৯০ দশকের স্মৃতি জাগরণে বাকৃবি টিম উৎসবের ব্যতিক্রমী আয়োজন
Published: 17th, June 2025 GMT
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) টিম উৎসবের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘এটা কি ১৯৯০ সাল নাকি?’ শিরোনামে ৯০-এর দশকের স্মৃতি নিয়ে একটি অনলাইন প্রতিযোগিতা।
সোমবার (১৬ জুন) রাতে চারটি বিভাগে অনুষ্ঠিত এ প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে টিম উৎসব।
আয়োজকেরা জানান, আয়োজনটিমূলত ৯০ দশকের সেই রঙিন দিনে কিছুটা ফিরে যাওয়ার চেষ্টা। ৯০ দশকের বই, সিনেমা, গান, সংস্কৃতি ও নাটকের চোখ ধাঁধানো দৃশ্যগুলো নতুনভাবে সামনে নিয়ে আসার প্রচেষ্টায় টিম উৎসব আয়োজন করে ‘এটা কি ১৯৯০ সাল নাকি?’ শিরোনামের একটি অনলাইন ইভেন্ট।
আরো পড়ুন:
আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পাবিপ্রবির ৩ শিক্ষার্থীর কৃতিত্ব
করোনা ও ডেঙ্গু: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জরুরি নির্দেশনা
২২ মে শুরু হওয়া এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীরা তাদের ৯০ দশকের রঙিন পর্দার মুহূর্তগুলো পুনঃচিত্রায়ন করেন ৩ জুন পর্যন্ত। প্রতিযোগিতার প্রথম ক্যাটাগরি ৯০-এর নস্টালজিক জ্ঞান (কুইজ) অনুষ্ঠিত হয় ৪ জুন। এ প্রতিযোগিতায় টিম উৎসবের মিডিয়া পার্টনার ছিল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (বাকৃবিসাস) ও পুরস্কার সহযোগিতায় ছিল এক্সপার্ট কেয়ার আইইএলটিএস ইনস্টিটিউশন।
প্রতিযোগিতার ‘৯০-এর নস্টালজিক জ্ঞান (কুইজ)’ বিভাগে প্রথম হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদ সিন্দিদ ইকরাম, দ্বিতীয় হয়েছেন ইন্টারডিসিপ্লিনারি ইনস্টিটিউট ফর ফুড সিকিউরিটির (আইআইএফএস) প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সুকন্যা দত্ত নন্দিতা এবং তৃতীয় হয়েছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অর্ঘ্য দত্ত। এছাড়া, এই ক্যাটাগরির সম্মানসূচক বিজয়ীদের মধ্যে রয়েছেন আইআইএফএস এর চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শামীমা সিদ্দিকা এবং দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তাজরিয়ান হালিমা।
‘আমার টাইম এ তুই হিট (পুননির্মাণ চ্যালেঞ্জ)’ প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন বিশ্ববিদ্যলয়ের পশুপালন অনুষদের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মারিয়া ফারজানা প্রভা, দ্বিতীয় হয়েছেন পশুপালন অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের শাফরুখ আলম তালহা এবং তৃতীয় হয়েছেন একই অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের জবা দেবনাথ ববি। এছাড়া এই ক্যাটাগরিতে সম্মানসূচক বিজয়ী হয়েছেন কৃষি অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের দুই শিক্ষার্থী সিদরাতুল মুনতাহা ও আরাফাত হোসাইন।
‘এন্ডিংটায় এন্ডিং নাই (অল্টারনেটিভ এন্ডিং লিখুন)’ প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন বিশ্ববিদ্যলয়ের আইআইএফএস এর চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সামিহা সিদ্দিকা, দ্বিতীয় হয়েছেন ভেটেরিনারি অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাইম সরওয়ার অপু এবং তৃতীয় হয়েছেন কৃষি অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মুকিত। এছাড়া সম্মানসূচক বিজয়ীরা হলেন খালিদ হাসান ও দীপান্বিতা রায় পৃথা।
‘ওল্ড ইজ গোল্ড মাইক (গান কভার চ্যালেঞ্জ)’ প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন বিশ্ববিদ্যলয়ের কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহজুবা জাহান, দ্বিতীয় হয়েছেন কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদের স্নাতক সম্পন্ন শিক্ষার্থী রেভু কুমার শাহা এবং তৃতীয় হয়েছেন আইআইএফএস এর স্নাতকোত্তর সম্মান প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী প্রণামি দাস। এছাড়া সম্মানসূচক বিজয়ীরা হলেন তনিমা রহমান তন্নী ও তাজরি সরকার।
এ বিষয়ে টিম উৎসবের সাধারণ সম্পাদক নুবাহ নাশিতা ফারিহাত বলেন, “৯০ এর নস্টালজিয়া অনলাইন ফেস্ট এর সফল সমাপ্তিতে আমরা আনন্দিত। সব অংশগ্রহণকারী, আয়োজক এবং দর্শকদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় এই আয়োজন সত্যিই বিশেষ হয়ে উঠেছে। সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে এবং ভবিষ্যতে এমন আয়োজনের জন্য উৎসাহ যুগিয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমরা আশা রাখি, শীঘ্রই একটি অফলাইন প্রোগ্রামের মাধ্যমে আবারো সবাইকে একত্রিত করতে পারব। আগামী দিনেও এমন সৃজনশীল ও স্মৃতিবিজড়িত আয়োজনে আমরা একসঙ্গে থাকব। কারণ, টিম উৎসব মানেই যাপন নয়, উদযাপন।”
