ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হামলা আরও তীব্র হয়েছে। এখন উপত্যকায় হামলার ধরনে কিছুটা পরিবর্তন এনেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। তারা ত্রাণ নিতে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে কাউকে সন্দেহ হলেই নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করছে। পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে টার্গেট করে চলছে বিমান হামলা। গাজার একাধিক স্থানে হামাসের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের খবরও পাওয়া যাচ্ছে। 

গতকাল বুধবার গাজায় এক দিনে ইসরায়েলের হামলায় আরও ১২০ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৫৭ জন ত্রাণপ্রত্যাশীও রয়েছেন। তারা ত্রাণ নিতে এসে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এক দিনে আহত হয়েছেন আরও ৪৭৪ জন। আলজাজিরা জানায়, খাবারকে অস্ত্র বানিয়ে এ পর্যন্ত ত্রাণ কেন্দ্রগুলোতে ২২৪ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে আইডিএফ। আহত হয়েছেন ১ হাজার ৮৫৮ জন। 

গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৫৫ হাজার ১০৪ জন; আহতের সংখ্যা ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৯৪ জন। হাতহতের অধিকাংশই নারী ও শিশু। হাসপাতালগুলো হামলার কারণে গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। এগুলোতে নেই পর্যাপ্ত ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী। 

অপরদিকে ইসরায়েলের আরেক সেনা নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে হামাসের সশস্ত্র শাখা কাশেম ব্রিগেড। খান ইউনিসের পাশে আবাসান আল-কাবিরা এলাকায় ওই সেনা নিহত হয়। 

এ অবস্থায় গাজায় ত্রাণ সরবরাহ নিয়ে বিশৃঙ্খলা কাটছে না। উপত্যকার অনেক এলাকায় এখনও কোনো ত্রাণ পৌঁছায়নি। এ ছাড়া পর্যাপ্ত সংখ্যক ত্রাণের ট্রাক প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। হামাস বলছে, গাজায় ফিলিস্তিনিদের অভুক্ত রেখে হত্যা করতেই ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ ইসরায়েল ত্রাণ সরবরাহ কেন্দ্রগুলোতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে।

একটি গোষ্ঠীকে অস্ত্র দিচ্ছে ইসরায়েল

ইসরায়েলের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী আভিগডর লিবারম্যানের একটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ভূমিকম্প শুরু হয়েছে। গত সপ্তাহে তিনি জানান, ইসরায়েলের সরকার অপরাধী ও দুর্বৃত্তদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে একটি গোষ্ঠীকে প্রস্তুত করছে, যারা গাজায় ইসলামিক স্টেট বা আইএস নামে পরিচিত। এটা করা হচ্ছে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নির্দেশনায়। এরই মধ্যে নেতানিয়াহুও বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন, গাজায় হামাসকে মোকাবিলায় তারা পৃথক সশস্ত্র সংগঠন তৈরি করছেন। তিনি এ উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেন।

গত মঙ্গলবার দ্য নিউ আরবের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তেল আবিবের সরবরাহ করা অস্ত্রে তৈরি সশস্ত্র গ্রুপটি হামাসের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠবে বলে মনে করছে নেতানিয়াহু সরকার। তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, ৩০০ অপ্রশিক্ষিত চোর, মাদক কারবারি, অপরাধী ও প্রমাণিত খুনি আনুমানিক ৩০ হাজার সদস্যের হামাস বাহিনীকে পরাজিত করতে পারবে বলে তারা মনে করছেন না। কার্যত তাদের মূল কাজ হবে ইসরায়েলের গণহত্যা, ফিলিস্তিনিদের অভুক্ত রাখা ও জাতিগত নিধনকে এগিয়ে নেওয়া।
সম্প্রতি গাজায় একটি ত্রাণ সরবরাহ কেন্দ্রের পাশে একদল সশস্ত্র গোষ্ঠী ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি ছোড়ে। এর পরই জোরালোভাবে সশস্ত্র একটি সংগঠনের নাম সামনে আসে। ফিলিস্তিনিরা বলছেন, তারা অতীতে এ ধরনের কোনো সংগঠনের হামলার শিকার হননি। ইসরায়েলের মদদে গঠিত সংগঠনটির প্রধান করা হয়েছে ইয়াসের আবু শাবাব নামের এক ব্যক্তিকে। মাদকসংশ্লিষ্টতার জেরে শাবাব দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছেন।

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অতীতেও কট্টর ইসলামপন্থি গ্রুপ– বিশেষ করে আইএসকে অস্ত্র দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। গাজার ঘটনা সেই সন্দেহের ওপর অধিকতর আলো ফেলল। গাজার আবু শাবাব গ্রুপের সঙ্গে হামাসের অতীতের দ্বন্দ্ব রয়েছে। হামাস একবার তাদের ওপর হামলাও চালায়। বর্তমানে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফায় তারা অবস্থান করছে। ইসরায়েল তাদের নিরাপত্তা, অস্ত্র ও অর্থ সরবরাহ করে। একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, গাড়ির ওপরে গ্রুপের সদস্য মেশিনগান হাতে চলাচল করছেন। উপত্যকায় শুধু হামাস সদস্যদের এভাবে চলাচল করতে দেখা যায়।

ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে রাফায় বেশ কিছু এলাকা খালি করেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। ওই এলাকায় নিরাপদে থাকছে আবু শাবাব গ্রুপের সদস্যরা। তারা সব ধরনের লজিস্টিক সহায়তা পাচ্ছে। পাশাপাশি ইসরায়েলের প্রবেশের সুযোগও আছে তাদের। একজন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক গ্রুপটির সদস্যদের ইসরায়েলে প্রবেশের বিষয়টি জানান। গত জানুয়ারিতে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যে যুদ্ধবিরতি হয়, তখন তাদের গাজায় দেখা যায়নি। 

গাজায় আবু শাবাব গোষ্ঠীর খাদ্যগুদাম রয়েছে, যেখানে তারা লুটের ত্রাণ সংরক্ষণ করে। কার্যত তারা ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর একটি সশস্ত্র শাখা হিসেবে কাজ করছে। 

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য মুসলিম দেশগুলোকে ভূমি ছাড়তে বললেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করতে চাইলে মুসলিম দেশগুলোর কিছু পরিমাণ করে ভূমি ছেড়ে দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন ইসরায়েলে কর্মরত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবিই। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।

হুকাবিইর দাবি, ইসরায়েল নিয়ন্ত্রিত ভূমির চেয়ে ৬৪৪ গুণ বেশি ভূমি রয়েছে মুসলিম দেশগুলোর কাছে। তাদের যদি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র নিয়ে এতই খায়েশ থাকে, তবে কারও সামনে এসে দায়িত্ব নেওয়া উচিত।

ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের দীর্ঘদিনের সংকট নিরসনে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি শুধু আকাঙ্ক্ষিত একটি লক্ষ্য। যদিও এই সমাধান প্রস্তাবটি দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থন পেয়ে এসেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক প্রশাসনও এটিকে সমর্থন করেছে। এই প্রস্তাব অনুযায়ী, পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকায় একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠিত হবে, যার রাজধানী হবে পূর্ব জেরুজালেম। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন পাশাপাশি টিকে থাকবে।

সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গকে দেওয়া পৃথক এক সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেন, স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র আর চেষ্টা করছে না। অবশ্য তাঁর এই বক্তব্যে সরাসরি সায় দেয়নি ওয়াশিংটন। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেছেন, রাষ্ট্রদূত হুকাবিইর কথা তাঁর একান্তই নিজস্ব মত। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতি নির্ধারণের অধিকার একমাত্র প্রেসিডেন্টের হাতেই রয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র স সরবর হ ক র সদস য সশস ত র র ওপর স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

পায়রা বন্দরসহ দুই প্রকল্পের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন

পায়রা বন্দরের জন্য সংশ্লিষ্ট পরিসেবাসহ দুটি শিপ টু শোর ক্রেন সরবরাহ এবং নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। প্রস্তাব দুটিতে ব্যয় হবে ৪৫০ কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার ২৫৪ টাকা।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সচিবালয়ে মন্ত্রি পরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কমিটির সদস্য ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভা সূত্রে জানা যায়, পায়রা সমুদ্র বন্দরের প্রথম টার্মিনাল এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্পের আওতায় সংশ্লিষ্ট পরিসেবাসহ দুটি শিপ টু শোর ক্রেন সরবরাহ এবং স্থাপন কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে ৪টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) এইচপি এবং (২) এনজে, চায়না প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ১৬২ কোটি ২ লাখ ১১ হাজার ৫৬৮ টাকা।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ‘নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর দুইয়ের পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ জন্য উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ২টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। দরপত্রের সকল প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স এবং (২) এসএস রহমান ইন্টারন্যানাল লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ২৮৮ কোটি ৮ লাখ ৯৮ হাজার ৬৮৬ টাকা।

ঢাকা/হাসনাত//

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কাফকো সার কারখানায় গ্যাস বিক্রির চুক্তি সই
  • গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা
  • পাবনায় আগাম পাটের বাজার চড়া, বেশি দাম পেয়ে কৃষক খুশি
  • পায়রা বন্দরসহ দুই প্রকল্পের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন
  • নবায়নযোগ্য জ্বালানির যুগ কড়া নাড়ছে দরজায়
  • ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধে জয় হচ্ছে বোয়িংয়ের
  • বিদেশি ঋণ পরিস্থিতি অসম্ভব উদ্বেগের জায়গায় যাচ্ছে