অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারি (পিপিপি) পদ্ধতি সারা বিশ্বেই ব্যাপক জনপ্রিয়। কিন্তু এ মডেল এখনো বাংলাদেশের বেসরকারি খাতকে তেমন আকৃষ্ট করতে পারছে না। হাতে গোনা যে কয়েকটি প্রকল্প আলোর মুখ দেখেছে, সেগুলো হচ্ছে মূলত সরকার থেকে সরকার (জিটুজি) পর্যায়ের সিদ্ধান্তে। ফলে প্রকৃত পিপিপির স্বাদ পাওয়া থেকে বঞ্চিত রয়েছে বাংলাদেশ। চার-পাঁচটি প্রকল্প হতে চললেও এগুলোর বেসরকারি অংশীদারদের প্রায় সবাই বিদেশি।

পিপিপি মানেই হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের বিষয়। সরকারি ভাষ্য হচ্ছে, দেশের বড় পুঁজির মালিক বা বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ব্যাপারে ধৈর্য কম। এদিকে বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ হচ্ছে, সরকার নিজেই একটা সমস্যা। কারণ, সরকার এমন কোনো নীতি পদক্ষেপ নিয়ে রাখেনি, যাতে বিনিয়োগকারীরা পিপিপি প্রকল্পে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগে আকৃষ্ট হবেন।

এমন টানাপোড়েনের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে পিপিপির জন্য ৫ হাজার ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন। ২ জুন তিনি এই বাজেট ঘোষণা করেন। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।

অর্থ উপদেষ্টা এবারের বাজেট বক্তব্যে বলেছেন, দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হলে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। বিনিয়োগকারীদের দ্রুত ও সহজে সেবা দিতে ওয়ান–স্টপ সার্ভিস (ওএসএস) পোর্টাল চালু করেছে। এই পোর্টালে ৪৩টি সংস্থার ১৩৪টি সেবা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ব্যবসা সহজীকরণের অংশ হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতায় চালু করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো’ (বিএসডব্লিউ)’। এর মাধ্যমে একটি প্ল্যাটফর্মে আবেদন গ্রহণ, প্রক্রিয়াকরণ ও সেবা প্রদান করা যাচ্ছে।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট বক্তৃতায় বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি ‘ইনভেস্টমেন্ট পাইপলাইন’ তৈরি করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে প্রতিশ্রুত বিনিয়োগগুলোকে কার্যকর বিনিয়োগে পরিণত করার প্রক্রিয়া সহজ হবে।

পিপিপির সার্বিক বিষয় দেখভালের জন্য ২০১০ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার পিপিপি কর্তৃপক্ষ গঠন করে। পিপিপি কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, প্রথম বছর ৩৪টি ও পরেরবার ৪০টি প্রকল্প চিহ্নিত করা হলেও বর্তমানে পিপিপির মাধ্যমে বাস্তবায়নের জন্য বর্তমানে ৮১টি প্রকল্পের একটি তালিকা তৈরি রয়েছে পিপিপি কর্তৃপক্ষের হাতে।

মুনাফার সুযোগ না থাকলে তো বেসরকারি খাত আসবে না, এটাই স্বাভাবিক। আর দেশে তো দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের সুযোগই নেই। গ্রিন ফিল্ড কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। ব্যাংক ঋণ দেয় পাঁচ বছরের জন্য। পিপিপির পর্ষদে নেই বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিত্ব। বললেই তো পিপিপিতে বিনিয়োগ আসবে নাআবুল কাসেম খান, সাবেক সভাপতি, ঢাকা চেম্বার।

এর মধ্যে ২০টি আছে শনাক্তকরণ পর্যায়ে, যেগুলো সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের অপেক্ষায় রয়েছে। আর উন্নয়ন পর্যায়ে আছে ২৯টি। এ পর্যায়ে থাকার অর্থই হচ্ছে এদের সম্ভাব্যতা যাচাই হয়েছে মাত্র। ১৪টি প্রকল্প আছে দরপত্র ডাকার পর্যায়ে অর্থাৎ চুক্তির কাগজপত্র তৈরি হয়ে আছে। আর ১৮টি রয়েছে বাস্তবায়ন পর্যায়ে।

পিপিপি হচ্ছে একটি দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারি ব্যবস্থা, যেখানে জনগণকে সেবা দেওয়ার উদ্দেশ্যে বেসরকারি খাত বিনিয়োগ করে থাকে। এতে সরকারের সঙ্গে বেসরকারি খাতের চুক্তি হয় বা সেবা তৈরির জন্য বেসরকারি খাতকে সরকার নিবন্ধন দিয়ে থাকে। নির্মাণ, মালিকানা, পরিচালনা ও হস্তান্তর (বিওওটি); নির্মাণ, পরিচালনা ও হস্তান্তর (বিওটি) এবং নির্মাণ, মালিকানা ও পরিচালনা (বিওও)—পিপিপির এই তিন পদ্ধতিই প্রচলিত।

জানতে চাইলে পিপিপি কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র মো.

আলী আজম আল আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পিপিপির মাধ্যমে চিকিৎসাসহ অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে ব্যাপক সাড়া পড়ার বাস্তবতা আছে দেশে। কিন্তু বিষয়টি নতুন হওয়ায় একটু গতি কম। নীতিনির্ধারকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। এ কারণে গতি বাড়ছে। তবে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ হওয়ায় দেশীয় বিনিয়োগকারীদের পিপিপির ব্যাপারে আগ্রহের ঘাটতি আছে।’ আলী আজম আল আজাদ অবশ্য বিশ্বাস করেন, এ খাতে বিনিয়োগ ভবিষ্যতে বাড়বেই।

এ এম এ মুহিতের যে উদ্যোগ

তুরস্ক, চীন, ভারত, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন ইত্যাদি দেশে সাফল্যের উদাহরণ সামনে রেখে ২০০৯ সালে অবকাঠামো উন্নয়নে পিপিপির দিকে নজর দেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার।

পিপিপির মাধ্যমে দেশের অবকাঠামো খাতের ব্যাপক উন্নয়ন হবে, এমন আশাই করেছিলেন প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসার ৬ মাসের মাথায় যখন ২০০৯-১০ অর্থবছরের বাজেট ঘোষিত হলো, তখন ‘নব উদ্যোগ বিনিয়োগ প্রয়াস’ নাম দিয়ে আবদুল মুহিত পিপিপির জন্য বরাদ্দ রাখেন ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

বিপুল জনগোষ্ঠীর এ দেশে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান; নদী, সমুদ্র ও বিমানবন্দর; সাধারণ ও বিশেষায়িত হাসপাতাল; সড়ক ও রেলপথ এবং বড় বড় সেতু নির্মাণ দরকার। কিন্তু সরকারের একার পক্ষে এগুলো করা কঠিন। তখন এসব কথাই বলেছিলেন আবদুল মুহিত।

শুধু কথা বলেই অবশ্য দায়িত্ব সারেননি মুহিত। ১০ বছর ধরে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে তিনি বিনিয়োগ আকর্ষণে পিপিপি আইন, নীতিমালা, বিধিমালা সবই করেছেন। প্রতি অর্থবছরে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দও করতেন। কিন্তু বেসরকারি খাতের অনাগ্রহের কারণে এ খাতের জন্য বরাদ্দ করা পুরো টাকাই পড়ে থাকত। তবে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের (ফিজিবিলিটি স্টাডি) জন্য প্রতিবারই অবশ্য সামান্য অর্থ খরচ হতো, এই যা।

পিপিপির মাধ্যমে চিকিৎসাসহ অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে ব্যাপক সাড়া পড়ার বাস্তবতা আছে দেশে। কিন্তু বিষয়টি নতুন হওয়ায় একটু গতি কম। নীতিনির্ধারকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। এ কারণে গতি বাড়ছে। তবে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ হওয়ায় দেশীয় বিনিয়োগকারীদের পিপিপির ব্যাপারে আগ্রহের ঘাটতি আছেমো. আলী আজম আল আজাদ, মুখপাত্র, পিপিপি কর্তৃপক্ষ।

যেসব প্রকল্প হচ্ছে

বর্তমানে বাস্তবায়ন পর্যায়ে থাকা পিপিপি প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এ প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ছিল ২০১৩-১৪ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছর। প্রকল্পটির আংশিক উদ্বোধন হলেও এখনো কাজ বাকি আছে। ইতালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড হচ্ছে এ প্রকল্পের বেসরকারি বিনিয়োগকারী।

ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্পের নির্মাণকাজ চলছে। জিটুজি পর্যায়ে এটি বাস্তবায়নে মোট খরচ হবে ২১ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা। প্রকল্পের সিংহভাগ অর্থ দেবে ঋণদাতা সংস্থা জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। কাজ করছে জাপানের মিতসুবিশি ও ফুজিতা করপোরেশন এবং কোরিয়ার স্যামসাংয়ের জয়েন্ট ভেঞ্চার ‘অ্যাভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম’।

হাতিরঝিল-রামপুরা-আমুলিয়া-ডেমরা সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের জন্য চীনের নির্মাণপ্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (সিসিসিএল) সঙ্গে চুক্তি সই হয়েছে।

ঢাকা বাইপাস প্রকল্পের কাজও হচ্ছে। রাজধানী ঢাকা শহরকে বাইপাস করে উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলকে সরাসরি যুক্ত করার জন্য নির্মিত হচ্ছে এটি। প্রায় ৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মহাসড়কের কাজ শুরু হয় ২০২১ সালে। চীনের সিচুয়েন রোড অ্যান্ড ব্রিজ গ্রুপ করপোরেশন লিমিটেড, বাংলাদেশের শামীম এন্টারপ্রাইজ এবং ইউডিই কনস্ট্রাকশন লিমিটেড হচ্ছে এটির যৌথ অংশীদার। কিছু অংশ ইতিমধ্যে চালু হয়েছে।

জানতে চাইলে ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী হিসেবে এ এম এ মুহিত যখন ২০০৯ সালে বিষয়টি নিয়ে এলেন, আমি তখন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি। তাঁকে খুবই সমর্থন করেছিলাম। সৈয়দ আফসর এইচ উদ্দিন ছিলেন পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রথম প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি আমাকে একপর্যায়ে বললেন, ভালো প্রকল্পগুলো নেওয়া হয় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি), অগুরুত্বপূর্ণগুলো পাঠিয়ে দেয় পিপিপিতে। এভাবে তো পিপিপি হবে না।’

আবুল কাসেম খান আরও বলেন, মুনাফার সুযোগ না থাকলে তো বেসরকারি খাত আসবে না, এটাই স্বাভাবিক। আর দেশে তো দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের সুযোগই নেই। গ্রিন ফিল্ড কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। ব্যাংক ঋণ দেয় পাঁচ বছরের জন্য। এদিকে পিপিপির পর্ষদে নেই বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিত্ব। বললেই তো পিপিপিতে বিনিয়োগ আসবে না, আগে নীতি সমস্যা দূর করতে হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রকল প র র জন য ব র র জন য ব সরক র অবক ঠ ম পর য য় বর দ দ বছর র হওয় য়

এছাড়াও পড়ুন:

গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা

কারিগরি ক্ষতির (সিস্টেম লস) নামে গ্যাস অপচয় বাড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্যাস বিতরণ লাইনে অপচয় হয়েছে গড়ে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ গ্যাস। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) মার্চ পর্যন্ত অপচয় হয়েছে ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এতে আর্থিক ক্ষতি ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এর বাইরে সঞ্চালন লাইনে অপচয় হয়েছে ২ শতাংশ।

‘দেশের জ্বালানিনিরাপত্তা: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়; গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এতে বলা হয়, ২ শতাংশ অপচয় গ্রহণযোগ্য, তাই ওইটুকু সমন্বয় করেই আর্থিক ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে। গ্যাসের অপচয় রোধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে ছয়টি গ্যাস বিতরণ সংস্থা।

পেট্রোবাংলা বলছে, গ্যাস অপচয়ের জন্য দায়ী হচ্ছে পুরোনো, জরাজীর্ণ পাইপলাইন; গ্যাস সরবরাহ লাইনের গ্যাসস্টেশন রাইজারে লিকেজ (ছিদ্র); তৃতীয় পক্ষের উন্নয়নকাজে পাইপলাইন ছিদ্র হওয়া এবং আবাসিক খাতে প্রচুর অবৈধ সংযোগ। তবে এসব অপচয় রোধে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে রয়েছে গ্যাস সরবরাহব্যবস্থায় মিটারিং/ মনিটরিং ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা; লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কারিগরি ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখা; অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও উচ্ছেদ কার্যক্রম জোরদার করা এবং আবাসিক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা।

