আগে আম্রপালি গাছ থেকে পাড়া হবে, তারপর রাঙ্গুয়াই জাতের আম। খাগড়াছড়িসহ পাহাড়ের বিভিন্ন অঞ্চলে এটাই ছিল রীতি। রাঙ্গুয়াই জাতের আমটির উৎপাদন পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপক হারে হয়। এ জাতটি পাহাড়কে এখন আমের নেতৃত্ব দেওয়ার আসনে নিয়ে যাচ্ছে প্রায়।

এবার কিন্তু রাঙ্গুয়াই আর আম্রপালি পাড়ার সময়ের হিসাব মিলছে না। সাধারণত ১০ থেকে ১২ জুন পাহাড়ে আম্রপালি পাড়া হয়। খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার আমের ব্যবসায়ী জ্ঞানজ্যোতি চাকমা বলছিলেন, এবার সব উল্টোপাল্টা হয়ে গেছে। রাঙ্গুয়াই আগে পাড়তে হচ্ছে। এর মধ্যে আবার আম্রপালি পেকে গেছে।

আমচাষি জ্ঞান জ্যোতি চাকমা গতকাল শনিবার জানান, এখন তাঁর এলাকায় রাঙ্গুয়াই আম বিক্রি হচ্ছে ১৬ টাকা কেজি, আর আম্রপালি ৩০ টাকা। গত বছর ২৫ টাকার নিচে রাঙ্গুয়াই বিক্রি করেননি, আর আম্রপালিও ৪০ টাকার নিচে নামেনি।

খাগড়াছড়ি সদরের গোলাবাড়ি এলাকায় ৩০ একরের বাগানে এবার আম চাষ করেছেন জ্ঞানজ্যোতি চাকমা। তাঁর কথা, ‘অবস্থা যা হয়েছে, উৎপাদনের খরচ উঠবে না কারও। এভাবে চললে আমচাষিরা ভবিষ্যতে আম উৎপাদন করতে কয়েকবার চিন্তা করবে।’

শুধু পাহাড় নয়, দেশের আমের ভান্ডার হিসেবে খ্যাত উত্তরাঞ্চলের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও নওগাঁতেও একই অবস্থা। নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলে এখন ক্ষিরশাপাতি, ল্যাংড়া, আম্রপালি, নাগফজলি একই সঙ্গে পেকে গেছে।

এবার এমনটা হলো কেন? কৃষিবিদ, উদ্যোক্তা ও আমচাষিদের সঙ্গে কথা বলে অন্তত তিনটা কারণের কথা জানা গেল। সেগুলো হলো—বৈরী আবহাওয়া, নিয়ন্ত্রণহীন কীটনাশক ও বৃদ্ধিকারকের ব্যবহার এবং ঈদ উপলক্ষে দেওয়া দীর্ঘ ছুটি।

মাঠপর্যায়ে কৃষকের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল, একসঙ্গে এত আম পেকে যাওয়ার কারণে দাম অনেকটা কমে এসেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে আম ছেড়ে দিতে হচ্ছে।

অতি গরমে পাকছে আম

৮ জুন দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপপ্রবাহ শুরু হয়। চার থেকে পাঁচ দিন চলে এ তাপপ্রবাহ। এর মধ্যে দু-এক দিন ৩৫ থেকে ৪০ জেলায় একটানা তাপপ্রবাহ বয়ে যায়।

দেশে এ বছর মৌসুমি বায়ু প্রবেশ করেছে নির্ধারিত সময়ের অন্তত সাত দিন আগে।‌ এর ফলে মে মাসের শেষ দিকে খানিকটা বৃষ্টি হয়েছে। সেই বৃষ্টির রেশ ছিল জুনের প্রথমেও। এরপরেই তাপপ্রবাহ শুরু হলো। গত এক দশকের বেশি সময় মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার সময়ও তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে। আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদের এক গবেষণায় দেখা গেছে, এ প্রবণতা উত্তরাঞ্চলসহ দেশের সর্বত্রই রয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মে মাসে হয়ে যাওয়া গভীর নিম্নচাপটি অনেক বৃষ্টি ঝরায়। কিন্তু এরপরও তার প্রভাব শুরু হয়ে যায়। গভীর নিম্নচাপের সময় আমরা বলেছিলাম যে এরপরে তাপপ্রবাহ আসতে পারে। এখন যেটা দেখা যাচ্ছে যে এ মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে বরং কম বৃষ্টি হতে পারে। সাম্প্রতিক সময়েই প্রবণতাগুলো একটু বেশি দেখা যাচ্ছে।’ এই যে অতি তাপ, তাতে ফসল বা ফলের ওপর প্রভাব পড়ে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞেরা।

আম দ্রুত পাকে কেন

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক এবং বিশিষ্ট আমবিশেষজ্ঞ এম আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, এবার তাপমাত্রা হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ার কারণেই আম দ্রুত পাকা শুরু হয়েছে। আম ধীরে ধীরে পাকলে বিক্রেতার যেমন লাভ, তেমনি ভোক্তাও ধীরে ধীরে আমের আস্বাদ নিতে পারে।

দুই কারণে গরম হলে আম দ্রুত পাকে বলে জানান বিশেষজ্ঞ এম আবদুর রহিম। তিনি বলেন, মানুষ যেমন শ্বাসপ্রশ্বাস নেয়, তেমনি আমেরও শ্বসনপ্রক্রিয়া আছে। গরম বেশি হলে আমের শ্বাসপ্রশ্বাসের প্রক্রিয়া বেড়ে যায়। আর তার চিনি তৈরি করার শক্তি বেড়ে যায়। ফলে আম দ্রুত পেকে যায়।

এতে আমের একটা ক্ষতি হয় বলেও জানান এম রহিম। সেটা হলো এর ঘ্রাণ খানিকটা কমে যায়।

বিষয়টির আরও ব্যাখ্যা দেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার বিভাগের উপপরিচালক এ কে মনজুরে মাওলা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুধু আম নয়, যেকোনো ফসল তার টিকে থাকার স্বার্থেই কিছু ক্রিয়াকর্ম করে। যেমন অতিরিক্ত তাপ থাকলে পাতা ঝরিয়ে ফেলে। অক্সিজেন নেওয়ার প্রক্রিয়াটা এতে দ্রুত হয়। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া বা কোনো বৈরী পরিবেশে গাছের ফলগুলো ওই গাছের জন্য বোঝা হয়ে যায়। আমের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। এখন এ বোঝাগুলো ঝেড়ে ফেললে গাছটির বেঁচে থাকা সহজ হয়। তাই সে তার কাছে থাকা আমগুলোকে দ্রুত পাকিয়ে ফেলছে।’

নওগাঁ সাপাহারের আম উৎপাদনকারী সোহেল রানার বাগানে এখন ক্ষিরশাপাতি, ল্যাংড়া, আম্রপালি, নাগফজলি একনাগাড়ে পাকা শুরু করেছে। সোহেল বলেন, ‘এমনকি যে ব্যানানা ম্যাংগো মাসের শেষ দিকে গিয়ে পাকে, সেটাও এখন পাকা শুরু হয়ে গেছে। এমন অবস্থা আগে কখনো দেখিনি। এ জন্য দামেও অনেক ছাড় দিতে হচ্ছে।’

উদাহরণ হিসেবে সোহেল জানান, ঈদের আগে আম্রপালি মণপ্রতি সাড়ে চার হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। এখন আড়াই হাজারের ওপরে উঠছে না। ল্যাংড়া গতবার তিন হাজার করে বিক্রি করলেও এবার দ্রুত পেকে যাওয়ার কারণে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে মণপ্রতি বিক্রি করতে হচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের হারুদিঘিতে গাছে ধরে আছে ক্ষিরশাপাতি আম.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ইনব বগঞ জ আম দ র ত প ক র আম র প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

আইএমএফের পর্ষদ বৈঠক ২৩ জুন, এরপর মিলতে পারে দুই কিস্তি অর্থ

২৩ জুন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী পর্ষদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেই বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচির দুই কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়টি উত্থাপনের কথা রয়েছে। বৈঠকে অনুমোদন হলে চলমান ঋণ কর্মসূচির আওতায় একসঙ্গে দুই কিস্তির অর্থ পাবে বাংলাদেশ। আইএমএফ গতকাল শুক্রবার তার কার্যসূচিতে নির্বাহী পর্ষদের বৈঠকের এ তারিখ নির্ধারণসংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আইএমএফের এ বৈঠকে চলমান ঋণ কর্মসূচির তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যালোচনার (রিভিউ) প্রতিবেদন উপস্থাপনের কথা রয়েছে। এ প্রতিবেদন পর্ষদ অনুমোদন করলে বাংলাদেশ একসঙ্গে পেয়ে যাবে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ। দুই কিস্তির অর্থ একসঙ্গে হতে পারে ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার।

এর আগে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য সাড়ে তিন বছর মেয়াদি ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। ঋণ অনুমোদনের সময় আইএমএফ বলেছিল, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, ঝুঁকিতে থাকা ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশসম্মত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করবে এ ঋণ কর্মসূচি। চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়ে যাওয়া, টাকার দরপতন ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া—মূলত এ তিন কারণে ওই সময় আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।

আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির মধ্যে বর্ধিত ঋণসহায়তা (ইসিএফ) ও বর্ধিত তহবিলসহায়তা (ইএফএফ) বাবদ ঋণ রয়েছে ৩৩০ কোটি ডলার। আর রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) বাবদ ঋণ রয়েছে ১৪০ কোটি ডলার। আরএসএফ আইএমএফের একটি নতুন তহবিল, যেখান থেকে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকেই প্রথম ঋণ দেওয়া হচ্ছে। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের কাছ থেকে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ও ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে এখন পর্যন্ত ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার।

আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তির অর্থ গত বছরের ডিসেম্বরে পাওয়ার কথা থাকলেও তা আর পাওয়া যায়নি। আইএমএফের সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অবস্থিত। প্রায় প্রতিবছর ওয়াশিংটনসহ প্রতিবেশী রাজ্যগুলোতে বড় ধরনের তুষারপাত হয়। গত বছরও তাই হয়েছে। অতিমাত্রার বরফের কারণে অচল হয়ে যায় জনজীবন। মার্কিন প্রশাসন সতর্কবার্তা জারি করে। তুষারপাতের কারণে আইএমএফসহ অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল অনেক দিন।

পরে আইএমএফের পক্ষ থেকে প্রথমে এ বছরের ফেব্রুয়ারি ও পরে মার্চে পর্ষদ বৈঠকের কথা বলা হয়। গত এপ্রিলে আইএমএফের একটি দল পর্যালোচনা করতে ঢাকায় আসে দুই সপ্তাহের জন্য। এর মধ্যে শর্ত পরিপালন নিয়ে দর–কষাকষিতে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড় আটকে যায়। এরপর ওয়াশিংটনে গত ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে এ বিষয়ে আরও আলোচনা হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। তখন দর-কষাকষি হচ্ছিল মূলত মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা নিয়ে। আইএমএফ তা চাইলেও করতে চাইছিল না সরকার।

সবশেষে গত মাসে এ নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে কয়েকটি ভার্চ্যুয়াল বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১২ মে দুই পক্ষ চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছায় ও বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করে বাংলাদেশ। ১৪ মে আইএমএফ ওয়াশিংটন থেকে এক বিবৃতিতে জানায়, দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে এবং ঋণের অর্থ ছাড় করা হবে জুনে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত পর্ষদ বৈঠকে অনুমোদন হওয়ার দুই থেকে তিন দিনের মাথায় আইএমএফ অর্থ ছাড় করে দেয়। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তদন্ত প্রতিবেদন দিতে এক মাস সময় বাড়ালেন ট্রাইব্যুনাল
  • শরীরের পাঁচ থেকে সাতটি অঙ্গ একসঙ্গে ব্যথা হয় যে কারণে
  • বাবাকে একটি সুন্দর দিন উপহার দিতে যা যা করতে পারেন
  • ফেনীতে একসঙ্গে তিন সন্তানের জন্ম দিলেন গৃহবধূ 
  • আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশের কিস্তির প্রস্তাব উঠছে আইএমএফ পর্ষদে
  • আইএমএফের পর্ষদ বৈঠক ২৩ জুন, এরপর মিলতে পারে দুই কিস্তি অর্থ
  • এবার বাগ্‌দানের কথা নিজেই জানালেন ডুয়া
  • দেশের ক্রিকেট নিয়ে সাকিবের সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে মিরাজের
  • নিজের সিনেমা দেখারও টিকিট পাননি জয়া আহসান