ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হামলা আরও তীব্র হয়েছে। এখন উপত্যকায় হামলার ধরনে কিছুটা পরিবর্তন এনেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। তারা ত্রাণ নিতে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে কাউকে সন্দেহ হলেই নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করছে। পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে টার্গেট করে চলছে বিমান হামলা। গাজার একাধিক স্থানে হামাসের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের খবরও পাওয়া যাচ্ছে। 

গতকাল বুধবার গাজায় এক দিনে ইসরায়েলের হামলায় আরও ১২০ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৫৭ জন ত্রাণপ্রত্যাশীও রয়েছেন। তারা ত্রাণ নিতে এসে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এক দিনে আহত হয়েছেন আরও ৪৭৪ জন। আলজাজিরা জানায়, খাবারকে অস্ত্র বানিয়ে এ পর্যন্ত ত্রাণ কেন্দ্রগুলোতে ২২৪ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে আইডিএফ। আহত হয়েছেন ১ হাজার ৮৫৮ জন। 

গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৫৫ হাজার ১০৪ জন; আহতের সংখ্যা ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৯৪ জন। হাতহতের অধিকাংশই নারী ও শিশু। হাসপাতালগুলো হামলার কারণে গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। এগুলোতে নেই পর্যাপ্ত ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী। 

অপরদিকে ইসরায়েলের আরেক সেনা নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে হামাসের সশস্ত্র শাখা কাশেম ব্রিগেড। খান ইউনিসের পাশে আবাসান আল-কাবিরা এলাকায় ওই সেনা নিহত হয়। 

এ অবস্থায় গাজায় ত্রাণ সরবরাহ নিয়ে বিশৃঙ্খলা কাটছে না। উপত্যকার অনেক এলাকায় এখনও কোনো ত্রাণ পৌঁছায়নি। এ ছাড়া পর্যাপ্ত সংখ্যক ত্রাণের ট্রাক প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। হামাস বলছে, গাজায় ফিলিস্তিনিদের অভুক্ত রেখে হত্যা করতেই ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ ইসরায়েল ত্রাণ সরবরাহ কেন্দ্রগুলোতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে।

একটি গোষ্ঠীকে অস্ত্র দিচ্ছে ইসরায়েল

ইসরায়েলের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী আভিগডর লিবারম্যানের একটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ভূমিকম্প শুরু হয়েছে। গত সপ্তাহে তিনি জানান, ইসরায়েলের সরকার অপরাধী ও দুর্বৃত্তদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে একটি গোষ্ঠীকে প্রস্তুত করছে, যারা গাজায় ইসলামিক স্টেট বা আইএস নামে পরিচিত। এটা করা হচ্ছে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নির্দেশনায়। এরই মধ্যে নেতানিয়াহুও বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন, গাজায় হামাসকে মোকাবিলায় তারা পৃথক সশস্ত্র সংগঠন তৈরি করছেন। তিনি এ উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেন।

গত মঙ্গলবার দ্য নিউ আরবের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তেল আবিবের সরবরাহ করা অস্ত্রে তৈরি সশস্ত্র গ্রুপটি হামাসের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠবে বলে মনে করছে নেতানিয়াহু সরকার। তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, ৩০০ অপ্রশিক্ষিত চোর, মাদক কারবারি, অপরাধী ও প্রমাণিত খুনি আনুমানিক ৩০ হাজার সদস্যের হামাস বাহিনীকে পরাজিত করতে পারবে বলে তারা মনে করছেন না। কার্যত তাদের মূল কাজ হবে ইসরায়েলের গণহত্যা, ফিলিস্তিনিদের অভুক্ত রাখা ও জাতিগত নিধনকে এগিয়ে নেওয়া।
সম্প্রতি গাজায় একটি ত্রাণ সরবরাহ কেন্দ্রের পাশে একদল সশস্ত্র গোষ্ঠী ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি ছোড়ে। এর পরই জোরালোভাবে সশস্ত্র একটি সংগঠনের নাম সামনে আসে। ফিলিস্তিনিরা বলছেন, তারা অতীতে এ ধরনের কোনো সংগঠনের হামলার শিকার হননি। ইসরায়েলের মদদে গঠিত সংগঠনটির প্রধান করা হয়েছে ইয়াসের আবু শাবাব নামের এক ব্যক্তিকে। মাদকসংশ্লিষ্টতার জেরে শাবাব দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছেন।

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অতীতেও কট্টর ইসলামপন্থি গ্রুপ– বিশেষ করে আইএসকে অস্ত্র দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। গাজার ঘটনা সেই সন্দেহের ওপর অধিকতর আলো ফেলল। গাজার আবু শাবাব গ্রুপের সঙ্গে হামাসের অতীতের দ্বন্দ্ব রয়েছে। হামাস একবার তাদের ওপর হামলাও চালায়। বর্তমানে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফায় তারা অবস্থান করছে। ইসরায়েল তাদের নিরাপত্তা, অস্ত্র ও অর্থ সরবরাহ করে। একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, গাড়ির ওপরে গ্রুপের সদস্য মেশিনগান হাতে চলাচল করছেন। উপত্যকায় শুধু হামাস সদস্যদের এভাবে চলাচল করতে দেখা যায়।

ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে রাফায় বেশ কিছু এলাকা খালি করেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। ওই এলাকায় নিরাপদে থাকছে আবু শাবাব গ্রুপের সদস্যরা। তারা সব ধরনের লজিস্টিক সহায়তা পাচ্ছে। পাশাপাশি ইসরায়েলের প্রবেশের সুযোগও আছে তাদের। একজন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক গ্রুপটির সদস্যদের ইসরায়েলে প্রবেশের বিষয়টি জানান। গত জানুয়ারিতে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যে যুদ্ধবিরতি হয়, তখন তাদের গাজায় দেখা যায়নি। 

গাজায় আবু শাবাব গোষ্ঠীর খাদ্যগুদাম রয়েছে, যেখানে তারা লুটের ত্রাণ সংরক্ষণ করে। কার্যত তারা ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর একটি সশস্ত্র শাখা হিসেবে কাজ করছে। 

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য মুসলিম দেশগুলোকে ভূমি ছাড়তে বললেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করতে চাইলে মুসলিম দেশগুলোর কিছু পরিমাণ করে ভূমি ছেড়ে দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন ইসরায়েলে কর্মরত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবিই। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।

হুকাবিইর দাবি, ইসরায়েল নিয়ন্ত্রিত ভূমির চেয়ে ৬৪৪ গুণ বেশি ভূমি রয়েছে মুসলিম দেশগুলোর কাছে। তাদের যদি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র নিয়ে এতই খায়েশ থাকে, তবে কারও সামনে এসে দায়িত্ব নেওয়া উচিত।

ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের দীর্ঘদিনের সংকট নিরসনে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি শুধু আকাঙ্ক্ষিত একটি লক্ষ্য। যদিও এই সমাধান প্রস্তাবটি দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থন পেয়ে এসেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক প্রশাসনও এটিকে সমর্থন করেছে। এই প্রস্তাব অনুযায়ী, পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকায় একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠিত হবে, যার রাজধানী হবে পূর্ব জেরুজালেম। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন পাশাপাশি টিকে থাকবে।

সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গকে দেওয়া পৃথক এক সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেন, স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র আর চেষ্টা করছে না। অবশ্য তাঁর এই বক্তব্যে সরাসরি সায় দেয়নি ওয়াশিংটন। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেছেন, রাষ্ট্রদূত হুকাবিইর কথা তাঁর একান্তই নিজস্ব মত। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতি নির্ধারণের অধিকার একমাত্র প্রেসিডেন্টের হাতেই রয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র স সরবর হ ক র সদস য সশস ত র র ওপর স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

২০২৬ সালে বিশ্ববাজারে জিনিসপত্রের দাম আরও ৭% কমতে পারে, বাংলাদেশে কেন কমছে না

চলতি বছরের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে দাম কমার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে, চলতি বছরে সামগ্রিকভাবে পণ্যমূল্য ৭ শতাংশ কমবে। আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালে পণ্যমূল্য আরও ৭ শতাংশ কমবে। এ দাম হবে ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।

কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব নেই। দেশে মূল্যস্ফীতির হার এখনো ৮ শতাংশের ঘরে। যদিও একসময় তা দুই অঙ্ক ছাড়িয়ে গিয়েছিল। গত সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ হয়েছে। দেশের মানুষকে এখনো বাড়তি দামেই পণ্য ও সেবা কিনতে হচ্ছে। আগামী বছর নিত্যপণ্যের দাম কমবে কি না, সেই নিশ্চয়তাও নেই। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমলেও দেশে এর প্রভাব কম।