দেশের গ্যাস খাতের চিত্র তুলে ধরে সেমিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন। তিনি বলেন, দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে কমতে ১৫ বছর আগের জায়গায় চলে গেছে। গ্যাস অনুসন্ধান জোরদারের কোনো বিকল্প নেই। গ্যাস চুরি ও অপচয় কমাতে হবে। সঞ্চালন ও বিতরণ মিলে কারিগরি ক্ষতি প্রায় ১০ শতাংশ, যা অনেক বেশি। সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতি কোনোভাবেই ২ শতাংশ হওয়ার কথা নয়। এটা ভালো করে দেখা উচিত।

শিল্পে নতুন সংযোগে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান বলেন, সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতির বিষয়টি গভীরভাবে দেখা হচ্ছে। অবৈধ সংযোগ বন্ধে পেট্রোবাংলা তৎপর আছে, খোঁজ পেলেই বিচ্ছিন্ন করা হবে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিল্পে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যেহেতু তারা বেশি দাম দেবে। তাই অগ্রাধিকার বিবেচনা করে তিনটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রথম ধাপের তালিকায় থাকছে, যেসব কারখানায় এখনই সংযোগ দেওয়া যাবে। এগুলো পরিদর্শন প্রায় শেষের দিকে, আগামী সপ্তাহে শেষ হয়ে যাবে।

সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহ করতে নতুন টার্মিনাল নির্মাণে অগ্রাধিকার পাচ্ছে স্থলভাগের টার্মিনাল। মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকায় এটি করা হবে। এটি হলে কম দামের সময় বাড়তি এলএনজি কিনে মজুত করা যাবে। তবে এগুলো রাতারাতি করা যায় না, পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে।

জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে

তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি) নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) মো. শোয়েব। তিনি বলেন, স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য তৈরি পিএসসির খসড়া জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ৫০টি কূপ সংস্কার, উন্নয়ন ও খননের প্রকল্পে ইতিমধ্যে ১৮টির কাজ শেষ হয়েছে। জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে। ৪টি কূপের কাজ চলমান। এ ছাড়া পেট্রোবাংলার বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. আবদুল মান্নান পাটওয়ারী।

সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে

পেট্রোবাংলার আর্থিক দিক তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে পেট্রোবাংলার রাজস্ব আয় ৫৪ হাজার ১১৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে অর্ধেক বকেয়া। গত মে পর্যন্ত গ্যাস বিল বকেয়া ২৭ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। এটি ধীরে ধীরে কমে আসছে। ১৩–১৫ হাজার কোটিতে বকেয়া নেমে এলে সন্তোষজনক। সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে ১৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এরপর সার কারখানায় বকেয়া আছে ৯৬৪ কোটি টাকা। তবে বিদেশি কোনো কোম্পানির কাছে বিল বকেয়া নেই পেট্রোবাংলার। সব বিল শোধ করা হয়ে গেছে।

গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা

পেট্রোবাংলা বলছে, এলএনজি আমদানি শুরুর পর থেকে লোকসান শুরু হয় সংস্থাটির। প্রতিবছর সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নিচ্ছে পেট্রোবাংলা। ২০১৮-১৯ সালে এলএনজি আমদানি শুরু হয়, ওই বছর ভর্তুকি ছিল ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এরপর এলএনজি আমদানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভর্তুকিও বাড়তে থাকে। গত অর্থবছরে তারা ভর্তুকি নিয়েছে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত পেট্রোবাংলা মোট ভর্তুকি নিয়েছে ৩৬ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। পেট্রোবাংলার হিসাবে গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিট গ্যাস সরবরাহে পেট্রোবাংলার খরচ হয়েছে ২৭ টাকা ৫৩ পয়সা। তারা বিক্রি করেছে ২২ টাকা ৯৩ পয়সায়। এর মানে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা ৬০ পয়সা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাইয়ের ৩০ দিনে রেমিট্যান্স ২৩৬ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে
  • নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা, নীতি সুদহার অপরিবর্তিত
  • সবজির দামে স্বস্তি, মজুরি বৃদ্ধির হার এখনো কম
  • ক্যাপিটেক গ্রামীণ ব্যাংক গ্রোথ ফান্ডের লভ্যাংশ ঘোষণা
  • গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা
  • সার আমদানি ও জমি হস্তান্তরের প্রস্তাব অনুমোদন
  • হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ঘোষণা
  • জুলাইয়ের ২৭ দিনে ৯ ব্যাংকে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি