পুরোনো দিনের অনেক স্টাইল বারবার ফিরে আসে। কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শাড়ি পরা অনেক নারীর দারুণ সব ছবি ভাইরাল হতে দেখা যাচ্ছে। বাস্তবে কেউ শাড়ি না পরেই এআই টুল ব্যবহার করে ১৯৯০ দশকের নারীদের মতো শাড়ি পরার ছবি প্রকাশ করছেন। রেট্রো লুকের এই ছবির জাদু দেখাচ্ছে গুগলের জেমিনি এআই টুল। জেমিনির ন্যানো বানানা টুলের মাধ্যমে ভিনটেজ শাড়ি এআই ট্রেন্ড এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সয়লাব। ভিনটেজ শাড়ি এআই প্রম্পট ব্যবহার করে বিভিন্ন ছবি তৈরি করছেন ব্যবহারকারীরা। ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রামে ভিনটেজ শাড়ি এআই ট্রেন্ড এখন খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

যেভাবে তৈরি হচ্ছে শাড়ি পরা এআই ছবি

ন্যানো বানানা হলো গুগলের জেমিনি এআইয়ের একটি সৃজনশীল টুল। এই টুল ব্যবহারকারীরা সাধারণ ছবিকে নিজের মতো করে রূপান্তরিত করতে পারছেন। একটি ছবি প্রকাল করে বিস্তারিত প্রম্পট দিয়ে ব্যবহারকারীরা এআইকে বাস্তবসম্মত ছবি তৈরি করতে কমান্ড দিচ্ছেন। ন্যানো বানানার মাধ্যমে তৈরি ছবি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও এক্সের মতো প্ল্যাটফর্মে। ছবি তৈরির জন্য প্রথমে জেমিনির ওয়েবসাইটে (https://gemini.

google.com) ছবি আপলোড করতে হবে। তারপর ইংরেজিতে প্রম্পট লিখে দিতে হবে। বিভিন্ন ব্যবহারকারীর সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, আপাতত ইংরেজি কমান্ডে বেশ ভালো ছবি তৈরি করতে পারছে জেমিনির ব্যানানা টুল।

হঠাৎ ভাইরাল হলো কেন

২-৩ দিন ধরে ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশের ফেসবুক ব্যবহারকারীরা ১৯৯০ দশকের মতো করে শাড়ি পরার ছবি প্রকাশ করছেন। ফেসবুকে নিজের দারুণ সব ছবি প্রকাশ করছেন এনজিও কর্মী সুমাইয়া সুমি। তিনি জানান, ‘আমি এআই টুল দিয়ে শাড়ি পরা ছবি তৈরি করেছি। গুগলের জেমিনি টুল, ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটি দিয়েই ছবি তৈরি করেছি। আমার ফেসবুকে মনিটাইজেশন চালু আছে। যে কারণে ট্রেন্ডিং কোনো বিষয়ে ছবি তুললে ভালো রিচ মানে ছবি অনেকের কাছে পৌঁছে যায়। শাড়ি পরা ছবিসহ স্কাই জাম্পিংয়ের ছবি, আগের সময়কার নারীদের মতো ছবি তুলেছি। আমাকে কেমন দেখাবে, তা পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রম্পট ব্যবহার করে ছবি তৈরি করেছি। বেশ ভালোই লাগছে নিজেকে অন্যভাবে দেখতে। সময়ের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে এবং নতুন কিছু করা আমার একটি পছন্দের কাজ।’

আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারী ফাহিমা আহমেদ জানান, ‘ফেসবুকে মাঝেমধ্যেই দারুণ কিছু ট্রেন্ড দেখি। এবার জেমিনির ব্যানানা এআই টুল দিয়ে ছবি তৈরি করেছি। আমাদের কল্পনায় আমরা কেমন, তা এআই দিয়ে তৈরি করার চেষ্টার সুযোগ মিলছে। এআই আমাদের প্রম্পট অনুযায়ী আমি কীভাবে নিজেকে দেখতে চাই, তার একটা ছবি তৈরি করে দিচ্ছে। আমি যেমনটা নিজেকে কল্পনায় দেখছি, তা–ই এআই তৈরি করে দিচ্ছে। জেমিনি আপাতত ‘লিমিটেড’ সুযোগ দিচ্ছে এমনভাবে ছবি তৈরির জন্য।’

নতুন আঙ্গিক তৈরি করছে এআই

ক্লিনিক্যাল রিসার্চার সুমাইয়া আতিনা খান জানান, ‘আমি নানা আঙ্গিকে ছবি তৈরি করেছি। ভিন্ন ধরনের লুক দিয়েছি প্রম্পটকে, আর মজার মজার সব ছবি পেয়েছি। হাতে ফুল নিয়ে, ডানে–বাঁয়ে তাকিয়ে অনেক স্টাইল করে ছবি তৈরি করেছি। টিনএজার থেকে শুরু করে মধ্যবয়সী নারীদের এমন ছবি তৈরি করতে দেখছি। এখানে একটা বিষয় হচ্ছে, আমরা যাঁরা ছবি তৈরি করছি, তাঁরা যেভাবে লিখছেন সেইভাবেই এআই ছবি তৈরি করছে। এআই আমাদের কল্পনাকে কমান্ডের মাধ্যমে অনুসরণ করছে। এআই ও মানুষের দারুণ এক সংযোগ হচ্ছে এই ভাইরাল ট্রেন্ড। অনেক ব্যবহারকারীরা এত দিন এআই টুলস ব্যবহার থেকে দূরে ছিলেন, তাঁরা এই ট্রেন্ডের জন্য কিছুটা হলেও এআই ব্যবহারের চেষ্টা করছেন।’

নিজেকে ভিন্ন আঙ্গিকে দেখার সুযোগ দিচ্ছে এআই

মাঝেমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কনটেন্ট বা আধেয় ভাইরাল হয়। অধিকাংশ ভাইরাল ট্রেন্ড ইউরোপ বা আমেরিকাতেও বেশ আলোড়ন তৈরি করে। এবারে এআই দিয়ে শাড়ি পরা ছবির ভাইরাল ট্রেন্ড দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশেই একটু বেশি দেখা যাচ্ছে। যাঁরা শাড়ি চেনেন, সেই সব জনগোষ্ঠীর কাছে এই ট্রেন্ড দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে থাকেন চিকিৎসক রেহনুমা আবদুল্লাহ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি যেখানে থাকি, সেখানে কর্মব্যস্ততার কারণে শাড়ি পরা হয় না। আমি দেশে থাকতে বাসাতে শাড়ি পরতাম। প্রায় দুই বছরের জন্য শাড়ি পরা হচ্ছে না। এখানে সেই সুযোগ বা সংস্কৃতি নেই। এআই আমাকে অন্যভাবে সাজার সুযোগ করে দিয়েছে। আমি বেশ কয়েকটি ছবি তুলেছি। নানা রঙের শাড়ি, নানা রঙের আলোতে। কোনোটায় খোঁপায় ফুলও আছে। এটা বেশ অবাক লাগে আমার কাছে, এআই অবিকল একজন মানুষের ছবি তৈরি করতে পারে। বিভিন্ন প্রম্পট ব্যবহার করে নিজের সুন্দর সব ছবি তৈরি করেছি। আমি শাড়ি পরতে অনেক পছন্দ করি। যেকোনো নারীকে শাড়িতে সুন্দর লাগে বলে সবাই এই ট্রেন্ডের দিকে ঝুঁকছেন। বিভিন্ন প্রম্পট ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের ছবি তৈরি করছি। বেশ আশ্চর্যজনক কাজই করছে এআই!’

আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারী ফ্যাশন ডিজাইনার নিশাত আনজুম জানান, ‘সাধারণ সময়ে আমাদের দেখতে যেমন লাগে, এআই সেই দেখার আঙ্গিকে পরিবর্তন আনছে নতুন এই ট্রেন্ডের মাধ্যমে। এখনকার জেন-জি প্রজন্ম ১৯৯০ দশকে নিজেদের রেট্রো লুকে কেমন লাগত, তা জানতে জেমিনি এআই টুলস ব্যবহার করছে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, সাজগোজ কিংবা স্টাইলের জন্য অনেক সময় দিতে হয়, এখন ব্যস্ত জীবনে সেই সময় বা সুযোগ অনেক কম। এই সুযোগে এআই ব্যবহার করে নিজেকে কেমন লাগবে, তা দেখার চেষ্টা করছেন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ভ ন ন ধরন র এই ট র ন ড এআই ট ল ফ সব ক র জন য আম দ র করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

এআই খাতের অনেক বিনিয়োগই ব্যর্থ হতে পারে, আশঙ্কা বিল গেটসের

মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের মতে, বিশ্ব বর্তমানে একটি এআই বুদ্‌বুদের মধ্যে রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিকে ১৯৯০ দশকের শেষ দিকের ডটকম বুদ্‌বুদ বা বুমের সঙ্গে তুলনা করে এআই খাতের অনেক বিনিয়োগই ব্যর্থ হতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন তিনি।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে। মেসেজিং অ্যাপ থেকে শুরু করে ব্রাউজার বা কোডিং করার জন্য নানা ধরনের এআই টুল আছে। প্রতিটি প্ল্যাটফর্মেই এখন কোনো না কোনো রূপে এআই ব্যবহার করা যাচ্ছে। আর তাই ওপেনএআই, পারপ্লেক্সিটি বা অ্যানথ্রোপিকের মতো এআই প্রতিষ্ঠানগুলোয় শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। বিল গেটস এই অবস্থাকে ডটকম বুদ্‌বুদের মতো একটি এআই বুদ্‌বুদ মনে করছেন।

বিল গেটস বলেন, ‘আমরা বর্তমানে একটি এআই বুদ্‌বুদে রয়েছি। এই পরিস্থিতি কোনো কাল্পনিক বিষয় নয়। এআই বুদ্‌বুদ ১৯৯০ দশকের শেষের দিকে ডটকম ধসের আগে প্রযুক্তিশিল্প যেমন অবস্থায় ছিল, তেমন। ১৯৯০ দশকের শেষের দিকে ডটকম বুমের ফলে বেশ কয়েকটি ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠানকে অতিরিক্ত মূল্যায়ন করা হয়। ফলে ২০০০ সালে ডটকমে ধস নেমে আসে। কিছু প্রতিষ্ঠান তখন সফল হয়েছিল, কিন্তু পুঁজি নষ্ট করা বহু প্রতিষ্ঠান ছিল।

বিল গেটসের আগে চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) স্যাম অল্টম্যানও এআই ভবিষ্যতে একটি বুদ্‌বুদ হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। বিনিয়োগকারীরা এআই নিয়ে অতিরিক্ত উত্তেজিত হচ্ছেন বলেও মনে করেন তিনি। মেটার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গও এ বছরের শুরুতে এআই বুদ্‌বুদ হতে পারে বলে জানিয়েছিলেন।

সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এআই খাতের অনেক বিনিয়োগই ব্যর্থ হতে পারে, আশঙ্কা বিল গেটসের