লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ সংক্রান্ত আলোচনা যতটুকু গুরুত্ব পেয়েছে, বিচার ও সংস্কার ততটুকু গুরুত্ব পায়নি বলে মনে করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বিষয়টিকে ‘অত্যন্ত হতাশাজনক’ বলেছে দলটি।

আজ শুক্রবার রাতে এনসিপির এক বিবৃতিতে এই প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহউদ্দিন সিফাত বিবৃতিটি পাঠিয়েছেন।

এনসিপির বিবৃতিতে বলা হয়, রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা হিসেবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের আলোচনাকে ইতিবাচকভাবে দেখছে এনসিপি। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে লন্ডনে অনুষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার বৈঠকটি ‘সংসদ নির্বাচন’ বিষয়ে দলটিকে আস্থায় আনতে সফল হয়েছে সরকার। জাতীয় ঐক্য, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা জরুরি। কিন্তু বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ সংক্রান্ত আলোচনা যতটুকু গুরুত্ব পেয়েছে, অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে নাগরিকদের প্রধান দাবি তথা বিচার ও সংস্কার ততটুকু গুরুত্ব পায়নি। এটা অত্যন্ত হতাশাজনক বলে মনে করে এনসিপি।

নির্বাচন প্রশ্নে সরকার কেবল একটি রাজনৈতিক দলের অবস্থান ও দাবিকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে বলে বারবার প্রতীয়মান হচ্ছে—এ কথা উল্লেখ করে এনসিপি আরও বলেছে, জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, জুলাই সনদ কার্যকর করা এবং বিচারের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন গণ-অভ্যুত্থানকে স্রেফ একটি ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে পরিণত করবে এবং রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন–আকাঙ্ক্ষাকে অবদমিত করবে।

জনগণের দাবি তথা জুলাই সনদ রচনা ও কার্যকর করার আগে নির্বাচনের কোনো তারিখ ঘোষিত হলে তা জনগণ মেনে নেবে না বলে উল্লেখ করেছে এনসিপি। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কাজেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সংস্কারের বিষয়গুলোর ব্যাপারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা ও জুলাই সনদ রচনা এবং কার্যকর করেই আসন্ন জুলাইকে যথাযথ মর্যাদায় স্মরণ করার উদ্যোগ নিতে সরকারকে জোর দাবি জানাচ্ছে এনসিপি।’

জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়নে জুলাই সনদ কার্যকর করা ও বিচারের রোডম্যাপ ঘোষণার পরই নির্বাচন সংক্রান্ত আলোচনা চূড়ান্ত হওয়া উচিত বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে এনসিপি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ল ই সনদ র জন ত ক সরক র এনস প

এছাড়াও পড়ুন:

ডিসেম্বরে নির্বাচন করে সংস্কার ও বিচার কার্যক্রম দৃশ্যমান করা সম্ভব: রুহিন হোসেন

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, আগামী বছরের এপ্রিলে নির্বাচন আয়োজনের চিন্তা অপ্রয়োজনীয় কালক্ষেপণ। তাঁর মতে, ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজন করে সংস্কার ও বিচারকাজ এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে খুলনা প্রেসক্লাবের হুমায়ুন কবির বালু মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন সিপিবির এই নেতা।

রুহিন হোসেন বলেন, ‘ডিসেম্বরে নির্বাচন করে সংস্কার ও বিচার কার্যক্রম দৃশ্যমান করা সম্ভব। যাঁরা নির্বাচন এপ্রিলে করার কথা বলছেন, তাঁদের সঙ্গে আমরা একমত নই। এই কালক্ষেপণের মধ্য দিয়ে আধিপত্য বা সাম্রাজ্যবাদী শক্তি করিডর ও বন্দর নিয়ে নিজেদের অনেক ইচ্ছা বাস্তবায়ন করে নিয়ে যেতে পারে, যা আমাদের দেশের জন্য ক্ষতিকর।’

এপ্রিল নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত নয় জানিয়ে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, ফেব্রুয়ারির পর পবিত্র শবে বরাত, রোজা, বিভিন্ন পরীক্ষা ও আবহাওয়ার বিষয় বিবেচনায় নিয়ে দেখা যায়, এপ্রিল নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত সময় নয়, বরং নির্বাচন আরও পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।

রুহিন হোসেন বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলতে চাই, আপনাদের এখতিয়ার যতটুকু, ওই কাজটুকুই করেন, তাহলে সংকট হবে না। এখতিয়ার–বহির্ভূতভাবে যদি কিছু করতে চান, তাহলে জনগণের প্রশ্ন আসবে আপনি কী দেশ ও জনগণের স্বার্থে কাজ করছেন নাকি বিদেশি কোনো গ্রুপের, কোনো শক্তির বা অপশক্তির ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করছেন।’

নির্বাচনকালীন সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি তুলে রুহিন হোসেন আরও বলেন, সরকার যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ দিতে ব্যর্থ হয়, তবে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করা দলগুলো প্রয়োজনে ঐক্যবদ্ধভাবে কথা বলবে, যাতে একটি ভালো নির্বাচন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা উচিত কি না, এ বিষয়ে প্রশ্নে রুহিন হোসেন বলেন, ‘নির্বাহী আদেশে কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে আমরা নই। কিন্তু এত বড় হত্যাযজ্ঞের পরও আজ পর্যন্ত তাদের কোনো অনুশোচনা দেখছি না। সর্বশেষ পরিস্থিতি অনুযায়ী বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে কথা বলার নৈতিক অধিকার তারা হারিয়েছে। দ্রুত নির্বাচন না হলে পতিত শক্তি হয়তো আবার সামনে আসার সুযোগ পাবে। বিষয়টা জনগণের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত, জনগণই এ বিষয়ে রায় দেবেন।’

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সিপিবিন নেতা এস এ রশীদ, খুলনা মহানগর সিপিবির সভাপতি এইচ এম শাহাদাত, সাধারণ সম্পাদক নিত্যানন্দ ঢালী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ড. ইউনূসকে দেশের কাজে যুক্ত রাখতে চায় বিএনপি
  • ইউনূস-তারেকের বৈঠক দেশের মানুষের জন্য স্বস্তির বার্তা, আশার আলো
  • ড. ইউনূস ও তারেকের বৈঠক জাতির জন্য স্বস্তির বার্তা: ১২ দলীয় জোট
  • ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার ও জুলাই সনদ 
  • জনগণের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন ইরানের প্রেসিডেন্ট
  • সহসাই রাজনীতির কালো মেঘ কেটে যাবে: ডা. জাহিদ  
  • ‘সংস্কার ছাড়া নির্বাচন মানবে না জনগণ’
  • ডিসেম্বরে নির্বাচন করে সংস্কার ও বিচার কার্যক্রম দৃশ্যমান করা সম্ভব: রুহিন হোসেন
  • সংবিধান সংস্কার ও ভোটের তারিখ নিয়ে ঐকমত্যের আহ্বান