Prothomalo:
2025-11-02@18:57:41 GMT

বেকহাম এখন থেকে ‘স্যার’

Published: 14th, June 2025 GMT

খেলাধুলা ও দাতব্যকাজে অবদানের জন্য ইংল্যান্ড জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ও ফ্যাশন আইকন ডেভিড বেকহামকে ‘নাইটহুড’ দেওয়া হয়েছে। তাঁর পাশাপাশি রক ব্যান্ড ‘দ্য হু’–এর গায়ক ও সহপ্রতিষ্ঠাতা রজার ডালট্রে ও হলিউড অভিনেতা গ্যারি ওল্ডম্যানকেও একই সম্মানে ভূষিত করা হয়।

আরও পড়ুন৩৭ পেরোনো মেসি এবার ৪৭তম ট্রফির খোঁজে ২ ঘণ্টা আগে

ইংল্যান্ডের হয়ে ১১৫ ম্যাচ খেলা বেকহাম ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ, এসি মিলান ও পিএসজির মতো ক্লাব মাতিয়েছেন। ইউনাইটেডের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগজয়ী ৫০ বছর বয়সী সাবেক এই মিডফিল্ডার মেজর লিগ সকারের (এমএলসি) ক্লাব ইন্টার মায়ামির সহমালিক। সম্মানসূচক নাইটহুড পাওয়ার পর বেকহামের নামের সঙ্গে এখন ‘স্যার’ উপাধি যোগ হবে এবং তাঁর স্ত্রী স্পাইস গার্লস ব্যান্ডের সাবেক সদস্য ভিক্টোরিয়া বেকহাম ‘লেডি বেকহাম’ হিসেবে পরিচিত হবেন।

নাইটহুড পাওয়ার আলোচনায় আগে থেকেই ছিলেন বেকহাম। ২০০৩ সালে অফিসার অব দ্য অর্ডার অব ব্রিটিশ এম্পায়ার সম্মানে তাঁকে ভূষিত করা হয়। ফ্যাশন শিল্পে অবদানের জন্য পরে ভিক্টোরিয়াও একই সম্মান পান। প্রেস অ্যাসোসিয়েশনকে দেওয়া বিবৃতিতে বেকহাম বলেছেন, ‘পূর্ব লন্ডনে বাবা–মা ও দাদা–দাদিদের সঙ্গে বেড়ে উঠেছি, যাঁরা ভীষণ দেশপ্রেমিক ছিলেন এবং ব্রিটিশ হওয়ার জন্য গর্ববোধ করতেন। কখনো ভাবিনি এমন সত্যিকারের সম্মান পাব। আমি খুব ভাগ্যবান; কারণ, যে কাজ আমি করি সেটা করতে পারছি এবং তার স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য কৃতজ্ঞ।’

আরও পড়ুনক্লাব বিশ্বকাপ জেতার আশায় কোন দল কত খরচ করল৫ ঘণ্টা আগে

খেলাধুলা, ফ্যাশন ও ব্যবসা মিলিয়ে বেকহাম নিজেকে দিন দিন বৈশ্বিক আইকনে পরিণত করার ফল হিসেবে এ সম্মান পেলেন। যুক্তরাজ্যের সম্মানসূচক উপাধিগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। রাজা তৃতীয় চার্লসের জন্মদিনের ‘অনার্স লিস্ট’–এ তাঁকে গতকাল নাইটহুড দেওয়া হয়।

মন্ট্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেরি এজনেস পারমেন্তিয়ের বেকহাম ও ভিক্টোরিয়াকে নিয়ে বেশ কিছু নিবন্ধ লিখেছেন। বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, এই সম্মান ‘শক্তিশালী প্রতীক।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘একজন সম্মাননীয় ব্রিটিশ হিসেবে এটা তার ইমেজকে আরও শক্তিশালী করল।’

বেকহামের পোশাক থেকে চুলের ছাঁট—ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডগুলোর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু থেকেছে সব সময়ই। নিজেকে বৈশ্বিক ব্র্যান্ডে পরিণত করা সাবেক এই ফুটবলারকে প্রতিকূল পরিস্থিতিও পার হতে হয়েছে। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে নকআউট ম্যাচে লাল কার্ড দেখায় ইংল্যান্ডের ‘সবচেয়ে ঘৃণিত মানুষ’–এর ট্যাগ পেয়েছিলেন বেকহাম।

২০১২ অলিম্পিক আয়োজনের স্বত্ব লন্ডনকে পাইয়ে দেওয়ায় বড় অবদান ছিল বেকহামের। তখন থেকেই নাইটহুড পাওয়ার আলোচনায় ছিলেন তিনি। তবে কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর তাঁর নাইটহুড পাওয়ার প্রক্রিয়া থামিয়ে দিয়েছিল যুক্তরাজ্যের কর্তৃপক্ষ। পরে অভিযোগটি থেকে খালাস পান বেকহাম।

আরও পড়ুনফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ: কী, কেন, কীভাবে৭ ঘণ্টা আগে

ফ্রি–কিকে খ্যাতি পাওয়া বেকহাম ২০১৩ সালে বুট তুলে রাখার আগেই নিজের ক্যারিয়ারকে আরও বৈচিত্র্যপূর্ণ করার কথা ভেবেছেন এবং সাফল্যও পেয়েছেন। নেটফ্লিক্সে ২০২৩ সালে প্রচারিত ‘বেকহাম’ তথ্যচিত্রে তিনি বলেছিলেন, ‘জানতাম একটা সময় আমার ক্যারিয়ার শেষ হবে, ফুটবলের পরেও আমি ক্যারিয়ার গড়তে চেয়েছি।’

তবে খেলোয়াড়ি জীবনে সেরা সব ফ্যাশন হাউস, সৌন্দর্যের ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে লোভনীয় অঙ্কের চুক্তি করেছেন বেকহাম। তাঁর জনপ্রিয়তা কোনো বয়স মানেনি। ইংল্যান্ডের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে তিনি যুক্তরাস্ট্রের বাজারেও ঢুকেছেন। শুধু তা–ই নয়, ‘স্টুডিও ৯৯’ নামে একটি প্রযোজনা হাউসও আছে বেকহামের এবং ২০ বছর ধরে তিনি ইউনিসেফের দূতের দায়িত্বও পালন করছেন। সমাজবিজ্ঞানী এলিস ক্যাশমোরের মতে, ফুটবলের কারণে এখন বেকহাম সবচেয়ে পরিচিত নন, বরং ‘বেকহাম নামের ব্র্যান্ড হয়ে ওঠার জন্য’ তিনি বেশি পরিচিত। দ্য টাইমসের এ বছরের র‌্যাঙ্কিং অনুযায়ী বেকহাম ব্র্যান্ডের মূল্য ৫০ কোটি পাউন্ড।

২০১১ সালে প্রিন্স উইলিয়াম এবং ২০১৮ সালে প্রিন্স হ্যারির বিয়েতে ব্রিটিশ রাজপরিবারের নিমন্ত্রণ পান বেকহাম। ২০২২ সালে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর তাঁর কফিন দেখতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা এড়িয়ে গিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন ব্রিটেনের বিভিন্ন অঙ্গনের বেশ কিছু তারকা। কিন্তু বেকহাম লাইনে প্রায় ১২ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর রানিকে সম্মান জানান। তখন থেকেই মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায় বেকহাম নামের সঙ্গে ‘স্যার’ উপাধি যোগ হওয়াটা স্রেফ সময়ের ব্যাপার।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য ফ টবল

এছাড়াও পড়ুন:

পর্যটন শিল্প বিকাশে আইকন গ্লোবাল ট্যুর অপারেটর আল মামুন

পর্যটকদের লাগেজ বহন করা থেকে শুরু করে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বিশ্বাসযোগ্য তুরস্ক ট্যুর ব্র্যান্ডের নেতৃত্ব দেওয়া মো. আল মামুনের গল্প অধ্যাবসায়, সাহস ও দূরদর্শিতার এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত।

২০০৮ সালে রসায়নে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য মামুন বাংলাদেশ থেকে তুরস্কে পাড়ি জমান। তাঁর একাডেমিক যাত্রা শুরু হয় তুরস্কের মনোরম শহর ইজমিরে। তৃতীয় বর্ষে তিনি চলে আসেন ইস্তানবুলে আর সেখানেই নিঃশব্দে শুরু হয় তাঁর জীবনের নতুন অধ্যায়।

পড়াশোনার পাশাপাশি মামুন খণ্ডকালীনভাবে পর্যটন খাতে কাজ শুরু করেন। প্রথম চাকরি ছিল ট্রলি বয়ের হোটেল ও বিমানবন্দরে ভ্রমণকারীদের লাগেজ বহন করা। কাজটি ছিল কঠিন, কিন্তু এখানেই তিনি অর্থের চেয়ে অনেক মূল্যবান কিছু শিখেছিলেন পর্যটন শিল্পের প্রকৃত চিত্র।

স্মৃতি হাতড়ে তিনি বলেন, “আমি দেখতাম, তুরস্কে এসে মানুষ কতটা খুশি হয়। তখনই স্বপ্ন দেখেছিলাম, একদিন আমিও নিজে মানুষকে এই দেশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে সাহায্য করব।”

শিক্ষা শেষ করে মামুন সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ ও তুরস্কের পর্যটন খাতের মধ্যে এক সেতুবন্ধন তৈরি করবেন। তিনি প্রতিষ্ঠা করেন একটি ভ্রমণ সংস্থা, যা বাংলাদেশের পর্যটকদের জন্য তুরস্ক ট্যুর প্যাকেজ এবং ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর জন্য সেবা প্রদান করে। তবে শুরুর পথটা ছিল মোটেও সহজ নয়।

তিনি বলেন, “প্রথম বছর আমি বাংলাদেশের বহু ট্রাভেল এজেন্সি পরিদর্শন করেছিলাম। কেউ বিশ্বাস করত না। অনেক পরিশ্রম করেছি, কিন্তু ফল পাইনি। তবুও হাল ছাড়িনি।”

সবকিছু বদলে যায় যখন তিনি ঢাকায় একটি ট্রাভেল ফেয়ারের খবর পান। সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি একটি স্টল বুক করেন নিজের কোম্পানি ও তুরস্ক ট্যুর প্রচারের জন্য। বিশ্বাস অর্জনের লক্ষ্যে তিনি নিজের তুর্কি ব্যবসায়িক অংশীদারকেও আমন্ত্রণ জানান মেলায় অংশ নিতে।

তিনি বলেন, “যখন মানুষ দেখল আমাদের স্টলে তুর্কি প্রতিনিধিরা উপস্থিত, তখন তাদের আগ্রহ আরো বেড়ে গেল। সেই ট্রাভেল ফেয়ারই ছিল আমার ক্যারিয়ারের মোড় ঘোরানো মুহূর্ত।”

মেলার পর মামুন ও তাঁর অংশীদার এক মাস ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি ঘুরে ঘুরে নিজেদের সেবা সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেন, সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং ধীরে ধীরে বিশ্বাস অর্জন করেন। কয়েক মাসের মধ্যেই কয়েকটি বাংলাদেশি এজেন্সি তাদের সঙ্গে কাজ শুরু করে।

অংশীদার তুরস্কে ফিরে গেলেও মামুন থেকে যান বাংলাদেশে। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন এই বাজারের বিশাল সম্ভাবনায়। পরবর্তী দুই বছর তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। বন্ধুদের প্রশিক্ষণ দেন, তৈরি করেন একটি নিবেদিত টিম। শেষ পর্যন্ত তাঁর পরিশ্রম সফল হয়। বহু এজেন্সি তাঁর প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা রাখে ও সহযোগিতা শুরু করে।

বর্তমানে মামুনের প্রতিষ্ঠানটি একটি বৈশ্বিক নেটওয়ার্কে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশে তিনি ৫৬ সদস্যের একটি দল পরিচালনা করেন, যাদের সহায়তা করছে ইস্তানবুলের ৮ সদস্যের অপারেশন টিম। তুরস্কে রয়েছে কোম্পানির প্রধান কার্যালয় এবং বাংলাদেশের গাজীপুরে আঞ্চলিক অফিস।

এখন পর্যন্ত ১৫০টিরও বেশি বাংলাদেশি ট্রাভেল এজেন্সি তাঁর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারিত্বে কাজ করছে এবং সবাই সন্তুষ্ট। শুধু বাংলাদেশ নয় ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, মাল্টা, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ফিলিপাইনের মতো ৩৫টিরও বেশি দেশের ট্রাভেল এজেন্সি তাদের ক্লায়েন্ট পাঠাচ্ছে তুরস্কে মামুনের বিজনেস টু বিজনেস নেটওয়ার্কের মাধ্যমে।

ডিজিটাল মার্কেটিং, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রচারণা এবং সেলিব্রিটি স্পনসরশিপের মাধ্যমে মামুনের প্রতিষ্ঠানটি এখন অন্যতম পরিচিত তুরস্ক ট্যুর ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। আজ পর্যন্ত সারা বিশ্বের ৮০ হাজারেরও বেশি পর্যটক তাঁর কোম্পানির মাধ্যমে তুরস্ক ভ্রমণ করেছেন সবাই পেয়েছেন পেশাদার সেবা ও স্মরণীয় অভিজ্ঞতা।

মামুন বলেন, “আমাদের পথ সহজ ছিল না। কিন্তু প্রতিটি চ্যালেঞ্জ আমাদের আরো শক্ত করেছে। আমরা প্রমাণ করেছি বিশ্বাস, দলগত কাজ ও মানসম্মত সেবাই গ্লোবাল সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।”

কোম্পানির অব্যাহত সাফল্যের মধ্যেও মামুন নিজের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য নিয়ে স্পষ্ট বলেন, “আমার লক্ষ্য হলো আমার প্রতিষ্ঠানকে তুরস্কের সেরা ট্যুর অপারেটর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। এমন একটি ব্র্যান্ড, যা বিশ্বাস, উৎকর্ষতা ও অনন্য ভ্রমণ অভিজ্ঞতার প্রতীক হবে।”

রসায়ন ছাত্র থেকে বৈশ্বিক পর্যটন শিল্পের নেতৃত্বে পৌঁছে যাওয়া মো. আল মামুনের গল্প তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য এক অনুপ্রেরণার উৎস। যা প্রমাণ করে, সততা, নিষ্ঠা ও নিজের স্বপ্নের প্রতি বিশ্বাস থাকলে কিছুই অসম্ভব নয়।

ঢাকা/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পর্যটন শিল্প বিকাশে আইকন গ্লোবাল ট্যুর অপারেটর আল মামুন