিঠি দিয়ে আদালতকে জানানো হয়েছে।’
১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি সুমন সেজেছেন। তাঁকে বলা হয়েছে, দ্রুত কারাগার থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হবে। তাই তিনি রাজি হয়েছেন। বিষয়টি চিঠি দিয়ে আদালতকে জানানো হয়েছে।মো. ইকবাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারকারাগার থেকে চিঠি পাওয়ার পর মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মিজানুর রহমান। একই সঙ্গে আসামিকে আত্মসমর্পণকারী আইনজীবী ওয়াহিদ মুরাদের কাছে কারণ ব্যাখ্যা চেয়েছেন আদালত। বিষয়টি নিশ্চিত করেন চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির আবুল কালাম আজাদ।
আদালতের প্রসিকিউশন শাখার আকবর শাহ থানার জিআরও সাইদুর রহমান বাদী হয়ে গতকাল রাতে নগরের কোতোয়ালি থানায় প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করেছেন। মামলায় মো. রাকিব ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. আবদুস সাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, সত্যায়িত জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া কোনো আসামির ওকালতনামা না দিতে বলা আছে। কেউ যাতে প্রতারণার সুযোগ না পান, আইনজীবীদের সে বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত।