দেশের রাজনীতির চলমান ঘটনা প্রসঙ্গে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান ড. ইউনূসের প্রতি আস্থা না রাখার কোনো ঘটনা এখনও ঘটেনি। জাতীয় ঐকমত্য গঠনে ইউনূস সরকার এ পর্যন্ত যত উদ্যোগ নিয়েছে, সবগুলোতে এবি পার্টির সমর্থন রয়েছে। শুক্রবার লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে ড.

ইউনূসের বৈঠক নিয়ে ভালো কিছু হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। বৃহস্পতিবার বরিশাল প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন ব্যারিস্টার ফুয়াদ। 

দেশের শীর্ষ রাজনীতিবিদ ও আমলাদের চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও আমলাদের দেশের সরকারি হাসপাতালেই চিকিৎসা নেওয়া উচিত। তাহলে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের দায়িত্বশীলরা সবসময় সতর্ক অবস্থানে থাকবেন। চিকিৎসা সরঞ্জামাদিও সর্বাক্ষণিক সচল রাখবেন। এর সুবিধা ভোগ করবেন সাধারণ মানুষ, যারা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান। 

তখন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিদেশ গমন ও ফেরত আসা নিয়ে সরকারের ভূমিকা সম্পর্কে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন। এর জবাবে ফুয়াদ চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার ঘোর বিরোধিতা করে বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ যে কোনো ভিআইপির চিকিৎসা নিতে বিদেশ যাওয়া ঠিক নয়। কিন্তু এ দেশে ভিআইপিদের একটা ঐতিহ্য হয়ে গেছে, বিদেশের হাসপাতালে চিকিৎসা না নিলে পরপারে গিয়ে জবাব দেওয়া লাগতে পারে– কেন তুমি গরিবের হাসপাতালে গিয়ে মরলা। 

আবদুল হামিদের বিদেশ যাওয়ার পর সরকারে ঘটে যাওয়া ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাঁর (হামিদ) বিদেশে আসা-যাওয়ার বিষয়ে কোনো বিধিনিষেধ নেই। তাহলে কেন তাঁকে বিদেশ যেতে বাধা দেওয়া হবে। হামিদের বিদেশ যাওয়ার পর বিমানবন্দরের কয়েকজন কর্মকর্তাকে বরখাস্তের বিরোধিতা করেন ফুয়াদ। 

ব্যারিস্টার ফুয়াদ ঈদের পর তাঁর নির্বাচনী এলাকা বাবুগঞ্জ-মুলাদী উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা ঘুরেছেন। এর তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলেন, দেশে রাজনীতির নামে গুন্ডামি চলছে। সরকারি দপ্তরগুলোতে এখনও ঠিকাদারি কাজের জন্য নানাভাবে চাপ দেওয়া হয়। আগের সরকারের লোকজনদের কাজ দিয়েছেন, আমাদের কেন দেবেন না– এমন 
হুমকি-ধমকি দেওয়া হয় কর্মকর্তাদের। 

উন্নয়ন বরাদ্দ লুটপাট হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সড়ক নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে ইউনিয়নে ৮৪ লাখ ও পৌর শহরে আড়াই কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। অথচ ইউনিয়নে ৩০ লাখ ও পৌর শহরে ৮৪ লাখ টাকায় আন্তর্জাতিক মানের সড়ক নির্মাণ সম্ভব।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও

রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।

গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।

পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়। 

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো। 

ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।” 

তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।” 

আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”

রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”

গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।” 

উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।

ঢাকা/আমিরুল/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
  • মেসি বনাম ইয়ামাল: ফিনালিসিমার সময়-সূচি ঘোষণা
  • গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও