কক্সবাজারে ৭ দিনে ৫ জনের করোনা শনাক্ত, সতর্কতা মানছেন কি পর্যটকেরা
Published: 12th, June 2025 GMT
কক্সবাজারসহ সারা দেশেই বাড়ছে করোনাভাইরাসের প্রকোপ। জেলায় গত সাত দিনে পাঁচজনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তবে এ নিয়ে উদাসীনই থাকছেন সৈকত শহরে বেড়াতে আসা পর্যটকেরা।
ঈদের ছুটিতে সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে এসেছেন কয়েক লাখ পর্যটক। বিশেষ করে সৈকতের কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটারে পর্যটকের ভিড়ে পা ফেলা দায়। কিন্তু মুখে মাস্ক পরছেন না কোনো পর্যটক। দূরত্ব বজায় রাখাও সম্ভব হচ্ছে না। তাতে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দেওয়া তথ্যমতে, ৪ থেকে ১১ জুন—এই ৭ দিনে ৩১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৫ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন স্থানীয়, অপর দুজন আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা শরণার্থী। স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে কক্সবাজারে করোনার সংক্রমণ দ্রুত বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা চিকিৎসকদের। ঈদের ছুটিতে লাখ লাখ পর্যটক কক্সবাজার সৈকতে জড়ো হলেও তাঁদের নমুনা পরীক্ষার সুযোগ নেই।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত দেড় বছরে জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৮৯ জন। এর মধ্যে রোহিঙ্গা শরণার্থী ৩৪ জন।
মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধিআজ বৃহস্পতিবার বেলা তিনটায় সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে নেমে দেখা গেছে, মাত্র দুই কিলোমিটার সৈকতে হাজারো পর্যটক এসেছেন। কারও মুখে মাস্ক নেই। কারণ জানতে চাইলে ঢাকার বাসাবোর ব্যবসায়ী সাইফুজ্জামান (৫৫) বলেন, দোকানে মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে না। সৈকতে জনসমাগম এড়িয়ে চলারও কোনো সুযোগ নেই।
সৈকতের বিভিন্ন পণ্য বিক্রির হকার, আলোকচিত্রী, ঘোড়ার কর্মচারী—কারও মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। পথচারী থেকে শুরু করে যাত্রীবাহী বাসে চলাচলকারী লোকজনের মুখেও মাস্ক ছিল না।
কক্সবাজারের কলাতলী হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, অতিথিদের জন্য মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হলেও কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে অধিকাংশ হোটেল-রেস্তোরাঁর কর্মচারীদেরও মাস্ক সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না।
জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, করোনার সংক্রমণের জন্য কক্সবাজার এমনিতে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা। এখানকার সৈকতে লাখ লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটে। আবার উখিয়া-টেকনাফের আশ্রয়শিবিরে ১৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর বসবাস। ঘনবসতির কারণে সেখানে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। করোনার সংক্রমণ রোধে জেলার নয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিকভাবে দু-তিন শয্যার আইসোলেশন সেন্টার খোলা হয়েছে। অচল যন্ত্রপাতিগুলোও ঠিকঠাক করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঘোষিত বিধিনিষেধ মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছে। এগুলো হচ্ছে জনসমাগম এড়িয়ে চলা; মুখে মাস্ক ব্যবহার; হাঁচি বা কাশির সময় বাহু বা টিস্যু দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখা; ব্যবহৃত টিস্যু ঢাকনাযুক্ত ডাস্টবিনে নিক্ষেপ; সাবান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার; অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ না করা; আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এগিয়ে চলা এবং কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখা। কিন্তু কক্সবাজারে কোনোটিই ঠিকমতো হচ্ছে না। পাঁচ শতাধিক হোটেলের অধিকাংশটিতেই অতিথিদের জন্য মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা হয়নি। এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সৈকতে জনসমাগম এড়িয়ে চলা, মুখে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্য বিভাগের বিধিনিষেধ মেনে চলার ক্ষেত্রে পর্যটকসহ স্থানীয় লোকজনকে সচেতন করতে আজ দুপুর থেকে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগ, পৌরসভা কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বৈঠক করে করোনার সংক্রমণ রোধ, আইসোলেশন সেন্টার চালু ও সরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা ইউনিট খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
পাঁচজনের করোনা শনাক্ত২৫০ শয্যার সরকারি কক্সবাজার সদর হাসপাতালের দেওয়া তথ্যমতে, ১ জুন হাসপাতালে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ৪, ১০ ও ১১ জুন ৩১ জনের নমুনা পরীক্ষার করার জন্য কক্সবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ল্যাবে পাঠানো হয়। এর মধ্যে পাঁচজনের নমুনায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক, সংক্রামক রোগ ও ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মো.
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আশ্রয়শিবিরে দুজন রোহিঙ্গা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। করোনার বিস্তার রোধে স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা কার্যকর করতে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আশ্রয়শিবিরে বন্ধ থাকা আইসোলেশন সেন্টারগুলো চালুর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক স ক রমণ র শরণ র থ র জন য পর ক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
জকসুতে এআই ব্যবহারে থাকবে শিথিলতা, তবে অপব্যবহার করা যাবে না: নির্বাচন কমিশন
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনে এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) ব্যবহারে শিথিলতা থাকবে। তবে এর অপব্যবহার করা যাবে না বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের সদস্য জুলফিকার মাহমুদ।
রোববার উপাচার্যের সভাকক্ষে রাজনৈতিক ও সক্রিয় সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত জকসু ও হল সংসদ নির্বাচন-২০২৫-এর আচরণবিধিবিষয়ক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদের এক দাবির জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। এর আগে ফয়সাল মুরাদ বলেন, ‘নির্বাচনী আচরণবিধির ৭–এর ঘ ধারায় বলা হয়েছে, নির্বাচনী প্রচারণায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবহার করা যাবে না। আমরা যারা ছোট সংগঠন, আমাদের তহবিল সীমিত। আমরা নির্বাচনী প্রচারের জন্য এআই ব্যবহার করে দু-এক মিনিটের ভিডিও বানিয়ে প্রচার কার্যক্রম চালাতে চাই। আমাদের দাবি, এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন যেন শিথিল নীতি গ্রহণ করে।’
মুরাদ আরও বলেন, বিগত চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে কিছু ত্রুটি লক্ষ করা গেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনকে স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও বিতর্কমুক্ত রাখার জন্য যতগুলো ভোটকক্ষ থাকবে, সব কটি সিসিটিভি ফুটেজের আওতায় রাখতে হবে। সবার জন্য সেই সিসিটিভি ফুটেজ উন্মুক্ত রাখতে হবে। ভোট গ্রহণকে স্বচ্ছ রাখার জন্য ভোটকক্ষের ভেতরে জাতীয় গণমাধ্যমকে সরাসরি সম্প্রচার করার অনুমতি দেওয়ার কথা বলেন তিনি।
দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জকসুর নির্বাচন কমিশনার জুলফিকার মাহমুদ বলেন, ‘এআই ব্যবহার করে বিভিন্নজনের চরিত্র হনন করা হয়, অপপ্রচার চালানো হয়। সেদিক থেকে চিন্তা করে এআই ব্যবহার নিষিদ্ধ রেখেছিলাম। তোমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এআই ব্যবহারে শিথিলতা থাকবে প্রচার–প্রসারে, তবে অপব্যবহার করা যাবে না। আর সরাসরি সম্প্রচারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আলোচনা করে।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোস্তফা হাসানের সভাপতিত্বে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য রেজাউল করিম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ ও হল শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচন ২০২৫–এর নির্বাচন কমিশনার ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল সংগঠন ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা।