Prothomalo:
2025-11-02@22:05:04 GMT

মহানবী (সা.)–এর আতিথেয়তা

Published: 13th, June 2025 GMT

কল্পনা করুন, মদিনার একটি সাধারণ বাড়িতে মহানবী মুহাম্মদ (সা.) একজন অতিথির জন্য সর্বোত্তম খাবার পরিবেশন করছেন। তিনি হাসিমুখে অতিথিকে স্বাগত জানাচ্ছেন, তাকে আরামদায়ক আসন দিচ্ছেন এবং নিজে তাড়াতাড়ি খাবারের ব্যবস্থা করছেন। এমনকি অতিথির ফেলে রাখা ময়লা কাপড় নিজে পরিষ্কার করছেন।

এই দৃশ্য ইসলামে আতিথেয়তার একটি চিরন্তন ছবি। ইসলামে আতিথেয়তা শুধু একটি সামাজিক রীতি নয়, বরং একটি ধর্মীয় বিধান। এটি অতিথি, গৃহকর্তা এবং আল্লাহর মধ্যে একটি ত্রিমুখী সম্পর্কের সূত্র, যেখানে অতিথির অধিকার আল্লাহর প্রতি দায়িত্বের অংশ।

যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের দিনে বিশ্বাস করে, সে যেন তার অতিথিকে সম্মান করে।সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬১৩৮

আতিথেয়তার গুরুত্ব

আতিথেয়তা একটি মহৎ গুণ। কোরআন ও হাদিসে অতিথির প্রতি দয়া ও সম্মান প্রদর্শনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। মহানবী (সা.

) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের দিনে বিশ্বাস করে, সে যেন তার অতিথিকে সম্মান করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬১৩৮)

কোরআনে নবী ইবরাহিম (আ.)-এর আতিথেয়তার গল্প বর্ণিত হয়েছে। তিনি অপরিচিত অতিথিদের দেখে তৎক্ষণাৎ তাদের জন্য একটি সুস্বাদু ভুনা বাছুর প্রস্তুত করেন এবং শান্তির শুভেচ্ছা জানান। (সুরা যারিয়াত আয়াত: ২৪-২৬)

ইসলামে আতিথেয়তা একটি অধিকার, উপহার নয়। অতিথির প্রতি দায়িত্ব পালন আল্লাহর প্রতি দায়িত্বের অংশ। যারা অতিথির প্রতি কৃপণতা করে না, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘আর যাদের মনের সংকীর্ণতা থেকে রক্ষা করা হয়েছে, তারাই সফলকাম।’ (সুরা আল-হাশর, আয়াত: ৯)

আরও পড়ুননবীজি (সা.)–এর কাছে রহস্যময় অতিথি১৯ ডিসেম্বর ২০২৪আরব বিশ্বের কোথাও কোথাও আজও মেহমাননেওয়াজির ঐতিহ্য বহাল আছে, যেখানে অপরিচিত ব্যক্তিকেও খাবার ও আশ্রয় দেওয়া হয়।

অতিথির দায়িত্ব

অতিথিরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে। তারা যেন গৃহকর্তার অবস্থা বিবেচনা করে এবং অতিরিক্ত বোঝা না চাপায়। নবীজি (সা.) বলেন, ‘অতিথি যেন তার ভাইয়ের ওপর এমনভাবে দীর্ঘ সময় অবস্থান না করে, যাতে সে পাপে জড়িয়ে পড়ে।’ জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘কীভাবে পাপে জড়াবে?’ তিনি বললেন, ‘যখন গৃহকর্তার কাছে আর কিছু থাকে না অতিথির জন্য।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৭২৭)

অতিথির উচিত সময়মতো আগমনের জানান দেওয়া, গৃহকর্তার জন্য দোয়া করা এবং অবৈধ কথা বা কাজ থেকে বিরত থাকা।

ইসলামের ইতিহাসে আতিথেয়তা সম্প্রদায়ের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য গড়ে তুলেছে। মদিনায় হিজরতের সময় নবীজি মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। আরব বিশ্বের কোথাও কোথাও আজও মেহমাননেওয়াজির ঐতিহ্য বহাল আছে, যেখানে অপরিচিত ব্যক্তিকেও খাবার ও আশ্রয় দেওয়া হয়।

আরও পড়ুনঅতিথিপরায়ণ সাহাবি উম্মু শুরাইক (রা.)০১ এপ্রিল ২০২৫

আতিথেয়তার নীতিমালা

ইসলামে আতিথেয়তার কিছু মৌলিক নীতি রয়েছে, যা নবীজি ও তাঁর সাহাবিদের জীবন থেকে উদ্ভূত। হাসিমুখে স্বাগত জানানো: অতিথিকে হাসিমুখে এবং উষ্ণ শুভেচ্ছায় স্বাগত জানানো আতিথেয়তার প্রথম ধাপ। নবীজি (সা.) বলেন, ‘তোমার ভাইয়ের প্রতি হাসি সদকা।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৯৫৬)

আবু বকর সিদ্দিক (রা.) অতিথিদের বাড়িতে প্রবেশের সময় নিজে দাঁড়িয়ে স্বাগত জানাতেন। (সিরাতে ইবনে হিশাম, ২/৫৬, বৈরুত: দারুল কুতুব, ১৯৯৫)

খাবার ও পানীয় পরিবেশন: অতিথির জন্য দ্রুত খাবার ও পানীয়ের ব্যবস্থা করা সুন্নাহ। নবীজি (সা.) অতিথিদের জন্য সর্বোত্তম খাবার পরিবেশন করতেন এবং তাদের প্রয়োজনের আগেই সেবা প্রদান করতেন। আলী বিন আবি তালিব (রা,) একবার একজন অতিথির জন্য তাদের শেষ খাবারটুকু পরিবেশন করেন এবং নিজেরা উপবাস করেন। (ইমাম জাহাবি, সিয়ার আলাম আল-নুবালা, ৩/২৩৪, বৈরুত: মুআসসাসাত আল-রিসালা, ১৯৮৫)

আবু বকর সিদ্দিক (রা.) অতিথিদের বাড়িতে প্রবেশের সময় নিজে দাঁড়িয়ে স্বাগত জানাতেন।

অতিথির আরামের প্রতি লক্ষ রাখা: অতিথির জন্য পরিষ্কার ও আরামদায়ক স্থান প্রদান করা গুরুত্বপূর্ণ। নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অতিথির জন্য আসন সংগঠিত করে, সে আল্লাহর নিকট পুরস্কৃত হয়।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৬৫৩৪)

দ্রুত সেবা প্রদান: অতিথির সেবায় বিলম্ব করা তাদের অস্বস্তির কারণ হতে পারে। উমর বিন খাত্তাব (রা.) অতিথিদের এলেই আগে তৎক্ষণাৎ খাবার ও থাকার ব্যবস্থা করতেন। (ইবনে কাসির, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৭/২৮৩, দামেস্ক: দারুল ফিকর, ১৯৮৮)

অপচয় ও প্রদর্শনী এড়ানো: আতিথেয়তা সরল ও আন্তরিক হওয়া উচিত। উদারতা প্রয়োজন, কিন্তু অপচয় নিষিদ্ধ। কোরআন বলে, ‘অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই।’ (সুরা আল-ইসরা, আয়াত: ২৭)

অতিথির গোপনীয়তা ও পছন্দের প্রতি সম্মান: অতিথির খাদ্যাভ্যাস বা ব্যক্তিগত স্থানের প্রতি সম্মান দেখানো ইসলামি শিষ্টাচার। নবীজি (সা.) অতিথিদের জোর না করে তাদের পছন্দ অনুযায়ী সেবা দিতেন।

সমতার ভিত্তিতে আচরণ: ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সব অতিথির প্রতি সমান আচরণ করা ইসলামের শিক্ষা। নবীজি (সা.) বলেন, ‘সকল মানুষ আল্লাহর পরিবার, এবং আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় তারা, যারা তার পরিবারের প্রতি দয়ালু।’ (বাইহাকি, শুয়াব আল-ইমান, হাদিস: ১০১৫৮)

আরও পড়ুনকাবাঘরের চাবি কী দিয়ে তৈরি, কার কাছে থাকে১৫ মে ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ব গত জ ন গ হকর ত আল ল হ র পর ব ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

শেফালি আর দীপ্তিতে নতুন মুম্বাইয়ে নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত

নাবি মুম্বাই। নয়া মুম্বাই। নতুন সেই মুম্বাইয়ে কাল নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পেল মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত।

দীপ্তি শর্মার করা ৪৬তম ওভারের তৃতীয় বলে নাদিন ডি ক্লার্কের তোলা ক্যাচটি এক্সট্রা কাভারে ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌরের হাতে জমা হতেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের আনন্দে মাতল পুরো ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকা ২৪৬ রানে অলআউট, ভারত ৫২ রানে জয়ী।

ভারতের জয়ের উৎসব অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছিল পাঁচ ওভার আগেই। লরা ভলভার্টকে ফিরিয়ে পথের কাঁটা উপড়ে ফেলেই উদ্‌যাপন শুরু করেছিল ভারতীয়রা। অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করে দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক চোখ রাঙাছিলেন ভারতের উৎসব ভন্ডুল করার। কিন্তু সেঞ্চুরি করার পরপরই ক্যাচ তুললেন ভলভার্ট। আর সেই ক্যাচ নিতে গিয়ে আমানজোত কৌর ভারতের প্রায় শত কোটি মানুষের হৃৎস্পন্দন প্রায় থামিয়ে দিয়েছিলেন। একবার নয়, দুবার নয়, তৃতীয়বারের চেষ্টাতেই ক্যাচ নিতে পারেন আমানজোত। এবারও বোলার সেই অফ স্পিনার দীপ্তি শর্মা।

৯৮ বলে ১০১ রান করে ভলভার্ট যখন ফিরলেন দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ৪১.১ ওভারে ২২০/৭। এরপর শুধু আনুষ্ঠানিকতাই ছেড়েছে ভারত। দীপ্তি আরও ২টি উইকেট নিয়ে পেয়ে গেছেন ৫ উইকেট। আর ভারত হয়ে গেছে চ্যাম্পিয়ন। এর আগে ব্যাট হাতেও ৫৮ বলে ৫৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন দীপ্তি।

ব্যাট হাতে ৮৭ রান করা শেফালি বর্মা বল হাতে নিয়েছেন ২ উইকেট

সম্পর্কিত নিবন্ধ