ঢাকা/লিখন/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বর ষ র শ ক ষ র থ ছ ন ব শ বব দ য ট ম উৎসব র
এছাড়াও পড়ুন:
সন্ধ্যা নদীর দুকূলে উৎসবের ঢেউ, উজিরপুরে নৌকাবাইচে মাতলেন হাজারো মানুষ
বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সন্ধ্যা নদীর তীরে আজ বৃহস্পতিবারের বিকেলটা ছিল রং, ঢোলের তালে উল্লাস ও হাজারো মানুষের আনন্দমুখর উপস্থিতিতে ভরপুর। আকাশজুড়ে কালো মেঘ—এমন পরিবেশে সন্ধ্যা নদীর বুকজুড়ে ঢেউখেলানো পানিতে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল মাঝিদের ‘হা-দে-রে-ও’ কোরাস। অনেক দিন পর নদী ও গ্রামের মানুষ একসঙ্গে ফিরে পেয়েছে তাদের হারানো ঐতিহ্য—নৌকাবাইচ।
বিকেল চারটার দিকে উজিরপুর উপজেলার শিকারপুর কলেজের সামনে থেকে শুরু হয় ‘উজিরপুর নৌকাবাইচ ২০২৫’। প্রতিযোগিতা চলে সেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর এম এ জলিল সেতু পর্যন্ত। পুরো নদীপাড় তখন উৎসবে পরিণত হয়। দুই তীরে মানুষের ভিড়, ঢোলের আওয়াজ, উৎসাহ আর উচ্ছ্বাসে মুখর হয়ে ওঠে সন্ধ্যা নদীর একূল-ওকূল।
উজিরপুর উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা ‘আভাস’-এর যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত এ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন বরিশালের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার মো. শরিফ উদ্দীন এবং বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের জনশিক্ষা বিভাগের পরিচালক আসমা ফেরদৌসি। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আলী সুজা। এ আয়োজনে সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর ও ইউনেসকো।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘গ্রামবাংলার এই ঐতিহ্য আমাদের সাংস্কৃতিক শিকড়ের প্রতীক। নদী ও নৌকাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই উৎসব আমাদের ঐক্য, সহযোগিতা ও আনন্দের ধারাবাহিকতা টিকিয়ে রাখে। তাই আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে এই সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখা, লালন করা সবার কর্তব্য।’
এ বছর নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ছয়টি ‘বাচারি’ নৌকা। প্রতিটি নৌকার নামকরণ করা হয় বাংলাদেশের ইতিহাস, সাহিত্য ও মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ব্যক্তিত্বের নামে—শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, কবি জীবনানন্দ দাশ, সেক্টর কমান্ডার মেজর এম এ জলিল, বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, কবি সুফিয়া কামাল ও জুলাই শহীদ।
গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুর জেলার অভিজ্ঞ নৌকাবাইচ প্রতিযোগী কালিপদ তালুকদার, লাজারেস ফলিয়া, কিরণ মৃধা, সঞ্জয় রায়, শংকর বাড়ৈ ও সৈকত রায় তাঁদের দল ও নৌকা নিয়ে অংশ নেন এই প্রতিযোগিতায়।
গোপালগঞ্জের প্রতিযোগী লাজারেস ফলিয়া বলেন, ‘এর আগে আমরা উজিরপুরের হারতায় ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচে অংশ নিয়েছিলাম, কিন্তু সন্ধ্যা নদীতে এবারই প্রথম। এত মানুষের ভালোবাসা ও উৎসাহ আমাদের দলকে দারুণ অনুপ্রেরণা দিয়েছে।’
নদীর তীরে দাঁড়িয়ে প্রতিযোগিতা উপভোগ করছিলেন বৃদ্ধ সিরাজ মিয়া। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে উচ্ছ্বসিত আট বছরের নাতি। সিরাজ মিয়া বলেন, ‘আমাদের সময় নৌকাবাইচ ছিল গ্রামের সবচেয়ে বড় উৎসব। আজ নাতিকে নিয়ে এসেছি যেন সে দেখতে পারে আমাদের সেই ঐতিহ্য। আগে আমাদের এলাকায় বৈশাখে কিংবা কালীপূজার সময় প্রতিবছর নৌকাবাইচ হতো। সেই উৎসব ঘিরে মানুষের কত আনন্দ-উচ্ছ্বাস ছিল। কিন্তু এখন আর তেমনটা হয় না। অনেক দিন পর এই উৎসবে এসে পুরোনো স্মৃতি মনে পড়ে গেল।’
নৌকাবাইচের আয়োজক উন্নয়ন সংস্থা ‘আভাস’-এর প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম বলেন, এটি ইউনেসকো প্রস্তাবিত ঐতিহ্যবাহী উৎসব। স্থানীয় প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের আগ্রহে নৌকাবাইচটি এক উৎসবে রূপ নিয়েছে। সামনেও এমন উৎসবের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার চেষ্টা থাকবে।
প্রতিযোগিতা শেষে অনুষ্ঠিত হয় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। বিজয়ী দল ছিল শেরেবাংলা ফজলুল হক দল (মাদারীপুরের লাজারেস ফলিয়া দল)। প্রথম রানার্সআপ সেক্টর কমান্ডার এম এ জলিল দল (কালিপদ তালুকদার দল) এবং দ্বিতীয় রানার্সআপ জুলাই শহীদ দল (কিরণ মৃধা দল)।
স্থানীয় তরুণ মো. মাহফুজ বলেন, ‘এই আয়োজন শুধু বিনোদন নয়, বরং বরিশাল অঞ্চলের গ্রামীণ ঐতিহ্য, লোকজ ক্রীড়া ও নদীসংস্কৃতির পুনর্জাগরণ ঘটিয়েছে। আমরা চাই, প্রতিবছর এই আয়োজন অব্যাহত থাকুক।’