‘উৎসব’-এ আমরা কয়েকজন শুধু যোদ্ধা হিসেবে ছিলাম: অপি করিম
Published: 11th, June 2025 GMT
দেশীয় শোবিজের সু-অভিনেত্রীদের একজন অপি করিম। সর্বশেষ যৌথ প্রযোজনার ‘মায়ার জঞ্জাল’ ছবিতে দেখা গিয়েছিল তাকে। দুই বছর পর নতুন সিনেমায় নিয়ে হাজির হয়েছেন এই অভিনেত্রী। সিনেমার নাম ‘উৎসব’। তানিম নূর পরিচালিত সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে এবার ঈদে।
অপি করিম বলেন, ‘একটা সময় শিক্ষকতার কারণে অভিনয়ে কম সময় দিয়েছি। এখন শিক্ষকতা ফুল টাইম করছি না। আমার নিজস্ব একটা ফার্ম আছে সেখানে সময় দেই। ফলে অভিনয়ে বেশি সময় দিতে পারছি। একেক সময় আপনার জীবন বা মনই বলে দেবে কোনটা আপনার করা বেশি জরুরী। সেই জায়গা থেকে এখন অভিনয়ে বেশি মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টার করছি।’
শুধু অপি করিম নন, জাহিদ হাসান, আফসানা মিমি, জয়া আহসানও আছেন ‘উৎসব’ ছবিতে। আরও আছেন তারিক আনাম খান, চঞ্চল চৌধুরী, আজাদ আবুল কালামের মতো অভিনেতারাও। অপি করিম বেশ আনন্দিত এমন একটি ছবির মধ্যদিয়ে ফিরতে পেরে।
মঙ্গলবার সিনেমার প্রচারে গিয়ে অপি করিম বললেন, ‘‘উৎসব’ সিনেমাতে নির্মাতা তানিম নূর যেভাবে দর্শকদের সঙ্গে সংযোগ করতে চাচ্ছিলেন সেটা করতে পেরেছেন। এখানে আমরা কয়েকজন শুধু যোদ্ধা বা সহযোদ্ধা হিসেবে ছিলাম। এখানে জাহিদ ভাইয়ের কথা না বললেই না। কারণ, আমার মনে হয়, সিনেমার গল্পে তিনি ৯০ দশক থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত আমাদের সবাইকে টেনে নিয়ে এসেছেন। বলতে গেলে তিনি আমাদের কানেকশন হাফ।”
নিজের অভিনয় প্রসঙ্গে অপি করিম বলেন, ‘এবার ঈদে যে কয়েকটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে সবগুলোই ভিন্ন ভিন্ন জনরার। তবে বিভিন্ন প্রজন্মের দর্শক আমাদের সিনেমাটি পছন্দ করছেন। আমি এমনিতেই কাজ কম করি। সেই জায়গা থেকে নিজেকে নিয়ে কিছুটা সংসয়েও ছিলাম। দির্ঘদিন অভিনয়ে না থাকায় মনে হয়েছে; দর্শক আমাকে ভুলে গেলো না তো? সিনেমা মুক্তির পর সেটা কেটে গেছে। কারণ, দর্শক আমাকে মনে রেখেছে। আমার জায়গা সেখানেই আছে। এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। একটা কাজ যখন দর্শকের ভালো লাগে তখন আরও কাজ করার আগ্রহ জাগে।’
অপি করিম বলেন, ‘সিনেমা অনেক ধরণ আছে। একেকজন মানুষের একেক রকম সিনেমা পছন্দ। শুধু সিনেমা নয়, দেশের নাটক, ওটিটি কন্টেন্টসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে অনেক ভালো কাজ হচ্ছে। আমি চাই দর্শক ভালো কন্টেন্টগুলো দেখুক। কারণ, আমরা অনেক কষ্ট করে কাজ করি। দর্শক যদি সেগুলো দেখেন তাহলেই আমাদের কষ্ট সার্থক হবে।’
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
টাঙ্গাইলে ‘তাণ্ডব’ প্রদর্শনীতে স্থানীয় 'আলেম সমাজের’ বাধা
দেশে ঈদের মত বড় দুই উৎসবে মানুষের বিনোদনের অনত্যতম অনুসঙ্গ হয়ে উঠেছে প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে সিনেমা দেখা। বিগত কয়েক বছর ধরে ঈদে সিনেমা দেখার বিষয়টি যেনো আরও ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। মাল্টিপ্লেক্স ও সিঙ্গেল স্ক্রিনে উপচে পড়ছে দর্শক। তবে দেশের সব জেলায় হল না থাকায় বিকল্প পদ্ধতিতে সিনেমা প্রদর্শনীতে এগিয়ে আসেন অনেক উদ্যোক্তা।
স্থানীয় অডিটোরিয়াম ভাড়া করে তারা উৎসবে মুক্তি পাওয়া সিনেমাগুলো নির্ধারিত ফি নিয়ে তা প্রদর্শনা করান। এই প্রক্রিয়াতে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার আউলিয়াবাদ অডিটোরিয়ামে 'তাণ্ডব' সিনেমা প্রদর্শনীর আয়োজক জাজ মাল্টিমিডিয়ার হেড অব মার্কেটিং কামরুজ্জামান সাইফুল। কিন্তু স্থানীয় 'আলেম সমাজে'র আপত্তির মুখে তা বন্ধ হয়ে যায় বলে অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে সেখানে সিনেমা প্রদর্শনীর এক মাসের অনুমতি থাকলেও আয়োজকরা বৃহস্পতিবারের মধ্যেই শো বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কামরুজ্জামান সাইফুল জানান, সব জায়গা থেকে সিনেমা প্রদর্শনের অনুমতি নেয়া ছিল। সার্টিফিকেশন বোর্ডের ইউিনভার্সেল রেটেড সার্টিফিকেট সবই ছিল। তাও সিনেমা প্রদর্শনীতে বাধা।
আমি হাত জোড় করে মাফ চেয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময়ের আর্জি জানালাম। আলেম সমাজ অনড়। আমাকে কালই চলে যেতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত আমি না চলে যাবো ততক্ষণ পর্যন্ত তারা গোনাহগার হতে থাকবে, এলাকায় গজব পড়তে থাকবে। এতবড় পাপের বোঝা নিয়ে তারা হাসরের ময়দানে দাঁড়াতে পারবেনা।
গতকাল কামরুজ্জামান সাইফুল টাঙ্গাইল জেলা পরিষদ থেকে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা ভাড়ায় এবং পাঁচ দিনের ভাড়া অগ্রিম দিয়ে ঈদের দিন থেকে এক মাসের জন্য সিনেমাটি প্রদর্শনের অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। বাধার কারণে আজকের মধ্যেই প্রদর্শনী গুটিয়ে নিতে হচ্ছে। ঈদের আগের দিন থেকেই স্থানীয় মসজিদ ও মাদ্রাসা থেকে মাইকে 'তাণ্ডব' প্রদর্শনী বন্ধ করতে বলা হয় এবং পোস্টার-ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হয়। এরপর একটি মিছিলও বের করা হয়, যা স্থানীয়ভাবে ভাইরাল হলে জনমনে আতঙ্ক তৈরি হয়। ঈদের দিন দর্শক না আসায় মাত্র ২০-২৫ জন দর্শক নিয়েই সন্ধ্যার শো চালু রাখেন তিনি।
সাইফুল বলেন, 'পরদিন সিনেমা হল বন্ধে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর আবেদন করা হয়। ঈদের আগেই থানায় পুলিশি সহায়তা চেয়ে আবেদন করেছিলাম। তবে থানা থেকে কোনো ধরনের সহায়তা করা হয়নি। ঈদের ছুটিতে টাঙ্গাইল ডিএসবি এবং এসপি অফিসে যোগাযোগ করেও সাহায্য না পেয়ে ব্যর্থ হতে হয়। শত বাধা সত্ত্বেও একক ইচ্ছেতে ঈদের পরের দিন অডিটোরিয়াম চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিই। সেদিন মিছিল না হলেও তাদের সমাবেশ ঘটে।'
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় (ইউনিয়ন শাখা) ইমাম পরিষদের সহ-সভাপতি মাদ্রাসা শিক্ষক হযরত আলী গণমাধ্যমকে বলেন, 'এলাকায় বেশ কয়েকটি ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অশ্লীলতা ছড়াতে পারে এমন আশঙ্কায় আলেম সমাজসহ স্থানীয়রা এই সিনেমা প্রদর্শনের বিপক্ষে।'
তিনি বলেন, 'আয়োজক যিনি তিনি আমাদের কাছে এসেছিলেন, আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সিনেমা চালানোর কথা বলেছিলেন। কিন্তু আমরা তো তাকে এটা চালাতে বলতে পারি না।'
এদিকে আলেম সমাজের বাধা প্রধানের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিষয়টি সামনে আসার পরই সোস্যাল মাধ্যমে প্রতিবাদ করছেন সিনেমাপ্রেমীরা। তবে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ দেখা যায়নি কোথাও।
এ ঘটনায় কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. খায়রুল ইসলাম ঈদের ছুটিতে আছেন জানিয়ে বলেন, 'দেশে চলচ্চিত্র প্রদর্শন নিষিদ্ধ নয়। সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টির একটি শান্তিপূর্ণ সুরাহা করা হবে।'