দেশে এখনও তিন কোটির বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। দরিদ্র এই জনগোষ্ঠীর ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপক প্রভাব পড়ে। এতে দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভবিষ্যৎ আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। বর্তমানে দেশের ৩০টি সর্বাধিক দরিদ্র উপজেলার সবক’টিই উচ্চ বা মধ্যম মাত্রার জলবায়ু ঝুঁকিতে রয়েছে।

বুধবার প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ দারিদ্র্য পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন-২০২৪’ এ এসব তথ্য উঠে এসেছে। দারিদ্র্য ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক এ প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেছে ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইএনএম) এবং সেন্টার ফর ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট ডায়ালগ (সিআইডিডি)।

রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে আইএনএমের চেয়ারম্যান ড.

কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরী। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন আইএনএমের রিসার্চ ফেলো ড. ফারহানা নারগিস। তিন হাজার মানুষের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দেশের সর্বাধিক দরিদ্র উপজেলাগুলোর মধ্যে গৌরীপুর, মাদারীপুর সদর, নেত্রকোনা সদর, চকোরিয়াসহ ৯টি উপজেলা উচ্চ পর্যায়ের জলবায়ু ঝুঁকিতে রয়েছে। এ ছাড়া ডাসার, হালুয়াঘাট, কালকিনি, রায়পুরাসহ সর্বাধিক দরিদ্র অন্য উপজেলাগুলো রয়েছে মধ্যম মাত্রার ঝুঁকিতে। প্রতিবেদনে চুয়াডাঙ্গা, নওগাঁ, ভোলা, সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের তথ্য বিশেষভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয, ভৌগোলিক অবস্থানসহ বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত  ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। জলবায়ু-দুর্যোগের বিরূপ প্রভাবে সবচেয়ে বেশি পড়তে হয় দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে। দরিদ্রদের অভিযোজন সক্ষমতা সীমিত হওয়ায় তারা আরও বেশি বিপন্ন হয়ে পড়ে। 
অন্তর্ভুক্তিমূলক ও দারিদ্র্য সংবেদনশীল অভিযোজন কৌশল প্রণয়ন, জলবায়ু সংবেদনশীল দারিদ্র্য কমানোর উদ্যোগ, বিভিন্ন খাতে সমন্বয় ও আন্তঃসম্পর্কের সর্বোচ্চ ব্যবহার, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয় ও সংগতি বজায় রাখা এবং স্থানীয় উদ্যোগগুলোকে শক্তিশালী করার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। 

ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব আমলে না নিয়ে দরিদ্র নিরসনের উদ্যোগ কোনোভাবেই সফল হবে না। বর্তমানে বিশ্ব এমন একটা পরিস্থিতিতে উপনীত হয়েছে, জলবায়ুর পরির্তন থামানো সম্ভব নয়। এ জন্য সমন্বিত দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নিতে হবে। বাংলাদেশে বিষয়টি নিয়ে প্রচুর আলোচনা হলেও সমন্বিত অগ্রাধিকার উদ্যোগ নেই। তাই প্রতি বছর প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলার বা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হলেও তার সুফল পাওয়া যায় না।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. এ কে এনামুল হক, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ফজলে রাব্বি ছাদেক আহমাদ প্রমুখ।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জলব য় ঝ ক সমন ব জলব য় উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ভুলে যাবেন না, শরীরচর্চা একটি সুন্নত

খেলাধুলা ও শারীরিক ব্যায়াম আধুনিক জীবনে প্রায়ই অবহেলিত হয়, বিশেষ করে ব্যস্ততার কারণে। কিন্তু ইসলামে খেলাধুলার একটি গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে, যা নবীজি (সা.)-এর জীবন থেকে শুরু হয়েছে। তিনি নিজে বিভিন্ন খেলাধুলায় অংশ নিয়েছিলেন এবং এর আধ্যাত্মিক ও সামাজিক উপকারিতার কথা উল্লেখ করেছেন।

শরীরচর্চার আধ্যাত্মিক উপকারিতা

শরীরচর্চা ইসলামে একটি ভুলে যাওয়া সুন্নাহ, যা আমাদের শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিকভাবে সমৃদ্ধ করে। এটি আমাদের মনোযোগ ও স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়, সম্প্রদায়ের বন্ধন জোরদার করে এবং হারাম থেকে দূরে রাখে। যেমন:

দুটি নিয়ামত এমন আছে, যার প্রতি অনেক মানুষ প্রতারিত হয়: স্বাস্থ্য ও অবসর সময়।সহিহ বুখারী, হাদিস: ৬,৪১২

১. মনোযোগ ও অবিচলতা গড়ে তোলে

ইসলাম আমাদের নিজেকে উন্নত করতে ও পরকালে উত্তম স্থান অর্জনের জন্য সংগ্রাম করতে শেখায়। শরীরচর্চা এই প্রক্রিয়ায় সহায়ক; কারণ, এটি মনোযোগ, সংগ্রাম এবং ধৈর্যের মাধ্যমে আমাদের মন ও শরীরকে শক্তিশালী করে।

শারীরিক ব্যায়ামের সময় আমরা যখন মাত্রা অতিক্রম করে যাই, তখন তাৎক্ষণিক আরাম ত্যাগ করে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য অর্জনের জন্য মানসিক শক্তি অর্জন হয়।

আরও পড়ুনউত্তম ব্যবসায়ী হওয়ার নববি কৌশল০৯ জুন ২০২৫

২. সমাজের শক্তি বৃদ্ধি করে

ইসলামে সামাজিক ধারণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সবাই এক উম্মাহর অংশ। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই এই যে তোমাদের উম্মাহ, এটা তো একই উম্মাহ, আর আমি তোমাদের রব, অতএব আমার ইবাদত করো।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৯২)

জুমার নামাজ, হজের মতো ইবাদত আমাদের সম্প্রদায়ের বন্ধনকে শক্তিশালী করে।

দলগত খেলাধুলা বা ব্যায়াম অনুশলীন এই সমস্যার সমাধান দিতে পারে। সাইক্লিং, দৌড় বা সাঁতারের মতো সামাজিক আয়োজনের মাধ্যমে মুসলিমদের মধ্যে বন্ধন তৈরি করে এবং যোগাযোগ, দলগত কাজ ও স্থিতিস্থাপকতার দক্ষতা বৃদ্ধি করে। এটি ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

৩. হারাম থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেয়

আধুনিক সমাজে হারাম ক্রিয়াকলাপ—যেমন মদ্যপান, অবৈধ সম্পর্ক, জুয়া বা অনৈতিক কনটেন্ট—সহজলভ্য। এই প্রলোভনগুলো থেকে নিজেকে দূরে রাখা, বিশেষ করে তরুণদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। নিয়মিত শরীরচর্চা আমাদের সময় ও শক্তিকে ইতিবাচক কাজে লাগাতে সাহায্য করে। জিমে শরীরচর্চা বা মাঠে শারীরিক প্রশিক্ষণ আমাদের মনকে হারাম থেকে দূরে রাখে এবং দ্বীনের প্রতি নিবেদিত রাখে।

সাইক্লিং, দৌড় বা সাঁতারের মতো সামাজিক আয়োজনের মাধ্যমে মুসলিমদের মধ্যে বন্ধন তৈরি করে এবং যোগাযোগ, দলগত কাজ ও স্থিতিস্থাপকতার দক্ষতা বৃদ্ধি করে।

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘দুটি নিয়ামত এমন আছে, যার প্রতি অনেক মানুষ প্রতারিত হয়: স্বাস্থ্য ও অবসর সময়।’ (সহিহ বুখারী, হাদিস: ৬,৪১২)

শরীরচর্চা আমাদের স্বাস্থ্য ও সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে সাহায্য করে, যা আমাদের দ্বীন ও দুনিয়া উভয়ের জন্য কল্যাণকর।

আরও পড়ুনযে ৪টি পরীক্ষা নবীজি (সা.)–এর জীবনকে দৃঢ়তা দিয়েছে২২ জুলাই ২০২৫হাদিসে উল্লিখিত খেলাধুলা

নবীজি (সা.)-এর জীবনে খেলাধুলার গুরুত্ব উল্লেখযোগ্য। তিনি নিজে বিভিন্ন শারীরিক কসরতের মতো খেলায় অংশ নিয়েছিলেন এবং এর প্রশংসা করেছেন। কিছু উল্লেখযোগ্য খেলা হলো:

দৌড়: হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, তিনি নবী (সা.)-এর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে দৌড় দিয়েছিলাম এবং তাঁকে হারিয়েছিলাম। পরে যখন আমার ওজন বেড়ে গেল, তিনি আমাকে হারিয়েছিলেন।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২,৫৭৮)

বোঝা যায়, শুধু পুরুষ নয়, নারীদের জন্যও এ ধরনের খেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে শরীরচর্চা করা অনুমোদিত।

তিরন্দাজি: নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা তিরন্দাজি অনুশীলন করো, কারণ এটি তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৯১৭)

তিরন্দাজি শারীরিক ও মানসিক দক্ষতা বাড়ায়।

আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে দৌড় দিয়েছিলাম এবং তাঁকে হারিয়েছিলাম। পরে যখন আমার ওজন বেড়ে গেল, তিনি আমাকে হারিয়েছিলেন।হজরত আয়েশা (রা.), সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২,৫৭৮

ঘোড়দৌড়: নবীজি (সা.) ঘোড়দৌড়ের প্রশংসা করেছেন এবং এতে অংশগ্রহণকারীদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করেছেন। (সুনানে নাসাঈ, হাদিস: ৩,৫৮৫)

সাঁতার: নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের সন্তানদের সাঁতার, তিরন্দাজি এবং ঘোড়সওয়ারি শেখাও।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৬,৫৮২)

কুস্তি: নবীজি (সা.) একবার নিজেই রুকানা নামক একজন ব্যক্তির সঙ্গে কুস্তি লড়েছিলেন এবং তাঁকে পরাজিত করেছিলেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪,০৭৮)

এই হাদিসগুলো প্রমাণ করে যে খেলাধুলা শুধু শারীরিকভাবে উপকারী নয়, বরং এটি সুন্নাহের একটি অংশ। নবীজির (সা.) জীবন আমাদের জন্য অনুকরণীয়। আধুনিক বিশ্বে যেখানে সামাজিক বিভেদ ও হারামের প্রলোভন আমাদের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে, সেখানে এই খেলাধুলা ও শরীরচর্চা আমাদের দ্বীন ও সমাজকে শক্তিশালী করতে পারে।

আরও পড়ুনসুস্থ জীবনের জন্য নবীজি (সা.)–এর কয়েকটি সুন্নাহ২৯ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