বিশ্বব্যাংকের ‘কমোডিটি মার্কেটস আউটলুক অক্টোবর ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ২০২৫ সালের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। যার মূল কারণ হিসেবে তারা চিহ্নিত করেছে জ্বালানির দাম কমে যাওয়া। সেই সঙ্গে আরও কিছু কারণ চিহ্নিত করেছে তারা। সেগুলো হলো চীনে তেলের চাহিদা বৃদ্ধির গতি কমে যাওয়া এবং বিশ্ববাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় তেলের দামে বড় ধরনের পতন ঘটা। খাদ্যপণ্যের দাম বছরের শুরু থেকে ধীরে ধীরে কমতে থাকে, কিন্তু বছরের প্রথমার্ধে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে পানীয় পণ্যের দাম হঠাৎ অনেকটা বেড়ে যায়। এ ছাড়া বছরের দ্বিতীয়ার্ধে সোনার দাম রেকর্ড উচ্চতায় ওঠে। মূলত রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে মানুষ সোনার দিকে ছুটেছেন।

বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্য নির্ধারণে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে জ্বালানি তেলের দাম। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে জ্বালানির দাম আগের বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে আরও ১০ শতাংশ কমবে। ২০২৭ সালে তা আবার প্রায় ৬ শতাংশ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস ২০২৬ সালে কৃষিপণ্য, খাদ্য ও কাঁচামালের দাম কমবে। চলতি বছরেও এসব পণ্যের দাম কমেছে।

জ্বালানি তেল

বিশ্বব্যাংকের ২০২৬ সালের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা বাড়ায় গ্যাসের দাম কিছুটা বাড়লেও তেলের দাম কমে যাবে এবং সেই প্রভাবকে ছাপিয়ে যাবে। ২০২৫ সালে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম হতে পারে ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৬৮ ডলার; ২০২৪ সালের ৮১ ডলারের তুলনায় যা বেশ কম। ২০২৬ সালে এই দাম আরও কমে ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৬০ ডলারে নামতে পারে ধারণা করা হচ্ছে।

এই পূর্বাভাস অনুযায়ী, তেলের ব্যবহার বৃদ্ধির হার আরও কমবে—মূলত চীনের চাহিদা কমে যাওয়া, বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড গাড়ির দ্রুত প্রসার ও বৈশ্বিক তেল সরবরাহ বৃদ্ধির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।

২০২৫ সালে বৈশ্বিক তেলের বাজারে সরবরাহ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০২৬ সালে তা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২০ সালের সর্বোচ্চ মাত্রার তুলনায় প্রায় ৬৫ শতাংশ বেশি হবে এ সরবরাহ।

কৃষিপণ্য

বিশ্বব্যাংক গ্রুপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, কৃষিপণ্যের মূল্যসূচক ২০২৫ সালে স্থিতিশীল আছে। ২০২৬ সালে তা সামান্য ২ শতাংশ ও ২০২৭ সালে আরও ১ শতাংশ কমবে।

খাদ্যপণ্যের দাম, যেমন শস্য, তেল, প্রোটিনজাত খাবারসহ অন্যান্য খাদ্যের দাম সাম্প্রতিক সীমার কাছাকাছি থাকবে। তবে মাঝেমধ্যে সামান্য কিছুটা ওঠানামা থাকবে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, প্রধান ফসলগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধির হার আবার দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতায় ফিরে আসছে।

২০২৫ সালের বাকি সময়ে সয়াবিনের দাম কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের যে সয়াবিন সাধারণত চীনে রপ্তানি হয়, তা এবার কম দামে অন্য ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে হতে পারে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্রে হচ্ছে এই সয়াবিন। চীন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সয়াবিন কিনছে না। ফলে ২০২৬ ও ২০২৭ সালে এই পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশ্ববাজারে দাম কমে গেলে যুক্তরাষ্ট্রে সয়াবিন চাষের পরিমাণ কিছুটা কমতে পারে, তবে ব্রাজিল তার সয়াবিন আবাদ আরও বাড়ানোর পথে রয়েছে। পানীয় পণ্যের দাম ২০২৬ সালে ৭ শতাংশ ও ২০২৭ সালে প্রায় ৫ শতাংশ কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

এদিকে চলতি বছর সারের দাম সামগ্রিকভাবে ২১ শতাংশ বাড়তি। চাহিদা বৃদ্ধি, বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা ও কিছু অঞ্চলে সরবরাহ–ঘাটতির কারণে এ দাম বেড়ে যাওয়া। ২০২৬ ও ২০২৭ সালে দাম প্রায় ৫ শতাংশ কমতে পারে। তবু ২০১৫-১৯ সালের গড় দামের তুলনায় তা অনেক বেশি থাকবে। এর কারণ হলো উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, রপ্তানি সীমাবদ্ধতা ও চলমান আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা।

চীন ইতিমধ্যে নাইট্রোজেন ও ফসফেট সার রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। অন্যদিকে পটাশ সরবরাহকারী বড় দেশ বেলারুশ এখনো ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছে। রাশিয়া ও বেলারুশ—উভয় দেশই সারের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরোপিত নতুন শুল্কের সম্মুখীন।

দেশে কেন দাম বেশি

বিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশের বাজার দাম না কমার অন্যতম প্রধান কারণ ডলারের দামের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন। গত তিন বছরে ডলার দাম অনেকটা বেড়েছে। সেই সঙ্গে দেশের অনেক আমদানি পণ্যে শুল্ক বেশি বলে মনে করেন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাজার ব্যবস্থাপনার কারণে দাম কমছে না। বাজারে চাহিদা কত বা কখন কোন পণ্য আমদানি করতে হবে, সে বিষয়ে যথাযথ তথ্যের ঘাটতি আছে। ফলে সময়মতো পণ্য আমদানি হয় না।

আরেকটি বিষয় হলো দেশে যেসব পণ্য আমদানি করা হয়, তার অনেক কিছু উৎপাদিতও হয়। কিন্তু বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় এসব পণ্যের সরবরাহে টান পড়েছে। বাজারের পণ্যমূল্যে তার প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন মোস্তাফিজুর রহমান।

তিন বছর আগে দেশে ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা। এখন তা বেড়ে ১২২ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া কয়েক মাস ধরে আমদানির ঋণপত্র খোলাও কমেছে। এতে আমসদানিতে চাপ পড়ছে।

দেশের বাজার উচ্চ মূল্যের কারণ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক সেলিম রায়হান বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি, কৃষি ও খাদ্যপণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। জ্বালানি ও পরিবহন ব্যয়, শুল্ক ও করের চাপ ও বাজার ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতার কারণে দাম কমছে না। পাইকারি থেকে খুচরা পর্যন্ত অতি মুনাফা ও অস্বচ্ছ বাণিজ্যিক শৃঙ্খলের কারণেও বাজারে কৃত্রিমভাবে উচ্চমূল্য বিরাজ করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে টাকার অবমূল্যায়ন। ফলে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে এবং আন্তর্জাতিক মূল্যহ্রাসের সুফল ভোক্তাপর্যায়ে পড়ছে না।

সেলিম রায়হান আরও বলেন, এ ছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার কারণ ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বিনিয়োগকারীরা নতুন ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। পণ্য পরিবহন ও আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সরবরাহ শৃঙ্খল দুর্বল হয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে বাজারে পণ্যের ঘাটতি ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

দেশে তিন বছর ধরেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। সম্প্রতি তা কিছুটা কমলেও সেপ্টেম্বর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। গত আগস্ট মাসে এই হার ছিল ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচনের দিন অমোচনীয় কালি সরবরাহ না হলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে: ছাত্রদল
  • যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
  • টমাহক কত দূরে আঘাত হানতে পারে, রাডারে কেন ধরা পড়ে না
  • সামুদ্রিক মাছে ভরপুর আড়ত, দাম কেমন
  • ২০২৬ সালে বিশ্ববাজারে জিনিসপত্রের দাম আরও ৭% কমতে পারে, বাংলাদেশে কেন কমছে না
  • যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশে আতঙ্ক-উত্তেজনা, ট্রাম্প আসলে কী চান
  • ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দিতে পেন্টাগনের সায়, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাম্প
  • সবজির দাম কমতির দিকে, আটার দাম কেজিতে বাড়ল ৫ টাকা